কখনো সেনা, নৌ, বিমানবাহিনী ও র্যাবের উচ্চ পদস্থ কর্মকর্তা। কখনো সুরেলা কন্ঠের সুন্দর নারী সেনা সদস্য, কখনো গাম্ভীর্যপুর্ণ পুরুষ। কখনো কর্নেল, মেজর, সিও সহ প্রশাসনের বিভিন্ন কর্তাব্যক্তি পরিচয় দিয়ে দেশের বিভিন্ন স্থানে, নানান পেশাজীবি মানুষকে ব্লাকমেইল করে অর্থ হাতিয়ে নেয়াই ছিল যার একমাত্র লক্ষ। দীর্ঘ প্রতিক্ষা ও তদন্তের পর প্রতারণার এজাহার নামীয় প্রধান আসামিকে গ্রেফতারে সক্ষম হন রংপুর র্যাব-১৩।
মঙ্গলবার (১১ নভেম্বর) রাত আনুমানিক ১টার দিকে রংপুর র্যাব-১৩ এর একটি আভিযানিক প্রতারক নাজমুল হাসান জীম (২৪) কে তার বাড়ির টয়লেটের ছাদ থেকে গ্রেফতার করেন।
গ্রেফতারকৃত হলেন-পীরগাছার অভিরাম (নামা দোলা) এলাকার সাজ্জাদ হোসেন ওরফে জাহিদুল ইসলামের ছেলে নাজমুল হাসান ওরফে জিম (২৪)কে গ্রেফতার করতে সক্ষম হয়। নাজমুল হাসান জিম দেউতি বাজারের আলু ব্যবসায়ী শফিকুলের ভাতিজা।
স্থানীয়রা জানান, গত ৬ মাস পুর্বে উপজেলার পাওটানা এলাকায় প্রতারণা করতে গিয়ে স্থানীয়দের হাতে গণধোলাইর শিকার হন নাজমুল হাসান জিম। এর আগে রংপুর মহানগরীর তাজহাট এলাকায় প্রতারণার সময় ধরা পরেন সে।
এলাকাবাসী জানান, নাজমুল হাসান জিমের বাবা পেশায় একজন ঝালমুড়ি বিক্রেতা ছিলো। গত প্রায় দেড় বছর ওই ব্যবসা বাদ দিয়ে আলিশান প্রাসাদ গড়েছে। বাড়িতে গড়েছে বিদেশি গরুর খামার যেখানে আছে প্রায় ৩০ লাখ টাকার গরু। এছাড়াও অল্প সময়ের ব্যবধানে ৪৫ থেকে ৫০ বিঘা জমি বন্ধক নিয়েছে যেখানে আনুমানিক ব্যয় দের কোটি টাকা। ক্রয়কৃত জমির পরিমান প্রায় ২ একর যার মুল্য কোটি টাকার উপরে। এছাড়াও পুকুর লীজ নিয়েছে কয়েকটি।
নাম-পরিচয় গোপন রাখার শর্তে নাজমুল হাসানের এক নিকটাত্মীয় সাংবাদিকদের বলেন, আমরা সারাজীবন কাজ করে যা করতে পারিনি নাজমুল হাসান দুই বছরে তার লাখোগুন বেশী করেছেন। তিনি আরও বলেন নাজমুল হাসান তার বাপ, মা, বোন ভগ্নিপতি ও চাচাদের প্রচ্ছন্ন সহায়তায় এই সকল অপকর্মে জরিয়েছে। তারা আরও জানান, প্রায় ২ বছর পুর্বে প্রতিবেশী চাচাতো বোন সেনা সদস্য সুরভিকে ব্লাকমেইল করেছিল এই নাজমুল হাসান।
রংপুর র্যাব-১৩ সুত্রে জানাযায়, অভিযুক্ত নাজমুল হাসান সামরিক বাহিনীর পরিচয় পত্র ও পোষাক ব্যবহার করে, সাবেক এক সেনা কর্মকর্তাকে জমির শেয়ার কিনে দেয়ার কথা বলে পর্যায়ক্রমে সর্বমোট ১৭ লক্ষ ২৬ হাজার টাকা গ্রহণ করেন। পরে আজকাল করে জমি কিনে না দেয়ায় ওই কর্মকর্তার সন্দেহ হলে, তিনি খোঁজ নিয়ে জানতে পারেন সে কোন বাহিনীতে চাকরি করেন না। পরবর্তীতে তিনি কিশোরগঞ্জ জেলার হোসেনপুর থানায় বাদী একটি প্রতারণা মামলা দায়ের করেন। যার মামলা নং- ০৩/১৭৭, তারিখ-০৭/১১/২০২৫, ধারা- ১৭০/১৭১/৪০৬/৪১৮/৪২০/৫০৬/৩৪ পেনাল কোড ১৮৬০। এরই প্রেক্ষিতে র্যাব-১৩, সিপিএসসি, রংপুর ১২/১১/২০২৫ ইং তারিখ রাত ০১.৩০ সামরিক বাহিনীর পরিচয়ে প্রতারণা মামলার প্রধান আসামিকে গ্রেফতার করতে সক্ষম হয়।

র্যাব আরও জানায়, প্রাথমিকভাবে যানা যায় যে, আসামি মোঃ নাজমুল হাসান @ জিম বিভিন্ন সময়ে নিজেকে সেনাবাহিনী ও নৌবাহিনীর সদস্য হিসেবে পরিচয় দিয়ে প্রতারনার মাধ্যমে অনেকের কাছ থেকে অর্থ অত্মসাৎ করেছে। সে নিজেকে মাঝে মাঝে নারী সেনা সদস্য হিসেবেও পরিচয় দিতো এবং নারীর বেশ ধারণ করে ও নারীর কন্ঠে কথা বলে ভিডিও কলের মাধ্যমে প্রতারণা করতো এবং নারী কেলেঙ্কারিতে ফাঁসিয়ে টাকা আদায় করতো।
আসামির বাড়ি তল্লাশি করে সেনাবাহিনীর ইউনিফর্ম কম্ব্যাট ড্রেস ১ টি, কম্ব্যাট গেঞ্জি ১ টি, ফিল্ডক্যাপ ১ টি, টাওয়াল ১ টি, ট্রাউজার ১ টি। নৌবাহিনীর ইউনিফর্ম ৩ নং সাদা ড্রেস ১ টি, কম্ব্যাট গেঞ্জি ২ টি, নেভি জার্সিক্যাপ ১ টি, টাওয়াল ১ টি। এছাড়াও বিভিন্ন বাহিনীর বিভিন্ন কালারের ক্যান্টিন গেঞ্জি ১৫ টি। সামরিক বাহিনীর ভুয়া আইডি কার্ড ৯ টি। বাটন মোবাইল ৫ টি, স্মার্ট মোবাইল ১ টি। মেয়েদের পরচুলা ১ গোছা এবং মেকআপ সেট জব্দ করা হয়। এবং আসামিকে পরবর্তী আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য সংশ্লিষ্ট থানায় হস্তান্তর করা হয়েছে।
এবিষয়ে র্যাব-১৩ এর সিনিয়র সহকারী পরিচালক (মিডিয়া) বিপ্লব কুমার গোস্বামী অতিরিক্ত পুলিশ সুপার বলেন, এই ধরনের চক্রের বিরুদ্ধে র্যাব ১৩ এর গোয়েন্দা তৎপরতা এবং চলমান অভিযান অব্যাহত থাকবে।