সংবাদ শিরোনাম :
পুলিশের ঊর্ধ্বতন ১১ কর্মকর্তাকে বদলি, ২ জনের আদেশ বাতিল মেয়াদোত্তীর্ণ টাকার দাবিতে রংপুরে ফারইস্ট ইসলামী লাইফ ইন্সুরেন্সের কার্যালয়  অবরোধ গ্রাহকদের রংপুরে ইসলামী আন্দোলনের নির্বাচনী কর্মশালা অনুষ্ঠিত প্রধান উপদেষ্টার সঙ্গে পাকিস্তানের যৌথ বাহিনীর চেয়ারম্যানের সৌজন্য সাক্ষাৎ মহানগরীর ২০নং ওয়ার্ড যুবদলের কমিটি গঠন খাদ্য বিভাগের পরীক্ষার প্রক্সি দিতে এসে ব্যাংক কর্মকর্তার ১ মাসের কারাদন্ড রংপুরে ফিরেদেখা’র যুগপূর্তি উপলক্ষে সাহিত্য উৎসব ও বইমেলা অনুষ্ঠিত  দল বদলের নাটক: ফুল হাতে আওয়ামী লীগে যোগ দেওয়া শাজাহান এখন বিএনপির সভাপতি প্রার্থী! রংপুরে শুরু হল আন্ত:কামারপাড়া মিনি ফুটবল টুর্নামেন্ট  ইসকন নিষিদ্ধ ও মুফতি মহিবুল্লাহকে গুমকারীদের গ্রেফতারের দাবিতে রংপুরে বিক্ষোভ
মেয়াদোত্তীর্ণ টাকার দাবিতে রংপুরে ফারইস্ট ইসলামী লাইফ ইন্সুরেন্সের কার্যালয়  অবরোধ গ্রাহকদের

মেয়াদোত্তীর্ণ টাকার দাবিতে রংপুরে ফারইস্ট ইসলামী লাইফ ইন্সুরেন্সের কার্যালয়  অবরোধ গ্রাহকদের

স্টাফ করেসপনডেন্ট, রংপুর ।। বাতায়ন২৪ডটকম।।

অফিস গুটিয়ে নিচ্ছেন এমন গুজব ও অভিযোগের ভিত্তিতে মেয়াদোত্তীর্ণ বীমার টাকার দাবিতে রংপুরে ফারইস্ট লাইফ ইন্সুরেন্স কোম্পানীর অফিস অবরুদ্ধ করে বিক্ষোভ করছে ভুক্তভোগি গ্রাহকরা। পুলিশ,সেনাবাহিনী ও র‌্যাব অবরোধকারীদের সরিয়ে দেয়ার চেস্টা করেও কোন লাভ হচ্ছে না। তবে কর্তৃপক্ষের দাবি  কোম্পানীর আদেশে অফিস ছোট করার প্রক্রিয়া স্বরূপ নিলামে বিক্রয়কৃত মালামাল ঠিকাদার নিয়ে যাওয়ার সময় গ্রাহকরা ভুল বুঝে এ ঘটনা ঘটনা ঘটিয়েছেন। ২০২৬ সালের  মধ্যে  সব টাকা দেয়ার প্রতিশ্রুতি দিয়েছে কর্তৃপক্ষ।

ফারইস্ট লাইফ ইন্সুরেন্সের রংপুর বিভাগীয় কার্যালয় সূত্র জানায়, রংপুর বিভাগের অধীনে ফারইস্টের মেয়াদোত্তীর্ণ গ্রাহকের সংখ্যা ২৯ হাজার ৫২।  যারা প্রতিষ্ঠানটির কাছে জমা এবং লাভসহ পাবেন ১ কোটি ৩৭ লাখ টাকা। এছাড়াও অন্যান্য গ্রাহক রয়েছেন ৪০ হাজারেরও বেশি। বিগত সরকারের সময়  ২০১৮ সাল থেকে ২০২২ ফেব্রুয়ারী মাস পর্যন্ত কোম্পানীটি শেখ হাসিনার বদৌলতে মালিকানা পায় এসআলম গ্রুপ। এরপর মালিকানায় আসে সালমান এফ রহমান। এই দুই মালিক কর্তৃপক্ষ কোম্পানি থেকে হাজার হাজার কোটি  টাকা তুলে নিয়ে পাচার এবং অন্য ব্যবসায় নেয়ার কারণে ২০২১ সালের পর থেকে মেয়াদোত্তীর্ণ টাকা গ্রাহকদের শোধ করতে পারছিল না কোম্পানিটি। এ নিয়ে তীব্র অসন্তোষ বিরাজ করছে সংশ্লিষ্ট গ্রাহকদের মধ্যে। প্রতিদিনিই অফিসগুলোতে গিয়ে ফিরে আসছেন গ্রাহকরা। গ্রাহকরা টাকা প্রতারিত হওয়ার আশংকায় ভুগছেন।

