সংবাদ শিরোনাম :
দিনাজপুরে বাসের ধাক্কায় ৫ যাত্রী নিহত আহত ১৫ “আধিপত্যবাদী শত্রুরা আবারো নতুন করে ক্ষমতা দখল করতে পারে -এজন্য আমাদের জাতীয় ঐক্য গড়ে তুলতে হবে”  জামায়েত নেতাদের অন্যায় ভাবে ফাঁসি দেওয়া হয়েছে: তারাগঞ্জে এটিএম আজহারুল ইসলাম সুন্দরগঞ্জে অসহায়-দুস্থ নারীদের মাঝে শাড়ি বিতরণ ভারতে ‘বিদেশি’ আখ্যা দিয়ে বাঙালি মুসলিমদের বাংলাদেশে পাঠানো হচ্ছে ত্রাণ নিতে গিয়ে প্রাণ গেল ৪০ ফিলিস্তিনির কাউনিয়ায় ফেনসিডিলসহ ৩ নারী মাদক ব্যবসায়ীকে গ্রেফতার লালমনিরহাটে রংপুর ১২ কেজি গাঁজাসহ ১ মাদক ব্যবসায়ী গ্রেফতার রাজনীতিতে জাতীয় পার্টি আওয়ামী লীগের দালাল হিসেবে কাজ করেছে:আখতার রংপুরে ফেসবুকে বিরূপ মন্তব্য করায় পৌর বিএনপির আহবায়ক কমিটির সদস্য কে কারণ কারণ দর্শানোর নোটিশ।
তিস্তা ব্যারেজে অপরূপ সৌন্দর্য পর্যটকদের আকৃষ্ট করছে

তিস্তা ব্যারেজে অপরূপ সৌন্দর্য পর্যটকদের আকৃষ্ট করছে

স্টাফ করেসপন্ড নীলফামারী।।বাতায়ন২৪ডট কম

তিস্তা নদীর অপরূপ সৌন্দর্য ও জলরাশির গর্জন পর্যটকদের এক অনন্য বিনোদনে আকৃষ্ট করছে ।

নীলফামারীর ডিমলা ও লালমনিরহাটের হাতীবান্ধা উপজেলায় অবস্থিত দেশের বৃহত্তম সেচ প্রকল্প ‘ডালিয়া তিস্তা ব্যারেজ’ এখন পর্যটকদের কাছে এক অন্যতম প্রিয় গন্তব্য। তিস্তা নদীর অপরূপ সৌন্দর্য, জলরাশির গর্জন, মনোমুগ্ধকর সূর্যাস্তের দৃশ্য এবং স্থানীয়দের বন্ধুত্বপূর্ণ আচরণ- সব মিলিয়ে এই স্থানটি পর্যটকদের এক অনন্য বিনোদন দিচ্ছে। ঈদ-পূজাসহ অন্যান্য ছুটির দিনগুলোতে তো বটেই, এখন সাপ্তাহিক ছুটির দিনেও হাজার হাজার মানুষ ভিড় করছেন এই অঞ্চলে।

১৯৯০ সালে তিস্তা নদীর ওপর নির্মিত এই ব্যারেজটি শুধু জল নিয়ন্ত্রণ প্রকল্প হিসেবেই নয়, বর্তমানে এটি উত্তরবঙ্গের অন্যতম জনপ্রিয় পর্যটনকেন্দ্র হিসেবেও ব্যাপক পরিচিতি লাভ করেছে। বিশেষ করে ছুটির দিনে এখানে দর্শনার্থীদের উপচে পড়া ভিড় লক্ষ করা যায়। স্থানীয়দের তথ্য অনুযায়ী, প্রতিদিন গড়ে প্রায় ৩ থেকে ৫ হাজার দর্শনার্থী এই ব্যারেজে ভিড় করেন। ঈদ বা পূজার ছুটিতে এই সংখ্যা ৩০ থেকে ৫০ হাজার ছাড়িয়ে যায়।

প্রায় ৭৫০ মিটার দীর্ঘ এই ব্যারেজের ওপর দিয়ে হাঁটলে দুই পাশে তিস্তা নদীর বিশাল জলরাশি মন জুড়িয়ে দেয়। সকালের হালকা রোদে কিংবা বিকেলের সূর্যাস্তে এখানে দাঁড়িয়ে প্রকৃতি অবলোকনের অভিজ্ঞতা সত্যিই অসাধারণ। অনেকেই বলেন, ‘এখানে আসলে মনে হয় যেন মিনি কক্সবাজারে দাঁড়িয়ে আছি।’ বিশেষ করে বিকেলের দিকে এখানকার পরিবেশ হয়ে ওঠে প্রাণবন্ত। তরুণ-তরুণীরা দল বেঁধে আসেন, কেউ ঘুড়ি ওড়ান, কেউবা নদীর পাড়ে বসে সেলফি তোলেন, কেউ ফেসবুক লাইভে এসে বন্ধুদের এই সৌন্দর্য দেখান, আবার কেউবা নৌকা অথবা স্পিডবোটে উঠে আনন্দ উপভোগ করেন।

