• এখানে আমরা সবাই স্যার!স্যার শুনতে,স্যার বলতে আমরা সবাই অভ্যস্ত।উপাচার্যকে আমরা স্যার বলি।
বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী- কর্মকর্তা- কর্মচারীরা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকদের স্যার বলেন।উপ-উপাচার্য মেয়ে মানুষ তাই স্যাররা তাঁকে আপা বলে ডাকেন।এটা একটা রেওয়াজ- এ পরিণত হয়েছে।আমি বিশ্ববিদ্যালয়ের এক অধ্যাপককে বলেছিলাম, ” আপনারা ভিসিকে স্যার বলেন।প্রভিসিকে আপা বলেন কেন!(?)।সদুত্তর মেলেনি।”স্যার শব্দের বাংলা অর্থ; জনাব। তো বাংলার শব্দ ভান্ডারে স্যার সম্বোধনটাকে গ্রহণে আপত্তি কেন! কর্তৃত্ব নয়,সম্মান বিনিময়ের প্রয়োজনে এটা ব্যবহার করা যেতে পারে।কর্তৃত্ব ফলানোর জন্য জোর করে স্যার সম্বোধন আদায়ের চেষ্টাও গ্রহণযোগ্য হতে পারে না।বেগম রোকেয়ার দ্যাশে বেগম রোকেয়ার আদর্শকে অবজ্ঞা করাটাও সমুচিন নয়। উর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের স্যার সম্বোধনের প্রশ্নে শিক্ষকদের মধ্যে স্তরভেদের বৈষম্যেও প্রকট।সবস্তরের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে শিক্ষার্থী ও অভিভাবক’রা শিক্ষকদের স্যার ডাকে।মহিলা শিক্ষকদের মেডাম বলে সম্বোধন করে।রংপুরের স্যারকান্ড ডিসিকে আপা সম্বোধন নিয়ে। এক্ষেত্রে জনপ্রশাসনের একটা সুনির্দিষ্ট ” নীতি মালা” প্রণয়ন জরুরি।
“প্রজাতন্ত্রের সকল ক্ষমতার মালিক জনগণ”( সংবিধান
,অনুচ্ছেদ ১১)।এ কথার অর্থ হলো উৎপাদনযন্ত্র,
উৎপাদন ব্যবস্থা ও বন্টন ব্যবস্থাপনার মালিক বা নিয়ন্ত্রক হবেন জনগণ। এই উদ্দেশ্য সাধনে ৭২ সালের সংবিধানে তিন ধরণের মালিকানার কথা লিপিবদ্ধ ছিল; (ক) রাষ্ট্রীয় মালিকানা (খ)সমবায়ী মালিকানা(গ)
ব্যক্তিগত মালিকানা।তিনধারার অর্থনীতির মালিকানা
হবে জনগণের- জনগণের পক্ষে রাষ্ট্রের।ওই অর্থে রাষ্ট্রের আমলারা জনগণের সেবক,প্রজাতন্ত্রের কর্মচারী।সংবিধানে বর্ণিত গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশের সর্বোচ্চ আইন এটাই।বঙ্গবন্ধুর নির্দেশনামা ছিল সমাজতন্ত্র অভিমুখি উৎপাদন ব্যবস্থাপনায়ার কর্তৃত্ব প্রতিষ্ঠা করা।এটা বাস্তবায়ন করা গেলেই প্রজাতন্ত্রের সকল ক্ষমতার মালিক হতেন জনগণ।এই ব্যবস্থাপনা বাস্তবায়নে রাষ্ট্রের আমলারা- ” প্রজাতন্ত্রের মালিক জনগণের” সঙ্গে কেমন আচরণ করবেন তার হুকুম বঙ্গবন্ধু দিয়ে গেছেন।এ বিষয়ে জাতির স্থপতি বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের অনেক বক্তব্য নির্দেশনা আছে।রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর তাঁর শিশুতোষ কবিতায় রাজা- প্রজার বৈষম্য নিরসনকল্পে লিখেছেন, ” আমরা সবাই রাজা আমাদের এই রাজার রাজত্বে।”এই রাজা আর কেউ নন- জনগণ নিজেরাই।জনগণের কল্যানে রাজা থাকবেন সাম্যের প্রতীক।
১৯৭১ -এর মহান মুক্তিযুদ্ধে আমাদের স্বপ্ন ছিলো বৈষম্যহীন ও অসাম্প্রদায়িক সমাজ বিনির্মাণ করা।জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান সেই লক্ষ্যেই পথ চলছিলেন।কিন্তু মুক্তিযুদ্ধে বিজয়ের ৪ বছর যেতে না যেতেই মুক্তিযুদ্ধ বিরোধী দেশীয় ও আন্তর্জাতিক ষড়যন্ত্রকারীরা জাতির পিতাকে নৃশংসভাবে হত্যা করেছে।হত্যা করা হয়েছে প্রজাতন্ত্রের সকল ক্ষমতার মালিক জনগণের মুক্তির স্বপ্নকে-চেতনাকে।সেই লক্ষ্য ও চেতনাকে বাদ দিয়ে জনগণকে “প্রজাতন্ত্রের” মালিক
বানানো যাবে কী!(?)।রংপুরের ডিসির সঙ্গে বেরোবি শিক্ষকের স্যার শব্দ চয়ন নিয়ে যে বিরোধ সেই “স্যারকান্ড” ঘটনার রাতেই মিটমাট হয়েছে।ডিসি প্রসঙ্গটি নিয়ে গণমাধ্যমে বলেছেন, ” এটা একটা ভুলবোঝাবুঝি–।শিক্ষককে স্যার বলতে ডিসি বাধ্য করেছিলেন এমন বক্তব্য গণমাধ্যমে বলেননি বেরোবির শিক্ষক।
এরপর, সব স্যাররাই সহাস্যমুখে ফটো সেশন করেছেন।ফেসবুকে ছড়ানো স্ট্যাটাস ডিলেট করেছেন।তবু কেন এতো ডালপালা ছড়ানো হচ্ছে!রসায়নটা কোথায়?
লেখক :-
নজরুল ইসলাম হক্কানি, অধ্যক্ষ (অব:),ইটাকুমারী মহাবিদ্যালয়,পীরগাছা,রংপুর|সভাপতি, তিস্তা বাঁচাও নদী বাঁচাও সংগ্রাম পরিষদ।
Leave a Reply