সংবাদ শিরোনাম :
বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন ও জাতীয় নাগরিক কমিটির ব্যানারে রংপুরে বিক্ষোভ মিছিল, ভারতীয় পণ্য-মিডিয়া বর্জনের ডাক আলেমা খাতুন মেমোরিয়াল হাসপাতাল এন্ড ডায়াগনস্টিক সেন্টারের উদ্বোধন সাংবাদিকের মা-কে পেটানোর আসামীরা এখনো ধরা ছোঁয়ার বাহিরে। রংপুরে ভর্তিতে লটারি পদ্ধতি বাতিলের দাবিতে মানববন্ধন। রংপুরে বাসা থেকে আইনজীবীর মরদেহ উদ্ধার আন্দোলনের মুখে ওএসডি রমেক অধ্যক্ষ ডা. মাহফুজ, আন্দোলন প্রত্যাহার ‘আগে ডিসিই হতেই পারি নাই, এখন ডিসিদের চালাবো। সাহস করে দায়িত্ব নিয়েছি’ নির্দিষ্ট চাহিদা অনুযায়ী আলুবীজ পাচ্ছেন না রংপুর অঞ্চলের কৃষকরা বেরোবির পাঠ্যক্রমে যুক্ত হচ্ছে জুলাই গনঅভ্যুত্থানের ইতিহাস বেরোবিতে লেজুড়বৃত্তিক ছাত্র রাজনীতি বন্ধ উপাচার্য
ছাত্র সংগঠনগুলোর সঙ্গে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের মতবিনিময়ে কি প্রাধান্য পেলো

ছাত্র সংগঠনগুলোর সঙ্গে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের মতবিনিময়ে কি প্রাধান্য পেলো

স্টাফ করেসপনডেন্ট, ঢাকা।। বাতায়ন২৪ডটকম।।

প্রায় সাড়ে তিন মাস পর রবিবার (২২ সেপ্টেম্বর) থেকে পুনরায় ক্লাস শুরু হচ্ছে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে। এ উপলক্ষে ক্যাম্পাস কীভাবে স্থিতিশীল রাখা যায়, শিক্ষার পরিবেশ নিশ্চিতে ক্যাম্পাসে ক্রিয়াশীল ছাত্র সংগঠনগুলোর সঙ্গে মতবিনিময় সভা করেছে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন।

শনিবার (২১ সেপ্টেম্বর) বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন দুই ধাপে ১১টি ছাত্র সংগঠনের নেতাদের সঙ্গে এই সভা করে। এ সময় দ্বিপাক্ষিক আলোচনা হয়। বেশিরভাগ সময়ই ছাত্র নেতারা আলোচনা করেছেন বলে জানা যায়।

আলোচনায় প্রাধান্য পেয়েছে- পরিবেশ পরিষদের সভা আহ্বান করে ছাত্র সংসদ (ডাকসু) নির্বাচনের পরিবেশ তৈরি করে নির্বাচন দেওয়া, বর্তমান সিন্ডিকেট কমিটি ভেঙে দিয়ে নতুন সিন্ডিকেট কমিটি গঠন, ছাত্র রাজনীতি বন্ধ নয় যৌক্তিক সংস্কার ও শতভাগ আবাসন নিশ্চিত করার বিষয়গুলো।

এছাড়াও, বিশ্ববিদ্যালয়ে জনপরিসরগুলোকে সঙ্কুচিত করার সমালোচনা করা হলে সেটি নিয়ে কমিশন গঠন করা হয়েছে বলে জানানো হয়। বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন ‘বহিরাগত’ শব্দটি ব্যবহার করবে না বলে কথা দিয়েছে বলেও জানা যায়।

সভায় বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন ১১টি ছাত্র সংগঠনের বিশ্ববিদ্যালয় শাখা সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদককে সভায় আমন্ত্রণ জানায়। সংগঠনগুলো হলো-জাতীয়তাবাদী ছাত্রদল, গণতান্ত্রিক ছাত্র কাউন্সিল, বাংলাদেশ ইসলামী ছাত্র শিবির, সমাজতান্ত্রিক ছাত্র ফ্রন্ট (একাংশ), সমাজতান্ত্রিক ছাত্র ফ্রন্ট (একাংশ), বাংলাদেশ ছাত্র ফেডারেশন, বিপ্লবী ছাত্র মৈত্রী, পাহাড়ি ছাত্র সংগ্রাম পরিষদ, বাংলাদেশ ছাত্রলীগ জাসদ, ইসলামি ছাত্র আন্দোলন বাংলাদেশ ও বাংলাদেশ ছাত্র ইউনিয়ন।

প্রথম ধাপে আলোচনা সভায় ছিল-বাংলাদেশ ইসলামী ছাত্রশিবির, বিপ্লবী ছাত্র যুব আন্দোলন, গণতান্ত্রিক ছাত্র কাউন্সিল এবং আরেকটি সংগঠন।

