বৃহস্পতিবার, ২৮ সেপ্টেম্বর ২০২৩, ০৯:০৫ অপরাহ্ন

মনিরুল ইসলাম মুকুল এর ‘মানুষ’ উপন্যাস – ২য় অংশ

মনিরুল ইসলাম মুকুল এর ‘মানুষ’ উপন্যাস – ২য় অংশ

ভাড়া বাসায় থাকি আমি। বাসার মালিক ফুল প্রিয় মানুষ। পরে থাকা জায়গাগুলোতে ফুল গাছ লাগিয়েছেন। এ কদিনে হারুন সাহেবের সাথে বাসার মালিকের একটা সুসম্পর্ক গড়ে উঠেছে। রিক্সায় শহরের অলিগলি পথে ঘুরছেন। দুজনের বয়স কাছাকাছি। সময় পেলেই দুজন গল্পের আসর জমায়। ফুটন্ত রজনীগন্ধা মন কাড়ে আমার। যদিও আমার প্রিয় ফুল শাপলা। ফুল গাছগুলোর পাশেই বাসার পোষা কুকুরটির সাথে খেলা করছেন হারুন সাহেব । আমি কিছুটা মৃদু হেসে বললাম,

-হারুন সাহেব এখন কুকুর নিয়েও গবেষণা করেছেন বুঝি?

হারুন সাহেব একটা মুচকি হাসি দেয়। যে হাসিটা আমার বেশ ভালোই লাগে। হারুন সাহেবের হাসির মধ্যে মিথ্যে কোনো গল্প দেখিনি আমি। কতো মানুষ মিথ্যে হাসি হাসে। পৃথিবীর মিথ্যে হাসিগুলো ভয়ংকর। ভীষণ রকমের ভয়ংকর। এ হাসিগুলো সবার জন্য কল্যাণ বয়ে আনে না! বরং কাঁদায়। ভীষণ রকমের কাঁদায়। হারুন সাহেব ছলছল চোখে আমার দিকে কিছুক্ষন তাকিয়ে থেকে বললেন,

-জ্বি প্রফেসর সাহেব। কুকুর অনেক ভালো। মানুষের চেয়েও ভালো।

আমার কৌতূহল মন তাকে জিজ্ঞেস করে,

– কি করে বুঝলেন?
– আমি অনেক কুকুরের জন্ম ও মৃত্যু দেখেছি। একই। ওরা কুকুর হয়ে জন্ম গ্রহণ করে আবার কুকুর হয়েই মৃত্যু বরণ করে। কিন্তু মানুষের ক্ষেত্রে ব্যতিক্রম। কখনও বাঘ, কখনও শকুন, কখনও জোঁক।

আমি এবার থামলাম। মানুষটা সম্পর্কে আমার কৌতূহল দিনদিন বেড়েই চলেছে। আমার কাছে কিছু লুকচ্ছে না তো? শুনেছি জ্ঞানীরদের সার্টিফিকেটের শিক্ষা খুব একটা থাকে না। অনেকক্ষেত্রে নিজেকে কম প্রকাশ করে। আমি একবার হারুন সাহেবকে বলতে গিয়েও থেমে যাই- আপনি কতগুলো বই পড়েছেন? নাহ! তাকে বলাটা মোটেই ঠিক হবে না। আর বললেও হারুন সাহেব ঠিক এরকমই একটা উত্তর দেবেন- সব জ্ঞান বইয়ের পাতায় থাকে না, আবার সব জ্ঞান প্রকৃতিতেও খুঁজে পাওয়া যায় না। জ্ঞান থাকে মানুষের জীবনে, দর্শনে। আমি প্রায়শই খেয়াল করি তার একটা নিজস্ব দর্শন আছে। একটা স্বকীয়তা আছে। যেটা খুব করে মেনে চলে হারুন সাহেব। কিছু কিছু মানুষের জ্ঞানের সীমাবদ্ধতা আছে। হারুন সাহেবের তা হয়তো নেই। হয়তো আছে। তার জ্ঞানের সীমাবদ্ধতা থাকলে, আমার প্রশ্নের অনেক বেগ পেতে হতো।
অফিস থেকে একটা ফোন আসে। আমি বিশ্ববিদ্যালয়ের দিকে হাঁটতে শুরু করলাম। বাসা থেকে বিশ্ববিদ্যালয়ের সীমানা খুব একটা দূরে নয়। হেঁটে যেতে মিনিট দশেক আর রিক্সায় খুব কম সময়ে পৌঁছানো যায়। আমি প্রায়শই হেঁটেই অফিস করি। অনান্য শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের চেয়ে, কারোর কারোর কাছে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকতা করার একটা আলাদা আনন্দ আছে। বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের দেয়া রুটিন মাফিক না চললেও হয়। এখানে সবাই স্বাধীন। ভুল বললাম। কেউ কেউ।
মূল ফটকে বারো তেরো বছরের একটা ছেলে লিফটলেট নিয়ে দাঁড়িয়ে আছে। আমার হাতেও একটা ধরিয়ে দিলো। বড়ো বড়ো অক্ষরে বেশ কিছু লেখা-১২ জানুয়ারি থেকে ফ্রি ক্লাস। সে ক্লাসটা আমার নয়। তবে মাঝে মাঝেই আমার ফোনে একটা মেসেজ হরহামেশাই আসে। খুব সম্ভবত আমার বিভাগেরই কোনো শিক্ষার্থী আমার নম্বরটা কষ্ট করে লিখে দিয়েছে। আমি ক’বার অভিযোগ করেছিলাম। খুব একটা কাজ হয়নি। নম্বরটাও বেশ পরিচিত হয়ে উঠেছে। শেষে বিশ তেইশ বিরানব্বই। মেসেজের টন বেজে উঠলেও এখন আর খুব একটা আগ্রহ কাজ করে না।
মূল ফটক অতিক্রম করতেই আজাদ ভাইয়ের দেখা। আজাদ ভাই ফ্লিম অ্যান্ড মিডিয়া স্টাডিজ বিভাগের সহকারী অধ্যাপক। দেখতে অনেকটা সংগীত জগতের মানুষ। অথচ সুর তাল লয় কিছুতেই তার মোহ নেই। একদিন চা খেতে খেতে আজাদ ভাইকে জিজ্ঞেস করেছিলাম,

– বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক পেশাটা আপনার কাছে কেমন?

আজাদ ভাই গর্ব করে বলেছিলেন,

-সেরা! বর্তমান চাকরির বাজারে সবচে সেরা!

আজাদ ভাইয়ের শিক্ষক হওয়ার পেছনে তার বাবা সরকারি বড়ো আমলার অবদান আছে। প্রায়শই গল্প করেন সে। নতুন আঙ্গিকে, নতুনভাবে সাজিয়ে তোলেন সে গল্পকে। আজাদ ভাইয়ের সাথে সময় নিয়ে গল্প করার ইচ্ছেটা আজকেও অপূর্ণই থেকে গেলো।

চলবে…….

দয়া করে নিউজটি শেয়ার করুন..

Leave a Reply

Your email address will not be published.




© All rights reserved 2022 batayon24
Design & Developed BY ThemesBazar.Com