বৃহস্পতিবার, ২৮ সেপ্টেম্বর ২০২৩, ০৭:৫৬ অপরাহ্ন

রসিক নির্বাচন: জাতীয় পার্টি ও আওয়ামীলীগ প্রার্থীর ইশতেহার ঘোষণা

রসিক নির্বাচন: জাতীয় পার্টি ও আওয়ামীলীগ প্রার্থীর ইশতেহার ঘোষণা

স্টাফ করেসপনডেন্ট, রংপুর।।

বাতায়ন২৪ডটকম।।

প্রতিক বরাদ্দের মধ্য দিয়ে শুক্রবার দুপুর থেকে শুরু হলো রংপুর সিটি করপোরেশন নির্বাচনের আনুষ্ঠানিক নির্বাচনী প্রচারণা। প্রতিক পেয়ে এই নির্বাচনের মূল প্রতিদ্বন্দ্বি জাতীয় পার্টি ও আওয়ামীলীগ প্রার্থী সংবাদ সম্মেলন করে ইশতেহার ঘোষনার মাধ্যমে নিজেদের বিজয় নিশ্চিতের প্রত্যাশায় শুরু করেছে প্রচারণা। নির্বাচন কমিশন বলছে আচরণবিধি মা না হলে নেয়া হবে কঠোর ব্যবস্থা।

শুক্রবার সকাল সাড়ে ৯ টা থেকে শিল্পকলা একাডেমি মিলনায়তনে প্রথমে মেয়র প্রার্থীদের প্রতিক বরাদ্দ দেন রিটার্নিং কর্মকর্তা মোঃ আবদুল বাতেন।  পরে তিনি সংরক্ষিত ও সাধারণ কাউন্সিলর প্রার্থীদেও প্রতিক বরাদ্দ দেন। বেলা সাড়ে ১০ টায় প্রতিক নিয়ে জাতীয় পার্টির লাঙ্গল প্রতিকের প্রার্থী মোস্তাফিজার রহমান মোস্তফা নেতাকর্মীদের নিয়ে কারামাতিয়া মসজিদে শোকারানা নামাজ পরেন। পরে যান পল্লীনিবাসে প্রয়্তা রাষ্ট্রপতি হুসেইন মুহম্মদ এরশাদের মাজার জেয়ারত করেন। সেখানে সুরা ফাতেহা পাঠের পর মোনাজাতে অংশ নেন প্রার্থী মোস্তফাসহ সমর্থক এবং নেতাকর্মীরা। অন্যদিকে বেলা ১১ টায় আওয়ামীলীগের নৌকা প্রতিকের প্রার্থী হোসনে আরা লুৎফা ডালিয়া নেতাকর্মীদের নিয়ে বঙ্গবন্ধুর মুর‌্যালে শ্রদ্ধা জানান।

পরে দুই প্রার্থীই সংবাদ সম্মেলন করে ইশতেহার উপস্থাপন করেন। জাতীয় পার্টির খামার মোড়স্থ অস্থায়ী কার্যালয়ে সংবাদ সম্মেলন ও ইশতেহার উপস্থাপন করেন লাঙ্গল প্রতীকের প্রার্থী জাতীয় পার্টির প্রেসিডিয়াম সদস্য ও মহানগর সভাপতি এবং সদ্য বিদায়ী মেয়র মোস্তাফিজার রহামান মোস্তফা। এসময় উপস্থিত ছিলেন  কেন্দ্রীয় ভাইস চেয়ারম্যান  ও মহানগর সাধারণ সম্পাদক এসএম ইয়াসীর, কেন্দ্রীয় ভাইস চেয়ারম্যান ও জেলা আহবায়ক আবুল মাসুদ চৌধুরী নান্টু, কেন্দ্রীয় সাংগঠনিক সম্পাদক ও জেলা সদস্য সচিব হাজি আব্দুর রাজ্জাক, মহানগর সহ সভাপতি লোকমান হোসেন ও জাহিদুল ইসলামসহ অঙ্গ ও সহযোগি সংগঠনের নেতৃবৃন্দ।

তিনি বলেন,  আমি মনে করি জাতীয় পার্টিও প্রার্থী হিসেবে লাঙ্গল প্রতিকের প্রার্থী হিসেবে ইতোমধ্যেই আমি জন মানুষের আস্থা অর্জনে সক্ষম হয়েছি।  আমার উপর মানুষের উচ্ছাস এবং আমাকে নিয়ে মানুষের উৎসাহ দেখছি। সেকারণে আমি মনে করি আগামী ২৭ তারিখে লাঙ্গল প্রতিকের প্রার্থী হিসেবে আমার বিজয়ী হওয়ার সম্ভাবনা ৯০ ভাগ ইনশাআল্লাহ।

