শুক্রবার, ২৯ সেপ্টেম্বর ২০২৩, ০৮:০৬ অপরাহ্ন

শেষ বলে পাকিস্তানকে হারালো ভারত

শেষ বলে পাকিস্তানকে হারালো ভারত

আদর্শ টি-টোয়েন্টি ম্যাচের সব উপকরণই ছিল এই ম্যাচে। দুর্দান্ত বোলিং, দুর্ধর্ষ ব্যাটিং, টানটান উত্তেজনা- সবকিছু ছাপিয়ে স্নায়ুক্ষয়ী শেষ ওভার। নাটকীয়তাপূর্ণ শেষ ওভারের একেবারে শেষ বলে গিয়ে পাকিস্তানকে হারালো ভারত।

মেলবোর্ন ক্রিকেট গ্রাউন্ডে ভারতকে ১৬০ রানের লক্ষ্য দিয়েছিল পাকিস্তান। জয়ের জন্য ব্যাট করতে নেমে শুরুতে বেশ কয়েকটি উইকেট হারিয়ে বিপদে পড়লেও ভারতকে টেনে তোলেন বিরাট কোহলি এবং হার্দিক পান্ডিয়া। শেষ পর্যন্ত শেষ ওভারের নাটকীয়তায় ৪ উইকেটের দুর্দান্ত এক জয় পেলো ভারত।

পাকিস্তান সব সময়ই ডেথ ওভারে ভয়ঙ্কর দল হিসেবে পরিচিত, সেই পাকিস্তানই কি না আজ ভারতের বিপক্ষে ডেথ ওভারে খেই হারিয়ে ফেললো। শেষ ৩ ওভারে পাকিস্তানের এক্সপ্রেস গতির বোলারদের কাছ থেকে ৪৮ রান নিয়ে ভারতের জিতে যাওয়া চাট্টিখানি কথা নয়।

১৬০ রানের লক্ষ্যে ব্যাট করতে নামার পর এক পর্যায়ে ৩১ রানে সেরা চার ব্যাটারকে হারিয়ে যখন ভারত ধুঁকতে শুরু করে, তখনই দক্ষ নাবিকের মত দলটির হাল ধরেন  কোহলি এবং হার্দিক পান্ডিয়া। বিরাট কোহলি বরাবরই পাকিস্তানের বিপক্ষে ভালো খেলেন। পাকিস্তানকে পেলে তার ব্যাট যেন আপনাতেই জ্বলে ওঠে।

আজও তাই ঘটলো। হার্দিক পান্ডিয়াকে নিয়ে ১১৩ রানের অবিশ্বাস্য এক জুটি গড়েন তিনি। শাহিন শাহ আফ্রিদি, নাসিম শাহ, হারিস রউফদের দুর্ধর্ষ পেস বোলিংয়ের চোখ রাঙানিকে কখনো উপেক্ষা করা, কখনো দক্ষতার সাথে সামলে নেয়া আবার কখনও অবলীলায় বাউন্ডারির বাইরে পাঠিয়ে দেয়া- সবই করেছেন এ দু’জন।

এরমধ্যে ইনিংসে ১২তম ওভারে মোহাম্মদ নওয়াজকে পেয়ে ২০ রান তুলে নিয়েই ভারতীয় ব্যাটিং লাইনআপে যেন সঞ্জীবনি সুধা ঢেলে দেন বিরাট এবং পান্ডিয়া।

শেষ ৩ ওভারে (১৮ বল) ভারতের প্রয়োজন হয় ৪৮ রান। এ সময় তারা যে জিততে পারবে, এমনটা কেউ কল্পনাও করেননি। কিন্তু ১৮তম ওভারে শাহিন শাহ আফ্রিদির কাছ থেকে ১৭ রান নিয়েই খেলার মোড় ঘুরিয়ে দেন বিরাট কোহলি। ১৯তম ওভারের শেষ দুই বলে হারিস রউফকে পরপর দুই ছক্কা মেরে যেন ম্যাচ পকেটে পুরে নেন তিনি।

শেষ ওভারে ভারতের প্রয়োজন হয় ১৬ রান। বোলার মোহাম্মদ নওয়াজ। প্রথম বলেই হার্দিক পান্ডিয়ার উইকেট তুলে নিলেন এই স্পিনার। ৫ বলে প্রয়োজন ১৬ রান। দ্বিতীয় বলে ১ রান নিয়ে কোহলিকে স্ট্রাইকে দেন দিনেশ কার্তিক। তৃতীয় বলে নিলেন ২ রান। শেষ ৩ বলে প্রয়োজন হয় ১৩ রান।

এ সময়ই আম্পায়ারের বিতর্কিক সিদ্ধান্ত। মোহাম্মদ নওয়াজের একটি ফুলটস বলকে নো ডাকলেন আম্পায়ার। অফ স্ট্যাম্পের বাইরে বল থাকলেও বল টেনে ডিপ স্কয়ার লেগের ওপর দিয়ে ছক্কা হাঁকালেন কোহলি। ফিল্ডার চেষ্টা করেও বলটিকে মাঠে রাখতে পারলেন না।

নো বল নিয়ে আম্পায়ারের সঙ্গে বিতর্কে জড়িয়েছেন পাকিস্তান অধিনায়ক বাবর আজম। কিন্তু অন ফিল্ড আম্পায়ার বলটিকে থার্ড আম্পায়ারের কাছেও পাঠালেন না। ‘নো’ বলের সিদ্ধান্তই বহাল থাকলো। ৩ বলে প্রয়োজন ৬ রান। আবার পরের বল ফ্রি-হিট। এর পরের বলে নওয়াজ দিলেন ওয়াইড। সেই ৩ বলই বাকি থাকলো। রান প্রয়োজন ৫।

