সিনিয়র করেসপন্ডেন্ট, রংপুর।। বাতায়ন২৪ডটকম।।
রংপুরের পীরগঞ্জে ছিনিয়ে নেয়া মোবাইল ফোনের বিষয়ে আপোষ করা নিয়ে দ্বন্দ্বের জেড়ে হামলাকারীদের ভয়ে আশ্রয় নেয়া এক তরুণকে রক্ষা করতে গিয়ে এসিডে ঝলসে ওই তরুণের গেছে চাচী এবং ভাবি। তাদেরকে রংপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসা দেয়া হচ্ছে।
প্রাথমিক তদন্ত উদ্ধৃত করে রংপুর জেলা সুপার মোহাম্মদ শরীফ উদ্দিন বলেন, বৃহস্পতিবার (১৯ সেপ্টেম্বর) রাত আট টার দিকে চতরা কলেজ পাড়ার সুজন শেখের বাড়িতে এই ঘটনা ঘটে। দগ্ধরা হলেন সুজন শেখের স্ত্রী কহিনুর বেগম (৩০) এবং ভাড়াটিয়া মৌসুমি আখতার (২৩)।
পুলিশ সুপার জানান, ওই বাড়িতে তার ভাতিজা নাজমুল আসলে তার অবস্থান নিশ্চিত হয়ে মোবাইল ফোন নিয়ে বিরোধীয় পক্ষ রায়হান ও তার সঙ্গিসাথীরা। এসময় তারা ওই বাড়িতে গিয়ে নাজমুলের ওপর হামলা চালায়। এসময় নাজমুলকে বাঁচাতে এগিয়ে আসেন চাচী কহিনুর ও ভাবি মওসুমি। এতে ক্ষিপ্ত হয়ে তাদের ওপর বোতল দিয়ে তরল দ্যার্য পদার্থ ছুড়ে মারে হামলাকারীরা। এতে গুরুতর দগ্ধ হন তারা। তাদেরকে প্রথমে পীরগঞ্জ স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স পরে রংপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়।
পুলিশ সুপার জানান, ছুড়ে মারা তরল দ্যার্য পদার্থেই দগ্ধ হয়েছেন। তবে তা এসিড নাকি অন্য দ্যার্য পদার্থ। তা নির্ণয়ের চেস্টা চলছে। এ ঘটনায় অপরাধীদের চিহ্নিত করা হয়েছে। তাদেরকে আইনের আওতায় আনা হবে।
দগ্ধ কহিনুর বেগম জানান, ‘ ভাতিজা নাজমুল সন্ধায় আমাদের বাড়িতে আসে। আরেক ভাতিজা রায়হানের সাথে তার মোবাইল ফোন নিয়ে ঝামেলা ছিল। সেটা কয়েকদিন আগের। রায়হান আসাতে নাজমুল আমাদের ছাদের ওপর যায়। কিন্তু সেটা টের পায় রায়হান। মোবাইল ফোনে রবিউল, অক্ষয় খোরশেদসহ বেশ কয়েকজনকে ডেকে আনে রায়হান। আমি তাদেরকে চলে যাওয়ার জন্য বলি। কিন্তু তখন তারা নাজমুলকে ধরে মারপিট শুরু করে। তখন আমি নাজমুলকে ঝাপটে ধরি রক্ষা করার জন্য। মৌসুমিও এগিয়ে আসে। এসময় আমি বলি তোমরা সবাই বাড়ির বাইরে গিয়ে মারামারি করো। তখন ওরা আমাদের ওপর বোতল দিয়ে পানির মতো কিছু একটা ছুড়ে মারে। গায়ে পড়া মাত্রই পুড়ে যেতে থাকে। আমার ডান পা, বাম হাত, গলা, পিঠ পুড়ে গেছে। প্রথমে পীরগঞ্জ হাসপাতালে আমার স্বামী নিয়ে যায়। তারা ভর্তি নেয় নি। পরে আমরা রাত ১ টায় রংপুর মেডিকেলে ভর্তি হই। এখানে এসে শুনি এসিড ছিল বোতলে। ’
অপর দগ্ধ মৌসুমি আখতার জানান, ‘ নাজমুল আমার দেবর হয়। ওযে আমাদের বাসায় ঢুকেছে এটা কোনভাবে টের পেয়েছিল রায়হান। পরে তারা নাজমুলকে মারতে আসলে আমরা রক্ষা করতে যাই। তখন তারা আমাদের ওপর এসিড মারে। আমার ডার হাত পুড়ে গেছে।’
দগ্ধ কহিনুর বেগমের স্বামী সুজন শেখ জানান, ‘ রায়হান, রবিউল, খোরশেদ, অক্ষয় আমার বাড়িতে এসে এ ধরণের ঘটনা ঘটাবে, আমি ভাবতে পারি না। ভাতিজা আমার বাড়িতে আসতেই পারে। সেজন্য তারা আমাদের ওপর এসিড মারবে। এ ঘটনার আমি বিচার চাই। আমার স্ত্রীর সারা শরীর পুড়ে গেছে। তার যে এখন কি হবে জানিনা। ‘
যাকে রক্ষা করতে গিয়ে এই ঘটনা সেই নাজমুল ইসলাম জানান, ‘ ৫/৬ দিন আগে একটা ফোন ছিনিয়ে নিয়ে রায়হানের কাছে রেখেছিল। আমি প্রথমে রায়হানকে ফোনটা দেয়ার জন্য বলি কিন্তু সে দেয় না। তখন আমি যে ছিনতাই করে এনে রায়হানের কাছে রেখেছিল তাকে প্রচুর মারি এবং ফোনটা রায়হানের কাছ থেকে নিয়ে মালিককে দেই। এতে রায়হান ও তার সঙ্গিসাথিরা আমার উপর ক্ষুব্ধ ছিলেন। কারণ তারা ওইটা মিমাংসা করে দেয়ার কথা বলে টাকা খাইতো। আমার কারণে সেটা করতে পারে নাই। সেকারণে আমি যখন চাচার বাড়ি যাই। তখন রায়হান, রবিউল, খোরশেদ, অক্ষয়সহ বেশ কয়েকজন ফলো করে চাচার বাড়িতে ঢোকে। অক্ষয় আমাকে বলে গলা কেটে হত্যা করতে। এরপর আমার চাচী ও ভাবি আামাকে তাদের হাত থেকে রক্ষা করতে আসলে তারা এসিড ছুড়ে মারে। এ ঘটনার বিচার চাই আমি । ’
বাতায়ন২৪ডটকম।।সমামা