ঠাকুরগাঁও থেকে ঘুরতে আসা পলাশ মাহমুদ বলেন, ‘বন্ধুদের কাছে তিস্তা ব্যারেজের কথা শুনেছিলাম। এবার পরিবার নিয়ে এলাম। এমন মনোমুগ্ধকর প্রাকৃতিক দৃশ্য খুব একটা দেখা যায় না। এক কথায় অসাধারণ, এখানে এলে চোখ জুড়িয়ে যায়।

পঞ্চগড়ের দেবীগঞ্জ থেকে আসা কলেজছাত্রী রিপা ইসলাম বলেন, ‘ফেসবুকে অনেক ছবিতে এই জায়গাটা দেখেছিলাম। এবার নিজের চোখে দেখলাম। জায়গাটা শুধু সুন্দরই না, খুব শান্তিও দেয়। এক কথায় অপরূপ।’

এদিকে পর্যটকদের আগমনে স্থানীয় ব্যবসা-বাণিজ্য চাঙ্গা হয়ে উঠেছে। তিস্তা ব্যারেজের প্রবেশপথে গড়ে উঠেছে অস্থায়ী ফাস্টফুড, চটপটি-ফুচকা, রকমারি পান-সুপারি, হাতঘড়ির স্টল, মোবাইল ফোনের কভার ও সানগ্লাসের হরেক রকমের দোকান। এছাড়াও রয়েছে নানা বয়সীদের জন্য নাগরদোলা খেলার ব্যবস্থা।

স্থানীয় ব্যবসায়ী মতিন বলেন, ‘কয়েক বছর আগেও এখানে কিছুই ছিল না। এখন প্রতিদিন ভালোই বেচাবিক্রি হয়। ঈদের সময় তো আরও বেশি। পর্যটকরা আসেন, খাওয়া-দাওয়া করেন, আমাদেরও ভালোই আয়-রোজগার হয়।’

তবে দর্শনার্থীর সংখ্যা বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে কিছু সমস্যাও বাড়ছে। টয়লেট সুবিধার অভাব, যত্রতত্র ময়লা ফেলা এবং গাড়ি পার্কিংয়ের জায়গা সংকুলান যা দর্শনার্থীদের ভোগান্তিতে ফেলছে।

ডালিয়া পানি উন্নয়ন বোর্ড (পাউবো) সূত্রে জানা গেছে, ব্যারেজ এলাকায় কয়েকটি উন্নয়ন প্রকল্প হাতে নিয়েছে পাউবো কর্তৃপক্ষ। এর মধ্যে গাড়ি পার্কিং জোন, গণশৌচাগার, দর্শনার্থীদের বিশ্রামাগার, মানসম্মত হোটেল-রেস্তোরাঁ এবং ময়লা-আবর্জনা ফেলার ডাস্টবিন বসানোর উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। এছাড়া পর্যটন সুবিধার উন্নয়নের জন্য ইতোমধ্যে একটি মাস্টারপ্ল্যান তৈরির কথাও ভাবা হচ্ছে।

বিশেষ দিনে জনসমাগমের নিরাপত্তা প্রসঙ্গে দোয়ানি পুলিশ ফাঁড়ির ইনচার্জ এরশাদুল হক জানান, ছুটি ও বিশেষ দিনগুলোতে অতিরিক্ত ফোর্স মোতায়েন করা হয়। বিশেষ মোবাইল টিমও কাজ করে।

তিনি বলেন, নিরাপত্তা নিশ্চিত করার চেষ্টা চলছে। তবে ভিড়ের মধ্যে কখনো কখনো ছোট শিশুরা হারিয়ে যায় বা পকেটমারের ঘটনা ঘটে। এ নিয়ে সবাইকে সতর্ক থাকতে বলা হয়েছে।

বাংলাদেশ পর্যটন করপোরেশন ইতোমধ্যে এই এলাকায় সম্ভাব্য রিসোর্ট বা ভিজিটর সেন্টার স্থাপনের জন্য প্রাথমিক জরিপ করেছে। কিছুদিন পর হয়তো এখানকার পর্যটন চেহারাই পাল্টে যাবে।

ডালিয়া পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী অমিতাভ চৌধুরী বলেন, ‘তিস্তা ব্যারেজ শুধু প্রকৌশল কাঠামো নয়, এটি একটি পর্যটন সম্ভাবনার কেন্দ্রবিন্দুতে রূপ নিচ্ছে। আমরা চাই ব্যারেজকে ঘিরে একটি পূর্ণাঙ্গ পর্যটন এলাকা গড়ে উঠুক। এজন্য সরকারি ও বেসরকারি উভয় পর্যায়ে পরিকল্পনা হচ্ছে।’

বাতায়ন ২৪ডটকম/শরিফুল ইসলাম।

দয়া করে নিউজটি শেয়ার করুন..




© All rights reserved © batayon24
Design & Developed BY ThemesBazar.Com