চতুর্থ বলটিতে কোহলি বোল্ডও হয়েছিলেন। কিন্তু ফ্রি-হিটের কারণে তিনি আউট হলেন না। বরং, দৌড়ে ৩ রান নিলেন তারা। শেষ দুই বলে প্রয়োজন ২ রান। পঞ্চম বলটিতে দিনেশ কার্তিককে স্ট্যাম্পিং করলেন মোহাম্মদ রিজওয়ান।

ম্যাচ যেন এক্সপ্রেস গতিতে ছুটছে। ১ বলে ভারতের দরকার দুই রান। এ সময় আবারও ওয়াইড দিয়ে বসলেন নওয়াজ। ১ বলে প্রয়োজন ১ রান। শেষ বলটিতে রবিচন্দ্রন অশ্বিন অনায়াসে ১ রান নিয়ে নিলেন। সঙ্গে সঙ্গে বিজয় উল্লাসে মেতে উঠলেন বিরাট কোহলি এবং অশ্বিন।

৫৩ বলে ৮২ রানে অপরাজিত থেকে যান কোহলি। ৬টি বাউন্ডারি এবং ৪টি ছক্কার মারেন তিনি।

১৬০ রানের লক্ষ্য ব্যাট করতে নেমে শুরুতেই চাপে ভারত। শাহিন শাহ আফ্রিদির প্রথম ওভারে ওঠে মাত্র ৫ রান। পরের ওভারে বল হাতে নিয়েই উইকেট তুলে নেন নাসিম শাহ। লোকেশ রাহুল (৪) তার দারুণ এক ডেলিভারিতে ইনসাইড এজ হয়ে বোল্ড হয়ে যান।

এর এক ওভার পর হারিস  ফেরান ভারতীয় অধিনায়ক রোহিত শর্মাকে। ডানহাতি এই পেসারের ১৪৫ কিলোমিটারের বলে ব্যাট ছুঁইয়ে স্লিপে ক্যাচ হন তিনি (৪)।

তৃতীয় উইকেট জুটিটাই ছিল ভারতের ভয়ঙ্কর। বিরাট কোহলি এবং সুর্যকুমার যাদব। এই দুই ব্যাটারের ওপর পুরো আস্থা ছিল ভারতীয় সমর্থকদের। কিন্তু মাত্র ১৬ রানের জুটি গড়ার পর পাকিস্তানি পেসের সামনে উইকেট বিলিয়ে দিতে বাধ্য হলেন সুর্যকুমার যাদব। ভেঙে গেলো ভয়ঙ্কর জুটিটি।

ইনিংসের ৬ষ্ঠ ওভারে হারিস রউফের বলটি অফস্ট্যাম্পের ওপর পরে বাউন্স করে এবং ভেতরের দিকে প্রবেশ করে। পেছনে সরে জায়গা করে নিয়ে শট খেলতে চেয়েছিলেন যাদব। কিন্তু ব্যাটের উপরের প্রান্ত চুমু দিয়ে বলটি চলে যাচ্ছিল উইকেটরক্ষকের মাথার ওপর দিয়ে। মোহাম্মদ রিজওয়ান লাফ দিয়ে উঠে ক্যাচটি তালুবন্দী করেন। ১০ বলে ১৫ রান করে বিদায় নিলেন সুর্যকুমার যাদব।

সপ্তম ওভারের প্রথম বলে আবারও বিপদে পড়ে ভারত। এবার রান নিতে গিয়ে আউট হলেন অক্ষর প্যাটেল। শাদাব খানকে মিডউইকেটে ঠেলে দিয়ে একটি রান নিতে চেয়েছিলেন অক্ষর। কিন্তু কোহলি তাকে ফিরিয়ে দিলে ক্রিজে পৌঁছার আগেই বাবর আজমের থ্রো এবং রিজওয়ান ক্ষিপ্র গতিতে স্ট্যাম্প ভেঙে দিলে আউট হয়ে যান তিনি। ৩ বলে ২ রান করে বিদায় নেন অক্ষর।

কিন্তু সত্যিকার ভয়ঙ্কর জুটি হয়ে যান বিরাট কোহলি এবং হার্দিক পান্ডিয়া। ১১৩ রানের জুটি গড়ে তোলেন তারা দু’জন। ২০তম ওভারের প্রথম বলে গিয়ে ভাঙে এই জুটি। তখন ভারতের রান ছিল ১৪৪। ৩৭ বলে ৪০ রান করে আউট হন হার্দিক পান্ডিয়া। ১টি বাউন্ডারি এবং ২টি ছক্কার মার মারেন তিনি। একই ওভারে আউট হন দিনেশ কার্তিকও।

এর আগে মেলবোর্ন ক্রিকেট স্টেডিয়ামে টস হেরে ব্যাট করতে নেমে ভারতীয় বোলারদের তোপের মুখে বিপদে পড়েছিল পাকিস্তান। তবে স্রোতের বিপরীতে দাঁড়িয়ে দুর্দান্ত হাফসেঞ্চুরি উপহার দেন ইফতিখার আহমেদ আর শান মাসুদ। ইফতিখার ঝড় তুলে ফিরলেও শান মাসুদ দায়িত্ব নিয়ে খেলেন একদম শেষ ওভার পর্যন্ত। বিপদ কাটিয়ে ৮ উইকেটে ১৫৯ রান দাঁড় করায় পাকিস্তান।

 

দয়া করে নিউজটি শেয়ার করুন..

Leave a Reply

Your email address will not be published.




© All rights reserved 2022 batayon24
Design & Developed BY ThemesBazar.Com