সংবাদ শিরোনাম :
উপজেলা পরিষদের পুকুরে ডুবে দুই শিশুর মৃত্যু ‎১৮তম নিবন্ধনের গণবিজ্ঞপ্তি :একটি পত্রিকা ৫০০ থেকে ১০০০ টাকা, তবুও রংপুরে মিলছে না কপি ‎ সেনাবাহিনী ইউনিফর্মের কাপড় ও দেশীয় অস্ত্রসহ আটক এক যুবক গোবিন্দগঞ্জে ইউপি চেয়ারম্যান গ্রেফতার কাউনিয়ায় টিসিবি কার্ডে, টাকা নেওয়ার অভিযোগে ইউপি চেয়ারম্যান গ্রেফতার ইরানের ক্ষেপণাস্ত্র হামলা মোসাদের অভিযান কেন্দ্রে ডেঙ্গুর ভয়াবহতা! ২৪ ঘণ্টায় আক্রান্ত ২৪৪ রোগী হাসপাতালে ভর্তি ভারত মডেলের ক্ষতবিক্ষত লাশ উদ্ধার, হত্যার দায় স্বীকার প্রেমিকের রংপুরে আদালত চত্বরে ভ্যান হারিয়ে কান্নায় ভেঙে পড়া আনারুল-আরেফা দম্পতি পেলেন ভ্যান কেনার টাকা সুন্দরগঞ্জে এমপিও বঞ্চনার স্বীকার উপাধ্যক্ষের অভিযোগ
আনুষ্ঠানিকভাবে বাজারে আসলো হাঁড়িভাঙ্গা আম: কৃষক, ব্যবসায়ী-উদ্যোক্তাদের মাঝে স্বস্তি

আনুষ্ঠানিকভাবে বাজারে আসলো হাঁড়িভাঙ্গা আম: কৃষক, ব্যবসায়ী-উদ্যোক্তাদের মাঝে স্বস্তি

স্টাফ করেসপন্ডেন্ট রংপুর।।বাতায়ন২৪ডটকম।।

অবশেষ আনুষ্ঠানিকভাবে বাজারে আসলো রংপুরের ঐতিহ্যবাহী ছাদে গন্ধে অতুলনীয় জিআই পণ্য হাড়িভাঙ্গা আম। এতে টানা ১৫ দিন ধরে চলা কৃষক এবং কৃষি বিভাগের মধ্যে টানা পড়েন দূর হলো। স্বস্তি ফিরল কৃষক, উদ্যোক্তা এবং ব্যবসায়ীদের মধ্যে। শুরুর্দিনী বিপুল পরিমাণ পাইকারের আনাগোনা লক্ষ্য করা গেছে পদাগঞ্জের হাটে। যদিও ১৫ দিন আগে থেকে বাজারে নেমেছে হাঁড়িভাঙ্গা।

মঙ্গলবার (১৭ জুন) দুপুরে মিঠাপুকুরের পদাগঞ্জ উচ্চ বিদ্যালয় ও মহাবিদ্যালয় মাঠে চাষী এবং ব্যবসায়ীদের সাথে মতবিনিময় সভা শেষে প্রধান অতিথি হিসেবে বাজারজাত কার্যক্রমের উদ্বোধন করেন রংপুরের ডিসি মোহাম্মদ রবিউল ফয়সাল। মিঠাপুকুর উপজেলা নির্বাহী অফিসার মুলতামিস বিল্লাহর সভাপতিত্বে এ সময় আরো বক্তব্য রাখেন কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ পরিচালক সিরাজুল ইসলাম, অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক সার্বিক রমিজ আলম, রংপুর জেলা জামায়াত আমির অধ্যাপক গোলাম রব্বানী, সেক্রেটারি এনামুল হক, রংপুর জেলা বিএনপি’র সদস্য সাজ্জাদ হোসেন রানা, মিঠাপুকুর উপজেলা বিএনপি’র সাবেক যুগ্ম আহবায়ক নাজমুল হক ইমন, মিঠাপুকুর উপজেলা কৃষি অফিসার মোহাম্মদ সাইফুল আবেদীন, কৃষক মেহেদী হাসান পলাশ জাহিদুল ইসলাম জাহিদ প্রমুখ।

