বৃহস্পতিবার, ২৮ সেপ্টেম্বর ২০২৩, ০৮:০৭ অপরাহ্ন

নাটোরে গৃহবধূকে জবাই করে হত্যা,মাত্র ২মাস ১০ দিনেই হত্যা মামলার চূড়ান্ত প্রতিবেদন দাখিল,ঘটনা ধামাচাপা দেওয়ার অভিযোগ পুলিশের বিরুদ্ধে

নাটোরে গৃহবধূকে জবাই করে হত্যা,মাত্র ২মাস ১০ দিনেই হত্যা মামলার চূড়ান্ত প্রতিবেদন দাখিল,ঘটনা ধামাচাপা দেওয়ার অভিযোগ পুলিশের বিরুদ্ধে

স্টাফ করেসপন্ডেন্ট,রংপুর

রংপুরের বদরগঞ্জ উপজেলার বাসিন্দা সুমি রানী সাহা (৩২) নামে এক গৃহবধূর স্বামীর বাড়ি নাটোরে গলা কেটে নৃশংস ভাবে হত্যার ঘটনায় পুলিশের বিরুদ্ধে অনৈতিক সুবিধা নিয়ে আদালতে মিথ্যা তদন্ত প্রতিবেদন দেওয়ার অভিযোগ উঠেছে। ঘটনার পর থানায় হত্যা মামলা না নেওয়া, সূরতহাল রিপোর্ট সঠিকভাবে প্রস্তুত না করে দ্রতু গতিতে মৃতদেহ সৎকার করা,মামলার বাদী এবং স্বাক্ষীদের জবানবন্দি গ্রহন না করায় নাটোর সদর থানার ওসি,তদন্তকারী কর্মকর্তার বিরুদ্ধে নাটোর জেলা পুলিশ সুপার,রাজচ্শাহী রেঞ্জ ডিআইজি সহ বিভিন্ন দপ্তরে অভিযোগ দিয়েছেন নিহত সুমি রানী সাহার ভাই শ্রী-পার্থ সাহা। এ ঘটনায় অভিযুক্ত পুলিশ সদস্যদের বিরুদ্ধে বিভাগীয় তদন্ত চলছে।

নিহতের স্বজন-পরিবার এবং মামলার বিবরণ থেকে জানাযায়, রংপুরের বদরগঞ্জ উপজেলার নাগেরহাট বাজারে র শ্রী-রবিন্দ্রনাথ সাহার কন্যার সাথে নাটোর সদর থানার লালবাজার গ্রামের রনজিত কুমার সাহার পুত্র স্বপন সাহার (৩৯) প্রায় ১১ বছর আগে বিবাহ সম্পূর্ণ হয়। বিয়ের সময় ১৫ ভরি সোনা এবং নগদ তিনলক্ষ টাকা পণ প্রদান করেন সুমি রানী সাহার পরিবার। দাম্পত্য জীবনে অর্চিন সাহা (৮) ও অর্থি সাহা (৪) নামে তাদের দুটি সন্তান রয়েছে। বিয়ের পর থেকে স্বপন সাহা এবং তার পরিবার যৌতুকের দাবিতে সুমি রানী সাহার উপর অমানুষিক নির্যাতন করে আসছিলেন। শেষে তাদের অত্যাচারে বাধ্য হয়ে রবিন্দ্রনাথ সাহা মেয়ের সুখের কথা ভেবে ১০ লক্ষ টাকা যৌতুক প্রদান করেন।

ঘটনার দিন গত- ৫ ফেব্রুয়ারি ২০২৩ ইং  বিকালে সুমি রানী সাহা নাটোর থেকে ফোন দিয়ে ছোট ভাই পার্থ সাহাকে বলেন, তুই তাড়াতাড়ি নাটোরে আয় ভাই, নাহলে আমার জীবন শেষ করে দিবে। এই বলে তার ফোন কেটে যায় এবং পরে তার নাম্বার বন্ধ পাওয়া যায়। এমন সংবাদের পর রংপুরের বদরগঞ্জ থেকে ছোট ভাই পার্থ সাহা,তার বাবা,কাকাসহ উদ্বিগ্ন হয়ে পরদিন সকাল ৬ ফেব্রুয়ারি নাটোরের উদ্দেশ্যে রওয়ানা দিলে তার জামাই বাবু স্বপন সাহা ফোনে জানায় যে, তার দিদি বটি দিয়ে নিজের গলা নিজে কেটেছে এবং তাকে সদর হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে।

