স্টাফ করেসপনডেন্ট,রংপুর।। বাতায়ন২৪ডটকম।।
মঙ্গলবার সকালে রংপুর ধর্ম সভায় আসন্ন রথযাত্রা নিয়ে এটি বৈঠক করে সেনাবাহিনী। ওই বৈঠকে পাশে বসেছিলেন রংপুর জেলা পূজা উদযাপন পরিষদের সভাপতি ও সাবরেজিস্টার রামজীবন কুন্ডু। তার বিরুদ্ধে বৈষম্য বিরোধী ছাত্র আন্দোলনে একাধিক হত্যা মামলাসহ বিভিন্ন মামলা থাকা এবং র এর এজেন্টের অভিযোগ এনে বুধবার রাত ১টায় একটি স্ট্যাটাস দেন এনসিপির মুখ্য সমন্বয়ক (উত্তরাঞ্চল) সারজিস আলম। এই স্ট্যাটাসের পর সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়েছে ব্যাপক তোলপাড়। ৩০ মিনিটে ১ হাজার কমেন্ট ও ৬০০ শেয়ার হয়েছে সারজিসের ওই পোস্ট।
সারজিস আলম বৈঠকের একটি ছবিতে সেনাবাহিনীর পাশে বসে থাজা রামজীবন কুন্ডের ছবি লাল চিহ্নিত করে সংযুক্ত করে স্ট্যাটাসে লেখেন, ” সেনাবাহিনী কারো সম্পর্কে না জেনে এভাবে পাশে বসিয়ে প্রেস ব্রিফিং করবে এটা সম্ভব নয়। তারপরও কিভাবে এটা হলো সেই প্রশ্নের উত্তর সেনাবাহিনীর দেওয়া উচিত। গোল চিহ্নিত যে লোকটি বসে আছে তার পরিচয়ের কিছু অংশ তুলে ধরছি।”
সারজিস আলম স্টাটাসে লেখেন, ” নাম রাম জীবন কুন্ডু, আওয়ামী লীগ সরকার আমলের সংসদ-সদস্য ও পানিসম্পদ মন্ত্রী রমেশ সেনের ভাগ্নি জামাতা বলে পরিচয় দিতেন। সরকারি কর্মচারী হয়েও রংপুর পূজা উদযাপন পরিষদের নেতা হন এবং নেতা হওয়ায় ক্ষমতার দাপটে তিনি বেপরোয়া হয়ে ওঠেন, আওয়ামীলীগের সকল বড় প্রোগ্রামে অংশগ্রহণ করতেন। “
সারজিস আলম লেখেন ” রংপুর সদরের সাব-রেজিস্ট্রার থাকা অবস্থায় জাল দলিল এর কারসাজিতে হাতিয়েছেন কোটি কোটি টাকা।
রংপুর সদর সাব-রেজিস্টার থাকার আগে একই কাজ নীলফামারি জেলায় করে খেয়েছিলেন মামলা। নিয়োগ বানিজ্য করে মোটা অংকের টাকা নিতেন। আওয়ামীলীগের এমপি মনোনয়ন প্রত্যাশী ছিলেন।”
সারজিস আলম স্ট্যাটাসে আরো লেখেন, “৫ আগষ্ট পরবর্তী সময়ে রংপুর সদর থেকে পানিশমেন্ট পোস্টিং হিসেবে পঞ্চগড় জেলার বোদা উপজেলায় পোস্টিং হয়। পরবর্তীতে কয়েক মাস না যেতেই কোন এক অদৃশ্য ক্ষমতায় আবারও রংপুরের পীরগাছা উপজেলায় নিজেকে ট্রান্সফার করিয়ে নেন। “
সারজিস লেখেন, ‘ আওয়ামীলীগ আমলের অন্যতম বাটপার এই লোক নিজেই জানাতেন সে “র” এর বড় মাপের লোক। সাবেক রেঞ্জ ডিআইজিও তার সিগন্যাল পাওয়ার পরে কাজ করতেন। ভারতে আছে তার দুটো বাড়ি কলকাতার এমএলএ দের সাথে আছে তার প্রতিনিয়ত যোগাযোগ।
সাথে তিনি দৈনিক যুগান্তরের একটি রিপোর্টও শেয়ার করেন।
সারজিসেরু ওই পোস্টে আধা ঘন্টায় এক হাজার মন্তব্য এবং ৭০০ শেয়ার হয়েছে। এতে রামজীবন কুন্ডু সম্পর্কে বিভিন্ন ধরনের তথ্য তুলে ধরা হয়েছে।
ইমতিয়াজ আহমেদ ইমতি নামে এক ব্যক্তি তার মন্তব্য লেখেন , ” ৫ আগষ্ট পরবর্তী দেশকে অস্থিতিশীল করার লক্ষ্যে রংপুর থেকেই এর শুরুটা করার জন্য আমাদের সম্মানিত হিন্দু ধর্মালম্বী ভাইবোনদের উপাসনালয় ভাঙ্গা এবং তাদের বাড়িভিটা ছেড়ে দেশত্যাগের বিষয়ে মিথ্যা ভয় ঢুকিয়ে তাদের আবেগকে পুঁজি করে ইসকন নেতা চিন্ময় প্রভু দাশ কে রংপুরে নিয়ে এসে মহাসমাবেশ করিয়েছিলো সে।”
