স্পেশাল করেসপন্ডেন্ট রংপুর।। বাতায়ন২৪ডটকম।।
আজ শুক্রবার ৩ টায় টাউন হলে প্রেস ব্রিফিং কর্মসূচি ঘোষণা করেছে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন।
রংপুরে জি এম কাদেরের বাসায় হামলা ঘটনায়,
রংপুরে জাতীয় পার্টি এবং বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন ও এনসিপি নেতাকর্মীরা এখন মুখোমুখি।
দুই দিনের উত্তাপ বৃহস্পতিবার রাতে গড়ায় সংঘর্ষ-ধাওয়া পাল্টা ধাওয়ায়।
পুড়িয়ে দেয়া হয় জাতীয় পার্টির নেতাকর্মীদের মোটরসাইকেল। ভাংচুর করা হয় জি এম কাদেরের পৈত্রিক নিবাসের দরজা-জানালা।
এ ঘটনার জন্য একে অপরকে দায়ী করছে সংগঠন দু’টির নেতারা।
আজ শুক্রবার বেলা ৩টায় টাউন হলে অবস্থান ও প্রেস ব্রিফিং কর্মসূচি ঘোষণা করেছে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন।
বৃহস্পতিবার (২৯ মে) বিকেলে রংপুর সফরে আসেন জাতীয় পার্টির (জাপা) চেয়ারম্যান জি এম কাদের।
তিনি তার পৈত্রিক নিবাস নগরীর সেনপাড়ার স্কাইভিউয়ে সংবাদ সম্মেলন করে অন্তবর্তীকালীন সরকারের বিরুদ্ধে তার দলের সাথে বর্ণবাদী আচরণের অভিযোগ করেন।
ওই সংবাদ সম্মেলনের পর রাত সাড়ে ৮টায় জি এম কাদেরকে গ্রেফতারের দাবিতে বিক্ষোভ মিছিল করে জাতীয় নাগরিক পার্টি (এনসিপি) ও বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন।
মিছিলটি গ্রান্ড হোটেল মোড়ে কিছুক্ষণ অবস্থানের পর সেনপাড়ায় স্কাইভিউ অভিমুখে রওয়ানা দেয়।
অভিযোগ, ওই মিছিল থেকে স্কাইভিউতে হামলা করা হয়। সেখানে উপস্থিত ছিলেন জি এম কাদের। এসময় সেখানে নেতাকর্মীদের সাথে ধাওয়া পাল্টা-ধাওয়া হয়।
পুড়িয়ে দেয়া হয় একটি মোটরসাইকেল, বিস্ফোরণ ঘটানো হয় ককটেলের। স্কাইভিউয়ের কয়েকটি জানালার থাই ভাংচুর করা হয়। দরজা ভাঙ্গার চেষ্টা করা হয়।
খবর পেয়ে নগরীর বিভিন্ন প্রান্ত থেকে সেনপাড়ায় জড়ো হন জাপার নেতাকর্মীরা। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রেণে সেখানে বিপুল সংখ্যক পুলিশ ও সেনা মোতায়েন করা হয়।
এক পর্যায়ে এনসিপি ও বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের নেতাকর্মীরা আবারো মিছিল নিয়ে নগরীর প্রধান সড়ক হয়ে টাউন হল চত্বরে গিয়ে জমায়েত হয়।
এদিকে, খবর পেয়ে ঘটনাস্থলে ছুটে আসেন জাপার কো-চেয়ারম্যান সাবেক সিটি মেয়র মোস্তাফিজার রহমান মোস্তফা, প্রেসিডিয়াম সদস্য এস এম ইয়াসির।
তারা এক ঘণ্টা সেনপাড়া মোড়ে অবস্থানের পর নেতাকর্মীদের মিছিল নিয়ে খামার মোড়ের দিকে যান।
এ ঘটনাকে এনসিপি, বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন ও একটি বড় রাজনৈতিক দলের কাণ্ড বলে তাদের গ্রেফতার দাবি করেন জাতীয় পার্টির শীর্ষ নেতারা।
অন্যদিকে এনসিপি ও বৈষম্যবিরোধীদের অভিযোগ, সেনপাড়া দিয়ে যাওয়ার সময় জাতীয় পার্টি মিছিলে ও ককটেল বিস্ফোরণ করেছে। এতে তাদের চারজন আহত হয়েছেন।