এ সময় কৃষকরা একটি বিশেষায়িত হিমাগার, ম্যাঙ্গো ট্রেন, যাতায়াত ব্যবস্থা উন্নতকরণ, ব্যাংক স্থাপন, হাঁড়িভাঙ্গা টেকসই এর জন্য গবেষণা, বিদেশে রপ্তানি এবং বাজারজাত কার্যক্রম নির্বিঘ্ন করার পাশাপাশি ন্যায্য দাম নিশ্চিতের দাবি জানান।

বাজারে আম নিয়ে বসে আছে ক্রেতার অপেক্ষায় আম ব্যবসায়ী। ছবি:বাতায়ন টুয়েন্টিফোর ডটক

 

 

এ সময় সবগুলো দাবি ধারাবাহিকভাবে বাস্তবায়নের আশ্বাস দিয়ে ডিসি বলেন, ঐতিহ্যবাহী হাঁড়িভাঙ্গা আম এখন জিআই পণ্য। এই পণ্যের মান ধরে রাখতে এবং বিদেশে রপ্তানি নিশ্চিত করতে হরমোন প্রয়োগ থেকে বিরত থাকতে হবে চাষীদের। কোন ধরনের কেমিক্যাল ব্যবহার করা যাবে না। যারা এই নির্দেশনা মানবেন না তাদের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নেয়া হবে। এ সময় তিনি শব্দের কাছ থেকে প্রত্যেকটি সমস্যা শোনেন নোট করেন এবং সংশ্লিষ্ট বিভাগগুলোর সাথে সমন্বয় করে সমাধান করার আশ্বাস দেন। পরে তিনি পদাগঞ্জ আমের বাজার ঘুরে দেখেন। ব্যবসায়ী ও কৃষকদের সাথে কথা বলেন।

চাষী উদ্যোক্তা ও ব্যবসায়ীদের মাঝে স্বস্তি :
অবশেষে কৃষি বিভাগ ঘোষিত তারিখের তিন দিন এগিয়ে এনে আনুষ্ঠানিকভাবে হাঁড়িভাঙ্গা আমের বাজার জাত শুরু হাওয়ায় কৃষক ব্যবসায়ী ও উদ্যোক্তাদের মধ্যে স্বস্তি বিরাজ করছে। এর আগে ২০ জুন বাজারজাতের তারিখ নির্ধারন করেছিল কৃষি বিভাগ। জেলা প্রশাসনের হস্তক্ষেপে মঙ্গলবার থেকে বাজারে আনুষ্ঠানিকভাবে যাত্রা শুরু করলো। এবার তারিখ নিয়ে কৃষি বিভাগের সাথে চাষী ও ব্যবসায়ীদের সমন্বয়হীনতায় নির্ধারিত তারিখের ১৫ দিন আগেই বাজার সয়লাব হয় হাড়িভাঙ্গায়। কারণ, প্রচন্ড তাপদাহে আম পাকা শুরু হয়েছে আগেই। বাগানে রাখতে পারছিলেন না চাষীরা। তারিখ জটিলতায় বাজারে এনেও গ্রাহক মিলছিলো না গ্রাহক। এ নিয়ে মহাবিপাকে পড়েছিলেন তারা।

আম গাছগুলোতে ঝুলে আছে হাড়িভাঙ্গা আম। ছবি: বাতায়ন টুয়েন্টিফোর ডটক

 

 

 

 

 

 

 

রংপুর আবহাওযা অফিসের ইনচার্জ প্রকৌশলী মোস্তাফিজার রহমান জানিয়েছেন গেল দুই সপ্তাহ থেকে রংপুরসহ উত্তরাঞ্চলে সর্বোচ্চ তাপমাত্রার উঠানামা করছে ৩৬ থেকে ৩৮ ডিগ্রি সেলসিয়াসের মধ্যে। জলবায়ু পরিবর্তনের বিরূপ প্রভাবে আবহাওয়ার আমুল পরিবর্তনে প্রচন্ড তাপদাহে নাকাল জনজীবন। প্রাণ প্রকৃতিতে উত্তাপ। যার সরাসরি প্রভাব পড়ে হাঁড়িভাঙ্গা আমে। তীব্র তাপদাহে আম বাগানে থাকছে না। আগেই পাকা শুরু হয়েছে। গাছ থেকে ঝড়ে পড়ছে হাঁড়িভাঙ্গা।