আবু বকর সিদ্দিক নামের এক ব্যক্তি লেখেন, ” তার কাছে সব হারাম জমি হালাল হয়ে যেতো”
ফরহাদ আলম নামে এক ব্যক্তি মন্তব্য লেখেন,
“সত্যিই বিস্ময়কর! এমন বিতর্কিত একজন ব্যক্তির সেনাবাহিনীর প্রেস ব্রিফিংয়ে উপস্থিতি অনেক প্রশ্ন তোলে।
বিষয়টি স্বচ্ছতার স্বার্থে তদন্ত ও ব্যাখ্যা জরুরি।”
ফুজেল আহমেদ নামের এক ব্যক্তি লেখেন,
“সেনাবাহিনী কে বিতর্কিত করতে এরে ইন্ডিয়ার প্রেকসিপশনে এখানে আনা হতে পারে
একে গ্রেফতার ও সনদ যাচাই করে ব্যাবস্তা নেয়া র দাবি “

Oplus_0
অনুসন্ধানে জানা যায়, আওয়ামী লীগ আমলে রামজীবন কুণ্ডু মাত্র ৬ বছর বয়সেই বাগিয়ে নেন মুক্তিযোদ্ধার (মুজিবনগর কর্মচারী) সনদ! ওই সনদে বাগিয়ে নেন চাকরি। জন্ম সদনে রামজীবন কুণ্ডুর জন্ম তারিখ লেখা রয়েছে ১৯৬৫ সালের ১০ সেপ্টেম্বর। মুক্তিযুদ্ধের সময় তার বয়স ছিল ৬ বছরেরও কম। এরপরও তিনি মুক্তিযুদ্ধ চলাকালে ‘মুজিবনগর সরকারের কর্মচারী’ হিসাবে মুক্তিযোদ্ধার সনদ নিয়ে চাকরি করছেন। ‘মুজিবনগর সরকারের কর্মচারী’ হিসাবে ২০০৯ সালে ১৯০ জনকে সাবরেজিস্ট্রার পদে আত্তীকরণ করা হয়েছিল উচ্চ আদালতের নির্দেশে। তাদের মধ্যে ১৯৬৮, ১৯৬৭, ১৯৬৬, ১৯৬৫ সালে জন্ম নেওয়া ব্যক্তিরাও ছিলেন। যাদের বয়স মুক্তিযুদ্ধের সময় মাত্র ৩ থেকে ৬ বছর ছিল।
মুজিবনগর সরকার গঠিত হয়েছিল ১৯৭১ সালের ১৭ এপ্রিল। ওই সরকারের কর্মচারী হতে হলে তাদের বয়স কমপক্ষে ১৮ বছর হওয়ার কথা। সে ক্ষেত্রে তাদের জন্মসাল হওয়া দরকার ১৯৫২ অথবা তার পূর্বে। কিন্তু নিয়োগ পাওয়াদের সবারই জন্ম তারিখ ছিল ১৯৫৩ সালের পরে। এর মধ্যে ১৩৮ জনের বয়সই ছিল ১০ বছরের নিচে। আর ১৯৬৪ থেকে ১৯৬৬ সালে জন্ম তারিখ আছে এমন সংখ্যা ছিল প্রায় ৩৫ জন। মূলত ’৬৪ সালের পর যাদের জন্ম দেখানো হয়েছিল তাদের ৩৯ জনই এখন কর্মরত রয়েছেন এবং আগামী বছর তারা অবসরে যাবেন।
২০০৯ সালে মুজিবনগর কর্মচারীর কোটায় সাবরেজিস্ট্রারের চাকরি পাওয়ার আগে রামজীবন কুণ্ডু কুড়িগ্রামের রাজারহাটে একটি প্রাইভেট কলেজে চাকরি করতেন।
অনুসন্ধানে বাবা তথ্য থেকে জানা যায়, প্রতিটি দলিল সম্পাদনের জন্য তাকে দেড় থেকে দুই হাজার টাকা ঘুস দিতে হতো। রংপুর সদর সাবরেজিস্ট্রি অফিসে প্রতিদিন এক থেকে দুই শতাধিক দলিল রেজিস্ট্রি হয়। এতে দেখা যায় তিনি প্রতিদিন দলিল সম্পাদন বাবদ প্রায় আড়াই থেকে তিন লাখ টাকা ঘুস নিতেন। নগরীর আরএমসি মার্কেটের সামনে ৮ তলা ভবনের একটি ফ্ল্যাট কিনেছেন, যার বাজারমূল্য এক কোটি টাকার ওপরে। রাজারহাটে নিজ গ্রামে জমি কিনেছেন, যার বাজারমূল্য এক কোটি টাকার বেশি। ঢাকায় ফ্ল্যাট কিনেছেন। রংপুর ধাপ চেকপোস্ট সড়কে তার একাধিক ফ্ল্যাট রয়েছে। নামে-বেনামে রয়েছে বিপুল পরিমাণ অর্থ।
পুলিশ জানায়, কারাগারে থাকা ইস্কন নেতা জিম্ময় বড়ুয়ার রংপুরে যে প্রোগ্রাম হয়েছিল সেখানকার প্রধান অর্থ যোগানদাতা ও সমন্বয়কারী ছিলেন রামজীবন কুন্ডু।
বাতায়ন২৪ডটকম/রিদয়।