রংপুরের চাঞ্ছল্যকর অভিভাবকরা ঘাঘট নদী থেকে বালু তুলতে দিয়েছিলেন বাঁধা। সেই ক্ষোভেই দুই শিশুকে হত্যা করে বালুচাপায় গুম করার চেস্টা মামলার প্রধান আসামী ঘাঘট নদী থেকে বালু উত্তোলন সিন্ডিকেটের প্রধান আজহারুল ইসলামকে গ্রেফতার করেছে র্যাব-১৩।
শুক্রবার ( ৩১ অক্টোবর) বিকেলে তাকে গ্রেফতারের বিষয়টি প্রেস বিজ্ঞপ্তির মাধ্যমে জানান, র্যাব-১৩ এর সিনিয়র সহকারী পরিচালক (মিডিয়া) বিপ্লব কুমার গোস্বামী। তিনি জানান, সকাল সাড়ে ৯ টায় লালমনিরহাটের পাটগ্রামের মোহাম্মদপুর মোঃ জুয়েল হোসেনের বড়িতে অভিযান চালিয়ে তাকে গ্রেফতার করা হয়। পরে সন্ধায় তাকে গঙ্গাচড়া থানায় সোপর্দ করে র্যাব।
র্যাবের এই কর্মকর্তা জানান, চলতি বছর ৫ আগস্ট সকালে গঙ্গাচড়ার আলমবিদিতর ইউনিয়নের সিট পাইকান এলাকায় ঘাঘট নদীর বালুর পয়েন্টে পাথর কুড়াতে যাওয়া স্থানীয় আব্দুর রহমান (৮) ও মারুফ হোসেন (৬) কে হত্যার পর বালু চাপা দিয়ে গুম করার চেস্টা চালালোর ঘটনায় স্থাণীয় বালু ব্যবসায়ী আজাহারুল ইসলাম (৩৮)সহ কয়েকজনের বিরুদ্ধে মামলা করেন শিশুদুটির পিতা যথাক্রমে মোঃ আব্দুর রশিদ এবং মোঃ জাকেরুল ইসলাম। এ ঘটনায় ছায়া তদন্ত শুরু করে র্যাব। তথ্য প্রযুক্তির সহযোগিতায় প্রধান আসামী আজহারুলকে গ্রেফতার করা হয়।
গঙ্গাচড়া মডেল থানার ওসি আল এমরান জানান, চাঞ্চল্যকর এই মামলার প্রধান আসামী আজহারুল ইসলামকে র্যাব গ্রেফতার করে থানায় দিয়েছে। আমরা তাকে প্রাথমিকভাবে জিজ্ঞাসাবাদ করছি। তার কাছ থেকে অনেক তথ্য পাওয়া গেছে। প্রয়োজনীয় তথ্য যাছাই বাছাইয়ের জিজ্ঞাসাবাদের জন্য আদালতে তুলে রিমান্ড চাওয়া হবে। আজহারুল এলাকায় ব্যাপক প্রভাবশালি ছিলেন বলেও জানান ওসি। ওই মামলার ২ নম্বর আসামী স্থানীয় ইউপি মেম্বার আব্দুল রশিদের ছত্রছায়ায় আজহারুল ঘাঘট নদী থেকে বালু উত্তোলনসহ বিভিন্ন অপরাধের সাথে জড়িত।
মামলার বাদি আব্দুর রশিদ জানান,`ইউপি মেম্বার আজহারুল ইসলাম তার সিন্ডিকেট দিয়ে দীর্ঘদিন থেকে ঘাঘট নদী সংলগ্ন জমি থেকে অবৈধভাবে ড্রেজার মেশিন দিয়ে বালু তলে আসছিলেন। এতে এলাকার সব আবাদি জমি হুমকির মুখে পড়ে। বালু তোলা বন্ধ করার জন্য আমরা স্থানীয়ভাবে চেস্টা করি এবং প্রশাসনকে জানাই। এতে ক্ষিপ্ত হয়ে ঘটনার দিন আমার শিশু পুত্র রহমান ও জাকেরুলের শিশু পুত্র মারুফ বালু তোলা জমিতে পাথর কুড়াতে যায়। তখন আজহারুল ও তার বালু সিন্ডিকেট সদস্যরা শিমু মারুফ ও রহমানকে হত্যা করে বালুর নিচে চাপা দিয়ে রাখে। আমরা বিষয়টি পুলিশ ও ফায়ার সার্ভিসকে জানালে তারা ঘটনাস্থল খুড়ে লাশ উদ্ধার করে। এ ঘটনায় আমরা মামলা করলে আজহারুল ক্ষমতার প্রভাব খাটিয়ে আমাদের নানাভাবে মামলা তুলে নেয়ার হুমকি ধামকি দিয়েছে। এখন যেহেতু তাকে গ্রেফতার করা হয়েছে। তাকে রিমান্ডে নিলে আরও অনেক তথ্য বেরিয়ে আসবে।
হত্যাকান্ডের শিকার মারুফ হোসেনের পিতা জাকেরুল ইসলাম জানান, বালু সিন্ডিকেটের মাধ্যমে ক্ষমতা ও টাকার প্রভাবে আজহারুল ইসলাম স্থানীয় অনেক মানুষের ক্ষতি করেছেন। জমিজমা সব ঘাঘট নদীতে চলে গেছে। স্থানীয় ইউপি চেয়ারম্যান আব্দুল রশিদের ছত্রছায়ায় আজহারুল বালু উত্তোলন, মাদকসহ বিভিন্ন অপরাধ প্রকাশ্যে করতো সে। তারা আমার সন্তানকে হত্যা করে বালুর নিচে চাপা দিয়ে গুম করতে চেয়েছিল। এখন আজহারুল গ্রেফতার হয়েছে। আরও অনেক আসামী ঘুড়ে বেড়াচ্ছে। তারা আমাদের ওপর চাপ সৃষ্টি করছে মামলা তুলে নেয়ার জন্য। আমরা এর ফাঁসি চাই।
জাকেরুল ইসলাম আরও জানান, ‘ মামলার দ্বিতীয় আসামী আব্দুর রশিদ হাইকোর্ট থেকে জামিন নিয়ে এসে আমাদেরকে নানাভাবে হুমকি দিচ্ছে। বুধবার (২৮ অক্টোবর) তার জামিনের মেয়াদ শেষ হলেও তিনি বাড়িতে প্রকাশ্যে ঘোরাফেরা করছেন। তাকেও গ্রেফতার করা হলে ঘটনার আরও অনেক কিছু বের হবে।
রংপুর পুলিশ সুপার আবু সাইম জানান, ঘটনাটি খুবই চাঞ্ছল্যকর। এই মামলার আসামীরা প্রভাবশালী হওয়ায় হত্যার পর বালু চাপা দিয়ে গুম করে ফেলার চেস্টা করেছিল শিশুদুটিকে। মামলার তদন্ত কার্যক্রম চলছে। অনেক বিষয় বেড়িয়ে এসেছে। প্রধান আসামীকে জিজ্ঞাসাবাদে রিমান্ড চাওয়া হবে। বাকী আসামীদের গ্রেফতারে সাঁড়াশি অভিযান চলছে।