স্পেশাল করেসপন্ডেন্ট,রংপুর।। বাতায়ন২৪ডটকম।।
রংপুরের অপসারিত মেয়র-কাউন্সিলরদের পুনর্বহালের জন্য ৭ দিনের আল্টিমেটাম দিয়ে মেয়র মোস্তফা বলেন আজকে শুধু একটি মিসকল দেয়া হলো এই অর্থব সরকারকে।
আগামী সাত দিনের মধ্যে দাবি মেনে নেওয়া না হলে ঈদের পর রংপুর অচল করে
দেওয়ার হুমকি দেন তিনি।
সিটি কাউন্সিলরসহ নগরবাসীর পক্ষে অপসারিত মেয়র ও জাতীয় পার্টির কো-চেয়ারম্যান মোস্তাফিজার রহমান মোস্তফা এ ঘোষণা দেন।
বুধবার (২৮ মে) দুপুরে রংপুর সিটি কর্পোরেশনের সামনে সমাবেশ কর্মসূচি পালন করেন আন্দোলনকারীরা। এতে অপসারিত মেয়র ও কাউন্সিলরদের কর্মী-সমর্থক ছাড়াও ব্যবসায়ী, শ্রমিকসহ বিভিন্ন ওয়ার্ড থেকে আসা মানুষজন অংশগ্রহণ করেন।
এর আগে, সিটি কর্পোরেশনে নাগরিকসেবা নিশ্চিত করতে অপসারিত জনপ্রতিনিধিদের পুনর্বহালের দাবিতে নগরীর শাপলা চত্বর থেকে রংপুর নগরবাসীর ব্যানারে একটি বিক্ষোভ মিছিল বের করা হয়। মিছিলটি নগরীর গ্রান্ড হোটেল মোড়, প্রেসক্লাব, জাহাজ কোম্পানি মোড়, পায়রা চত্বর ও টাউন হল সড়ক হয়ে সিটি কর্পোরেশন ফটকে গিয়ে শেষ হয়। এ সময় প্ল্যাকার্ড হাতে বিভিন্ন স্লোগান দেন সাবেক মেয়র মোস্তফা ও কাউন্সিলরদের সমর্থকরা।
পরে সেখানে অনুষ্ঠিত সমাবেশে বক্তব্য দেন সিটি কর্পোরেশনের সাবেক কাউন্সিলর মাহমুদুর রহমান টিটু, মোখলেছুর রহমান তরু, মকবুল হোসেন, ফেরদৌসী বেগম, জেলা পরিষদ সুপার মার্কেট দোকান মালিক সমিতির সভাপতি জাবেদ হোসেন জুয়েল, অবসরপ্রাপ্ত সেনা কর্মকর্তা আব্দুর রহিম, মহানগর দোকান কর্মচারী ইউনিয়নের সভাপতি জাহেদুল ইসলামসহ অন্যরা।
বক্তারা বলেন, স্বৈরাচার আওয়ামী সরকার রংপুর সিটি কর্পোরেশনকে উন্নয়ন বঞ্চিত করা হয়েছে। জুলাই গণঅভ্যুত্থানে রংপুর সিটি কর্পোরেশনের পরিষদ ছাত্র-জনতাকে পানি, ছাতা, অসুস্থদের অ্যাম্বুলেন্স সেবাসহ নানা ধরনের সহযোগিতা করে আন্দোলনকে বেগবান করেছে। গণঅভ্যুত্থানের পরও সিটি কর্পোরেশনের মেয়র ও কাউন্সিলররা তাদের স্বাভাবিক কার্যক্রম পরিচালনা করে আসছিলেন। সেই সময় সিটি কর্পোরেশনের কার্যক্রমে কোনো শূন্যতা দেখা যায়নি। কিন্তু সরকার অন্য সিটি কর্পোরেশনের সঙ্গে রংপুর সিটি কর্পোরেশনের পরিষদকেও অপসারণ করেছে।
তারা আরও বলেন, একটি অবাধ, সুষ্ঠু ও স্বচ্ছ নির্বাচনের মাধ্যমে সিটি কর্পোরেশনের পরিষদ গঠিত হয়েছিল। কোনো ভোটকেন্দ্রে কারচুপি বা বিশৃঙ্খলা হয়নি। ওই নির্বাচনে মেয়র লক্ষাধিক ভোটে নির্বাচিত হয়েছিলেন। তাই অবিলম্বে অপসারিত পরিষদকে পুনর্বহাল করতে হবে। সিটি কর্পোরেশনে জনপ্রতিনিধি না থাকায় জন্মনিবন্ধন, ওয়ারিসন সনদসহ নানা সেবা নিতে ভোগান্তিতে পড়তে হচ্ছে নাগরিকদের।
সমাবেশে রংপুর সিটি কর্পোরেশনের সাবেক মেয়র মোস্তাফিজার রহমান মোস্তফা বলেন, এক দেশে দুই আইন চলতে পারে না। চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশন নির্বাচনে বিএনপির প্রার্থী শাহাদাত হোসেন ভোটে কারচুপির অভিযোগ এনে নির্বাচন থেকে সরে দাঁড়িয়েছিলেন। তাকে পুনর্বহাল করা হয়েছে, আমরা এটিকে সাধুবাদ জানাই। ঢাকা দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশনে ইশরাক হোসেনকে মেয়র হিসেবে দায়িত্ব দেওয়া হচ্ছে, আমরা এটিকেও সাধুবাদ জানাই। একটি স্বচ্ছ নির্বাচন প্রক্রিয়ার মাধ্যমে জনগণের ভোটে নির্বাচিত পরিষদকে কেন পুনর্বহাল করা হবে না, এটি নগরবাসী জানতে চায়।
