সিনিয়র করেসপনডেন্ট, রংপুর ।। বাতায়ন২৪ডটকম।।
তিস্তার উজান ও ভাটিতে প্রবল বৃষ্টিপাতে চলতি মওসুমে ৫ম বারের মতো বাড়ছে তিস্তার পানি। শনিবার ( ২৮ সেপ্টেম্বর) সন্ধা ৬ টায় তিস্তার পানি লালমনিরহাটের ডালিয়া ব্যারেজ পয়েন্টে ৫ সেন্টিমিটার এবং রংপুর কাউনিয়া তিস্তা সেতু পয়েন্টে মাত্র ১ সেন্টিমিটার নীচ দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছিল। ২৪ ঘন্টার মধ্যে যেকোন মুহুর্তে তা বিপদসীমা অতিক্রম করতে পারে বলে জানিয়েছে পানি উন্নয়ন বোর্ড। এতে আবারও বন্যার শংকা তিস্তা অববাহিকা জুড়ে। এরইমধ্যে অববাহিকার দুইপাড়ের চরাঞ্চল-নিম্মাঞ্চলের হাজার হাজার পরিবার পানিবন্দি হয়ে পড়েছে। ডুবেছে আমনসহ বিভিন্ন আবাদী জমি।
উত্তরাঞ্চল পানি উন্নয়ন বোর্ডের তত্বাবধায়ক প্রকৌশলী আহসান হাবিব জানান, শনিবার (২৮ সেপ্টেম্বর) সন্ধা ৬ টায় তিস্তার ডালিয়া ব্যারেজ পয়েন্টে বিপদসীমার মাত্র ৫ সেন্টিমিটার নীচ দিয়ে পানি প্রবাহিত হচ্ছিল। ভাটিতে রংপুরের কাউনিয়া তিস্তা সেতু পয়েন্টে মাত্র বিপদসীমার মাত্র ১ সেন্টিমিটার নিচে ছিল তিস্তার পানি। একারণে তিস্তা অববাহিকার চরাঞ্চল ও নিম্মাঞ্চল পানিতে ডুবেছে। বাসাবাড়িতে পানি উঠেছে। তলিয়ে গেছে আমনের ক্ষেতসহ আবাদি জমি। তিনি জানান, তিস্তার ভারত অংশের আশেপাশে গত ২৪ ঘন্টায় পশ্চিমবঙ্গের জলপাইগুড়িতে ১৬৪.০, কালিম্পংয়ে ১৩০.০, দার্জেলিংয়ে ৭৭.০ এবং কুচবিহারে ৫৪.০ মিলিমিটারবৃষ্টিপাত হয়েছে। এছাড়া তিস্তার বাংলাদেশ অংশের রংপুওে ৪১.০ নীলফামারীর ডিমলায় ৭৩.০, কুড়িগ্রামের চিলমারীতে ৫৪.০, রাজারহাটে ২৭.মিলিমিটার বৃষ্টিপাত রেকর্ড হয়েছে। সেকারণে এই বন্যা। এই সময়ে আগে থেকেই তিস্তার ৪৪ টি জলকপাট খুলে দেয়ায় থাকে।
তিনি জানান আগামী ২৪ ঘন্টা পর্যন্ত তিস্তা, ধরলা ও দুধকুমার নদীসমূহের পানি সমতল বৃদ্ধি পেতে পারে এবং পরবর্তী ২ দিন হ্রাস পেতে পারে এবং লালমনিরহাট, নীলফামারী, রংপুর, কুড়িগ্রাম ও গাইবান্ধা জেলার তিস্তা নদীর পানি সমতল বিপদসীমা অতিক্রম করতে পারে এবং জেলাসমূহের সংশ্লিষ্ট চরাঞ্চল-নিম্নাঞ্চল প্লাবিত হতে পারে। পরবর্তি ২ দিনে তিস্তা নদীর পানি সমতল হ্রাস পেয়ে বিপদসীমার নিচে প্রবাহিত হতে পারে। অপরদিকে আগামী ৩ দিন পর্যন্ত কুড়িগ্রাম জেলার ধরলা ও দুধকুমার নদীসমূহের পানি সমতল বিপদসীমার নিচ দিয়ে প্রবাহিত হতে পারে।
