স্টাফ করেসপন্ডেন্ট বরগুনা।। বাতায়ন ২৪ডটকম।।
বরগুনার কুয়েত প্রবাসী হাসপাতালে জরায়ুর অস্ত্রোপচারের সময় রোগীর পেটে সাত ইঞ্চি দীর্ঘ একটি কাঁচি রেখেই সেলাই করে দেয়ার অভিযোগ উঠেছে চিকিৎসকের বিরুদ্ধে।
গত বছরের ১৮ই নভেম্বর বরগুনার কুয়েত প্রবাসী হাসপাতালে কৌহিনুর বেগম নামের এক রোগীর এ অস্ত্রোপচার করা হয়।তার বাড়ি পটুয়াখালীর কলাপাড়া উপজেলার বালিয়াতলী গ্রামে।
সাত মাস পর পুনরায় অপারেশন করে ওই নারীর পেট থেকে কাঁচিটি উদ্ধার করা হয়।
তবে দীর্ঘদিন পেটের মধ্যে কাঁচি থাকায় খাদ্যনালীতে পচন ধরে বর্তমানে মৃত্যুশয্যায় দিন কাটাচ্ছেন ভুক্তভোগী কোহিনুর বেগম (৬০)।
এ ঘটনায় ন্যায়বিচার চেয়ে সিভিল সার্জনের কাছে লিখিত অভিযোগ দিয়েছেন তার স্বজনরা।
অপারেশন করেন ডা. ফারহানা মাহফুজ। তার সঙ্গে ছিলেন হাসপাতালের আবাসিক মেডিকেল অফিসার ডা. সাফিয়া পারভীন।
অপারেশনের পর চিকিৎসকরা সফল অস্ত্রোপচার বললেও, কোহিনুর বেগমের পেটে রয়ে যায় ৭ ইঞ্চি সাইজের একটি কাঁচি। মেডিকেলের ভাষায় এটিকে বলা হয় ‘আর্টারি ফরসেপ’।
কোহিনুর বেগমের স্বজনরা জানান, অস্ত্রোপচারের পর পেটে কাঁচি থাকার কারণে ক্রমেই শারীরিক অবস্থার অবনতি হতে থাকে তার।
৭ মাস পর বরিশাল শের-ই বাংলা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে গেলে চিকিৎসকরা তার পেটে কাঁচি শনাক্ত করেন।
পরে গত ১৮ই জুন অস্ত্রোপচার করে সেটি অপসারণ করা হয়। ততদিনে কোহিনুরের খাদ্যনালীতে পচন ধরে যায়। অপারেশনের সময় তার একটি অংশ কেটে ফেলতে হয়।
বর্তমানে তিনি পেটের বাইরে সংযুক্ত ব্যাগের মাধ্যমে মলত্যাগ করতে বাধ্য হচ্ছেন।
চিকিৎসকদের অবহেলা ও গাফিলতিকে দায়ী করে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবি জানিয়েছেন কোহিনুর বেগমের স্বজনরা। লিখিত অভিযোগ দেন বরগুনার সিভিল সার্জনের কার্যালয়ে।
কোহিনুরের মেয়ে ফাহিমা বলেন, চিকিৎসকের এই গাফিলতি আমার মাকে তিলে তিলে শেষ করে দিচ্ছে। আমরা এর সঠিক বিচার চাই। আমরা মায়ের চিকিৎসা করাতে গিয়ে এখন নিঃস্ব হয়ে গেছি। জামাতা হুমায়ুন বলেন, ভবিষ্যতে এমন ভোগান্তি রোধে প্রশাসনের উচিত কড়া পদক্ষেপ নেয়া।
আমাদের সঙ্গে যা হয়েছে এর দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি আমরা চাই। সরজমিন কুয়েত প্রবাসী হাসপাতালে গেলে পাওয়া যায়নি অভিযুক্ত চিকিৎসক ডা. ফারহানা মাহফুজকে। পরে তার মোবাইল ফোনে একাধিকবার ফোন করা হলেও তিনি তা রিসিভ করেননি।
হাসপাতালের ব্যবস্থাপনা পরিচালক গাজী মো. ফজলুল হক (মন্টু) বলেন, কোহিনুর বেগমের জরায়ু অপারেশন হয়েছিল।
তার অপারেশন করেছিল সরকারি হাসপাতালের চিকিৎসক ডা. ফারহানা মাহফুজ। পরে সুস্থ হয়ে রোগী বাড়ি চলে যান।
দীর্ঘ ৭-৮ মাস পর তারা আমাকে এ ঘটনা জানান। পরে বরিশাল গিয়ে আমি তাদের সঙ্গে দেখা করেছি।
এখানে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের কোনো ত্রুটি নেই। এ ছাড়া অপারেশন যে ডাক্তার করেছে তার যদি কাগজপত্র না থাকতো তাহলে আমি দায়ী থাকতাম।
এ বিষয়ে বরগুনার সিভিল সার্জন ডা. মোহাম্মদ আবুল ফাত্তাহ বলেন, এখানে ১২৫টি ক্লিনিক অ্যান্ড ডায়াগনস্টিক সেন্টার আছে।
অভিযুক্ত কুয়েত প্রবাসী হাসপাতালের মালিকসহ সবাইকে তলব করা হয়েছে। তাদের সব কাগজপত্র দিতে বলেছি।
যে অভিযোগটি উঠেছে সে বিষয়ে স্বাস্থ্য বিভাগের বিধি মোতাবেক তদন্ত সাপেক্ষে যথাযথ ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে। এ ছাড়া কোহিনুর বেগমের সকল অভিযোগ আমি আমলে নিয়েছি।
বাতায়ন২৪ডটকম/শরিফুল ইসলাম।