স্টাফ করেসপন্ডেন্ট রংপুর।।বাতায়ন২৪ডটকম।।
জুলাই অভ্যুত্থানের স্পিরিট বাস্তবায়ন করতে জাতীয় ঐক্যের ডাক দিয়ে জামায়াতে ইসলামীর কারা মুক্ত নেতা এটিএম আজহারুল ইসলাম বলেছেন জাতীয় ঐক্য ও স্বার্থ বিঘ্নিত হতে পারে, স্বাধীনতা সার্বভৌমত্ব বিঘ্নিত হতে পারে, সিমানায় সমস্যা হতে পারে, আধিপত্যবাদী শত্রুরা আবারো নতুন করে ক্ষমতা দখল করতে। এজন্য আমাদের জাতীয় ঐক্য গড়ে তুলতে হবে।
বৃহস্পতিবার (১২ জুন) বিকেলে রংপুরের বদরগঞ্জ এর শাহাপুর মাঠে তার কারা মুক্তি উপলক্ষে স্থানীয় উপজেলা জামায়াত আয়োজিত শোকরানা সমাবেশে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি একথা বলেন। এর আগে সকাল সাড়ে নয়টায় তিনি সৈয়দপুর বিমানবন্দরে পৌঁছান। হাজার হাজার নেতা কর্মী সমর্থক তাকে ফুল দিয়ে শ্রদ্ধা জানান। দুপুরে তিনি তারাগঞ্জ মডেল সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় মাঠে অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্য রাখেন। পরে বিকেলে অংশ নেন জন্মভূমি বদরগঞ্জের শোকরানা সমাবেশে। বদরগঞ্জ উপজেলা জামায়াত আমির মাওলানা কামরুজ্জামান এর সভাপতিত্বে সমাবেশে আরও বক্তব্য রাখেন কেন্দ্রীয় কর্মপরিষদ সদস্য ও রংপুর দিনাজপুর অঞ্চলের পরিচালক ও সহকারি সেক্রেটারি জেনারেল মাওলানা আব্দুল হালিম, কর্ম পরিষদ সদস্য ও সহকারী পরিচালক মাওলানা মমতাজ উদ্দিন, কর্ম পরিষদ সদস্য ও জোন পরিচালনা কমিটির সদস্য অধ্যাপক মাহবুবুর রহমান বেলাল, রংপুর জেলা জামায়াত আমীর অধ্যাপক গেলোম রব্বানী, মহানগর আমির এ টি এম আজম খান, জেলা সেক্রেটারী মাওলানা এনামুল হক, মহানগর সেক্রেটারি অধ্যাপক আনোয়ারুল ইসলাম কাজল, নীলফামারী জেলা আমীর মাওলানা আব্দুর সাত্তারসহ স্থানীয় জামায়াত, তারাগঞ্জ উপজেলা জামায়াত আমীর এস. এম.আলমগীর হোসেনসহ যুব বিভাগ, ছাত্র শিবির ও শ্রমিক কল্যান ফেডারেশনের নেতৃবৃন্দ।
এ সময় এটিএম আজহারুল ইসলাম বলেন, ” যারা বড় বড় কথা বলে তারাই দেশ থেকে পালিয়ে যায়। আমরা সবাই মুখে মুখে বলি ব্যক্তির চেয়ে দল বড়, দলের চেয়ে দেশ বড়। এটা আমরা মুখে বলি কিন্তু মানি না। এটা কার্যকর হিসেবে মানতে হবে। আমরা ব্যাক্তির ক্ষতি হলেও দলের ক্ষতি করবো না। আমরা সবাই মিলে জাতীয় ঐক্য গড়ে তুলবো।
দাঁড়িপাল্লায় ভোট চেয়ে জামাতের এই শীর্ষ নেতা বলেন, ” এ সময় তিনি আগামী নির্বাচনে এই আসন থেকে তাকে ভোট দিয়ে বিজয়ী করার আহ্বান জানান। বলেন নির্বাচিত হলে সরকারি সুযোগ সুবিধা কোন কিছুই তিনি নিজে ব্যবহার করবেন না বদরগঞ্জ তারাগঞ্জবাসীর জন্য উৎসর্গ করবেন। “
এ সময় হাজার হাজার নেতাকর্মী তার এই শোকরানা সমাবেশে স্লোগান দিয়ে অভিবাদন জানায়। কারা মুক্তির পর প্রথমবারের মতো রংপুরের বদরগঞ্জে নিজ বাড়িতে আসলেন তিনি।