মঙ্গলবার (১৭ জুন) উদ্বোধনের আগেই পূর্বেকার দিনের মতো হাঁড়িভাঙ্গার রাজধানী মিঠাপুকুরের পদাগঞ্জ ভরে যায় আম আর আমে। কিছুটা স্বস্তি দেখা যায় কৃষক ব্যবসায়ী ও উদ্যোক্তাদের মাঝে।

অনলাইন উদ্যোক্তা হানিফ খান সজীব জানান, “আমরা গেল ১৫ দিন থেকে মহা অস্বস্তিতে ভুগছিলাম। গ্রাহকদের চাহিদা থাকলেও আমরা আম পাঠাতে পারিনি। প্রচুর পরিমাণে আম আমদানি থাকলেও কিনতে পারিনি। কারণ কুরিয়ার সার্ভিস ছিল বন্ধ। আনুষ্ঠানিকভাবে শুরু হওয়ায় কুরিয়ার সার্ভিস গুলো খুলে গেছে। আমরা আম পাঠানো শুরু করেছি। আশা করি আমের দাম একটা স্থিতিশীল পর্যায়ে আসবে। প্রতিবছরের মে মাসেই মাঠ পর্যায়ে সমন্বয় করে হাড়ি ভাঙ্গার বাজারজাতের তারিখ নির্ধারণ করা উচিত বলে দাবি এই অনলাইন উদ্যোক্তার। প্রতিদিন অন্তত ৫০ মনেরও বেশি আম কুরিয়ার সার্ভিসে গ্রাহকের কাছে পৌঁছান তিনি।”

খোড়াগাছ পশ্চিম পাড়ার বৃহত্তর হাঁড়িভাঙ্গার বাগানি আবু রায়হান আলী জানান, “এবার আমরা মহা বেকায়দায় পড়েছিলাম। চার বিঘা জমিতে লাগানো হাড়িভাঙ্গা ঈদের আগের দিন থেকেই পাকা শুরু করেছে। কিন্তু বাজারদাঁতের তারিখ দিচ্ছিল না সরকার। প্রচন্ড গরমে আম্পিকে ধরে পড়ছিল। হঠাৎ কৃষি বিভাগ ২০ জুন তারিখ ঘোষণা দেয়। কিন্তু বাগানিরা আম বাগানে রাখতে পারছিলাম না। ঈদের পরদিন থেকেই আমরা হাটে আম নিয়ে যাওয়া শুরু করি। কিন্তু সরকারি তারিখ দেরি হওয়ার কারণে আম বিক্রিও হচ্ছিল না। যাই হোক অবশেষে তারিখ এগিয়ে এনে আম বাজারজাত শুরু হল। আজকেই প্রচুর পরিমাণে পাইকারি ব্যবসায়ীরা এসেছেন। আশা করি আম দ্রুত বেচা বিক্রি শুরু হবে। আমরা ন্যায্য দাম পাব।”

চাঁপাইনবাবগঞ্জ থেকে রংপুরে এসে আখিরাহাটে প্রায় ১৪ একর জমির হাঁড়িভাঙ্গার বাগান কিনেছেন ব্যবসায়ী আকিবুল ইসলাম ও তার সাত বন্ধু। তিনি জানান, “কৃষি বিভাগ থেকে এবার ২০ জুন বাজার যাতে তারিখ নির্ধারণ করা হয়েছিল। কিন্তু মাঠের অবস্থা ছিল ভিন্ন। প্রচন্ড গরমে ঈদের আগে থেকেই আমপাকা শুরু হয়েছিল। বাধ্যবাধকতার কারণে আমরা আম পারতেও পারছিলাম না। দেশের বিভিন্ন স্থানে পাঠাতেও পারছিলাম না। পাইকারো ডাকতে পারছিলাম না। ফলে পাকা আম স্থানীয় মোকামে নিয়ে গিয়ে অর্ধেক দামে আমাদের বিক্রি করতে হয়েছে। আজ থেকে সেই ঝামেলা মিটে গেল। আমরা এখন দ্রুত গতিতে আম হারভেস্ট করে দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে পাঠানো শুরু করব। আশা করি দামও পাওয়া যাবে।”