এরই মধ্যে শনিবার (২৫ অক্টোবর) মধ্যরাতে নগরীর জামাল মার্কেটের চতুর্থ তলায় অবস্থিত কোম্পানীর বিভাগীয় অফিস থেকে ট্রাক যোগে মালামাল অন্যত্র নেয়া হচ্ছিল। এই খবর ছড়িয়ে পড়ায় রাতেই গ্রাহকরা ঘটনাস্থলে এসে মালামাল ভর্তি ট্রাক আটকে দেয় এবং ভাংচুর করে।

রোববার ( ২৬ অক্টোবর) সকাল ১১ টার পর থেকে বিক্ষুব্ধ গ্রাহকরা ঘটনাস্থলে ছূটে আসেন। তারা অফিসে সিনিয়র ভাইস প্রেসিডেন্ট প্রধান আব্দুল কাদের বীরসহ কর্মকর্তাদের অবরুদ্ধ করে রাখেন। কর্মকতাদের সাথে তীব্র বাকবিতন্ডায় জড়ান গ্রাহকরা। তরা টাকার দাবি জানান। সকাল থেকেই অবরোধকারীরা মার্কেটের সামনে প্রধান সড়ক ঘেরাও করে বিক্ষোভ করতে থাকে। এতে নগরীতে তীব্র যানজট তৈরি হয়। পরিস্থিতি সামাল দিতে  সেখানে মোতায়েন করা হয় র‌্যাব, পুলিশ ও সেনাবাহিনী। অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (সার্বিক) রমিজ আলম অবরোধকারী এবং কর্তপক্ষের সাথে কথা বলে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণের চেস্টা করেন। কিন্তু গ্রাহকরা তাদের দাবিতে অনঢ় থাকেন। সন্ধায় ৬ টায় এ প্রতিবেদন লেখার সময় পর্যন্ত সেখানে গ্রাহকরা অবস্থান করছিলেন।

ঘটনাস্থলে উপস্থিত অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (সার্বিক) রমিজ আলম জানান, কোম্পানির রংপুর বিভাগী অফিসের আওতায় ম্যাচিউর এবং রানিং গ্রাহক আছেন ৭০ হাজার। ম্যাচিউর গ্রাহকদের ১৩৭ কোটি টাকা বকেয়া আছে। দীর্ঘদিন ধরে  সেই টাকা ফেরত পাচ্ছেন  না। গ্রাহকদের কাছে অভিযোগ ছিল, এই অফিসের কিছু ফার্নিচার তারা রাতের আধারে  গোপনে বিক্রির নামে সরিয়ে নিয়ে যাচ্ছিল। একারণে গ্রাহকরা অফিস ঘেরাও করে টাকার দেয়ার দাবি জানাচ্ছেন। তারা প্রতারিত হওয়ারও  আশংকা করছেন। আমরা খবর শুনে এসে এখানকার এবং হেড অফিসের কর্মকর্তাদের সাথে কথা বলেছি। তারা যেটা আমাদের নিশ্চিত করেছেন, সেটা হলো বিগত সময়ে দূর্নীতির মাধ্যমে অনেক সম্পদ  ও টাকা আত্মসাত করেছে মালিকরা। জুলাই বিপ্লবের পর সে বিষয়ে মামলা হয়েছে। তাছাড়াও অনেক সম্পদ এখনও কোম্পানীর আছে।   সেই এসেট বিক্রি করে করে গ্রাহকদের টাকা ফিরিয়ে দিবেন। তাতেও গ্রাহকরা সন্তোষ নন। সেকারণে আমরা বলেছি সমাধান না হওয়া পর্যন্ত ফার্নিচার এই অফিসেই থাকবে। তাদের রংপুরে জমিও রয়েছে। সেটারও আমরা প্রমাণ পেয়েছি। সেটিও যেন কোনভাবে হস্তান্তর না হয়। সেটাও দেখছি।বীমা নিয়ন্ত্রণ কর্তৃপক্ষের সাথেও কথাও বলেছি। ভুমি অফিসেও কথা বলা হয়েছে। রোড ব্লক করে সমাধান সম্ভব নয়। এসেট বিক্রি করে কিভাবে রংপুর বিভাগের টাকা দেয়া যায় সে বিষয়ে আমরা উদ্যোগ নিতে বলেছি। যাতে গ্রাহকরা প্রতারিত না হন।

