স্টাফ করেসপন্ডেন্ট রংপুর।।বাতায়ন২৪ডটকম
রংপুরের বদরগঞ্জে অবৈধভাবে গো-খাদ্য হিসেবে ‘সাইলেজ’ তৈরি করে প্যাকেট জাতের মাধ্যমে বাজারে বিক্রি করা হচ্ছে বলে অভিযোগ উঠেছে।
প্রশাসনের অনুমতি ও লাইসেন্স না থাকলেও প্রতিদিন প্রকাশ্যে ভুট্টা গাছ মেশিনে মাড়াই করে হাজার হাজার বস্তা ‘সাইলেজ’ তৈরি করা হচ্ছে। এই ‘সাইলেজ’ এর উৎপাদিত মান নিয়ে দেখা দিয়েছে প্রশ্ন।
এমন মানহীন গো-খাদ্য কিনে প্রতারিত হচ্ছেন দেশের খামারিরা বলে অভিযোগ রয়েছে। উপজেলার মধুপুর ইউনিয়নের পাকার মাথা এলাকায় একটি খোলামেলা পরিত্যক্ত মিল চাতাল ভাড়া নিয়ে দুই বছর ধরে প্রকাশ্যে নিম্নমানের ভুট্টার গাছ দিয়ে ‘সাইলেজ’ তৈরি ও প্যাকেটজাত করা হলেও তেমন আইনগত ব্যবস্থা নিচ্ছেন না উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা।
তবে গত ৭ মে উপজেলা প্রাণিসম্পদ কার্যালয়ের সহযোগিতায় সেখানে অভিযান চালায় রংপুরের ভোক্তা অধিকার অধিদপ্তর। খাদ্যের মান নিম্নমানের হওয়ায় এবং বৈধ কাগজপত্র না থাকায় প্রতিষ্ঠানটিকে ৩০ হাজার টাকা জরিমানা করা হয়।
অভিযোগ উঠেছে, জরিমানার পর থেকে সাইলেজ তৈরির মাত্রা আরও বাড়িয়ে দেওয়া হয়েছে। তবে সাইলেজ তৈরি করা হচ্ছে পচাঁ ভুট্টার গাছ দিয়ে।
জানা গেছে, প্রতি বস্তা (৫০ কেজি) প্যাকেটজাত সাইলেজ ৫০০ থেকে ৬০০ টাকা দরে বিক্রি করা হচ্ছে দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে। এতে উৎপাদনকারী ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠান ব্যক্তিগতভাবে লাভবান হলেও সরকার হারাচ্ছে রাজস্ব।
সোমবার দুপুরে সরেজমিনে দেখা যায়, মিল চাতালে স্তুপ করা হয়েছে পচাঁ ভুট্টা গাছ। কয়েকজন শ্রমিক সেই পচাঁ ভুট্টা গাছগুলো মেশিনে মাড়াই করে সাইলেজ তৈরি করছেন। এরপর পলিথিন দিয়ে ঢেকে রাখা হচ্ছে। সেখানে কোনো প্রকার সাইনবোর্ড ঝোলানো হয়নি। পাশে একটি ঘরে দুই ব্যক্তি চেয়ারে বসে আছেন। জানা গেলো, তাঁদের নাম আখিবুর রহমান ও আবুল কালাম। আখিবুর রহমান তদারকি কর্মকর্তা ও আবুল কালাম অ্যাকাউন্টস্ অফিসার হিসেবে সেখানে কর্মরত আছেন।
সাইলেজ তৈরির বিষয়ে জানতে চাইলে তদারকি কর্মকর্তা আখিবুর রহমান বলেন, এটা ব্র্যাকের প্রকল্প থেকে করা হচ্ছে। কাগজপত্র আছে কী না- জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘এটা আমি বলতে পারবো না, ব্র্যাক প্রতিনিধি একে এম জাহিদুল বলতে পারবেন। তিনি (জাহিদুল) রংপুরে আছেন, তাঁর সঙ্গে কথা বললে বিস্তারিত জানতে পারবেন।’ সাইনবোর্ড না ঝোলানো এবং পচাঁ ভুট্টা গাছ দিয়ে সাইলেজ তৈরির কারণ জানতে চাইলে পাশে বসে থাকা অ্যাকাউন্টস্ অফিসার আবুল কালাম কিছুটা ক্ষুব্ধ হয়ে বলেন, ‘আমরা যদি এখানে অন্যায়ভাবে কিছু তৈরি করে থাকি, তাহলে পত্রিকায় লিখেন। প্রশাসন আছেন, তাঁরা ব্যবস্থা নিবেন।’