মঙ্গলবার পদাগঞ্জসহ স্থানীয় মোকামগুলোতে প্রতি মন বড় সাইজের কাচা হাড়িভাঙ্গা আম ১৮০০ থেকে ২০০০, মাঝারি সাইজের কাচ ১৪০০ থেকে ১৮০০ টাকা এবং পাকা আম ৮০০ থেকে ১২০০ টাকার মধ্যে বিক্রি হচ্ছে।

 

রংপুর আঞ্চলিক কৃষি অফিসের অতিরিক্ত পরিচালক শফিকুল ইসলাম জানান, হাঁড়িভাঙ্গার এবার বাম্পার ফলন হয়েছে। আমও বড় হয়েছে। সাধারণত ১৫ থেকে ২০ জুনের মধ্যে আমরা বাজারজাতের তারিখ দেই। সেকারণে এবার ২০ জুন তারিখ নির্ধারণ করা হয়েছিল। যেহেতু এবার গরমটা খুবই বেশি। আম পরিপক্ক হয়েছে। সেকারণে জেলা প্রশাসক মহোদয়ের সাথে সমন্বয় করে ১৭ জুন বাজারজাতের তারিখ নির্ধারন করে হাঁড়িভাঙ্গার আনুষ্ঠানিকভাবে বাজারজাত শুরু করা হয়েছে।

এই কৃষি কর্মকর্তা জানান, “এবার রংপুর জেলার শুধু মিঠাপুকুরে ১ হাজার ৫০০ হেক্টরসহ সারাদেশে প্রায় ৫ হাজার ৫০০ হেক্টর জমিতে হাঁড়িভাঙ্গার বাগানে আম উৎপাদন হয়েছে। প্রতি মেট্রিক টনে প্রায় ১৫ হেক্টরেরও বেশি ফলন হবে বলে আমরা আশা করছি। সে হিসেবে এবার ৮২ হাজার মেট্রিক টন বা ২০ লাখ মন হাঁড়িভাংগার উৎপাদন হবে। আনুষ্ঠানিকভাবে যাত্রা শুরু হওয়া মাত্রই দামও ভালো পেতে শুরু করবেন সংশ্লিষ্টরা। এবার ৫০০ কোটি টাকার হাঁড়িভাঙ্গা বেচাবিক্রি হবে বলেও আশা করেছেন তিনি।”

 

প্রসঙ্গত : ৭০ বছর আগে ডিমলার রাজা তাজবাহাদুর সিংয়ের বাগানবাড়ি থেকে একটি কলম চারা নিয়ে এসে লাগিয়েছিলেন মিঠাপুকুরের খোড়াগাছ ইউনিয়নের তেকানি গ্রামের নফল উদ্দিন পাইকার। সেই গাছ থেকেই আজকের হাঁড়িভাঙ্গা আম। যা এই অঞ্চলের প্রান্তিক অর্থনীতিকে করেছে চাঙ্গা।

 

ঐতিহ্যবাহী স্বাদে ও গন্ধে অুুলনীয় রংপুরের এই হাঁড়িভাঙ্গা আমকে ভৌগলিক নির্দেশক (জিআই) পণ্য হিসেবে স্বীকৃতি দেয় শিল্প মন্ত্রণালয়ের আওতাধীন পেটেন্ট, শিল্প-নকশা ও ট্রেডমার্কস অধিদপ্তর (ডিপিডিটি)।

বাতায়ন টুয়েন্টিফোর ডটক/মেজবাহুল হিমেল

দয়া করে নিউজটি শেয়ার করুন..




© All rights reserved © batayon24
Design & Developed BY ThemesBazar.Com