দ্বিতীয় দফায় উপস্থিত ছিল- সমাজতান্ত্রিক ছাত্রফ্রন্টের দুই অংশ, ছাত্রদল, ছাত্র ইউনিয়ন, বিপ্লবী ছাত্র মৈত্রী ও ইসলামী ছাত্র আন্দোলন বাংলাদেশ।

সভায় ছাত্রনেতারা সবাই ডাকসু নির্বাচনের দাবি জানান। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাস ও হলগুলোতে বিগত সময়ে সংগঠিত অপরাধের বিচারের জন্য স্বাধীন তদন্ত কমিশন গঠন ও অপরাধীদের বিচার নিশ্চিতের দাবি জানায় ছাত্রদল।

ছাত্রদল সাধারণ সম্পাদক নাহিদুজ্জামান শিপন জানান, বিশ্ববিদ্যালয় খোলা উপলক্ষে ছাত্র সংগঠনগুলো কীভাবে প্রশাসনকে সহায়তা করতে পারে এবং প্রশাসন কীভাবে কার্যকর ভূমিকা রাখতে পারে সে বিষয়ে আলোচনা হয়েছে।

তিনি বলেন, আমরা বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনকে বলেছি, এখনও হলে হলে যেসব ঘটনা ঘটছে এগুলোর বিচার করতে হবে। বিগত ফ্যাসিবাদী সরকারের আমলে ক্যাম্পাসে এবং হলগুলোতে যেসব নির্যাতনের ঘটনা ঘটেছে সেগুলো নিয়ে একটি স্বাধীন তদন্ত কমিশন গঠন করতে হবে। তদন্ত সাপেক্ষে এসব ঘটনার বিচার নিশ্চিত করতে হবে। বর্তমান যে সিন্ডিকেট রয়েছে সেখানে অধিকাংশ সদস্যই ফ্যাসিবাদী সরকারের দোসর, তাই খুব শিগগিরই সেই সিন্ডিকেট ভেঙে দিয়ে নতুন সিন্ডিকেট কমিটি গঠন করতে হবে।

ছাত্রদল সাধারণ সম্পাদক বলেন, আমরা আরও দাবি জানিয়েছি, হলগুলোতে যেন আর কখনোই গণরম, গেস্টরুম না হয়। বিশ্ববিদ্যালয়ে শতভাগ আবাসন নিশ্চিত করার লক্ষ্যে নতুন হল তৈরির পরিকল্পনা গ্রহণ করতে হবে এবং হল তৈরির ঘোষণা দেওয়ার দাবি জানিয়েছেন বলেও জানান তিনি।

তিনি আরও বলেন, ডাকসু নির্বাচন আমাদের সবার দাবি। আমরা পরিবেশ পরিষদের সভা আহ্বানের মাধ্যমে ডাকসু নির্বাচনের পরিবেশ তৈরি করে নির্বাচন দেওয়ার দাবি জানিয়েছি। হলে যেন নিয়মিত শিক্ষার্থীর বাইরে কেউ না থাকতে পারে সেটি নিশ্চিত করার কথাও বলেছি।

কি হলো আলোচনা:

গণতান্ত্রিক ছাত্র কাউন্সিলের ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শাখার সভাপতি প্রজ্ঞা চৌধুরী জানান, বিশ্ববিদ্যালয়ে ৭৩’র যেই অর্ডিন্যান্স রয়েছে, সেখানে ডাকসুর বড় একটি ক্ষমতা বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের হাতে থাকে। যার কারণে ডাকসু ঠিকঠাক কাজ করতে পারে না। সে আইন থাকলে হয়তো ডাকসুকে মবিলাইজ করা কষ্টকর হয়ে যাবে। এ আইন থাকবে নাকি সংস্কার হবে সে বিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন ও আমরা আলোচনা করেছি।

তিনি বলেন, আমাদের ডাকা হলে প্রথমে আমরা ভেবেছিলাম হয়তো বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন কোনও একটা স্ট্রাকচার আমাদের উত্থাপন করবেন। আমরা তার কাউন্টার স্ট্রাকচার উত্থাপন করবো। কিন্তু সেরকম কিছু হয়নি, দ্বিপাক্ষিক আলোচনা হয়েছে। আর এটি ছিল আলোচনার প্রাথমিক সূত্রপাত। ভবিষ্যতে এরকম আলোচনা আরও হতে পারে।

বিশ্ববিদ্যালয় পরিবেশ সংসদ আবারও কার্যকর হবে কিনা এ বিষয়ে আলোচনা হয়েছে বলে জানিয়ে তিনি বলেন, পরিবেশ পরিষদ মূলত ৯০ এর দশকে তখনকার পরিস্থিতির আলোকে তৈরি হয়েছিল। এর আগে কিন্তু আলোচনায় সব ছাত্র সংগঠনকে ডাকা হতো না। পরিবেশ সংসদ চালু করার পর সেটি হয়। এটি আবারও কার্যকর করা হবে কিনা সেটি নিয়ে আলোচনা হয়।