এসময় তিনি জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান, কো চেয়ারম্যান, মহাসচিব, প্রেসিডিয়াম সদস্য এবং বিরোধী দলীয় নেতাকে ধন্যবাদ জানিয়ে বলেন, রংপুর সিটি করপোরেশনের ভোটটি হবে একটি সেনসেটিভ ভোট। সারা দেশে সারা বিশ্ব তাকিয়ে আছে এর দিকে। কারণ  প্রথম এই সিটিকে ভোট হচ্ছে ইভিএমএ। ইভিএম নিয়ে মানুষের অনাগ্রাহ আছে। মানুষকে আগ্রহি করতে প্রচারণার কথা বলছে নির্বাচন কমিশন। আমরা তাদের ওপর আস্থা রাখতে চাই। আশা করি কোনধরণের ব্যত্যয় হবে না এখানে।

অন্যদিকে তিনি শ্যামাসুন্দরী খালকে সর্বোচ্চ গুরুত্ব দিয়ে প্রথম এজেন্ডা হিসেবে রেখে ৩১ দফা ইশতেহার ঘোষণা করে বলেন, শ্যামাসুন্দরী  খাল প্রজেক্ট বাস্তবায়ন। এটা রংপুরের মানুষের একটা বড় দাবি। জনমতের দাবির ভিত্তিতে এটা আমি প্রথম  এজেন্ডা হিসেবে আমার ইশতেহাওে রেখেছি। এভাবে ধারাবাহিকভাবে ৩১ টি এজেন্ডা আমি দিয়েছি। সিটি করপোরেশনের নাগরিক সুবিধা নিশ্চিত করার জন্য যে যে দাবি উন্থাপন হওয়া দরকার আমি সেসব সন্নিবেশন করে ইশতেহাওে এজেন্ডা হিসেবে দিয়েছি। আমি আশা করি আমার ইশতেহার যখন জনগনের কাছে যাবে, তখন জনগনের মতামতের সাথে আমার ইশতেহারের মিল থাকবে বলে আমি আশা করি।

অন্যদিকে  মহানগর আওয়ামী লীগ কার্যালয়ে সংবাদ সম্মেলন করে ইশতেহার ঘোষণা করেন নৌকা প্রতিকের প্রার্থী হোসনে আরা লুৎফা ডালিয়া। এসময় তার সাথে উপস্থিত ছিলেন মহানগর সভাপতি সাফিউর রহমান সফি, সাধারণ সম্পাদক তুষার কান্তি মন্ডল, সহ-সভাপতি আবুল কাশেম, দিলশাদ ইসলাম মুকুল,  যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক নওশাদ রশিদ, উপ-দপ্তর সম্পাদক  আবু সাদাত শাওনসহ অঙ্গ ও সহযোগি সংগঠনের নেতৃবৃন্দ।

এসময় ডালিয়া বর্তমান সরকারের উন্নয়নের চিত্র তুলে ধরে বলেন, মাননীয় প্রধানমন্ত্রী রংপুর বাসিকে ভালোবাসেন। রংপুরবাসি কখনই রংপুর সদর আসনে  নৌকা মার্কা বিজয়ী হয়নি। তারপরেও তিনি রংপুরের মানুষের কথা, তার শশুড় বাড়ির কথা, রংপুর জেলা শহরের কথা ভেবে তিনি রংপুরকে বিভাগ দিয়েছেন। সিটি করপোরেশন করেছেন। রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয় দিয়েছেন। রংপুর মেট্রোপলিন পুলিশ দিয়েছেন। ৬টি থানা দিয়েছেন। তিনি হাইটেক পার্ক দিয়েছেন। সেখানে ২০ হাজার যুবকের কর্মসংস্থান তৈরি হবে। ১ লাখ মানুষ পরোক্ষভাবে সুবিধা পাবে। তিনি এতো দিয়েছেন রংপুরে। সেই হিসেবেই ২৭ ডিসেম্বর রংপুর সিটি নির্বাচন হচ্ছে। এই নির্বাচনে মানুষ আর ভুল করবে না। নৌকা মার্কায় ভোট দিয়ে আমাকে বিজয়ী করবে এবং রংপুরের উন্নয়ন তরান্বিত করবে।

এসময় ২৯ দফা ইশতেহার ঘোষনা করে ডালিয়া বলেন, শ্যামা সুন্দরী খাল ডাস্টবিনে পরিনত হয়েছে। এটাকে আমি রক্ষা করতে চাই। আমি নির্বাচিত হলে সেটি করবো। শ্যামা সুন্দরী খালের দুপাশে মাটি ভরাট করে উঁচু করা হয়েছে সেগুলিকে ওয়ানওয়ে রাস্তা তৈরি করব যাতে রিক্সা, অটো রিক্সা চলাচল করতে পারে। যে স্কুল-কলেজগুলো আছে তা পর্যাপ্ত নয়। আরও সরকারি স্কুল কলেজ করার চেস্টা করবো। কয়েকটি হাসপাতাল ও ফায়ার সার্ভিস স্টেশন করবো। রংপুর মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয়, ইঞ্জিনিয়ারিং বিশ্ববিদ্যালয়, কারিগরি প্রশিক্ষক কেন্দ্র প্রয়োজন। সেসব আমি করার চেস্টা করবো। ক্ষুদ্র কুটির শিল্প এবং গ্যাস সংযোগের মাধ্যমে ভারি শিল্প প্রতিষ্ঠান গড়ার ব্যপারে চেস্টা করবো আমি।

