ষ্টাফ করেসপনডেন্ট।। বাতায়ন২৪ডটকম।।
ফরিদপুর মেডিকেল কলেজে এমবিবিএস প্রথম বর্ষে ভর্তির সুযোগ পেয়েছেন সাবিনা ইয়াসমি। এই খবরে সাবিনা ও তাঁর পরিবারের সদস্যদের চোখে-মুখে আনন্দের ঝিলিক। তবে একই সঙ্গে তাঁদের মনে দুশ্চিন্তা ও অনিশ্চয়তা। মেডিকেলে ভর্তির টাকা জোগাড় করতে হিমশিম খাচ্ছে তাঁর পরিবার। অর্থের অভাবে মেধাবী এই তরুণীর স্বপ্ন পূরণে দেখা দিয়েছে অনিশ্চয়তা।
সাবিনা ইয়াসমীনের বাড়ি রংপুর জেলার পীরগঞ্জ উপজেলার জাহাঙ্গীরাবাদ গ্রামে। তাঁর বাবা ছাদেকুল ইসলাম স্থানীয় জাহাঙ্গীরাবাদ বাজারে মাংস বিক্রি করেন। মা আয়শা বেগম একজন গৃহিণী। তিন বোনের মধ্যে সাবিনা বড়। সে স্টার জুনিয়র হাই স্কুল এন্ড কিন্ডার গার্ডেন থেকে পিএসসি ২০১৬ সালে, জে এস,সি ২০১৯ সালে ও এস এসসি ২০২২ সালে জিপে-৫ পেয়ে উর্ত্তীন হয়। পরে ২০২৪ সালে রংপুর সরকারী কলেজ থেকে এইচ,এসসি পাশ করে ভর্তি পরীক্ষায় ফরিদপুর মেডিকেল কলেজে ৩০৩৬ তম তালিকায় উর্ত্তীন হয়। তার ছোট দুই বোন সাদিয়া সুলতানা ব্রাইট স্টার জুনিয়র হাই স্কুল এন্ড কিন্ডার গার্ডেন এ ১০ম শ্রেণীতে ও ছোট বোন সুমাইয়া আক্তার ওই একই প্রতিষ্ঠানে ৮ম শ্রেণীতে লেখাপড়া করছে।
বাবা বলেন, আমি ছাদেকুল ইসলাম আমি স্থানীয় জাহা্গীরাবাদ বাজারে সপ্তাহে ২ দিন মাংস বিক্রি করে জীবন যাপন করি। কোন সময় ব্যবসায় লাভ হয় আবার কোন সময় আমাকে ধার দেনা করেও ৩ মেয়ের পড়া লেখার খরচ চালাতে হয়। প্রতি মাসে ঋণের কিস্তি দিতে হয়। মেয়েটা মেডিকেলে ভর্তি আর পড়ালেখার খরচ বহন করার মতো সামর্থ্য আমার নেই। বড্ড দুশ্চিন্তায় আছি।’
সাবিনা ইয়সমিন সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, অনেক না পাওয়ার মধ্যে বেড়ে উঠলেও তিনি শিক্ষাজীবনে প্রতিটি ধাপে সাফল্য পেয়েছেন তিন। গ্রামের ব্রাইট স্টার জুনিয়র হাই স্কুল এন্ড কিন্ডার গার্ডেন থেকে প্লে গ্রুপ থেকে এস এসসি পাশ করেন। এই প্রতিষ্ঠানের শিক্ষক, শিক্ষিকা থেকে প্রতিটি ব্যাক্তি আমাকে সার্বিক সহযোগিতা করেছেন। তাদের প্রতি আমি কৃতগতা প্রকাশ করছি। পরে রংপুর সরকারী কলেজ থেকে ২০২৪ সালে বিজ্ঞান বিভাগে জিপিএ-৫ পেয়ে উত্তীর্ণ হন। মেডিকেল ভর্তি পরীক্ষায় প্রথমবার চেষ্টায় ভর্তি পরীক্ষায় অংশ নিয়ে ফরিদপুর মেডিকেল কলেজে ভর্তির সুযোগ পেয়েছেন।
বুধবার বিকালে সাবনিা ইয়াসমিনের বাড়িতে গিয়ে দেখা যায়, টিনের ছাপরার মধ্যে আসবাব বলতে তেমন কিছু নেই। তবে তাঁর পড়ার জন্য একটি টেবিল ও চেয়ার আছে। ঘরের মধ্যে খাটের এক কোণেও সাজিয়ে রাখা কিছু বই। সেখানে আলাপকালে সাবিনা ইয়াসমীনের মা আয়শা খাতুন বলেন, সংসারের টানাপোড়েনের মধ্যে মেয়েকে প্রাইভেট পড়তেও দিতে পারিনি। মেয়ে আমার নিজের চেষ্টায় মেডিকেলে ভর্তির সুযোগ পেয়েছে। তবে সেখানে ভর্তি আর পড়ালেখার সার্বিক খরচ চালিয়ে নেওয়া আমাদের জন্য অসম্ভব হয়ে পড়েছে।’ মেয়েকে সহায়তা করতে শিক্ষানুরাগী ব্যক্তিদের এগিয়ে আসার আহ্বান জানান তিনি।
সাবিনা ইয়াসমীন বলেন,আমি ছোটবেলা থেকেই মেডিকেলে পড়ার স্বপ্ন দেখেছি। প্রথমবারে আমি ভর্তির সুযোগ পেয়েছি। আমার পড়াশোনার খরচ জোগাতে মা–বাবা অনেক কষ্ট করেছেন। তাঁদের কষ্ট ঘোচানোর পাশাপাশি আমি চাই একজন মানবিক চিকিৎসক হতে চাই। হত দরিদ্রদের পাশে সপ্তাহে একদিন হলে বিনা পয়সায় চিকিৎসা সেবা দেয়ার স্বপ্ন আমি মনের মধ্যে লালন করি। এখন স্বপ্ন পূরণে সবার সহযোগিতা প্রয়োজন।’
বাতায়ন২৪ ডটকম