সংবাদ শিরোনাম :
হারাগাছে অনলাইন ক্যাসিনো সহ সকল জুয়া বন্ধের দাবিতে মানববন্ধন জামায়াতে ইসলামীর আমির: ‘আমরা ইসলামকে ক্ষমতায় আনতে চাই’ আওয়ামীলীগ একটি ভন্ড প্রতারক সন্ত্রাসী দুর্নীতিবাজ দল:অধ্যক্ষ আসাদুল হাবিব দুলু রংপুরে শিবিরের হেল্প ডেক্স হামলা বিক্ষোভ আটক- ২ ২৪ ঘন্টার মধ্যে মামলা রেকর্ড না হলে থানা ঘেরাও করা হবে : কো-চেয়ারম্যান মোস্তফা জিম কাদেরের বাসভবনে হামলার প্রতিবাদে রংপুর জাপার বিক্ষোভ ছাত্র শিবিরের হেল্পডেক্সে সন্ত্রাসী হামলা, আহত ৬  পীরগঞ্জের সেনা অভিযানে ইয়াসহ মাদক ব্যবসায়ী গ্রেফতার চাঁদাবাজ, সন্ত্রাসীদের ধরতে কঠোর অবস্থানে সেনাবাহিনী বদরগন্জে গরুর বাজারে চাদাবাজ ও ফুটপাত দখল মুক্ত করতে যৌথ বাহিনীর অভিযান।
বৈষম্য বিরোধী ১৬ নেতাকর্মীর পদত্যাগ: আহবায়কদের দাবি ছাত্রলীগের এজেন্ডা বাস্তবায়ন

বৈষম্য বিরোধী ১৬ নেতাকর্মীর পদত্যাগ: আহবায়কদের দাবি ছাত্রলীগের এজেন্ডা বাস্তবায়ন

স্টাফ করেসপন্ডেন্ট,রংপুর।। বাতায়ন২৪ডটকম।।

বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের রংপুর জেলা ও মহানগরের আহবায়ক, সদস্য সচিবসহ শীর্ষ চার নেতার বিরুদ্ধে অর্থ আত্মসাত, চাঁদাবাজিসহ বিভিন্ন অভিযোগ তুলে ১৬ নেতাকর্মী পদত্যাগ করেছেন। তবে মহানগর ও জেলা আহবায়ক  দাবি করেছেন, যারা পদত্যাগ করেছেন তাদের মধ্যে ৫/৬ জন সরাসরি ছাত্রলীগের সাথে জড়িত। ছাত্রলীগ পরিকল্পিতভাবে জুলাই আন্দোলনকে প্রশ্নবিদ্ধ করতে যে এজেন্ডা বাস্তবায়ন করছে। এই পদত্যাগের ঘটনা সেই নাটকেরই অংশ। সোমবার সাংবাদিক সম্মেলন করে  এ বিষয়ে আনুষ্ঠানিক বক্তব্য দেয়ার কথাও জানিয়েছেন তারা।

রোববার (১৮ মে) রাতে রংপুর শিল্পকলা একাডেমি চত্বরে সংবাদ সম্মেলনে এই পদত্যাগের ঘোষণা দেন ১৬ নেতাকর্মী। তারা অভিযোগ তুলেছেন, জেলা আহবায়ক ইমরান আহমেদ, সদস্য সচিব ডা. জামিল, মুখ্য সংগঠক ইয়াসির আরাফাত এবং মহানগর আহবায়ক ইমতিয়াজ আহমেদ ইমতির বিরুদ্ধে।

পদত্যাগীরা হলেন, বৈষম্য বিরোধী ছাত্র আন্দোলন রংপুর মহানগর কমিটির যুগ্ম সদস্য সচিব সিয়াম আহসান আয়ান, সংগঠক আদনান সামির, মাহদী হাসান অনিক, এনায়েত রাব্বি, সদস্য সীমান্ত হোসেন, আল আমিন, আল সামস সিয়াম, মুক্তাসিন ফুয়াদ সাদিদ, আরাফাত সানি আপন, আল তানজিম আহসান, মুজাহিদ, রাতুল এবং জেলা কমিটির সদস্য মাহাতাব হোসেন আবীর, মুবতাসিম ফুয়াদ সাদিদ, জুনাইদ ইসলাম সাদিদ, সৃজন সাহা ও সাওম মাহমুদ সিরাজ। এর আগে গত ১৫ মে নেতাদের দুর্নীতির অভিযোগে পদত্যাগ করেন জেলা কমিটির আরেক সদস্য মাহমুদুর রহমান লিওন।