বিপৎসীমার ওপরে দক্ষিণাঞ্চলের ৬ নদীর পানি
শিশুর সঙ্গে ‘দানবীয়’ গরুর বন্ধুত্ব
তিনি বলেন, বিভিন্ন ওয়ার্ডের দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মকর্তা ও প্রশাসক সিটি কর্পোরেশন পরিচালনা করতে পারছে না। সিটি কর্পোরেশনে যে সাজানো বাগান ছিল, তা এই আমলারা নষ্ট করে ফেলছে। কোটি কোটি টাকার গাড়ি, যন্ত্রপাতি তেলের অভাবে চলছে না। এভাবে চলতে থাকলে সিটি কর্পোরেশনে শুধু ইট-পাথরের দালান থাকবে, আর কোনো কিছুর অস্তিত্ব থাকবে না।
এ সময় কঠোর আন্দোলনের হুঁশিয়ারি দিয়ে মোস্তফা বলেন, অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ও স্থানীয় সরকার উপদেষ্টাকে বলব আগামী সাত দিনের মধ্যে সিটি পরিষদকে পূর্বের মতো কার্যকর করবেন বলে প্রত্যাশা করি। আর যদি না করেন তাহলে ঈদের পরে ১২ অথবা ১৩ জুন থেকে নগর ভবনের মূল ফটকের সামনে মঞ্চ বসিয়ে দাবি আদায় না হওয়া পর্যন্ত লাগাতার কর্মসূচি পালন করা হবে।
তিনি বলেন, সবাই প্রস্তুত থাকবেন। দাবি আদায় করতে গেলে আঙুল বাঁকা করতে হবে। মব ভায়োলেন্স আপনারা করতে পারেন, শাহবাগ অবরোধ করতে পারেন, রংপুরের মানুষ করতে পারে না? আপনারা আপনাদের পূর্ব পুরুষদের কাছে জেনে নেবেন রংপুরের মানুষ কী করতে পারে আর কী করতে পারে না। আগামী দিনে জ্বলে উঠবে রংপুরের সাধারণ মানুষ, আপামর জনতা দলমত নির্বিশেষে সবাইকে রংপুরকে অচল করে দেওয়ার ঘোষণা দিচ্ছি।
সিটি করপোরেশনের বর্তমান প্রশাসক দুর্নীতিগ্রস্ত আখ্যা দিয়ে মোস্তফা বলেন, এই সিটি করপোরেশনে এমন একজন দুর্নীতিবাজ বিভাগীয় কমিশনারকে দায়িত্ব দিয়েছে যে টাকা ছাড়া কিচ্ছু বোঝে না। প্রত্যেকটা ফাইলে এক পারসেন্ট কমিশন গুনে নিয়ে তালিকা দেবে তারপরে সই করবে। এরকম একজন বিভাগীয় কমিশনারকে দায়িত্ব দিয়ে রংপুর সিটিবাসীর প্রতি স্টিম রোলার চালানো হচ্ছে।
এই আন্দোলনকে সমর্থন জানিয়ে সমাবেশ ও মিছিলে জাতীয় পার্টির প্রেসিডিয়াম সদস্য এস এম ইয়াসির, মহানগরের সিনিয়র সহসভাপতি লোকমান হোসেন, জেলা সাধারণ সম্পাদক হাজী আব্দুর রাজ্জাকসহ জাতীয় পার্টির নেতাকর্মীরা অংশ নেন।
এদিকে বিক্ষোভ ও সমাবেশের কারণে নগরীর কাচারী বাজার, পুলিশ লাইন মোড়, টাউন হল সড়ক, সিটি বাজার ও পায়রা চত্বরসহ প্রায় ২ কিলোমিটার এলাকাজুড়ে তীব্র যানজট সৃষ্টি হয়। এতে সাধারণ মানুষ চরম দুর্ভোগে পড়ে।
উল্লেখ্য, সবশেষ ২০২২ সালের ২৭ ডিসেম্বর অনুষ্ঠিত রংপুর সিটি কর্পোরেশন নির্বাচনে জাতীয় পার্টির লাঙ্গল প্রতীক নিয়ে মোস্তাফিজার রহমান মোস্তফা ১ লাখ ৪৬ হাজার ৭৯৮ ভোট পেয়ে দ্বিতীয়বারের মতো মেয়র নির্বাচিত হন। তার নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী ছিলেন ইসলামী আন্দোলনের প্রার্থী মো. আমিরুজ্জামান পিয়াল, যিনি পেয়েছিলেন ৪৯ হাজার ৮৯২ ভোট।
ওই নির্বাচনে ভোট ব্যবধানে তৃতীয় অবস্থানে থাকা স্বতন্ত্র প্রার্থী লতিফুর রহমান মিলন হাতি প্রতীকে ৩৩ হাজার ৮৮৩ ভোট পেয়েছিলেন। আর চতুর্থ অবস্থানে থাকা আওয়ামী লীগের প্রার্থী অ্যাডভোকেট হোসনে আরা লুৎফা ডালিয়া নৌকা প্রতীকে পেয়েছিলেন ২২ হাজার ৩০৬ ভোট।
বাতায়ন২৪ডটকম/শরিফুল ইসলাম।