সমাজতান্ত্রিক ছাত্রফন্টের একাংশের সভাপতি সাদিকুল ইসলাম সাদিক জানান, প্রথমত বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন আমাদের জানিয়েছে আগামীকাল থেকে বিশ্ববিদ্যালয় খোলা। তারা দায়িত্ব নিয়েছে বেশি দিন হয়নি, তাদের দায়িত্ব যথাযথভাবে পালনের জন্য আমাদের সহায়তা চেয়েছেন। এরপর বিশ্ববিদ্যালয়ের মাধ্যমে যে হত্যাকাণ্ড ঘটলো, সেগুলো নিয়ে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন কী কী স্টেপ নিয়েছে আমাদের তা জানিয়েছে।

তিনি জানান, সংগঠনগুলোর পক্ষ থেকে মূলত সার্বিকভাবে যে দাবিগুলো জানানো হয়েছে, তা হলো-বিশ্ববিদ্যালয়ের বর্তমান যে সিন্ডিকেট তা ভেঙে দিতে হবে। কারণ বিশ্ববিদ্যালয় যে সিদ্ধান্তগুলো নেওয়া হবে সেই সিদ্ধান্ত নেওয়ার কোনও নৈতিক অধিকার তারা রাখে না। মব জাস্টিসের মাধ্যমে যেসব হত্যাকাণ্ড সংঘটিত হয়েছে সেগুলোর যথাযথ বিচার করতে হবে।

তিনি বলেন, বিশ্ববিদ্যালয়ে ছাত্ররাজনীতি বন্ধের যে সিদ্ধান্ত নেওয়া হচ্ছে, সেখানে শিক্ষার্থীদের মধ্যে আসলে যে মনোভাবটা কাজ করছে, তা হলো তারা ছাত্রলীগের রাজনীতি দেখেই সেটা মনে করছে। রাজনীতি বন্ধ হলে তাদের এই ট্রমা কাটবে, বিষয়টা এমন না। রাজনীতি ব্যবহার করে কেউ কোনও অপরাধ সংগঠিত করলে, দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি নিশ্চিত করতে হবে। এর মাধ্যমে শিক্ষার্থীরা ছাত্র রাজনীতির ওপর আস্থা ফিরে পাবে। সেজন্য বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন ও হল প্রশাসনগুলোকে কার্যকর করে তুলতে হবে।

সাদিক আরও বলেন, যে গণপরিসরগুলো ধ্বংস করছে সেগুলো নিয়ে আমরা কথা বলেছি। বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন বলেছে বহিরাগত শব্দটি আর ব্যবহার করবে না। বিশ্ববিদ্যালয় জনপরিসর সংরক্ষণের জন্য একটা সংস্কারমূলক কাজ তারা হাতে নিয়েছে, এগুলো তারা করবে। বিশ্ববিদ্যালয়ে শাটল সার্ভিস বাস চালু হবে। এবং সবগুলো বিষয় কীভাবে চলবে, সেটা নিয়ে একটা কমিশন করবে। এখানে শিক্ষক বুদ্ধিজীবী এবং ছাত্র নেতা, শিক্ষার্থীরা মিলে সিদ্ধান্ত নেবে। আমরা ডাকসু নির্বাচন নিয়ে কথা বলেছি, পরিবেশ পরিষদকে সক্রিয় করার কথা বলেছি।

মতবিনিময় সভায় আরও যেসব বিষয়ে আলোচনা হয় সেগুলোর মধ্যে রয়েছে-কোনও অজুহাতেই ছাত্র সংসদ নির্বাচন বন্ধ করা যাবে না, সব সংগঠনের সহাবস্থান নিশ্চিত করা, মধুর ক্যান্টিনে কোনও স্লোগান দেওয়া যাবে না, অ্যাকাডেমিক পরিসরে ক্লাসরুমের সংখ্যা বাড়ানো, ছাত্র দ্বারা শিক্ষক মূল্যায়ন চালু, আধুনিক পাঞ্চকার্ডের মাধ্যমে প্রবেশের ব্যবস্থা করে লাইব্রেরি ২৪ ঘণ্টা খোলা রাখা, শিক্ষার্থীদের বিশ্রামের জন্য পর্যাপ্ত কক্ষ (কমন রুম) বরাদ্দ দেওয়া, এমফিল, পিএইচডিসহ পোস্ট গ্র্যাজুয়েট করতে আগ্রহীদের বৃত্তির ব্যবস্থা করা, গবেষণা খাতে বরাদ্দ বৃদ্ধি, নারীদের হলে প্রবেশের সময়সীমা আলোচনার মাধ্যমে বাড়ানো, গবেষণা ও ফিল্ডওয়ার্ক বাবদ শিক্ষার্থীদের জন্য পর্যাপ্ত অ্যালায়েন্স দেওয়া, শিক্ষক নিয়োগ, সিনেট, সিন্ডিকেট সভা ও যৌন নির্যাতন নিরোধ সেল গঠন, বিভিন্ন ক্যান্টিনে কম দামে মানসম্মত খাবারের ব্যবস্থা করা, ক্যাম্পাসকে পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন রাখা ইত্যাদি।

বাতায়ন২৪ডটকম।। সমামা

দয়া করে নিউজটি শেয়ার করুন..




© All rights reserved © batayon24
Design & Developed BY ThemesBazar.Com