গাইবান্ধা প্রতিনিধি :
গাইবান্ধার সাঘাটা উপজেলার কচুয়া ইউনিয়নে তিন বছর আগে ফুলের তোড়া হাতে আওয়ামী লীগে যোগ দেওয়া সাবেক ইউপি সদস্য শাজাহান আলী এখন বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল (বিএনপি)’র ইউনিয়ন কাউন্সিলে সভাপতি পদে প্রার্থী হয়েছেন। এই প্রার্থিতাকে কেন্দ্র করে স্থানীয় বিএনপি নেতাকর্মীদের মধ্যে তীব্র ক্ষোভ, অসন্তোষ ও বিভক্তি দেখা দিয়েছে।
স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, বিএনপির কচুয়া ইউনিয়ন কমিটির যুগ্ম সম্পাদক হিসেবে দায়িত্ব পালনকালে ২০২২ সালের ১৯ ডিসেম্বর শাজাহান আলী গাইবান্ধা-৫ (সাঘাটা-ফুলছড়ি) আসনের তৎকালীন এমপি ও কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগের সাবেক সভাপতি মাহমুদ হাসান রিপনের হাতে ফুল দিয়ে আওয়ামী লীগে যোগ দেন। পরবর্তীতে তিনি দলীয় ব্যানারে বিভিন্ন কর্মসূচিতে অংশ নেন এবং আওয়ামী লীগের সক্রিয় কর্মী হিসেবে পরিচিতি পান।
তবে কৌশলে তিনি বিএনপির ইউনিয়ন কমিটিতে নিজের পদ বজায় রাখেন। সম্প্রতি কচুয়া ইউনিয়ন বিএনপির সভাপতি পদে প্রার্থী হতে মনোনয়নপত্র কিনলে তার ফুল দিয়ে আওয়ামী লীগে যোগদানের ছবি সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ভাইরাল হয়। এতে তৃণমূল নেতাকর্মীদের মধ্যে তীব্র প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি হয়।
বিএনপি সূত্র জানায়, প্রথম দফায় দলীয় বিরোধ ও সমালোচনার মুখে শাজাহান আলীর মনোনয়ন দু’বার বাতিল ঘোষণা করা হয়েছিল। কিন্তু চলতি মাসে উপজেলা বিএনপি নতুন নির্বাচন কমিশন গঠন করে পুনরায় তার মনোনয়ন বৈধ ঘোষণা করে এবং আগামী শনিবার (২৬ অক্টোবর) ভোটগ্রহণের প্রস্তুতি নেয়।
তৃণমূল বিএনপি নেতাকর্মীরা প্রশ্ন তুলেছেন, ‘যিনি আওয়ামী লীগের কর্মসূচিতে প্রকাশ্যে অংশ নিয়েছেন, তিনি কীভাবে বিএনপির সভাপতি প্রার্থী হতে পারেন?’ তাদের আশঙ্কা, এমন সিদ্ধান্তে দলের ঐক্য ও তৃণমূলের মনোবল ক্ষতিগ্রস্ত হতে পারে।
এ বিষয়ে সাঘাটা উপজেলা বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম আহ্বায়ক মঈদ প্রধান লাবু বলেন, ‘দলীয় সিদ্ধান্ত অনুযায়ী আওয়ামী লীগের কর্মসূচিতে অংশ নেওয়া কেউ বিএনপির মনোনয়ন পেতে পারেন না। শাজাহান আলীর বিরুদ্ধেও সাবেক এমপি মাহমুদ হাসান রিপনের সঙ্গে ঘনিষ্ঠ যোগাযোগের অভিযোগ রয়েছে। তবুও তাকে দলে নিয়ে মনোনয়ন বৈধ করা হয়েছে।’
তিনি আরও বলেন, ‘কচুয়া ইউনিয়নের বর্তমান ইউপি সদস্য শাজাহান আলী তিন বছর আগে আনুষ্ঠানিকভাবে আওয়ামী লীগে যোগ দেন এবং ২০২৪ সালের নির্বাচনে ফ্যাসিস্ট সরকারের পক্ষে ভোট করেন। রিপনকে এমপি বানাতেও সক্রিয় ভূমিকা রেখেছিলেন তিনি।’
জানতে চাইলে কচুয়া ইউনিয়ন কাউন্সিল নির্বাচনের কমিশনের প্রধান অ্যাডভোকেট সাহেদুল ইসলাম জানান, ‘আগের নির্বাচন কমিশন তার মনোনয়ন বাতিল করেছিল। আমি দায়িত্ব পাওয়ার পর উপজেলা বিএনপির আহ্বায়ক আলহাজ মোহাম্মদ আলী লিখিতভাবে বৈধ করার সুপারিশ পাঠিয়েছেন। তবে কমিশন এখনো আনুষ্ঠানিকভাবে সিদ্ধান্ত নেয়নি এবং ভোটের তারিখও চূড়ান্ত হয়নি।’
সাঘাটা উপজেলা বিএনপির আহ্বায়ক আলহাজ মোহাম্মদ আলী বলেন, ‘উপজেলা কমিটির সিদ্ধান্ত অনুযায়ী শাজাহান আলীর মনোনয়ন বৈধ করা হয়েছে। আগামী শনিবার কচুয়া ইউনিয়ন বিএনপির কাউন্সিল অনুষ্ঠিত হবে।’ তবে শাজাহান আলীর আওয়ামী লীগে যোগদানের প্রসঙ্গে তিনি মন্তব্য এড়িয়ে যান।
অন্যদিকে, শাজাহান আলী সব অভিযোগ অস্বীকার করে মুঠফোনে বলেন, ‘আমি বিএনপির রাজনীতিতেই আছি এবং দুর্দিনে মাঠে থেকেছি। হামলা-মামলা, রেল নাশকতা, হত্যা—এমন বহু মামলার আসামি হয়েছি, আজও কয়েকটি মামলা আদালতে চলছে। ফুল দেওয়া প্রসঙ্গটি ভুলভাবে প্রচার করা হচ্ছে। সেদিন এমপি রিপনের সফরে স্থানীয়রা ফুল দিচ্ছিলেন, আমাকে ডেকে ছবি তোলা হয়েছিল মাত্র।’
স্থানীয়দের একাংশের দাবি, শাজাহান আলী মূলত বিএনপির রাজনীতিতেই যুক্ত ছিলেন, কিন্তু ইউপি সদস্য নির্বাচিত হওয়ার পর আওয়ামী লীগ নেতাদের সঙ্গে ঘনিষ্ঠতা বাড়ান। এ সময় সাবেক এমপি রিপনসহ আওয়ামী লীগ নেতাদের সঙ্গে তার অংশগ্রহণে সভা-মিছিলের ছবি সামাজিক মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়ে।
এদিকে, শাজাহান আলীর প্রার্থিতা ঘিরে কচুয়া ইউনিয়নে চরম উত্তেজনা বিরাজ করছে। তৃণমূল নেতাকর্মীরা আশঙ্কা করছেন, কাউন্সিলের দিন সহিংসতা ঘটতে পারে। তারা শান্তিপূর্ণ পরিবেশে ভোট নিশ্চিত করতে প্রশাসন ও আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর কঠোর নজরদারি দাবি করেছেন।