ষ্টাফ করেসপন্ডেট,রংপুর।। বাতায়ন২৪কম।।
রংপুরের কাউনিয়া মীরবাগ ডিগ্রি কলেজের পরীক্ষার হলে শিক্ষকের কাছে মোবাইল, রুমে ও টয়লেটে নকলের মহোৎসবের ভিডিও করায় ৫ সাংবাদিককে মব সৃষ্টি করে মারধোর এবং ক্যামেরা ভাংচুরের অভিযোগ উঠেছে ওই কলেজ অধ্যক্ষের বিরুদ্ধে। গুরুতর আহত ৩ জনকে রংপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। এ ঘটনায় অভিযুক্ত অধ্যক্ষকে অপসারণ এবং তাকে গ্রেফতারের দাবি জানিয়েছে রংপুরের সাংবাদিক সংগঠনগুলো।
আহত সাংবাদিকরা হলেন, বিজয় টিভির রংপুর প্রতিনিধি হামিদুল ইসলাম ও ভিডিও সাংবাদিক শাহীন আলম সাবু, স্থানীয় অনলাইন প্লাস টিভির রিপোর্টার মেহেদী হাসান, ভিডিও সাংবাদিক মশিউর রহমান ও আলআমিন।
ঘটনা প্রসঙ্গে হাসপাতালে চিকিৎসাধীন বিজয় টিভির রংপুরের ভিডিও সাংবাদিক শাহীন আলম সাবু জানান, মীরবাগ ডিগ্রী কলেজে নকল হচ্ছে এই ধরণের তথ্যের ভিত্তিতে আমরা সেখানে গিয়ে দেভি রুমে রুমে শিক্ষকদের হাতে মোবাইল, টয়লেট এবং অন্যান্য রুমে ছেড়া বই ও নকলের ছড়াছড়ি। সাথে সাথে আমরা সেগুলো ভিডিও করি। তখন দুপুর ৩ টায়। সেসময় কেন্দ্রের ট্যাগ অফিসার কাউনিযা উপজেলা ভারপ্রা্রপ্ত মাধ্যমিক শিক্ষা অফিসার মোঃ আরিফ হোসেন কেন্দ্রে ছিলেন না। তাকে আমরা ফোন দিলে ৪৫ মিনিট পর তিনি আসেন। এরপর আমরা ট্যাগ অফিসারের পেছনে পেছনে গিয়ে রুমে রুমে গিয়ে দেখি শিক্ষকদের হাতে হোতে মোবাইল ফোন। সেগুলো আমরা ভিডিও করি। এসময় এক শিক্ষকের হোয়াটস আ্যাপে বের হয়ে আসে এক ছাত্র তাকে লিখেছেন স্যার আমরা খাতা জমা দিয়ে বের হলাম। এরপর ট্যাগ অফিসারকে নিয়ে আমরা বাথরুমে যাই। সেখানে গিয়ে দেখি টয়লেটে ছেড়া অসংখ্য বই ও নকল।
ভিডিও সাংবাদিক সাবু জানান, এরপর ট্যাগ অফিসার আমাদেরকে পৃন্সিপ্যাল জয়নাল আবেদীনের রুমে নিয়ে যায়। সেখানে গিয়ে ট্যাগ অফিসার পৃন্সিপ্যালকে শাসান। আমরা পৃন্সিপ্যালের বক্তব্য নিতে গেলে তিনি তাৎক্ষণিকভাবে মোবাইল ফোনে ছাত্রদের উস্কে দিয়ে আমাদের আমাদের ওপর হামলা করেন এবং পৃন্সিপ্যালের রুম থেকে বের করে নিয়ে অন্য একপটি রুমে অবরুদ্ধ করে রাখেন। এসময় হামলাকারীরা আমাকে ভিডিও ডিলিট করার জন্য চাপ দেই। আমি মুছে না ফেলায় আমার ক্যামেরা ভেঙ্গে ফেলে।
ভিডিও সাংবাদিক সাবু জানান, বিষয়টি সাথে সাথে পুলিশকে জানালেও তারা ঘটনাস্থলে এসে আমাদের উদ্ধার করে গাড়িতে তুলে নিয়ে যাওয়ার সময় আবারও পৃন্সিপ্যালের নেতৃত্বে মব সৃষ্টিকারীরা আমাদের পুলিশের গাড়ি থেকে নামিয়ে নেয় এবং হামলা করে। এসময় পুলিশ নিরব ভূমিকা পালন করে।
পরে আবারও অবরুদ্ধ করে রেখে পৃন্সিপ্যাল একটি মুচলেকা পত্রে আমাদের সই দিতে বাধ্য করে। পরে রংপুর থেকে সাংবাদিকনেতৃবৃন্দ এসে সন্ধায় আমাদের উদ্ধার করে নিয়ে হাসপাতালে ভর্তি করান।
