স্টাফ করেসপনন্ডেন্ট,রংপুর।। বাতায়ন২৪ডটকম।।
রংপুর জেলা দায়রা জজ আদালতের সামনে থেকে ভ্যান হারিয়ে কান্নায় ভেঙে পড়া আনারুল-আরেফা দম্পতি পেলেন ভ্যান কেনার টাকা।
আদালত চত্বরে আনারুল-আরেফা দম্পতি কান্নার আহাজারি বিভিন্ন পত্রিকায় প্রকাশ ও টেলিভিশনে প্রচারের পর বিভিন্ন দানশীল ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠান এগিয়ে আসেন। তাদের সহায়তায় আজ আনারুলের হাতে ঢাকা পোস্টের সাংবাদিক ফরহাদুজ্জামান ফারুক ৮০,০০০ টাকা তুলে দেন, যা দিয়ে তিনি একটি নতুন ভ্যান কিনবেন। এই সহায়তা শুধু একটি যানবাহন নয়, বরং তার ও তার পরিবারের নতুন জীবনের সূচনা।
গত (২২ মে) বেলা সাড়ে ১১টার দিকে রংপুর জেলা দায়রা জজ আদালতের সামনে এ ঘটনা ঘটে। আনারুল ইসলামের বাড়ি রংপুরের মিঠাপুকুর উপজেলার ময়েনপুর ইউনিয়নের কাশিমপুর সরকারপাড়া গ্রামে। চার সদস্যের সংসার তার একার আয়ে চলে। কিন্তু ভ্যান হারানোর পর শুরু হয় সংসারে অভাব অনাটন।
সরেজমিনে দেখা গেছে, ভ্যান খুঁজে না পেয়ে ভেঙে পড়েন আনারুল। স্ত্রীর চোখে তখন বিস্ময়, আতঙ্ক আর অসহায়ত্বের ছাপ। আনারুল মিয়া তখন হাউমাউ করে কাঁদছেন আদালত প্রাঙ্গণে। তাকে সান্ত্বনা দিতে এগিয়ে আসেন কিছু মানুষ।
আনারুল ইসলাম বলেন, ‘সাত বছর আগে অনেক কষ্ট করে ১১ শতক জমি কিনছি। তা দখল করছে মিলন। গ্রামে বিচার দিয়া অনেক চেষ্টা করেও জমি উদ্ধার করতে পারি নাই। আমাকে মারধর করে হাসপাতালে পাঠাইছিল। ওই জন্যে গরু বেঁচে আদালতে মামলা করছি। আজ শুনানি কিন্তু তিন তলায় উঠে দেখি আমার ভ্যানখান নাই। শুনানিতে আর যাবার পারি নাই। ৮০ হাজার টাকা দিয়া এনজিও থাকি ঋণ নিয়া ভ্যান কিনছি। আদালতে মোর ভ্যান চুরি হইল, এখন খামো কী, কিস্তি দিমো কী দিয়া।’
আদালত চত্বরে কান্নায় ভেঙে পড়া আনারুলের স্ত্রী আরেফা বেগম বলেন, ‘ভ্যানটা নিচে থুইয়া তিনতলায় গেছি। ১৫-২০ মিনিট পর দেখি ভ্যান নাই। ওই ভ্যানখানে হামার সম্বল। যেকোনো প্রকারে হামাক ভ্যানখান বের করি দেন। ভ্যান না পাইলে কী করি খামো।
আনারুল ইসলাম আরও জানান, সহায় সম্বল বলতে বসতভিটা ও ১৩ শতক আবাদি জমি তার। বড় মেয়েকে বিয়ে দেওয়ার সময় ১৩ শতক জমি বন্ধক দেন তিনি। ২০ বছর ধরে রিকশা চালিয়ে সংসার চালান। অনেক কষ্টে ২০১৯ সালে একই এলাকার আফাজ, দুলাল ও আপজালের কাছে বাড়ির পাশে ১১ শতক জমি কিনেন তিনি। কিন্তু সেই জমি দখল করে নেন মিলন নামে এক ব্যক্তি। স্থানীয়ভাবে অনেক চেষ্টা করেও তিনি জমি উদ্ধার করতে না পারায় আদালতে মামলা করেন। সেই মামলার শুনানি ছিল আজ। সকাল ৯টায় স্ত্রীকে ভ্যানে বসিয়ে নিজে ভ্যান চালিয়ে আদালতে আসেন তিনি। নিচে রিকশাটি রেখে তৃতীয় তলায় ওঠেন। ওপর থেকে কিছুক্ষণ পর দেখেন নিচে রাখা ভ্যানটি নেই।
আনারুল-আরেফা দম্পতি বলেন,আমি কখনো ভাবিনি এভাবে মানুষ পাশে দাঁড়াবে। ফরহাদুজ্জামান ফারুক ভাইয়ের প্রতি আমার চিরকৃতজ্ঞতা। এই টাকা দিয়ে ভ্যান কিনে আবার রোজগার শুরু করব। আমার পরিবার আবার স্বপ্ন দেখতে পারবে। তিনি আরো বলেন সাংবাদিকতা শুধু খবরের গল্প নয়, এটি মানুষের জীবনে পরিবর্তনের হাতিয়ার হয়ে উঠতে পারে।
বাতায়ন২৪ডটকম/শরিফুল ইসলাম।