তবে মুঠোফোনে ওই সাইলেজ তৈরির বিষয়ে জানতে চাইলে রংপুরের ব্র্যাক প্রতিনিধি একেএম জাহিদুল হক বলেন, ‘আমি ব্র্যাকের সব প্রোগ্রাম দেখভাল করি। তবে আমার কাছে ওই সাইলেজ তৈরির কোনো কাগজপত্র নেই।
কিছু জানার থাকলে ঢাকা হেড অফিসে যোগাযোগ করতে পারেন। সেখান থেকে বিস্তারিত জানতে পারবেন।’মধুপুর পাকার মাথা এলাকার আরিফুর রহমান অভিযোগ করে বলেন, ‘ভুট্টা পরিপক্ক হওয়ার আগেই গাছ কিনে নিয়ে ওই চাতালে রাখা হচ্ছে। অনেকের ভুট্টা খেত বৃষ্টির পানিতে ডুবে যাওয়ায় সেগুলো কম দামে কিনে সেখানে নেওয়া হচ্ছে। সবগুলো একেত্রিত করে মেশিনে মাড়াই করে গরুর গো-খাদ্য হিসেবে সাইলেজ তৈরি করে কয়েকদিন পলিথিনে ঢেকে রেখে ৫০ কেজির বস্তায় প্যাকেটজাত করে প্রতি বস্তা ৫০০ থেকে ৬০০ টাকা দরে বিক্রি করা হচ্ছে।
হাজার হাজার বস্তা সাইলেজ প্যাকেট করে ট্রাকে তুলে দেশের বিভিন্ন স্থানে বিক্রির উদ্দেশ্যে নেওয়া হচ্ছে।’ এসব গরুকে খাওয়ালে গরুর চরম ক্ষতি হবে বলেও অভিযোগ আরিফুর রহমানের।
২০১০ সালের মৎস্য ও পশুর খাদ্যে নিয়ন্ত্রণ আইন অনুযায়ী, মৎস্য ও পশুর খাদ্য বাজারে বাজারজাত করণ করার আগে খাদ্যের নমুনা মাননিয়ন্ত্রণ ল্যাবরেটরীতে পরীক্ষা করতে হবে।
খাদ্য তৈরির আগে মন্ত্রনালয় থেকে লাইসেন্স নিতে হবে। লাইসেন্স ব্যতিত কেউ মৎস্য ও পশুর খাদ্য উৎপাদন, প্রক্রিয়াজাতকরণ, আমদানি, রপ্তানি, বিপণন, বিক্রি, বিতরণ এবং আনুষঙ্গিক কার্যাবলী সম্পাদন করিতে পারবে না। যদি কেউ করার চেষ্টা করেন তাহলে তাঁর এক বছরের কারাদণ্ড বা ৫০ হাজার টাকায় দ্বণ্ডিত হবেন।
উপজেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা ডা. স্বপ্ন চন্দ্র সরকার বলেন, ‘সেখানে সরেজমিনে গিয়েছিলাম। দুই ব্যক্তি ব্র্যাকের নাম ব্যবহার করে অবৈধভাবে সাইলেজ উৎপাদন করে প্যাকেটজাত করে গো-খাদ্য হিসেবে বাজারে বিক্রি করছেন।
প্যাকেটের গায়ে উৎপাদন ও মেয়াদ কিছুই লেখা নেই।’ ওই উৎপাদিত সাইলেজ গরুকে খাওয়ালে কোনো ক্ষতি হবে কি না-জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘যেহেতু ল্যাবেরেটরীতে পরীক্ষা করা হয়নি, সেহেতু ওই খাবার খেলে গরুর শরীরিক ক্ষতির সম্ভাবনা রয়েছে, এমনকি বিষক্রিয়া হয়ে গরু মারাও যেতে পরে।’
এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘ ওই উৎপাদন বন্ধ করা কিংবা জরিমানা করার ক্ষমতা আমার নেই। এটা আমাকে দেওয়াও হয়নি। তাই সেখানে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়ার জন্য ইউএনও মহোদয়কে জানিয়েছি, তিনি আইনগত ব্যবস্থা নিবেন।
উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মো. মিজানুর রহমান বলেন, ‘বৈধ কাগজপত্র ছাড়া পশুর খাদ্য উৎপাদন করার কারও এখতিয়ার নেই। ওই বিষয়টি আমার জানা আছে, একবার সেখানে এসিল্যান্ডকে পাঠিয়ে জরিমানা করা হয়েছিল। আবার উৎপাদন করে থাকলে অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
বাতায়ন২৪ডটকম/রিয়াদ ইসলাম