এ ব্যপারে রংপুর সিটি প্রেসক্লাবের সাধারণ সম্পাদক হুমায়ুন কবির মানিক জানান, আমার অবরুদ্ধ ও অসুস্থ্য অবস্থায় সহকর্মীদের উদ্ধার করে হাসপাতালে ভর্তি করেছি। পৃন্সিপ্যাল নকলের ঠিকাদারি নিয়ে ওই কেন্দ্রে ব্যপক নকল করাচ্ছে। সাংবাদিকরা সেই ছবি তুলতে গেলে তাদের ওপর হামলা করে তাদের অবরুদ্ধ করে রাখে। শুধু তাই নয়, তারা মুচলেকা নেয়ার সাহস দেখায়। সহকর্মীরা একটু সুস্থু হলেই আমরা মামলা করবো। এ ঘটনায় অভিযুক্ত পৃন্সিপ্যাল, ট্যাগ অফিসারকে অপসারণ এবং হামলাকারীদের গ্রেফতার করা না হলে কঠোর আন্দোলনে যাবো আমরা।
রংপুর রিপোর্টার্স ক্লাব ও রংপুর সাংবাদিক ইউনিয়ন-আরপিইউজের সাধারণ সম্পাদক সরকার মাজহারুল মান্নান বলেন, রংপুরে বিভিন্ন কেন্দ্রে নকল চলছে দেদারছে। এরআগেও মিঠাপুকুরে একজন অধ্যক্ষ আমাদের সময়ের প্রতিনিধিকে হাটু ভেঙ্গে দেয়ার হুমকি দিয়েছেন। এখন মীরবাগ কলেজের অধ্যক্ষের নেতৃত্বে সাংবাদিকদের ওপর হামলা ও ক্যামেরা ভাংচুর ও মুচলেকা নেয়ার ঘটনা ঘটলো। সেখানে পুলিশ এবং ট্যাগ অফিসারের নিরব ভূমিকাকে খুবই খারাপভাবে পর্যবেক্ষণ করেছি আমরা। জড়িত পৃন্সিপ্যালসহ ট্যাগ অফিসারের অপসারণ চাই আমরা। একই সাথে হামলাকারীদের গ্রেফতার চাই। আমরা মনে করছি সরকারের ভাবমূর্তি নস্ট করার অপচেস্টা হিসেবে পৃন্সিপ্যাল, ট্যাগ অফিসাররা নকলে সহযোগিতা করছে। আমাদের দাবি মানা না হলে আমরা পুলিষ সুপার, ডিআইজি কার্যালয়ে লাগাতর অবস্থান কর্মসূচিতে যাবো।
রংপুর সম্মিলিত সাংবাদিক সমাজের সদস্য সচিব লিয়াকত আলী বাদল বলেন, সেকানে ট্যাগ অফিসারও নকলের সাথে সরাসরি জড়িত। তানা হলে তিনি কেন্দ্রে কেন থাকলেন না। তার উপস্থিতিতে ভিডিও করা হলো। অথচ তিনি পৃন্সিপ্যালের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা না নিয়ে উল্টো সাংবাদিকদের ওপর হামলার সুযোগ করে দিলেন। দ্রুত অভিযুক্তদের গ্রেফতার করা না হলে আমরা কঠোর আন্দোলনে যেতে বাধ্য হবো।
এ ব্যপারে একাধিকবার ট্যাগ অফিসার ও কলেজের পৃন্সিপ্যালের সাথে মোবাইলে যোগাযোগের চেস্টা করা হলেও তারা ফোন রিসিভ করেন নি।
রংপুর জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ রবিউল ফয়সাল বলেন, কেন্দ্রে নকল এবং সাংবাদিকের ওপর হামলা ও ভাংচুরের ঘটনায় আমরা তদন্ত কমিটি করে ব্যবস্থা গ্রহন করবো। পৃন্সিপ্যাল, ট্যাগ অফিসার কেউই রেহাই পাবে না।
এ ব্যপারে রংপুর রেঞ্জ ডিআইজি আমিনুল ইসলাম জানান, এ ঘটনায় পুলিশের তোন গাফিলতি থাকলে আমরা খতিয়ে দেখে তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিবো। সাংবাদিকরা মামলা করলে আমরা যথাযথ আইনগত ব্যবস্থা নিবো।
বাতায়ন২৪ডটকম/শরিফুল ইসলাম।