বিগত ১৬ বছর আওয়ামী লীগ জনগণের সাংবিধানিক অধিকার হরণ করে রেখেছিল দাবি করে এটিএম আজহার বলেন,, ” ফ্যসিষ্ট আওয়ামী সরকার এতদিন জনগণের সাংবিধানিক অধিকার হরণ করে রেখেছিল। দ্রুত সে অধিকার জনগণের হাতে ফিরিয়ে দিতে হবে। যারা ভারতের তোষামদি করবে তাদের দ্বারা দেশের উন্নয়ন কখনো সম্ভব হবে না। কারণ ভারত কখনো বাংলাদেশের উন্নয়নকে সহ্য করে না। আমরা দেশের জন্য, ইসলামের জন্য, সত্য ও ন্যায়ের পথে চলার কারণে বারবার আমাদের ওপর জুলুম-নির্যাতন নেমে এসেছে। কিন্তু আল্লাহর সহায়তা, জনগণের ভালোবাসা ও দোয়া আমাদের দৃঢ় রেখেছে।”
আমি কখনোই মৃত্যুকে ভয় পাইনি উল্লেখ করে। এটিএম আজহার বলেন, ” স্বৈরাচার শেখ হাসিনার আওয়ামী লীগ সরকার অবৈধ ট্রাইব্যুনাল বানিয়ে আমাকে বিনাদোষে ফাঁসিতে ঝুলিয়ে রায় কার্যকর করার চেষ্টা করেছিল। কিন্তু মহান আল্লাহর অশেষ রহমতে জুলাই এ ছাত্র-জনতার গণঅভ্যুত্থানে সকলের ভালোবাসায় মুক্তি পেয়েছি। মিথ্যা প্রমাণিত হয়েছে আমার বিরুদ্ধে আনিত সব অভিযোগ।
আমি কখনই মৃত্যুতে ভয় পাইনি।”
“দলীয় নেতাকর্মীদের উদ্দেশ্যে এটিএম আজহার বলেন বলেন, ” দেশে এখনো ইসলামী মূল্যবোধ ও ন্যায় বিচারের জন্য সংগ্রাম চালিয়ে যেতে হচ্ছে। জামায়াতে ইসলামীর নেতাকর্মীরা সব সময় শান্তিপূর্ণ উপায়ে তা করে আসছে।
সবাইকে শিষ্টাচার বজায় রাখা ও গঠনমূলক সমালোচনার রাজনীতি করতে হবে।
আমার চাওয়া-পাওয়ার কিছু নেই, আমার যত সামান্য যতটুকু ছিল মৃত্যুকে জেনেই সবটুকু পরিবারকে দিয়ে দিয়েছি। আমি আপনাদের জন্য কাজ করে যেতে চাই। আমার কাছে শুধু জামায়াতে ইসলামী নয় সকল ধর্মবর্ণ ও দল মত নির্বিশেষে সবাই আমার কাছে সমান। মহান আল্লাহ আমাকে নতুন করে জীবন দিয়েছেন। আমি সর্বশক্তি দিয়ে আপনাদের খেদমত করে যেতে চাই। “”
এর আগে ২৮ মে সকাল ৯টা ৫ মিনিটে বাংলাদেশ মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয় (পিজি) হাসপাতালে ভর্তিরত অবস্থায় কেরানীগঞ্জে অবস্থিত ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগার থেকে তাকে মুক্তি দেওয়া হয়। এর আগে, ২৭ মে সকাল ৯টা ৫৫ মিনিটে এটিএম আজহারকে মৃত্যুদণ্ড থেকে খালাস দেন আপিল বিভাগ। সাত বিচারপতির পূর্ণাঙ্গ বেঞ্চের সর্বসম্মতিক্রমে এ রায় ঘোষণা করা হয়।
২০১৪ সালের ৩০ ডিসেম্বর আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল জামায়াতে ইসলামীর নেতা এটিএম আজহারুল ইসলামকে তিনটি অভিযোগে মৃত্যুদণ্ড এবং দুটি অভিযোগে কারাদণ্ড দেন। ছয়টি অভিযোগের মধ্যে একটি থেকে তিনি খালাস পেয়েছিলেন।
বাতায়ন২৪ডটকম।।শরিফুল ইসলাম