স্পেশাল করেসপনডেন্ট, রংপুর।। বাতায়ন২৪ডটকম।।
রংপুরের বদরগঞ্জের সালিশী বৈঠকের নামে দুই নারীকে হাত পা বেঁধে নির্যাতন করতে করতে বিবস্ত্র করার মামলায় ইউপি চেয়ারম্যান ৯ জনের বিভিন্ন কারাদন্ডাদেশ দিয়েছে আদালত। বুধবার (০১ ফেব্রুয়ারী) দুপুরে রংপুর নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইবুনাল-২ এর বিচারক রোকনুজ্জামান এই রায় দেন। রায়ের পর নিরাপত্বাহীনতার দাবি করেছেন ভুক্তভোগি দুই নারী।
রংপুর নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইবুনাল-২ এর পিপি জাহাঙ্গীর আলম তুহিন জানান, রায়ে বলপূর্বক অপহরণ করে নির্যাতন করতে করতে সালিশী বৈঠকে নিয়ে যাওয়ার অভিযোগ প্রমাণিত হওয়ায় নারী ও শিশু নির্যাতম দমন আইনের সাত ধারায় উপজেলার মধুপুর ইউনিয়ন পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান আয়নাল হোসেন, তার সহযোগি মহুবুল ইসলাম, চিকনা এনামুলকে চৌদ্দ বছর কারাদন্ডাদেশ দেয়া হয়। এছাড়াও সালিশী বৈঠকে মারধোর ও শ্লীলতাহারি করার ঘটনা প্রমাণিত হওয়ায় ৩২৩ এবং ৩৫৪ ধারায় আয়নাল, চিকনা এনামুল ও মোটা এনামুলকে ৩ বছর করে এবং মারধোর প্রমাণিত হওয়ায় ২২৩ ধারায় আয়নাল, মহুবুল, সাবেক ইউপি মেম্বার ইলিয়াস, সেকেন্দার মন্ডল, রউফ মন্ডল মজম আলী ও বাবলুকে ১ বছরের করে কারাদন্ডাদেশ দেন। এছাড়াও ৫০ হাজার করে টাকা জরিমানা করা হয়। এসময় মামলার বাকী ৪৫ আসামীর বিরুদ্ধে আনিত অভিযোগ প্রমাণিত না হওয়ায় তাদের বেকসুর খালাস প্রদান করেন আদালত।
মামলার নথিপত্র সূত্রে জানা গেছে, ২০১১ সালের ২৫ জুন উপজেলার মধুপুর ইউনিয়নের রাজারামপুর কাশিপুর লিচু বাগান এলাকায় চরিত্রহীনতার অভিযোগ এনে স্থানীয় তালাকপ্রাপ্তা হাফিজা বেগম হ্যাপি ও সাহিদা বেগমের বিরুদ্ধে শালিসী বৈঠকে তাদের হাতপা বেঁধে লাঠি দিয়ে মারধো করতে করতে বিবস্ত্র করে নির্যাতন এবং ভিডিও ধারণ করা হয়। বিষয়টি সেই সময় গণমাধ্যমে আসলে হাইকোর্ট স্ব-প্রনোদিত হয়ে রুল দেয়। পরবর্তীতে হ্যাপী বাদি হয়ে ৫৬ জনের বিরুদ্ধে মামলা করেন। এরমধ্যেই ২ জন মারা যান। পুলিশ ৫৪ আসামীর বিরুদ্ধে দুই দফায় পুলিশ তদন্ত করে নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইনের ৭, ১০ ও ৩০ ধারা এবং দন্ডবিধির ১৪২, ১৪৭, ৩২৩, ২২৫, ১১৪ ধারায় অভিযোগ পত্র দেয়। কিন্তু স্বাক্ষ্য ও জেরা এবং তথ্য উপাথ্য বিশ্লেষন করে বিচারক নারী ও শিশ নির্যাতন দমন আইনের ৭, দন্ডবিধির ৩২৩ ও ৩৫৪ ধারায় অভিযোগ প্রমাণিত হওয়ায় এই রায় দেন। অভিযোগপত্রে ৩৫৪ ধারা না থাকলেও স্বাক্ষ্য বিশ্লেষনে ওই ধারায়ও রায় দেয়া হয়। ১৫ জন স্বাক্ষীর স্বাক্ষ্যশেষে দীর্ঘ সাড়ে ১১ বছর পর মামলাটির রায় দেয়া হলো।
রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবি তুহিন বলেছেন, এই রায়ে তারা সন্তুস্ট। খালাস প্রাপ্তদের বিষয়ে নথিপত্র ঘেটে আপিলের বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেয়া হবে।অন্যদিকে বাদি পক্ষের আইনজীবি আব্দুল হক প্রামাণিক বলেছেন, রায়ের বিরুদ্ধে আপিল করবেন তারা।
তবে রায় পাওয়ার পর আরও নিরাপত্বাহীন হওয়ার দাবি করেছেন সংশ্লিষ্ট দুই নারী। আদালতের কাঠগড়া থেকে বেরিয়ে হাফিজা বেগম হ্যাপি বলেন, রায়ে মাত্র ৯ জনের দন্ড হয়েছে। বাকিদের খালাস দেয়া হয়েছে। তবুও আমি সন্তুস্ট। তবে আমি অনিরাপদ। কারণ দন্ড প্রাপ্ত এবং খালাস পাওয়া সবাই ক্ষমতাধর ব্যক্তি। আমি ঠিকভাবে বাড়ি যেতে পারবো কিনা জানি না। আমাকে তারা মেরেও ফেলতে পারে। সেজন্য সরকারের কাছে নিরাপত্বা দাবি করছি।
অন্যদিকে সাহিদা বেগম বলেন, মামলার পর আদালতের আদেশ থাকলেও শুধু হ্যাপির বাড়িতে পুলিশ পাহাড়া দিয়েছে। আমি সব সময় অনিরাপত্বায় আছি।রায়ের পর আমি আরও নিরাপত্বাহীন হলাম। আমি পুলিশের কাছে আমার নিরাপত্বা চাই। তা না হলে ওরা আমার জীবননাশ করতে পারে।
বাতায়ন২৪ডটকম।।সমামা
Leave a Reply