এমন খবর পেয়ে তারা দ্রুত গতিতে নাটোর সদর হাসপাতালে গেলে তারা দেখেন তার দিদি মৃত্যু যন্ত্রণায় ছটফট করছে এবং সে আকার ইঙ্গিত করে বোঝাতে চাচ্ছেন স্বপন সাহা এবং তার মা তাকে জবাই করেছে। পরে তারা সেখান থেকে স্বপন সাহার বাড়িতে গিয়ে ৯৯৯ ফোন দিলে সেখানে (ওসি) নাছিম সহ কয়েকজন পুলিশ আসে। এর কিছুক্ষণ পর তারা জানতে পারেন,সুমি রানী সাহাকে তার স্বামী স্বপন সাহা  রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে গিয়েছেন, পরে তারা সেখানে গিয়ে দেখতে পান সুমির লাশ মর্গে পড়ে আছে। পরদিন ৭ ফেব্রুয়ারি পুলিশ প্রভাবিত হয়ে লাশের দায়সারা সুরতহাল রিপোর্ট প্রস্তুত করে তড়িঘড়ি ঘরে লাশের পোষ্ট মর্টেম শেষে দুপুর আনুমানিক দুই ঘটিকার সময় মরদেহ স্বপন সাহা তার নিজ বাড়িতে নিয়ে যায়। অন্য একটি গাড়িতে পার্থ সাহা এবং তার পরিবার পৌঁছে দেখেন তার দিদির মরদেহ তড়িঘড়ি করে তারা সৎকার করার উদ্দেশ্য শ্মশানের দিকে নিয়ে যাচ্ছেন। মরদেহ সৎকারে বাধা দিলে তার জামাই বাবু স্বপন সাহা তার উপর ক্ষিপ্ত হয়ে উঠে। পার্থ সাহা পুলিশের সহযোগিতার জন্য নাটোর সদর থানায় গেলে ডিউটি অফিসার মোকলেছ (ওসি) নেই বলে সময় কালক্ষেপণ করে। থানা থেকে ফিরে এসে দেখেন লাশ সৎকার সম্পূর্ণ হয়েছে।

নিরুপায় হয়ে আবারো থানায় গেলে (ওসি) নাছিম জানায়, মরদেহ পোড়ানো হয়েছে। এখন এসে লাভ কি! আপনারা হিন্দু মানুষ। বাচ্চা দু’টোর কথা ভেবে মিটমাট করে নিন। ওসি নাছিমের এমন অপেশাদারিত্ব আচরনে পার্থ সাহা এবং তার পরিবার বাধ্য হয়ে রংপুরে ফিরে আসেন। গত-১৭ ফেব্রুয়ারি নাটোর আমলি আদালতে একটি হত্যা মামলা আবেদন করলে আদালত মামলাটি আমলে নিয়ে নাটোর সদর থানাকে মামলা গ্রহনের নির্দেশ দেয়। পরে মামলাটির তদন্তের দায়িত্ব দেয়া হয় এসআই সাইয়ুম পারভেজকে। কিন্তু তদন্তকারী কর্মকর্তা বাদীর সঙ্গে সাক্ষাৎ কিংবা স্বাক্ষীর সঙ্গে সাক্ষাৎ না করে স্বপন সাহার সঙ্গে আঁতাত করে হত্যার ঘটনাকে আত্মহত্যা দেখিয়ে মাত্র ২মাস ১০ দিনেই একটি চঞ্চল্যকর গলা কেটে হত্যা মামলার চূড়ান্ত প্রতিবেদন দাখিল করে। যার পরিপেক্ষিতে বাদী আদালতে নারাজি দেয়ার সময় চেয়ে আবেদন করে।

এ ঘটনায় বাদী পার্থ সাহা জানান, আমার দিদিকে যৌতুকের জন্য জামাই বাবু এবং তার পরিবার জবাই করে হত্যা করেছে। পুলিশ আসামি পক্ষের সাথে আঁতাত করে আমাদের সঙ্গে অবিচার করেছে। হত্যার ঘটনাকে আত্মহত্যার নাটক সাজিয়েছে। আমরা অভিযুক্ত পুলিশ কর্মকর্তাদের বিরুদ্ধে প্রশাসনের উপর মহলে যথাযথ প্রমানাদিসহ অভিযোগ দিয়েছি।

অভিযুক্ত ওসি নাছিম জানান, বিশেষজ্ঞ প্রতিবেদনের কারনেই চূড়ান্ত রিপোর্ট দেওয়া হয়েছে। তার বিরুদ্ধে আনীত অভিযোগ অস্বীকার করলেও বিভাগীয় তদন্তের বিষয়ে তিনি স্বীকার করেছেন।

নাটোর জেলা পুলিশ সুপার সাইফুর রহমান জানান, অভিযোগের বিষয়ে তদন্ত চলছে। ঘটনার সত্যতা পেলে জড়িতদের বিরুদ্ধে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

দয়া করে নিউজটি শেয়ার করুন..

Leave a Reply

Your email address will not be published.




© All rights reserved 2022 batayon24
Design & Developed BY ThemesBazar.Com