স্টাফ করসপন্ডেন্ট রংপুরে।। বাতায়ন২৪ডটকম।।
বিগত সরকারের সময়ে নানাভাবে জাতীয় পার্টির মধ্যে একটি প্যারালাল দল তৈরি করে আমাদেরকে আওয়ামী লীগ জিম্মি করে রেখেছিল। বর্তমান সরকারও আওয়ামীলীগের মতো প্যারালাল জাতীয় পার্টি করে তাদেরকে লাঙ্গল দিয়ে নির্বাচনে আনার চেষ্টা করছে বলে শুনতে পারছি বলে মন্তব্য করেছেন দলটির চেয়ারম্যান জিএম কাদের।
সোমবার (১৪ জুলাই) রংপুরের পল্লীনিবাসে প্রয়াত রাষ্ট্রপতি হুসেইন মুহম্মদ এরশাদের ৬ষ্ঠ মৃত্যু বার্ষিকী উপলক্ষে আয়োজিক আলোচনা সভায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে এই অভিযোগ করেন তিনি। কো- চেয়ারম্যান ও রংপুর মহানগর সভাপতি সাবেক সিটি মেয়র মোস্তাফিজার রহমান মোস্তফার সভাপতিত্বে এসময় বিশেষ অতিথির বক্তব্য রাখেন মহাসচিব ব্যারিষ্টার শামীম হায়দার পাটোয়ারী, প্রেসিডিয়াম সদস্য এসএম ইয়াসির, যুগ্ম মহাসচিব হাজি আব্দুর রাজ্জাক, সাংগঠনিক সম্পাদক লোকমান হোসেন, হাসানুজ্জামান নাজিম। বক্তব্য দেন স্থানীয় ও কেন্দ্রীয় নেতৃবৃন্দ।
বিগত সরকার জাতীয় পার্টিকে ব্লাকমেইলিং করেছে উল্লেখ করে প্রধান অতিথির বক্তব্যে জিএম কাদের বলেন, ‘বিগম সরকার নানানভাবে আমাদের দলের একটি প্যারালাল দল তৈরি করে তাদের মাধ্যমে আমাদের সব সময় ব্লাকমেইল করতো। সেকারণে অনেক সময় তাদের কথা মতো আমাদের চলতে হয়েছে।’
সুবিধাবাদি পক্ষটিকে দিয়ে বর্তমান সরকারও জাতীয় পার্টিকে ভাঙ্গার ষড়যন্ত্র করছে জিএম কাদের বলেন, ‘২৪ এর পরে সুযোগ আসলো। যখন এই সুবিধাভোগি পক্ষটি দেখলো আমি আবারও এই সরকারের বিরুদ্ধে কথা বলছি। তখন তারা আবার ষড়যন্ত্র শুরু করলো। তারা বললো, এই সরকার বিরোধ কথা বললে আমরা আপনার সাথে রাজনীতি করতে পারবো না। কি করবেন। আমরা আলাদা করবো দল। নতুন করে কাউন্সিল করবো। সেই কাউন্সিলে আপনাকে বাদ দিবো। পরবর্তীকালে তারাই বললেন, সরকারের সাথে নাকি আঁতাত হয়েছে। কি আতাত। সরকার চাচ্ছে জাতীয় পার্টিকে নির্বাচনে আসতে হবে। আওয়ামীলীগকে বাদ দিয়ে নির্বাচন করলে সমস্যা নাই, কিন্তু জাতীয় পার্টিকে বাদ দিয়ে নির্বাচন করলে সেটা দেশ বিদেশে গ্রহনযোগ্য হবে না। কিন্তু জাতীয় পার্টিতে জিএম কাদের থাকলে তার নেতৃত্বে যথেষ্ঠ জনপ্রিয়তা আছে। তাদের কোন পদক্ষেপ নিলে তখন আমরা হুমকির মুখে পড়তে পারি।’
বর্তমান সরকার আমাদের সুবিধাভোগি পক্ষটিকে দিয়ে আমাকে বাদ দিয়ে তাদের লাঙ্গল প্রতিক দিয়ে নির্বাচনে আনার চেস্টা করছে অভিযোগ করে জিএম কাদের বলেন, ‘সরকার নাকি তাদেরকে বলেছে তোমরা জিএম কাদেরকে বাদ দিয়ে আলাদা একটা দল করো। তোমাদেরকে আমরা লাঙ্গল দিয়ে দিবো। তোমার লাঙ্গল নিয়ে নির্বাচন করবে। কিন্তু জিএম কাদের সাহেব থাকবেন না। তাদের জন্য দুর্ভাগ্য এবং আমাদের জন্য সৌভাগ্যের বিষয় হলো জাতীয় পার্টির তৃণমূলের সব নেতাকর্মী আমার পাশে দাড়িয়েছেন তখন। এজনও তাদের সাথে যান নাই। সেই কায়েমী শক্তির রাজনীতি কতিপয় মানুষ সুযোগ সুবিধা ভোগ করে। সেকারণে তারা সুবিধা করতে পারেন নি। সরকার যদি তাদের কিছু প্রতিশ্রুতি দিয়ে থাকেন-যেটা তখন তারা বলেছিলেন। যদি এয়ারপোর্টে আমাদের কোন নেতাকে বের হতে দেয়া হবে না। যদি আপনাদের সাথে জয়েন্ট করেন তাহলে বের হতে দেয়া হবে। এটা কার কাছে শুনেছি আমরা। যারা আমাদের বিপক্ষে দাড়িয়েছে-তাদের মুখে শুনেছি। তারা বলেছেন, সরকার নাকি তাদেরকে আশ্বাস দিয়েছেন। জিএম কাদেরকে বাদ দিয়ে আপনারা আসেন আপনাদের মামলা মিমাংসা করা হবে। আমরা তাদের এসব কথার সত্যমিথ্যা জানি না। কিন্তু বিভিন্ন অসমর্থিত সূত্রের মাধ্যমে সরকার এসব করেছে বলে আমাদের কাছে রিপোর্ট আছে। আমরা অত্যন্ত দুঃখিত। আমরা এই সরকারের কাছে এসব আশা করি নাই।’
