সংবাদ শিরোনাম :
হোল্ডারের বলে বোল্ড শামীম, ৪ উইকেট হারিয়ে ধুঁকছে বাংলাদেশ বাংলাদেশকে ১৬৬ রানের লক্ষ্য দিল ওয়েস্ট ইন্ডিজ রংপুরে কর্মসূচিতে অপরিষ্কার হওয়া রাস্তা পরিষ্কার করলো যুবদল (ভিডিও)  রংপুরে জাতীয় পার্টির বেশ কিছু নেতাকর্মী যোগ দিলেন বিএনপিতে! মাত্র ৫০ মিটার দূরে ছিল গতকালের মৃত্যুর বিভীষিকা জুলাইকে ব্যবহার করে এক শ্রেণি সম্পদের পাহাড় গড়েছে- শিবির সভাপতি (ভিডিও) নির্বাচনের প্রস্তুতির অগ্রগতি ৯০ থেকে ৯৫ শতাংশ- ইসি সচিব নির্বাচন সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ করতে পুলিশের ভূমিকা গুরুত্বপূর্ণ: স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা  রংপুরে সাংবাদিক ও মানবাধিকারকর্মীদের জন্য ডিজিটাল নিরাপত্তা বিষয়ক কর্মশালা অনুষ্ঠিত রংপুরে প্যানেল চেয়ারম্যানের ইয়াবা সেবনের ভিডিও ভাইরাল
মাত্র ৫০ মিটার দূরে ছিল গতকালের মৃত্যুর বিভীষিকা

মাত্র ৫০ মিটার দূরে ছিল গতকালের মৃত্যুর বিভীষিকা

সময়টা ১২.১৫ মিনিটের মত। আমি তখন দি হাঙ্গার প্রোজেক্টের সম্প্রীতি সংলাপে ফার্মগেটের কৃষিবিদ ইনস্টিটিউটের কনভেনশন হলে। হঠাৎ তীব্র আওয়াজ সহকারে কনভেনশন হলটা কেঁপে উঠলো। আমি জোর দিয়ে বলতে পারি বাংলাদেশে এত বড় ভূমিকম্প কখনও হয়নি যত জোরে কেঁপে উঠেছে হলটা। আমার পাশেই বন্ধু Janith Lincon Mazumder। ও বলছিল, “এটা ভূমিকম্প। আরেকবার এই কম্পন হবে।” আমি বললাম, “ভূমিকম্প হলেও এত জোরে শব্দ হওয়ার কথা নয়।” ওদিকে রংপুর জেলা মডেল মসজিদের খতিব Md. Zahidul Islam ভাই দোয়া পড়ছিলেন।

কাঁচের দেয়ালের কনভেনশন হলের বাইরে তাকিয়ে দেখলাম কিছু মানুষ গেটের দিকে দৌড়াচ্ছে। আমার মনে কিছুটা সন্দেহ হলো। লিংকনকে বললাম, I have to go…লিংকনও উঠে আমার সাথে হাঁটা শুরু করলো। বাইরে এসে দেখি মোটামুটি ভাবে অনেক লোকের ভিড় জমেছে। একজনকে জিজ্ঞাসা করলাম, ‘আসলে কি হয়েছে?’ তিনি বলল, মেট্রোরেলের লাইনচ্যুতি ঘটেছে। একজন উপর থেকে নিচে পড়ে গেছে। ” জিজ্ঞেস করলাম, সে কি বেঁচে আছে? সে বলল, “না, সাথে সাথেই মারা গেছে। ” তৎক্ষনাৎ আমার মনে পড়লো যদি মেট্রোরেলের লাইনচ্যুতি যদি ঘটে, আর এইরকম শব্দের সাথে কম্পন ঘটে, তাহলে রেলে থাকা কেউ বেঁচে নেই। আমার ঘটনাস্থলে যাওয়া উচিত।

আমি ছুটে গেলাম রাস্তার দিকে। আমি তাকিয়ে আছি তিন তলা সমান মেট্রোরেল স্টেশনটার দিকে। গেট থেকে বেরিয়ে বাম দিকে হাটে শুরু করলাম এবং উপরের দিকেই তাকিয়ে হাঁটছি। কারন আমাকে সেই লোক বলেছে উপর থেকে মানুষ পড়ে গেছে। কিছুদূর গিয়ে মনে হল অফিসকে বিষয়টা জানানো উচিত। সাথে সাথে অফিসের whatsapp গ্রুপে মেসেজ দিলাম, ফার্মগেট মেট্রো রেল স্টেশনে মেট্রোরেলের লাইনচ্যুতি ঘটেছে। লেখার পর সামনে দেখি কিছু লোক জটলা পাকিয়ে রয়েছে। বুঝলাম লোকটা ওখানেই পড়ে গেছে। ভিড় ঠেলে ভিতরে গিয়ে দেখি একজন মানুষের নিথর দেহ পড়ে আছে। কালো টিশার্ট, কালো ট্রাউজার আর নেভীব্লু জুতা পড়া। আর একটা নেভিব্লু ব্যাগ। লোকটার মাথা দিয়ে রক্ত বের হয়ে পড়েছে ফুটপাতে। রক্ত কণিকা গুলো জমাট বেধেছে, রক্ত রস গুলো রাস্তায় গড়িয়ে যাচ্ছে। কান ও নাক দিয়ে রক্ত বেরিয়ে জমাট বেধেছে। কি মর্মান্তিক একটা মৃত্যু!!!