সংবাদ সম্মেলনে পদত্যাগের কারণ হিসেবে বৈষম্য বিরোধী  ছাত্র আন্দোলনের রংপুর মহানগর যুগ্ম সদস্য সচিব সিয়াম আহসান আয়ান অভিযোগ করেন,  ‘২০০০ শহীদের রক্তের উপর দাঁড়িয়ে আমরা স্বাধীন হয়েছি। স্বাধীনতার সময় আমাদের নেতৃত্ব দিয়েছিল একটি নির্দিষ্ট গোষ্ঠী বা সমন্বয়ক। সমন্বয়ক শব্দটি পরবর্তীতে পরিবর্তিত হয়ে বৈষম্য বিরোধী ছাত্র আন্দোলন। গত ছয় থেকে সাত মাসের মধ্যে বর্তমানে আমরা ২০ জনের মতো পদত্যাগ করেছি। এ সংখ্যা হয়তোবা আরো বাড়বে।’

আয়ানের অভিযোগ,  ‘ যখন থেকে আমরা নোংরামো দেখছি তখন থেকে আমরা পদত্যাগ শুরু করেছি। অবস্থাটা এমন ছিল আমরা নিশ্চুপ কিন্তু অন্ধ না। অনেকবার আমরা এর প্রতিবাদ করতে পারিনি। হয়তো মিডিয়াই আনা হয়নি। যে কয়বার চেষ্টা করা হয়েছে। তাদেরকে কোন একটা কারণে হোক প্ল্যাটফর্ম থেকে সরিয়ে দেওয়া হয়েছে।’

সংবাদ সম্মেলনে আয়ানের অভিযোগ, ‘একজন আহ্বায়ক জেলা কমিটি থেকে একটি করে পাঞ্জাবি দেওয়ার কথা ছিল। কমিটির ১৫৮ জন সদস্যকে কিভাবে একজন পাঞ্জাবি দেয়। আমরা তখন তার আয়ের উৎস খোঁজার চেষ্টা করি। ত্রানের সময় আমাদের একটা টাকা উঠেছিল। সেখান থেকে ৮৭ হাজার টাকা জমা ছিল। জেলা কমিটির মুখ্যপত্র ইয়াসিন আরাফাত আমাদের সে হিসাবটি দেয়নি। আহতদের দুইটি করে স্মার্ট প্যাকেট দেওয়ার কথা ছিল। সেখানে তাদেরকে একটি করে দেওয়া হয়েছে। আমি আজকে পদত্যাগ করেতেছি আমি হয়তোবা আর দুইদিন থাকলে আমাকেও গেম প্ল্যান করে সরানো হতো।’

আয়ান আরও অভিযোগ করেন, ‘তাসিনকে একটি নির্দিষ্ট গেমপ্ল্যান করে সরানো হয়েছে। বৈষম্য বিরোধী ছাত্র আন্দোলন একটি অ-রাজনৈতিক প্ল্যাটফর্ম। অন্যান্য দলের মতো কথায় কথায় মিছিল ও মঞ্চ করার আমাদের কাজ না। ৫ আগস্ট এর পর পুরো বাংলাদেশটা ছাত্রদের ওপর নির্ভর ছিল। তারা সংস্কার করবে। তখন বিভিন্ন সরকারি অফিস আমাদেরকে ডাকতো ছাত্র প্রতিনিধি হিসেবে। ’

জেলা কমিটির পদত্যাগি সদস্য মাহতাব হোসেন আবির সংবাদ সম্মেলনে অভিযোগ করেন, ‘ ত্রানের ৮৭ হাজার টাকার হিসাব দিতে পারেনি, কনফিডেন্স পাওয়ার প্লান্টে দেড় কোটি টাকার অভিযোগ, রংপুর সিটি কর্পোরেশনের ৩০ জনের নিয়োগ বাণিজ্য। মেলা থেকে হাউজীর জুয়াতে জেলা ৭ লক্ষ টাকা ও মহানগরে ৭ লক্ষ টাকা নিয়ে আত্মসাত করেছে।’