নিজেদের লোকেরা জাতীয় পার্টিকে একটি সার্কাস দলে পরিণত করেছিল দাবি করে জিএম কাদের বলেন, ‘ ২০১৪ এর পর, জাতীয় পার্টি একই সাথে বিরোধী দল একই সাথে মন্ত্রীসভার সদস্য। এটা পৃথিবীর ইতিহাসে হতে পারে না। আমরা এর প্রতিবাদ করেছিলাম। তখন জাতীয় পাটি নিয়ে মানুষ হাসাহাসি করতো। পরবর্তীতে যখন আমি বিরোধী দলীয় নেতা হলাম। আমি সরকারের বিপক্ষে কথা বলি। তখন আমার বিপক্ষে দাড়িয়ে সরকারের পক্ষে কথা বলে আমরাই লোকজন। আমরা যখন ওয়াক আউট করতে যাই। তখন আমাদেরই লোক ওয়াক আউট না করতে সরকারি আমার ওপর চাপ সৃস্টি করে। তখন তারা আমাকে ছেড়ে চলে যাওয়ার জন্য হুমকি দেয়।এভাবে আমাদের লোকজনই আমাদের এই দলকে সার্কাস পার্টি বানিয়েছিল। আমরা একপাশে সরকারের বিরুদ্ধে কথা বলি। আরেকপাশে আমাদের লোকজন সরকারের পক্ষে কথা বলে নিজেদের স্বার্থসিদ্ধি করে। সেকারণে ২০২৪ পর্যন্ত আমরা বিভিন্নভাবে সরকার, আওয়ামীলীগ ও আমাদের নিজেদের লোকের কাছে জিম্মি হয়েছিলাম।’
জুলাই আন্দোলনে সব চেয়ে সরকারের বিরুদ্ধে আমি বেশি কথা বলেছি দাবি করে জিএম কাদের বলেন, ‘ ২০২৪ এর নির্বাচনের পরে যখন এই আন্দোলন হলো। প্রথম থেকে শেষ পর্যন্ত আমরা এই জুলাই আন্দোলনে ছিলাম। প্রথম দিনই আমি বলেছিলাম। এটা কোটা নয়, এটা বৈষম্য বিরোধী আন্দোলন। এটা শুধু ছাত্রদের নয়। এটা ছাত্র-জনতা সবার। ওই সময় প্রতিদিনই আমি বলেছি। বৈষম্য এই দেশে সবচেয়ে বড় সমস্যা। বৈষম্য সৃষ্টি করে আমাদের কর্তৃত্ববাদি সরকার দেশের মিখ্যাচার করে দেশকে লুন্ঠন করছে। ওই সময় সরকারের বিরুদ্ধে আমার চেয়ে বেশি আর কেউ বলে নাই। তখাপিও আমার কথাগুলোর গ্রহনযোগ্য হয় নাই। কারণ সেই সময় আমাদের পাশে যারা ছিল, আমাদের লোক তারা সরকারের কাছে গিয়ে আমার কথার বিরোধীতা করতো।’
মহাসচিব ব্যারিষ্টার শামীম হায়দার পাটোয়ারী বলেন, একটা বিশাল অংশের মানুষকে বাদ দিয়ে দেশের সংস্কার টেকসই হতে পারে না। জাতীয় পার্টি কখনো জনগণের সাথে বেইমানি করে নাই করবেও না। যে সরকার মব নিয়ন্ত্রণ তৈরি করতে ব্যর্থ, সেই সরকারও ব্যর্থ, সেই সরকার ব্যর্থ হলে রাষ্ট্রও ব্যর্থ হবে।
কো-চেয়ারম্যান মোস্তাফিজার রহমান মোস্তফা জানান, ‘ বিগত সময়ে যারা জাতীয় পার্টির মহাসচিব ছিলেন, তারা শুধু দলটির মাথা বিক্রি করেছেন। বিভিন্ন সময়ে বিভিন্ন সিদ্ধান্ত পরিবর্তন করার কারণে জাতীয় পার্টি থেকে জনগণ মুখ ফিরিয়ে নিয়েছে। এখন কনক্রিট সিদ্ধান্ত নিতে হবে। কখনই সিদ্ধান্ত থেকে ইউটার্ন করা যাবে না। যত বড় শক্তিই হোক। জাতীয় পার্টিকে জনগণের জন্য রাজনীতি করতে হবে। এরশাদের আদর্শ উন্নয়ন ও সংস্কার ভাবনা তরুণ প্রজন্মের কাছে তুলে ধরতে হবে।
দিবসটি উপলক্ষে সকাল থেকেই এরশাদের কবর প্রাঙ্গনে মিলাদ মাহফিল ও কোরআন খানি অনুষ্ঠিত হয়। এরশাদের রুহেমর মাগফেরাত কামনায় বিশেষ মোনাজাতেও অংশ নেন নেতাকর্মীরা।
বাতায়ন২৪ডটকম/শরিফুল ইসলাম।