আশেপাশের মানুষের সাথে কথা বলে জানতে পারলাম উপর থেকে ভারী কিছু তার মাথায় পড়লে সে ঘটনাস্থলেই মারা যায়। দেখলাম চায়ের দোকানের গ্লাস ভেঙ্গে বিয়ারিং প্যাডটা ভিতরে ঢুকে গেছে। দোকানদারও কিছুটা আহত। আমি সাথে সাথে আবার অফিসের whatsapp গ্রুপে লিখে দিলাম, ফার্মগেট মেট্রোলেরেল উপর থেকে রাবারের প্যাড মাথায় পড়ে পথচারীর মৃত্যু। সত্যি বলতে তখনও জানতাম না ওটাকে বিয়ারিং প্যাড বলে।

কি বলবো, কি লিখবো কিছুই ভেবে পাচ্ছিলাম না। শুধু মনে হচ্ছিল যে জিনিসটা পড়ার পরে আশেপাশের এলাকায় একটা ভূমিকম্পের মতো সৃষ্টি হয়। সেই জিনিসটা কিন্তু সরাসরি ভূপতিত হয়নি। প্রথমেই একটা জলজ্যান্ত মানুষের মাথায় আঘাত করেছে। ভাবা যায়, কতটা আঘাত পেয়েছে সেই আবুল কালাম আজাদ।

তারপর থেকে সারাটা দিন বিভিন্ন নিউজ পোর্টালে দেখছিলাম সেই খবরটা। যেটা থেকে মাত্র ৫০ মিটার দূরে আমি অবস্থান করছিলাম। দেখলাম আবুল কালাম আজাদের ফেসবুকে তার শেষ পোস্ট। দেখলাম তার স্ত্রী সন্তানের কান্না। জানলাম ছোটবেলা থেকে এতিম আবুল কালাম আজাদ। জানলাম তার পাসপোর্ট এর মেয়াদ ৩৩ সাল পর্যন্ত থাকলেও জীবনের মেয়াদ ফুরিয়ে এসেছিল অকালেই।

দেখলাম রাষ্ট্রের কি নির্লজ্জতা!! উপদেষ্টা মহোদয় যদি একটাবার আশেপাশের মানুষের থেকে সেই সময়ের ঘটনার বিবরণ জানতে চাইতেন তাহলে বুঝতেন সেখানকার প্রেক্ষাপটটা। বুঝতেন ৫ লক্ষ টাকা দিয়ে আবুল কালাম আজাদের জীবনের মূল্য কখনো ধরা যায় না। বুঝতেন এদেশের উন্নয়নের বলি আজ আবুল কালাম আজাদ হয়েছে, কাল আমি আপনি আরো অনেকেই হতে পারে। বুঝতেন যারা এ মহাপরিকল্পনার প্ল্যান করেছিল তাদেরকে আগে জবাবদিহিতার মুখে নিয়ে আসতে, কারা কারা সংশ্লিষ্ট ছিল এই বিয়ারিং প্যাড গুলো কেনার সময় সেই ইতাল ও থাই কোম্পানিকে তড়িৎ গতিতে নোটিশ করা ও প্রশ্নের সম্মুখীন করা। বুঝতেন এদেশে যতগুলো মহাপরিকল্পনা বাস্তবায়ন হয়েছে সবগুলোকে খতিয়ে দেখা কোনগুলো মানুষের জন্য জীবননাশক হতে পারে, সবগুলো চিহ্নিত করা, কিভাবে এতটা কেয়ারলেস হতে পারে ক্ষমতায় বসে থাকা মানুষগুলো এটা ভাবতে পারিনা। আমরা যেন একেকটা চেয়ারে একেক জন কমেডিয়ান বসিয়েছি। তারা যা বলবে আমরা হাততালি দিয়ে দিবো।

উন্নয়ন আসলে কার স্বার্থে হয়েছে? জনগণের নাকি যারা মহা পরিকল্পনা প্ল্যান করে তাদের পকেটের? এদেশে আমার সন্তানেরা থাকবে তাদের জীবন কতটুকু নিরাপদ? অথচ তোমরা যারা চুরি করছো তোমাদের সন্তানেরা একসময় অন্য দেশে সুখে, নিরাপদে জীবন কাটাবে। আমরা ক্ষমতায় তুলে দিচ্ছি একেক জন যমদূতদের। শুধু ক্ষমতায় কেন, প্রশাসনে? পরিকল্পনা করা করছে? তাবেদারি কারা করছে? ক্রয় কমিটিতে কারা থাকছে? বিদেশী বড় বড় কোম্পানিগুলোর সাথে লিয়াজু করা দালাল কারা? যদি চেয়ারের লোভ না থাকে এবং গাটস্ থাকে তো তাদেরকে জবাবদিহিতার মধ্যে আনেন, বিচারের সম্মুখীন করেন।

লেখক

লাবনী ইয়াসমিন লুনী
সাংবাদিক

দয়া করে নিউজটি শেয়ার করুন..




© All rights reserved © batayon24
Design & Developed BY ThemesBazar.Com