তবে সকল অভিযোগ অস্বীকার করেছেন জেলা আহবায়ক ইমরান হোসেন। তিনি জানান, ‘ এটি টোটালি ষড়যন্ত্র। বৈষম্য বিরোধী প্লাটফর্মকে প্রশ্নবিদ্ধ করতেই এটি ছাত্রলীগের একটি সাজানো নাটক।’

ইমরান আহমেদের দাবি , ‘ বঙ্গবন্ধু ডিজিটাল ইউনিভার্সিটির শিক্ষার্থীর তানজিম আলম তাসিন ছাত্রলীগের সদস্য। জুলাই বিপ্লবের সময় ১৫, ১৬ ১৭ তারিখ  রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের সামনে সরাসরি  ছাত্রলীগের হয়ে  বৈষম্য বিরোধী আন্দোলনে আন্দোলনে হামলা করে। তার ছবি ও ফুটেজ খোদ শেয়ার করেছে নিষিদ্ধ সংগঠন ছাত্রলীগের জেলা সভাপতি সাব্বির আহমেদ।এছাড়াও বদরগঞ্জ পৌর ছাত্রলীগের সদস্য ও ৩ নং ওয়ার্ড সভাপতি প্রার্থী মাহমুদার রহমান লিওনসহ ৫/৬ জন ছাত্রলীগের সদস্য কেন্দ্রে যোগাযোগ করে ঘাপটি মেরে থাকা ছাত্রলীগের লবিতে  সংগঠনকে ভুল বুঝিয়ে জেলা ও মহানগরে সদস্য পদ বাগিয়ে নেয়। বিষয়টি আমরা বুঝতে পেরে কেন্দ্রে জানাই। কিন্তু সেটা তারা আমলে নেয় নি।’

ইমরান আহমেদের দাবি, ‘তাসিন গুপ্তচরবৃত্তির মাধ্যমে আমাদের তথ্য ছাত্রলীগকে পার করতো। সেটা টের পেয়ে আমরা তাকে বহিস্কার করেছি। এছাড়াও লিওন একই কাজ করছিল। সে গ্রুপের স্ক্রিন শট বিভিন্ন জায়গায় দিতো। এতে আমাদের প্লান ছাত্রলীগের কাছে চলে যেতো। এ বিষয়টা আমরা তাকে সাবধান করাতে সে একাই ১৫ মে পদত্যাগ করে। এদের পদত্যাগের পর নিষিদ্ধ সংগঠন ছাত্রলীগের রংপুর জেলা সভাপতি সাব্বির আহমেদ অভিনন্দন জানিয়ে পোস্ট দিয়েছেন। এটার মাধ্যমে ছাত্রলীগের টার্গেট স্পস্ট হয়েছে।’

ইমরান আহমেদ আরও দাবি করেন, ‘ ত্রাণের কালেকশনকৃত টাকা ৮৭ হাজার কমিটি হওয়ার পর জেলা ও মহানগর কমিটিকে সমান সমান করে ভাগ করে দেয়া হয়। জেলার টাকা এখনও সংরক্ষিত আছে। সামনে কোন দুর্যোগ আসলে সেটা ব্যবহারের সিদ্ধান্ত হয়ে আছে। এছাড়া মেলার নামে হাউজি, সিটি করপোরেশনের নিয়োগসহ বিভিন্ন স্থান থেকে টাকা নেয়াসহ যেসব অভিযোগ করা হয়েছে সেটা মিথ্যা। ন্যুনতম প্রমাণ দেখাতে পারলে প্লাটফর্ম থেকে ইস্তফা নিয়ে চলে যাবো।’

ইমরান দাবি করে বলেন, ‘আমরা ঈদের আগে গ্রুপে সেলামি নিয়ে নানা ধরণের কথা লেখালেখি করেছি। কেউ পাঞ্জাবী দেয়া, টাকা দেয়ার কথা বলেছে। এটা কেবলই ফান করে সবাই লেখালেখি করেছি। তবে ইফতার মাহফিল করে কিছু টাকা বেশি হয়েছিল। সেই টাকা কিছু কিছু করে তাৎক্ষণিকভাবে সেখানে কয়েকজনের মধ্যে ভাগ করে দেয়া হয়েছে। যারা রাতদিন পরিশ্রম করেছিল।’

