স্টাফ করেসপন্ডে রংপুর।। বাতায়নডটকম।।
রংপুর জেলা স্কুল মাঠে ঢল নামে হাজারো মানুষের জন সমুদ্রে পরিণত হয়। কানায় কানায় পরিপূর্ণ হয়ে ওঠে জামায়াতে ইসলামীর মহাসমাবেশ।
বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর আমির ডা. শফিকুর রহমান বলেছেন,
নির্বাচন সামনে রেখে ষড়যন্ত্র হচ্ছে। আমরা যদি সরকার গঠন করতে পার তাহলে ভিন্ন ধর্মের মানুষেরা ভালো থাকবে। এর আগেও মব ছিল। কিন্তু আমরা মবকে পছন্দ করি না। আপনারা দেখেছেন এই দশ মাসে আমরা কোন দলের উপর অত্যাচার করিনি। ‘সুষ্ঠু নির্বাচনের জন্য কতগুলো মৌলিক সংস্কার অবশ্যই করতে হবে। আমরা সেই সংস্কারগুলোর কথা বলেছি। আমরা সংস্কারগুলো আদায় করে ছাড়ব। সুষ্ঠু নির্বাচনও ইনশাআল্লাহ আদায় করে ছাড়ব।’
কেউ যদি আওয়ামী ফ্যাসিবাদের আমলের নির্বাচনের স্বপ্ন দেখে থাকেন, আমরা মহান আল্লাহর সাহায্যে সেই স্বপ্নকে দুঃস্বপ্নে পরিণত করব। সেই স্বপ্ন বাস্তবায়ন করতে দেয়া হবে না। কোনো প্রশাসনিক ক্যু করতে দেওয়া হবে না। ভোটকেন্দ্রে কোনো মাস্তানতন্ত্র চলতে দেওয়া না, কালো টাকার কোনো খেলা সহ্য করা হবে না।’
তিনি আরও বলেন, ‘আগামী নির্বাচনকে সামনে রেখে আমরা বহু ধরনের ষড়যন্ত্রের কথা শুনতে পাচ্ছি, বহু ধরনের কথা ময়দানে শুনতে পাচ্ছি। বহু ধরনের ইঞ্জিনিয়ারিংয়ের আলামত বুঝতে পারছি। আমরা সবাইকে স্মরণ করিয়ে দেই- এই শেখ হাসিনা, তার হাতে সকল বাহিনী ছিল। দোর্দণ্ড প্রতাপ ছিল, জায়গায় জায়গায় নিজের লোক বসিয়েছিল। মান্তানদের দিয়ে রাষ্ট্র পরিচালনা করেছিল। কিন্তু যখন জনগণের জাগরণ, জনগণের বিস্ফোরণ হয়েছে, তখন কি তাকে আর কেউ রক্ষা করতে পেরেছে? তাহলে যেই জনগণ এতো মূল্য দিয়ে একটা পরিবর্তন এনেছে, সেই জনগণ আরেকটা ফ্যাসিবাদ কায়েম করতে দেবে না ইনশাআল্লাহ।
১৭ বছর পর রংপুরে বড় পরিসরে রাজনৈতিক ময়দানে ফিরল বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামী।
আজ শুক্রবার (৪ জুলাই) দুপুর থেকে রংপুর জেলা স্কুল মাঠে ঢল নামে হাজারো মানুষের। কানায় কানায় পূর্ণ হয়ে ওঠে পুরো মাঠ। আশপাশের দুই কিলোমিটার সড়কজুড়ে মানুষের অবস্থান। নানা বয়সী -পুরুষ, ছাত্র, শ্রমজীবী, পেশাজীবী মানুষের পদচারণে পরিপূর্ণতা পায় জনসমাবেশ। তাদের কণ্ঠে ছিল পরিবর্তনের প্রত্যাশা, হাতের প্ল্যাকার্ডে ছিল দাবি ও প্রতিবাদের ভাষা।
চার দফা দাবি সামনে রেখে আয়োজিত এ বিভাগীয় জনসভাকে কেন্দ্র করে রংপুর নগরীসহ আশপাশের জেলায় সৃষ্টি হয়েছে নতুন রাজনৈতিক উত্তাপ ও আলোচনা।
দাবিগুলোর মধ্যে রয়েছে—২০২৪ সালের ছাত্র আন্দোলনে শহীদ আবু সাঈদসহ নিহত ব্যক্তিদের হত্যার বিচার, অংশগ্রহণমূলক নির্বাচন নিশ্চিতে ‘লেভেল প্লেয়িং ফিল্ড’ ও রাজনৈতিক সংস্কার, উত্তরাঞ্চলের বহু দিনের দাবি ‘তিস্তা মহাপরিকল্পনা’ দ্রুত বাস্তবায়ন এবং বৈষম্যহীন মানবিক বাংলাদেশ গঠনের অঙ্গীকার।
