তীব্র শীতে বিপর্যস্ত গাইবান্ধার জনজীবন

তীব্র শীতে বিপর্যস্ত গাইবান্ধার জনজীবন

হাবিবুল্লাহ্ সরকার:

‎শৈত্যপ্রবাহ ও ঘন কুয়াশায় বিপর্যস্ত উত্তরের জনজীবন, সবচেয়ে বিপাকে চর ও নদীভাঙন কবলিত মানুষ।

গাইবান্ধা জেলায় তীব্র শৈত্যপ্রবাহ ও ঘন কুয়াশায় জনজীবন চরমভাবে বিপর্যস্ত হয়ে পড়েছে। কয়েক দিন ধরে সূর্যের দেখা না মিললেও রাত ও ভোরে হিমেল বাতাসে কনকনে ঠান্ডা বইছে। জেলার ওপর দিয়ে বয়ে যাওয়া মাঝারি থেকে তীব্র শৈত্যপ্রবাহে স্বাভাবিক জীবনযাত্রা প্রায় স্থবির হয়ে পড়েছে।

আবহাওয়া অধিদপ্তরের তথ্য অনুযায়ী, গাইবান্ধায় টানা কয়েক দিন সর্বনিম্ন তাপমাত্রা ৭ থেকে ৯ ডিগ্রি সেলসিয়াসের মধ্যে ওঠানামা করছে। রাতের দিকে তাপমাত্রা আরও কমে যাওয়ায় শীতের তীব্রতা বেড়েছে বহুগুণ।

খেটে খাওয়া মানুষের জীবন থমকে গেছে:

‎তীব্র শীতে সবচেয়ে বিপাকে পড়েছেন জেলার চর অঞ্চলের খেটে খাওয়া দিনমজুর, রিকশা ও ভ্যানচালক, নির্মাণ শ্রমিক এবং কৃষিশ্রমিকরা। কুয়াশার কারণে সকাল থেকে বেলা পর্যন্ত কাজ বন্ধ থাকায় দৈনন্দিন আয় মারাত্মকভাবে কমে গেছে। অনেকেই কাজের সন্ধানে বের হয়েও খালি হাতে ফিরে যাচ্ছেন।

‎রিকশাচালক মান্না মিয়া  জানান,‎

“সকালে কুয়াশা থাকলে রাস্তায় মানুষই বের হয় না। সারাদিনে যা আয় হয়, তাতে সংসার চালানো কঠিন।”

‎চর ও নদীঘেঁষা এলাকার করুণ চিত্র;ব্র

তিস্তা, ব্রহ্মপুত্র, ও ঘাঘট নদীঘেঁষা সুন্দরগঞ্জ, সাদুল্লাপুর ও ফুলছড়ি উপজেলার চরাঞ্চলে শীত যেন দুর্যোগে পরিণত হয়েছে। টিন, খড় কিংবা পলিথিনের ঘরে বসবাসরত পরিবারগুলো শীতবস্ত্রের অভাবে মানবেতর জীবনযাপন করছে।

অনেক পরিবারে একটি কম্বল দিয়েই শিশু, নারী ও বৃদ্ধদের রাত কাটাতে হচ্ছে। শীতের কারণে শিশু ও বৃদ্ধদের অসুস্থতার ঝুঁকি বেড়েছে।

শীতজনিত রোগে ভিড় বাড়ছে হাসপাতালে

তীব্র শীতে গাইবান্ধা সদর হাসপাতালসহ উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সগুলোতে শীতজনিত রোগীর সংখ্যা বাড়ছে। নিউমোনিয়া, শ্বাসকষ্ট, সর্দি-কাশি, জ্বর ও ডায়রিয়ায় আক্রান্ত রোগীর চাপ বেড়েছে।

‎চিকিৎসকরা জানান, অপুষ্ট শিশু ও বয়স্কদের ক্ষেত্রে শীতজনিত জটিলতা দ্রুত বাড়ছে।

কৃষিতে বিরূপ প্রভাব;

শীত ও কুয়াশার প্রভাবে জেলার কৃষিখাতেও পড়েছে নেতিবাচক প্রভাব। আলু, বোরো ধান, ভুট্টা ও শীতকালীন সবজির জমিতে ছত্রাক ও রোগবালাইয়ের আশঙ্কা দেখা দিয়েছে। সূর্যের আলো কম থাকায় ফসলের স্বাভাবিক বৃদ্ধি ব্যাহত হচ্ছে বলে কৃষকরা জানিয়েছেন।

‎অনেক কৃষক বাড়তি কীটনাশক ও পরিচর্যার কারণে উৎপাদন খরচ বেড়ে যাওয়ার আশঙ্কা করছেন।

‎শিক্ষা কার্যক্রমে ব্যাঘাত;

‎তীব্র ঠান্ডায় জেলার প্রাথমিক ও মাধ্যমিক বিদ্যালয়গুলোতে শিক্ষার্থীদের উপস্থিতি কমে গেছে। সকালবেলার ঠান্ডায় ছোট শিশুদের বিদ্যালয়ে পাঠাতে অনিচ্ছুক অভিভাবকরা।

‎অনেকে শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের সময়সূচি পরিবর্তনের দাবি জানিয়েছেন।

শীতবস্ত্র বিতরণে ঘাটতি;

সরকারি ও বেসরকারি উদ্যোগে শীতবস্ত্র বিতরণ শুরু হলেও তা প্রয়োজনের তুলনায় অপ্রতুল। দুর্গম চর ও নদীভাঙন কবলিত এলাকাগুলোতে এখনও অনেক অসহায় মানুষ শীতবস্ত্র পায়নি।

‎স্থানীয় জনপ্রতিনিধি ও সামাজিক সংগঠনগুলো দ্রুত আরও শীতবস্ত্র বরাদ্দের দাবি জানিয়েছেন।

‎করণীয় নিয়ে সংশ্লিষ্টদের আহ্বান

‎সংশ্লিষ্টরা বলছেন,‎চর ও নদীঘেঁষা এলাকায় জরুরি ভিত্তিতে শীতবস্ত্র বিতরণ বাড়ানো

‎শীতজনিত রোগে আক্রান্তদের জন্য বিশেষ চিকিৎসা ব্যবস্থা

খেটে খাওয়া মানুষের জন্য অস্থায়ী সহায়তা কর্মসূচি

‎শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে প্রয়োজন অনুযায়ী সময়সূচি সমন্বয়

‎এই উদ্যোগগুলো দ্রুত বাস্তবায়ন না হলে গাইবান্ধার প্রান্তিক জনগোষ্ঠীর জীবন আরও গভীর সংকটে পড়তে পারে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে।

দয়া করে নিউজটি শেয়ার করুন..




© All rights reserved © batayon24
Design & Developed BY ThemesBazar.Com