স্টাফ করেসপন্ডেন্ট রংপুর।।বাতায়ন২৪ডটকম
রংপুরের বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী আবু সাঈদ বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনে পুলিশের গুলিতে নিহত হয়।
আবু সাঈদ ছিলেন রংপুর বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের ইংরেজি ভাষা ও সাহিত্য বিভাগের অনার্স পরীক্ষার ফল প্রার্থী। এর আগে তিনি রংপুর সরকারি কলেজ থেকে জিপিএ ৫ পেয়ে এইচএসসি পাস করেন। তার আগে তিনি খালাশপীর দ্বিমুখী উচ্চবিদ্যালয়, পীরগঞ্জ থেকে গোল্ডেন ৫ পেয়ে এসএসসিতে উত্তীর্ণ হন। আবু সাঈদ স্থানীয় জাফরপাড়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় থেকে ট্যালেন্টপুল বৃত্তি পেয়ে পঞ্চম শ্রেণিতে উত্তীর্ণ হন। তখন থেকেই আবু সাঈদ মেধাবী ছাত্র হিসেবে পরিচিতি লাভ করেন।
স্বাধীনতার পরও বাংলাদেশের মানুষ বৈষম্যের শিকার হয়েছে। যেমন চাকরি পাবার ক্ষেত্রে বৈষম্য। শিক্ষায় বৈষম্য। গ্রাম-শহরের বৈষম্য। বৈষম্য দিন দিন বাড়ছিল। বৈষম্যের সাথে সাথে বেড়ে চলছিল মানবাধিকার লঙ্ঘনের ঘটনা। খুনের ঘটনা প্রত্যহ ঘটতো। সামাজিক ন্যায়বিচার ছিল না। দেশ থেকে একের পর এক অর্থ পাচারের ঘটনা ঘটে যাচ্ছিল। এ সবের বিরুদ্ধে দেশের মানুষ কথা বলতে গেলে আওয়ামী লীগ সরকার জনগণকে শায়েস্তা করতে মিথ্যা মামলা দিতো। ধরে নিয়ে জেলখানায় রাখতো বিনা বিচারে হত্যা করতো গুম করতো। ছাত্ররা প্রতিবাদ করতে গেলে ছাত্রলীগের ছেলেরা সাধারণ ছাত্রদের ধরে ধরে মারতো। হল থেকে বের করে দিতো। এমনকি পিটিয়ে মেরেও ফেলতো।
২০২৪ সালে চলছিল চাকরিতে কোটা বৈষম্য। এই বৈষম্য নিরসনের দাবিতে সমগ্র দেশের ছাত্ররা গড়ে তুলেছিল কোটাবিরোধী ছাত্র আন্দোলন। আবু সাঈদ ছিলেন সেই আন্দোলনের বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয় শাখার সমন্বয়ক। সরকার কোটা আন্দোলনকে তিরস্কার করতে থাকে। ছাত্রদের দাবি-দাওয়াকে তুচ্ছতাচ্ছিল্য করে। আন্দোলন বেগবান হলে ছাত্রলীগকে সরকার লেলিয়ে দেয় আন্দোলন দমাতে। চলে ছাত্রদের ওপর ছাত্রলীগের অত্যাচার। প্রতিবাদে ছাত্ররা ফুঁসে ওঠে। অতিষ্ঠ হয়ে এবার ছাত্ররা সরকার পতনের ডাক দেয়। সমগ্র দেশ ছাত্র আন্দোলনে উত্তাল হয়ে ওঠে। সরকার পতনের দাবিতে সাধারণ মানুষও ছাত্রদের সাথে নেমে আসে রাস্তায়। রংপুরে রাস্তায়ও গণবিপ্লবের স্লোগান ওঠে। আবু সাঈদের নেতৃত্বে বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্ররা অভ্যুত্থানের লক্ষ্যে রাস্তায় নেমে আসে। সরকার ভীতসন্ত্রস্ত হয়ে পড়ে। আন্দোলন দমাতে পুলিশকে গুলি করার নির্দেশ দেয়। পুলিশের গুলির প্রতিবাদে ছাত্র সমাবেশের সামনে থাকা আবু সাঈদ পুলিশের দিকে বুক চিতিয়ে দাঁড়ান। নিরস্ত্র আবু সাঈদকে পুলিশ গুলি করে। পর পর কয়েকটি গুলি আবু সাঈদের বুকে লাগে। ধরাধরি করে ছাত্ররা আবু সাঈদকে হাসপাতালে নেওয়ার সময় তিনি মৃত্যুবরণ করেন। আবু সাঈদের মৃত্যুর খবর ছড়িয়ে পড়লে বাংলাদেশের ছাত্র-জনতা বিক্ষোভে ফেটে পড়ে। আবু সাঈদ ১৬ জুলাই শহীদ হন। ১৬ জুলাই থেকে ৫ আগস্ট পর্যন্ত গুলি করে একের পর এক প্রায় দুই হাজারেরও অধিক ছাত্র-জনতাকে হত্যা করে ফ্যাসিস্ট হাসিনার নির্দেশে পুলিশ।
শহীদ আবু সাইদের ভাই আবু হোসেন ফেসবুকে বলেন আজ প্রমাণিত বাংলাদেশে আধিপত্যবাদ বিস্তার করার জন্য ইন্ডিয়া ১৯৭১ সালে মুক্তিযুদ্ধে আমাদেরকে সহযোগিতা করেছিল। বাংলাদেশে ছোট দেশ ইন্ডিয়ার বিরুদ্ধে কথা বলার সাহস পাবে না। আমরা(ইন্ডিয়া)যা বলব তাই করতে ওরা বাধ্য।আমরা স্বাধীনভাবে কোন কিছু করতে পারি না। তাহলে এই স্বাধীনতার মূল্য কি?কোন কিছু করতে গেলেই ইন্ডিয়া কি ভাববে ইন্ডিয়া কি বলবে তার ওপর তাকায় থেকে সিদ্ধান্ত নিতে হয়।
আমরা পাকিস্তানপন্থী না ভারতপন্থী না আমরা বাংলাদেশ পন্থী হতে চাই। আর বাংলাদেশ জন্মের পিছনে ভারত থেকে পাকিস্তানের অবদান বেশি । দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধে জাপানে যুক্তরাষ্ট্র পারমাণবিক বোমা হামলা করেছিল। তাদের মধ্যে সে সব ভুলে গিয়ে তারা নতুন করে বন্ধুত্ব করেছে ব্যবসার জন্য।
১৯৪৭ সালের দেশভাগের সময় পাকিস্তান যদি বাংলাদেশ অংশকে পূর্ব পাকিস্তান হিসেবে দাবি না করতো তাহলে বাংলাদেশকে ভারতের রাজ্য হিসেবে থাকতো। বাংলাদেশ নামে নতুন রাষ্ট্রের জন্ম কোনভাবেই সম্ভব ছিল না যদি আমরা ভারতের মধ্যে থাকতাম। যেমন ১৯৪৭ এর পর ইন্ডিয়ার ভেতর নতুন কোন রাষ্ট্রের জন্ম হয়নি।
বাতায়ন২৪ডটকম/রিয়াদ ইসলাম