রংপুর প্রতিনিধি,বাতায়ন২৪ডটকম
বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ে পরীক্ষা না দিয়েও ছাত্রলীগ নেত্রীকে পাস করিয়ে দেয়ার অভিযোগ উঠেছে।অভিযুক্ত সুরাইয়া ইয়াসমীন ঐশী গণিত বিভাগের ১৮-১৯ সেশনের শিক্ষার্থী, বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রলীগের সাংগঠনিক সম্পাদক। এ অভিযোগ উঠেছে একই বিভাগের কোর্স শিক্ষক প্রফেসর ড. মো. রুহুল আমিন এর বিরুদ্ধে।
জানা যায় যে, গত ১৬ জুলাই এর পর থেকে সুরাইয়া ইয়াসমিন ঐশী ক্যাম্পাসে অনুপস্থিত। তার মাস্টার্স ১ম সেমিস্টারের সকল পরীক্ষা জুলাই বিপ্লবের আগেই হয়েছিল। শুধু প্রফেসর ড. মো. রুহুল আমিন এর একটা কোর্সের মিড পরীক্ষা বাকি ছিল। কোর্সটির নাম কমিউনিটিব আলজেবরা। কোর্স কোড হলো ৫১০২।
কমিউনিটিব আলজেবরা বিষয়টির পরীক্ষা সোমবার (২ ডিসেম্বর) দুপুর ১২টার সময় হওয়ার কথা থাকলেও সেইদিন পরীক্ষা ক্যানসেল করেন কোর্স শিক্ষক। ১০ ডিসেম্বর দুপুর ১২টার সময় কমিউনিটিব আলজেবরা বিষয়ের মিড পরীক্ষা নেন কোর্স শিক্ষক প্রফেসর ড. মো. রুহুল আমিন। এ পরীক্ষায় ছাত্রলীগের এই নেত্রী কখনোই ক্যাম্পাসে আসেননি, পরীক্ষাও দেননি। কিন্তু পরীক্ষা না দিয়েও তার কন্টিনিউয়াস নাম্বার আসে ২১।
এ বিষয়ে ঐশীর ব্যাচমেট ইমরান বলেন, ছাত্রলীগের বিপক্ষে সর্বদাই ছিলাম। এমন সংগঠনের কেও ক্যাম্পাসে এসে পরীক্ষা দিতে পারে না, তারা পরীক্ষা দিতে আসার সাহস কিভাবে পায়! আগে শহীদ আবু সাঈদ হত্যার বিচার, দোষী ছাত্রদের আজীবন বহিষ্কার। তা না হলে বিশ্ববিদ্যালয়ে বিশৃঙ্খলা হলে এর দায় বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রশাসনকেই নিতে হবে।
সুরাইয়া ইয়াসমিন ঐশী বলেন, আমি ওই মিড পরীক্ষাটি সবার সাথেই দিয়েছি। কিন্তু কবে দিয়েছি তা মনে নেই। আপনারা চাইলে আমার বিভাগে গিয়ে পরীক্ষার খাতা দেখতে পারেন।পরীক্ষায় অংশগ্রহণ না করেও পাস করে দেয়ার ব্যাপারে গণিত বিভাগের প্রফেসর ড. রুহুল আমীনকে জিজ্ঞেস করলে তিনি বলেন, না আমি পরীক্ষা জুলাই-আগস্টের আগেই নিয়েছি। কারণ মাস্টার্স ১ম সেমিস্টারের সকল বিষয় আগেই শেষ করে ফেলছি আমরা। আর এই মিড পরীক্ষাটি মে মাসে নিয়েছি। দেখতে চাইলে পরীক্ষা কন্ট্রোলার গিয়ে খোঁজখবর নিতে পারেন।
এ বিষয়ে গণিত বিভাগের পরীক্ষা কমিটির চেয়ারম্যান সহযোগী অধ্যাপক মো. হান্নান মিয়া বলেন, সংশ্লিষ্ট কোর্স টিচার রা এসব দেখাশোনা করে। তারা আমাদের রেজাল্ট দেয়। আমরা সেটা পরীক্ষা নিয়ন্ত্রক দপ্তরে পাঠাই দেই। এতে আমার কোনো হাত নেই।
এ বিষয়ে গণিত বিভাগের বিভাগীয় প্রধান প্রফেসর ড. কমলেশ চন্দ্র রায় বলেন, আমি জুলাই অভ্যুত্থান পরে ওই শিক্ষার্থীকে বিভাগে কখনো দেখিনি। বিভাগীয় প্রধান হিসেবে আমার সঙ্গে কোনো যোগাযোগ করেনি। আমি বিষয়টি শুনেছি। শোনার পর বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্যকে জানাইছি। কারণ এ দায় বিভাগ নিবে না।
বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের (বেরোবি) ছাত্রলীগ নেত্রী ও গণিত বিভাগের ২০১৮-১৯ শিক্ষাবর্ষের শিক্ষার্থী সুরাইয়া ইয়াসমিন ঐশী পরীক্ষা না দিয়ে উত্তীর্ণ হওয়ার ঘটনায় তদন্ত কমিটি গঠন করেছে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন।বুধবার (২২ জানুয়ারি) সন্ধ্যায় বিশ্ববিদ্যালয়ের ভারপ্রাপ্ত পরীক্ষা নিয়ন্ত্রক মো. তানজিউল ইসলামকে আহ্বায়ক করে তিন সদস্য বিশিষ্ট তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়।
কমিটির অন্যান্য সদস্যরা হলেন—সদস্য সচিব ও গণিত বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক মো. হান্নান মিয়া এবং ছাত্র পরামর্শ ও নির্দেশনা দপ্তরের পরিচালক অধ্যাপক ড. মো. ইলিয়াছ প্রামানিক। এই তদন্ত কমিটিকে অবিলম্বে প্রতিবেদন দেওয়ার জন্য বলা হয়েছে।
প্রসঙ্গত, সুরাইয়া ইয়াসমিন ঐশী নিষিদ্ধ সংগঠন ছাত্রলীগের বেরোবি শাখার সাংগঠনিক সম্পাদক। ক্যাম্পাসে ছাত্রলীগের বিভিন্ন কার্যক্রমে প্রথম সারিতে থাকতেন তিনি। গত ১৬ জুলাই শহীদ আবু সাইদ হত্যার পর থেকেই পলাতক রয়েছেন।
এদিকে ওই ছাত্রলীগ নেত্রীকে ছাড়াই গত ডিসেম্বর মাসের ২ তারিখ গণিত বিভাগের মাস্টার্স ১ম সেমিস্টারের ৫১০২ কোর্সের মিডটার্ম পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হয়। কিন্তু ফলাফল প্রকাশ হলে ঐশিরও ফলাফল আসে। এ নিয়ে বিভাগের ভেতরে ও বাইরে ব্যাপক সমালোচনা তৈরি হয়। এরপর বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন তদন্ত কমিটি করে।
বাতায়ন২৪ডটকম