জনসভা ঘিরে সকাল থেকেই রংপুর জিলা স্কুল মাঠে জড়ো হতে থাকেন নেতা-কর্মীরা। বিভিন্ন জেলা উপজেলা থেকে মিনিবাস, ট্রাক, মাইক্রোবাস, রিকশা, অটোরিকশা, কাভার্ড ভ্যানসহ বিভিন্ন যানবাহনে করে দূরদূরান্ত থেকে আসেন সাধারণ মানুষ। বিভিন্ন জেলা থেকে আসা বাস, ট্রাকগুলো রংপুর মেডিকেল মাঠ, সিও বাজার, মডার্ন মোড়, মাহিগঞ্জ, কামাল কাছনায় রেখে হেঁটে জিলা স্কুল মাঠে যাচ্ছেন মানুষ। এতে শহরে যান চলাচলে বিঘ্ন ঘটে।
বেলা ৩টায় জনসভার কার্যক্রম শুরু হয়। এতে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন দলের আমির ডা. শফিকুর রহমান। প্রধান বক্তা সদ্য কারামুক্ত কেন্দ্রীয় নেতা এ টি এম আজহারুল ইসলাম। বিশেষ বক্তা হিসেবে উপস্থিত আছেন জামায়াতের নায়েবে আমির অধ্যাপক মুজিবুর রহমান, সেক্রেটারি জেনারেল অধ্যাপক মিয়া গোলাম পরওয়ার, ছাত্রশিবিরের সভাপতি জাহিদুল ইসলামসহ কেন্দ্রীয় ও বিভাগীয় নেতৃবৃন্দ।
শুক্রবার দুপুর থেকে রংপুর জেলা স্কুল মাঠে ঢল নামে হাজারো মানুষের। কানায় কানায় পূর্ণ হয়ে ওঠে বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর মহাসমাবেশ।
মহানগর ও জেলা জামায়াতের যৌথ আয়োজনে জনসভাস্থলে নির্মাণ করা হয়েছে বিশাল মঞ্চ। নারীদের জন্য রয়েছে আলাদা জায়গা ও পর্দার ব্যবস্থা। মাঠে প্রবেশের জন্য খোলা হয়েছে নতুন দুটি পথ। জনসভাকে কেন্দ্র করে শহরের গুরুত্বপূর্ণ পয়েন্টে তোরণ, ব্যানার, ফেস্টুন এবং বড় বড় বিলবোর্ড লাগানো হয়েছে।
আয়োজকেরা জানান, জনসভা সফল করতে গঠন করা হয়েছে ১৩টি উপকমিটি, রয়েছে মেডিকেল ইউনিট ও ভলান্টিয়ার টিম। জামায়াতের সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল মাওলানা আবদুল হালিম আশা প্রকাশ করে বলেন, রংপুরে এই জনসভায় দুই লক্ষাধিক মানুষের উপস্থিতি ছিল। এই সম্মেলনের মাধ্যমে নির্বাচনের মাঠে দল নতুন করে ঘুরে দাঁড়াবে বলে তাঁর প্রত্যাশা।
সকাল থেকেই জনসভাস্থলে ব্যানার, ফেস্টুন হাতে জমায়েত হতে দেখা যায় নানা বয়সী মানুষকে। তাদের দাবি, দীর্ঘ ১৭ বছর দেশে চলেছে দমন-পীড়ন, গুম ও খুনের রাজনীতি। সেই বাস্তবতা তুলে ধরে তাঁরা বলছেন, ‘জুলাই গণ-আন্দোলনের’ চেতনায় দেশে একটি নতুন রাজনৈতিক ধারার সূচনা করতে চায় জামায়াত।
আসন্ন জাতীয় নির্বাচনে বৃহত্তর রংপুরের ৩৩টি আসনে বিজয়ের লক্ষ্যে এই জনসভাকে টার্নিং পয়েন্ট হিসেবে দেখছে দলটি। একই সঙ্গে রংপুরবাসীর কাছে জামায়াতের রাজনৈতিক রূপরেখা ও ভবিষ্যৎ পরিকল্পনার বার্তাও পৌঁছে দিতে চান তাঁরা।
বাতায়ন ২৪ ডটকম/শরিফুল ইসলাম।