এ ব্যপারে অবরুদ্ধ  কোম্পানীর সিনিয়র ভাইসপ্রেসিডেন্ট ও রংপুর বিভাগীয় প্রধান আব্দুল কাদের বীর জানান, ‘ আওয়ামীলীগ আমলে এসআলম গ্রুপ, সালমান এফ রহমানরা মালিকানা নিয় দূর্নীতি এবং প্রভাব খাটিয়ে হাজার হাজার কোটি এই বীমা থেকে উঠিয়ে নিয়ে পাচার করেছেন। যার খেসারত দিচ্ছেন গ্রাহক এবং আমরা।  সেকারণে ম্যাচিউর বীমার টাকা আমরা ২১ সাল থেকে দিতে পারছি না। ২০২৪ এর বিপ্লবের পর এখনকার মালিকরা টাকা দেয়ার জন্য চেস্টা করছেন। কোম্পানীর নামে এখনও অনেক সম্পদ আছে। সেইসব বিক্রি করে ২০২৬ সালের মধ্যেই এই টাকা দেয়া হবে। অনেকেই ঢাকা থেকে টাকা তোলার চেস্টা করছেন। তাদের আমরা ফাইল ফরওয়ার্ড করে দিচ্ছি।

কাদের বীরের দাবি, ‘ রংপুর বিভাগীয় অফিস থেকে মালামাল সরিয়ে নেয়া কিংবা এই অফিস গুটিয়ে নেয়া হচ্ছে না। ব্যায় কমানোর জন্য রংপুরের ৩ হাজার ৫০০ ফিটের অফিস দেড় হাজার ফিটে আনার জন্য আদেশ জারি করা হয়েছে। সেকারণে ঢাকা থেকে অফিসের কর্মকর্তারা এসে টেন্ডারের মাধ্যমে ২ হাজার ফিটের মধ্যে যেসব মালামাল ছিল তা নিলামে বিক্রি করেছেন। টেন্ডারে ঠাকুরগাঁওয়ের একজন মালামাল কার্যাদেশ পেয়েছেন। তিনি ট্রাকযোগে মালামালগুলো নিয়ে যাচ্ছেন। যেহেতু  ম্যাচিউর গ্রাহকরা টাকা পাচ্ছেন না। সেকারণে গ্রাহকরা ক্ষুব্দ। গ্রাহকরা সেকারণে মনে  করেছেন অফিস সরিয়ে নেয়া হচ্ছে । এ ধরণের আশংকা থেকে তারা মালামাল নিয়ে যেতে বাঁধা দিয়েছেন। খবর পেয়ে আমি শনিবার রাত ১০টায় অফিসে আসি। এখন পর্যন্ত আছি। তিনি জানান, ফারইস্টের এই টাকা আমানত, সম্পদ বিক্রি করে এসব টাকা পরিশোধ করা হবে। একজনেরও টাকা খোয়া যাবে না। তিনি সবাইকে ধৈর্য ধরার আহবান জানান।

ঘটনাস্থলে উপস্থি রংপুর মেট্রোপলিটন কোতয়ালী থানার ওসি আতাউর রহমান জানান, পরিস্থিতি এখন নিয়ন্ত্রনে আছে। গ্রাহকরা এখনও অবরোধ করে রেখেছেন অফিস।  রাস্তা স্বাভাবিক হয়েছে। পুলিশের পাশাপাশি র‌্যাব ও সেনাবাহিনীও আছে। গ্রাহকরা তাদের টাকা যেন ফেরত পান সে বিষয়ে আশা করছি ঘটনার সুষ্ঠু সমাধান হবে।

বাতায়ন২৪ডটকম।। সমামা/মেমোহি

দয়া করে নিউজটি শেয়ার করুন..




© All rights reserved © batayon24
Design & Developed BY ThemesBazar.Com