ইমরান দাবি করেন, ‘ একটি গ্রুপ কখনই আমাদেরকে মেনে নিচ্ছে না। আমরা ছোট মানুষ। কিন্তু জুলাই বিপ্লবী হওয়ার কারণে সমাজে এবং প্রশাসনে আমাদের ডাকা হয়। আমরাও চেয়ারে বসি। ভয়েস রেজ করি। এটাও অনেকে সহ্য করতে পারছে না। শ্যামাসুন্দরী খাল, রংপুর মেডিকেল কলেজ, চীনের হাসপাতাল, তিস্তা মহাপরিকল্পনার কাজসহ  রংপুরের উন্নয়ন তরান্তিত করতে সামনে থেকে আমরা ভয়েস রেস করি। যেটা অনেকের সহ্য হচ্ছে না। আমরা ছোট মানুষ। অনেকেই আছে ইন্টারমিডিয়েট লেবেলে তাদেরকে ভুল বুঝিয়ে ছাত্রলীগের পাশাপাশি ওই গ্রুপটিও এগুলো করছে। আমরা  পিছু পা হবো না।’

অভিযোগের বিষয়ে জানতে চাইলে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের জেলা কমিটির আহ্বায়ক ইমরান আহমেদ বলেন, আমরা ষড়যন্ত্রের শিকার। আগামীকাল সংবাদ সম্মেলন করে পুরো বিষয়টি স্পষ্ট করা হবে।

মহানগর কমিটির আহ্বায়ক ইমতিয়াজ আহমেদ ইমতি দাবি করেন, মৃত্যুকে আলিঙ্গন করে জুলাই বিপ্লবের মাধ্যমে ফ্যাসিবাদি শক্তিকে পরাজিত করেছি। বিপ্লবের পর সামনের সারিতে থেকে রংপুরের সমস্যা সমাধান এবং উন্নয়ন নিশ্চিতে কাজ করছি। এটা অনেকেরই সহ্য হচ্ছে না। তার ওপর ফ্যাসিবাদি ছাত্রলীগ-আওয়ামীলীগের কিছু সদস্য কমিটিতে ঢাকায় যোগাযোগ করে কমিটিতে জায়গা নিয়েছে। তারা আমাদেও মধ্যে বিভেদ তৈরি করতে এই পদত্যাগ নাটক সাজিয়েছে। তাদের মুল এজেন্ডা জাতির সামনে প্রকাশ হয়ে যাবে খুব কম সময়ের মধ্যে। তারা আমাদের  ঔক্য বিনস্ট করতেই এই পদত্যাগ করেছে। আমরা ফ্যাসিবাদের বিরুদ্বে, বৈষম্যের বিরুদ্ধে ঐক্যবদ্ধ আছি। ’

ইমতির দাবি, ত্রাণের যে টাকা মহানগর কমিটির কাছে ছিল তা ঈদের আগে বিতরণ করা হয়েছে। এছাড়াও চাঁদাবাজিসহ অন্যান্য যে অভিযোগ তোলা হয়েছে সেটা মিথ্যা। তাদেরকে প্রমাণ দেয়ার আহবান জানাচ্ছি। আমরা বিষয়টি নিয়ে ফোরামে আলোচনা করে সাংবাদিক সম্মেলনের মাধ্যমে আমাদের বক্তব্য তুলে ধরবো।

গেলো বছর ২৪ নভেম্বর বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের ১৫৫ সদস্যের কমিটি গঠন করা হয়। এতে ইমরান আহমেদকে আহ্বায়ক ও ডা. আশফাক আহমেদ জামিলকে সদস্য সচিব করা হয়। একই ১২২ সদস্যের রংপুর মহানগর কমিটি করা হয়। তাতে ইমতিয়াজ আহমেদ ইমতিকে আহ্বায়ক ও রহমত আলীকে সদস্য সচিব করা হয়।

দয়া করে নিউজটি শেয়ার করুন..




© All rights reserved © batayon24
Design & Developed BY ThemesBazar.Com