গাইবান্ধা প্রতিনিধি :
অন্যায়ভাবে ডেকে নিয়ে মোবাইল ফোন ও ল্যাপটপ আটক রাখার অভিযোগে গাইবান্ধার পুলিশ সুপার (এসপি) নিশাত এ্যঞ্জেলা ও সদর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) শাহিনুর ইসলাম তালুকদারসহ তিনজনের বিরুদ্ধে আদালতে মামলা দায়ের করা হয়েছে।
পুলিশের উপ-পরিদর্শক (এসআই) মনিরুজ্জামানের স্ত্রী কাজলী খাতুন বাদি হয়ে গাইবান্ধা আমলী আদালত (সদর) এ মামলাটি দায়ের করেন। বুধবার (২২ অক্টোবর) দুপুরে শুনানি শেষে আদালত মামলাটি আমলে নিয়ে পুলিশ সুপার পদমর্যাদার নিচে নয় এমন কোন কর্মকর্তাকে (পিবিআই) তদন্ত করে আগামি ১৫ ডিসেম্বরের মধ্যে প্রতিবেদন দাখিলের নির্দেশ দেন।
মামলায় তৃতীয় আসামি করা হয়েছে লালমনিরহাটের পাটগ্রাম উপজেলার বুড়িমারি-ইসলামপুর এলাকার মৃত আব্দুল কুদ্দুসের ছেলে তারেকুজ্জামান তুহিনককে (২৩)। তুহিন এসআই মনিরুজ্জামানের বোনের সাবেক স্বামীর মামাতো ভাই বলে জানা গেছে।
বৃহস্পতিবার দুপুরে বিষয়টি নিশ্চিত করে বাদি পক্ষের আইনজীবী অ্যাডভোকেট জান্নাতুল ফেরদৌসি লাবনী জানান, বাদির স্বামী এসআই মনিরুজ্জামান তখন গাইবান্ধা সদর থানায় কর্মরত ছিলেন। এক আত্মীয়ের মৌখিক অভিযোগকে কেন্দ্র করে তাকে এসপি অফিসে ডেকে নিয়ে যাওয়া হয় এবং তার মোবাইল ফোন ও ল্যাপটপ আটক রাখা হয়। বিষয়টির প্রতিকার না পেয়ে শেষ পর্যন্ত আদালতের দ্বারস্থ হন বাদি কাজলী খাতুন।
মামলার অভিযোগে বলা হয়েছে, গত ২৫ মার্চ সদর থানার ওসি শাহিনুর ইসলাম ফোন করে জরুরি ভিত্তিতে পুলিশ সুপার নিশাত এ্যঞ্জেলার কার্যালয়ে হাজির হতে বলেন। সেখানে এসআই মনিরুজ্জামানকে দীর্ঘ সময় বসিয়ে রেখে চাকরি হারানোর ভয় দেখানো হয় এবং তার ব্যক্তিগত মোবাইল ফোন ও থানায় রাখা ল্যাপটপ জব্দ করা হয়। পরে পুলিশ সুপার নির্দেশে ওই ডিভাইসগুলো সদর থানার ওসির কাছে আটক রাখা হয়।
অভিযোগে আরও বলা হয়, পারিবারিক শত্রুতার জেরে তারেকুজ্জামান তুহিন ফেসবুকে ছাত্রলীগের ট্যাগ দিয়ে ছবি প্রকাশের অভিযোগ তুলে মনিরুজ্জামানের বিরুদ্ধে মিথ্যা তথ্য দেয়। সেই অভিযোগের ভিত্তিতেই তাকে অফিস কক্ষে আটকে রেখে হুমকি ও মানসিকভাবে নির্যাতন করা হয়।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে বাদি কাজলী খাতুন বলেন, ‘অন্যায়ভাবে ও প্রভাব খাটিয়ে আমার স্বামীর মোবাইল ও ল্যাপটপ আটক রাখা হয়। এরপর থেকে নানা ধরণের ভয়ভীতি ও হুমকি দেয়া হচ্ছে। এমনকি তাকে উদ্দেশ্যমূলকভাবে সদর থানা থেকে রাজশাহী রেঞ্জে বদলি করা হয়েছে। ন্যায়বিচার চেয়ে আদালতের আশ্রয় নিয়েছি।’
অভিযোগ বিষয়ে জানতে পুলিশ সুপার (এসপি) নিশাত এ্যঞ্জেলার কাছে ফোন ও হোয়াটসঅ্যাপে বার্তা পাঠানো হলেও তিনি কোনো সাড়া দেননি। একইভাবে একাধিকবার কল করেও সদর থানার (ওসি) শাহিনুর ইসলাম তালুকদারের মন্তব্য পাওয়া যায়নি।
উল্লেখ্য, এসআই মনিরুজ্জামান ২০২৪ সালের ৭ জুন গাইবান্ধা সদর থানায় যোগ দেন। যোগদানের পর থেকেই তিনি ক্লুলেস কয়েকটি হত্যা মামলা উদ্ঘাটন, আসামি গ্রেপ্তার, মাদকবিরোধী অভিযান এবং সাইবার অপরাধীদের আইনের আওতায় এনে এলাকায় প্রশংসা অর্জন করেন। তবে চলতি বছরের ১৭ মে পুলিশ সদর দপ্তরের এক আদেশে তাকে রাজশাহী রেঞ্জে বদলি করা হয়।
এদিকে, এসপি ও ওসির বিরুদ্ধে খোদ একজন পুলিশ কর্মকর্তার স্ত্রীর মামলা দায়েরের ঘটনায় জেলায় ব্যাপক চাঞ্চল্যের সৃষ্টি হয়েছে। বিষয়টি নিয়ে পুলিশের অভ্যন্তরীণ শৃঙ্খলা, পেশাগত নিরপেক্ষতা ও ন্যায়বোধ নিয়েও নানা প্রশ্ন উঠেছে বিভিন্ন মহলে।