•হাসান আলী
দেশের সর্ববৃহৎ সরস্বতী পূজা হয় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের (ঢাবি) জগন্নাথ হলে। দেশ বিদেশ থেকে অনেক পুণ্যার্থী এসে জড়ো হন এই দিনে। হিন্দুধর্ম মতে, মাঘ মাসের শুক্লপক্ষের পঞ্চমী তিথিতে সাদা রাজহাঁসে চেপে দেবী সরস্বতী জগতে আসেন। পদ্মাসনে বসা দেবীর হাতে থাকে বীণা। রাত পোহালেই শুরু হচ্ছে সেই মাহেন্দ্রক্ষণ। পুজা উপলক্ষে ইতোমধ্যেই জগন্নাথ হলের প্রস্তুতির পালা শেষের দিকে।
আজ বুধবার (২৫ জানুয়ারী) বিকালে বিশ্ববিদ্যালয়ের জগন্নাথ হলে গিয়ে সরেজমিনে দেখা যায়, সমগ্র হল জুড়ে চলছে শেষ মুহুর্তের প্রস্তুতি। কোথাও চলছে প্যান্ডেলের কাজ, কোথাও বা চলছে প্রতিমা সাজানোর কাজ। বাঁশ, বেত, রঙ, হাতুড়ি-পেরেকের ঠুকঠাক শব্দে মেতে আছে পুরো হল। হলের অক্টোবর স্মৃতি ভবনের পাশে বেশ অনেকগুলো প্রতিমার দেখা মেলে। প্রায় সবগুলোরই মৌলিক গঠন শেষ। মৃৎশিল্পীরা প্রতিমাগুলোর দেহে রঙতুলির আঁচড় দিয়ে এখন নির্দিষ্ট মন্ডবে সাজাতে ব্যস্ত।
এছাড়াও জগন্নাথ হলের উপাসনালয় প্রাঙ্গণে চলছে সবচেয়ে বড় প্রতিমা বানানোর কাজ। চারুকলা অনুষদের শিক্ষার্থীদের বানানো এই প্রতিমা বসানো হবে হলের পুকুরে। বাঁশ-বেতের বিভিন্ন অংশ জুড়ে দিয়ে প্রতিমার অবয়ব স্পষ্ট হয়েছে। চলছে পূর্ণপ্রস্তুতির তোড়জোর। এছাড়া, হলের মাঠে ৭১টি বিভাগের আয়োজনে বসবে ৭১টি মণ্ডপ। প্যান্ডেল, মণ্ডপ-কাঠামো তৈরির কর্মযজ্ঞ চলছে সেখানে।
করোনা মহামারির কারণে গত দুই বছর স্বল্পপরিসরে পূজা উদযাপন হলেও এবার সর্বমোট ৭৩টি মণ্ডপে উদযাপন হবে বিদ্যাদেবী সরস্বতীর পূজা। জগন্নাথ হলের উপাসনালয়ে হবে পূজার প্রধান আয়োজন। এছাড়া, হল মাঠজুড়ে ৭১টি বিভাগের আয়োজনে থাকবে ৭১টি মণ্ডপ। চারুকলার শিক্ষার্থীদের তৈরি বড় প্রতিমাটি থাকবে হলের পুকুরে।
প্রতিমা বানানোর কাজে নিয়োজিত একজন শিল্পী বলেন, পঞ্চাশটির মতো প্রতিমা তৈরির কাজ পেয়েছিলাম এবার। প্রায় সবগুলোর কাজই শেষ। কয়েকদিন এগুলো নিয়ে অনেক ব্যস্ত সময় পার করেছি। রাজহাঁস, বীণা, পদ্মাসন—এগুলো মৌলিক জিনিস। এর বাইরে ডিজাইন, রঙসহ বিভিন্নক্ষেত্রে ভিন্নতা চায় মানুষ।
মণ্ডপ তৈরির কাজে ব্যস্ত চারুকলার এক শিক্ষার্থী বলেন, সরস্বতী পূজা আমাদের জন্যে অনেক অপেক্ষার একটা বিষয়। বছরের কয়েকটা সময় মাত্র আমরা আনন্দ নিয়ে কাজ করতে পারি। পহেলা বৈশাখ ও সরস্বতী পূজা সেগুলোর মধ্যে অন্যতম। আমরা সবাই এই কাজটাকে উপভোগ করি।
পুজা উদযাপন বিষয়ে জগন্নাথ হলের প্রাধ্যক্ষ ও পূজা উদযাপন কমিটির সভাপতি অধ্যাপক ড. মিহির লাল সাহা বলেন, করোনার পরে একটা নতুন উৎসাহ-উদ্দীপনা নিয়ে সকল শিক্ষার্থী এর সাথে যুক্ত হয়েছে। করোনার কারণে দুইবছর একটা গ্যাপ ছিলো। এবার সেই গ্যাপ পুরণ করে সবাই আনন্দ মুখর পরিবেশে পুজা উদযাপন করবে। সকাল ৭ টায় প্রতিমা স্থাপন ও ৯ টা থেকে পুজা শুরু হবে। এরপর সাড়ে দশটার দিকে অঞ্জলি শুরু হবে এবং তারপর সাংস্কৃতিক উৎসব শুরু হবে।
নিরাপত্তার বিষয়ে তিনি বলেন, নিরাপত্তার জন্যে পুলিশ প্রশাসন, প্রক্টরিয়াল টিম ও সকল পর্যায়ের ছাত্রদের সাথে আমরা কথা বলেছি, যাতে একটা সুন্দর পুজা উপহার দেয়া যায়। এছাড়াও আমাদের সার্বক্ষনিক ৭০ টি সিসিটিভি ক্যামেরা থাকবে। পুলিশ প্রশাসনের সাথে আমার কথা হয়েছে, তারা আমাদের সর্বোচ্চ সহযোগিতা করবেন।
Leave a Reply