এদিকে তিস্তায় পানি বৃদ্ধির কারণে লালমনিরহাটের পাটগ্রাম, হাতিবান্ধা, কালিগঞ্জ, আদিতমারী, সদর, নীলফামারীর ডিমলা, জলঢাকা, রংপুরের গঙ্গাচড়া, কাউনিয়া, পীরগাছা, কুড়িগ্রামের রাজারহাট, উলিপুর এবং গাইবান্ধার সুন্দরগঞ্জ উপজেলার তিস্তা অববাহিকার চরাঞ্চল ও নিম্নাঞ্চলে পানি উঠেছে। অববাহিকার অন্তত ৩০ হাজার মানুষের বাড়িঘরে পানি উঠেছে। তলিয়ে গেছে রাস্তাঘাট। অনেক জায়গায় বিচ্ছিন্ন আছে যাতায়াত। নৌকা-কলার ভেলায় কোনমতে যাতায়াত করছেন মানুষ। বাড়িঘরে পানি ওঠায় রান্না এবং শিশুদের নিয়ে বিপাকে পানিবন্দিরা। তলিয়ে গেছে উঠতি বাদামসহ ফসলি জমি। ভেসে গেছে পুকুরের মাছ। শুকনা খাবার ও বিশুদ্ধ পানির সংকট দেখা দিলেও এসব মানুষের পাশে এখনও পাশে দাড়ায় নি কেউ।
পানি বাড়ার সাথে সাথে বিভিন্ন এলাকায় শুরু হয়েছে ভাঙ্গন। রংপুরের গঙ্গাচড়ার মর্নেয়া, কোলকোন্দ, লক্ষিটারী, মর্নেয়া, কাউনিয়ার বালাপাড়ার গদাই, পীরগাছার ছাওলা, তাম্বুলপুর লালমনিরহাটের হাতিবান্দার সিন্দুরনা, পাটিকাপাড়া, ডাউয়াবাড়ি, কালিগঞ্জের কাকিনা, আদিতমারির মহিষাখোচ, সদরের খুনিয়াগাছ, কুড়িগ্রামের রাজারহাটের বিদ্যানন্দ, গতিআসাম, বুড়িরহাট, উলিপুরের ঠুটাপাইকর, থেতরাই, বজরা, গাইবান্ধার সুন্দরগঞ্জের তারাপুর, বেলকা, হরিপুর ইউনিয়নের অন্তত ১২৫ পয়েন্টে ধরেছে ভয়াবহ ভাঙ্গন।
উত্তরাঞ্চল পানি উন্নয়ন বোর্ডের তত্বাবধায়ক প্রকৌশলী আহসান হাবিব জানান, গুরুত্ব বিবেচনায় কিছু কিছু এলাকায় জিও ব্যাগ ফেলে ভাঙ্গন প্রতিরোধের চেস্টা চলছে।
তিস্তা বাঁচাও নদী বাঁচাও সংগ্রাম পরিষদের সভাপতি অধ্যক্ষ নজরুল ইসলাম হক্কানি জানান, তিস্তা উত্তরের ২ কোটি মানুষের জীবনরেখা। প্রতিবছর এখানে ২০ হাজার মানুষ উদ্বাস্তু হয়। প্রায় লাখ কোটি টাকার ক্ষতি হয়। নদীর তলদেশ ভরাট হওয়ায় তৈরি হয়েছে এই অবস্থা। যেহেতু পানি চুক্তি হচ্ছে না। তাই তিস্তা মহাপরিকল্পনা বাস্তবায়ন হলেই এই অবস্থার উত্তরণ সম্ভব। আমরা চাই চীন ভারত নয়, নিজস্ব অর্থায়নে পদ্মা সেতুর মতো তিস্তা মহাপরিকল্পনা বাস্তবায়ন করা হোক।
গঙ্গাচড়া উপজেলা নির্বাহী অফিসার নাহিদ তামান্না জানান, আমরা সতর্ক অবস্থায় মাঠে আছি। এরই মধ্যে দুর্গত মানুষের মাঝে ত্রাণ সহায়তা দেয়া হয়েছে। এই সহায়তা অব্যাহত থাকবে।
রংপুরের ডিসি মোহাম্মদ রবিউল ফয়সাল জানান, তিস্তার নিম্মাঞ্চল ও চরাঞ্চলে পানিবন্দি মানুষের পাশে আছে প্রশাসন। যে কোন মোকাবেলা করতে মাঠ পর্যায়ে প্রশাসনকে প্রস্তুত রেখেছি। সম্ভাব্য সব ধরণের প্রস্তুতি আছে আমাদের।
বাতায়ন২৪ডটকম//মোরিই।।