এ ব্যাপারে জাপার সাংগঠনিক সম্পাদক হাসানুজ্জামান নাজিম বলেন, ‘আমি জি এম কাদের স্যারের সাথে নেতাকর্মীদের নিয়ে স্কাইভিউতে আলোচনারত ছিলাম।
এমন সময় এনসিপি ও বৈষম্যবিরোধী নেতাকর্মীরা মিছিল নিয়ে এসে বাসায় হামলা চালায়।
তারা ককটেল বিস্ফোরণ ঘটায় এবং বাসার বিভিন্ন জানালা-দরজা ভাংচুর করে। তারা অস্ত্র নিয়ে এই হামলা চালায়।
তাৎক্ষণিকভাবে আমরা সেখানে প্রতিরোধ গড়ে তুলি। পরে তারা পিছু হটতে বাধ্য হয়।’
তিনি আরো বলেন, ‘গতকালও (বুধবার) তারা আমাদের বিরুদ্ধে মিছিল করেছে, বক্তৃতা করেছে।
আজকেও (বৃহস্পতিবারও) তারা এখানে এভাবে ঢুকবে এটা আমাদের জানা ছিল না। আমরা শান্তিপ্রিয়।
আমরা কখনো ভায়োলেন্স চাই না। আমরা চাইলে এনসিপির কয়েকজনকে আমাদের হিসাব করার সময় ছিল না। তাদের এই হামলা, বোমা বিস্ফোরণ, ভাংচুর, অগ্নিসংযোগ আমরা প্রত্যাশা করি না। আমরা এখন প্রস্তুত।’
জাপার প্রেসিডিয়াম সদস্য এস এম ইয়াসির জানান, ‘এ ঘটনা ঘটিয়েছে এনসিপি ও বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন। এবং একটা বড় রাজনৈতিক দলের নেতাকর্মীরা ছিল। রংপুরের পরিবেশ সুষ্ঠু ও সুন্দর ছিল। কিন্তু এই সরকারের সংগঠন পরিস্থিতি উত্তপ্ত করলো। এরপর রংপুরে যত অপ্রীতিকর ঘটনা ঘটবে, তার দায় তাদেরকে নিতে হবে। আমরা প্রতিবাদ জানালাম। আমাদের চেয়ারম্যানের বাসায় হামলা করা হয়েছে। আমরা এর জন্য যা করা দরকার সেটা করবো। নেতাকর্মীরা হামলাকারীদের খুঁজে বের করার চেষ্টা করছে। দলীয় ফোরামে আলোচনা করে কর্মসূচি দেয়া হবে।’
জাপার কো-চেয়ারম্যান মোস্তাফিজুর রহমান মোস্তফা জানান, ‘আমরা পার্টি অফিসে বসা ছিলাম। এখানে হঠাৎ করে তারা অ্যাটাক করলো। প্রেসক্লাব থেকে মিছিল নিয়ে এসে তারা হামলা করেছে। আমরা পার্টি অফিস থেকে এসে দেখি যে তারা চেয়ারম্যানের বাড়ি ভাংচুর করেছে। মোটরসাইকেলে আগুন দিয়েছে। আমরা মনে করি, এটা সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ড। দেশে আইনশৃঙ্খলা নাই। আমাদের সেফটি আমাদেরকেই নিতে হবে। সেজন্য প্রস্তুতি চলছে।’
তবে পাল্টা অভিযোগ করেছেন বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন। মহানগর বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সাবেক মুখপাত্র নাহিদ হাসান খন্দকার জানান, ‘জাতীয় পার্টির নেতাকর্মীদের কাছে বিভিন্ন অস্ত্র ছিল। যে অস্ত্রগুলো তারা একবার ব্যবহার করলে আমাদের অনেকের প্রাণ চলে যেতো। জি এম কাদেরে বিরুদ্ধে মামলা আছে। তাকে আইনের আওতায় আনতে হবে। কারণ তিনি প্রতিনিয়ত ভারত যাচ্ছেন। এবং ভারতের প্রেসক্রিশনে বাংলাদেশের শান্তিপূর্ণ অবস্থান কিভাবে নষ্ট করা যায় সেজন্য তিনি কাজ করছেন। এবং ইন্টেরিম সরকারকে তিনি বার বার প্রশ্নবিদ্ধ করছেন। সরকারের কাছে দাবি, তাকে আইনের আওতায় আনা হোক। জাতীয় পার্টির হামলায় আহত আমাদের চারজনের চিকিৎসা এবং হামলাকারীদের গ্রেফতার করা হোক।’
বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোললনের রংপুর মহানগরের আহ্বায়ক ইমতিয়াজ আহমেদ ইমতি বলেন, ‘জাতীয় পার্টি দীর্ঘ ১৬ বছর ফ্যাসিস্ট আওয়ামী সরকারের সার্ভ কর্মকাণ্ডের সাথে জড়িত ছিলেন ।
তাদের অ্যাজেন্ডা বাস্তবায়নে ওতপ্রোতভাবে কাজ করেছে।
সেই সংগঠনের প্রধান যখন রংপুরে এসেছেন, তার বিরুদ্ধে রংপুরের ছাত্র-জনতা একটি শান্তিপূর্ণ মিছিলের ডাক দেই।
আমরা মিছিল নিয়ে সেনপাড়া চৌরাস্তা মোড়ে গিয়ে অবস্থান কর্মসূচির ঘোষণা দেই এবং প্রশাসনকে দাবি-দাওয়া জানানোর কথা বলি। কিন্তু আমরা চৌরাস্তা মোড়ে যাওয়ার আগেই তাদের যে ক্যাডার বাহিনী আমাদের ওপর হামলা চালায়। তাদের হাতে দেশীয় অস্ত্র ছিল। তারা আমাদের মিছিলে ককটেল বিস্ফোরণ ঘটায় এবং ইট-পাটকেল নিক্ষেপ করে। এরপর দুই পক্ষের ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়া হয়। আমাদের চারজন আহত হয়।’
‘তারা নিজেরাই জি এম কাদেরের বাড়ির জানালার থাই ভাংচুর করেছে এবং আগুন ধরিয়ে দিয়েছে। সেখানকার সিটিটিভি ক্যামেরা চেক করলে সব পাওয়া যাবে। আমরা এই হামলার তীব্র নিন্দা ও তাদের গ্রেফতারের দাবি জানাচ্ছি,’ বলেন তিনি।
ঘটনার পর সেখানে অতিরিক্ত পুলিশ ও সেনাবাহিনী মোতায়েন করা হয়েছে। বর্তমানে সেনপাড়া এলাকায় জাতীয় পার্টির নেতাকর্মীরা অবস্থান নিয়েছেন। রাত দেড়টার দিকে পুলিশ জানিয়েছে, পরিস্থিতি এখন নিয়ন্ত্রণে।
রংপুর মহানগর কোতোয়ালি থানার ওসি আতাউর রহমান জানান, ‘জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান জি এম কাদের তার সেনপাড়াস্থ বাড়িতে অবস্থানকালে এনসিপি এবং তাদের যে ছাত্র সংগঠন আছে তারা তাকে গ্রেফতারের দাবিতে একটি মিছিল নিয়ে আসে।
সেনপাড়া মোড়ের সামনে জাতীয় পার্টির নেতাকর্মীদের সাথে তাদের ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়া হয়। আমরা খবর পেয়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনি। উভয়পক্ষ দুই দিকে চলে গেছে। সেনাবাহিনী ঘটনাস্থল পরিদর্শন করে গেছে। আমরা অবস্থান নিয়ে আছি।‘
উল্লেখ্য, বেশ কিছুদিন বিরতির পর বুধবার আবারো মুখোমুখি অবস্থান নেয় জাতীয় পার্টি ও এনসিপি-বৈষম্যবিরোধী ছাত্রআন্দোলন।
ওইদিন দুপুরে রংপুর সিটির সাবেক মেয়র ও কাউন্সিলরদের পুনর্বহালের দাবিতে বের করা বিক্ষোভ সমাবেশ থেকে সরকারকে সাত দিনের আল্টিমেটাম দেন সাবেক মেয়র ও জাতীয় পার্টির কো-চেয়ারম্যান মোস্তাফিজার রহমান এর
প্রতিবাদে ওই রাতেই তাকে গ্রেফতারের দাবিতে বিক্ষোভ মিছিল ও সমাবেশ করে এনসিপি ও বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন।
জাতীয় পার্টিকে আওয়ামী লীগের দোসর আখ্যা দেয়া নিয়ে রংপুরে দলটির নেতাকর্মীদের সাথে এনসিপি, বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন ও অন্যান্য রাজনৈতিক দলগুলোর বাকযুদ্ধ চলছে দীর্ঘদিন ধরে। যা যেকোনো মুহূর্তে রক্তক্ষয়ী সংঘর্ষে রূপ নিতে পারে বলে শঙ্কা খোদ আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর।
বাতায়ন ২৪ ডটকম /শরিফুল ইসলাম।