জাতীয় পার্টি আওয়ামীলীগ ছাড়াও স্বতন্ত্র হিসেবে কোতয়ালী থানা আওয়ামীলীগের সহ-সভাপতি লতিফুর রহমান, মেহেদী হাসান বনি এবং জাসদের শফিয়ার রহমান, ইসলামী আন্দোলনের আমিরুজ্জামান পিয়াল, খেলাফত মজলিশের তৌহিদুর রহমান মন্ডল, বাংলাদেশ কংগ্রেসের আবু রায়হান, খেলাফত মজলিসের খোরশেদ আলম মেয়র পদে লড়বেন। আর সংরক্ষিত কাউন্সিলরে ৬৭ এবং  সাধারণ কাউন্সিলরে  ১৭৯ জন প্রতিদ্বন্দ্বিতা করবেন। ২৭ ডিসেম্বর হবে ভোট।

মিলনকে বহিস্কারঃ এদিকে দলীয় শৃংখলা ভঙ্গ করে স্বতন্ত্র পদে নির্বাচনে অংশ নেয়ায় কোতয়ালী থানার সহ সভাপতি লতিফুর রহমান মিলনকে বহিস্কার করেছে মহানগর আওয়ামীলীগ। তবে তিনি দলীয় মনোনয়ন ফরমও তোলেন নি এবং প্রচারণায় আওয়ামীলীগের ব্যানারও ব্যবহার করেন নি।

এদিকে প্রতিক বরাদ্দের পাশাপাশি প্রচারনায় আচরণবিধি মেনে চলার তাগিদ নির্বাচন কমিশনের। অন্যথায় কঠোর ব্যবস্থা গ্রহনের কথা জানিয়েছেন রিটার্নিং কর্মকর্তা মোঃ আবদুল বাতেন। তিনি বলেন,  আমার প্রার্থীদের বলেছি নির্বাচনি আচরণবিধি এবং আইনবিধি মেনে প্রচারণা চালাতে হবে। আমরা তাদের বলেছি ২ টার ১ মিনিট আগে এবং রাত ৮ টার ১ মিনিট পরে প্রচারণা করতে পারবেন না।  নির্ধারিত সংখ্যার বেশি ক্যাম্প স্থাপন করতে পারবে না। প্রতিটি ক্যাম্পে অনুমতি পত্র রাখতে হবে। যদি অনুমতি পত্র না পাওয়া যায় তাহলে ক্যাম্প ভেঙ্গে দেয়া হবে এবং প্রার্থীদের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা নেয়া হবে। কারো বিরুদ্ধে কোন অভিযোগ থাকলে তা লিখিতভাবে সুনির্দিস্টভাবে রিটার্নিং কর্মকর্তার কাছে দাখিল করতে হবে। কেউ কোন ভাবে আচরণবিধি লংঘনের চেস্টা করলে তার বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেয়া হবে।

রিটার্নিং কর্মকর্তার দপ্তর সূত্র আরও জানিয়েছে, এবার ভোটার ও কেন্দ্র সংখ্যা বেড়েছে। গতবছর ১৯৩ টি কেন্দ্র থাকলেও ৩৬ টি বেড়ে কেন্দ্র সংখ্যা হয়েছে ২২৯টি। এছাড়াও এবার স্থায়ী ভোট কক্ষ করা হয়েছে ১ হাজার ৩৪৯ টি এবং অস্থায়ী ভোট কক্ষ আছে ১৯৩ টি। গত ২০১৭ সালের নির্বাচনের ভোটার সংখ্যার তুলনায় এবার ভোটার বেড়েছে ৩২ হাজার ৫৭৫ জন। গত বছর ৩ লাখ ৯৩ হাজার ৮৯৪ জন ভোটার থাকলেও এবার ভোটার সংখ্যা বেড়ে দাড়িয়েছে ৪ লাখ ২৬ হাজার ৪৬৯ জনে। এরমধ্যে পুরুষ ২ লাখ ১২ হাজার ৩০২ জন এবং মহিলা ২ লাখ ১৪ হাজার ১৬৭ জন।

নির্বাচন কমিশন সূত্র জানিয়েছে,  তৃতীয় বারের মতো এই নির্বাচনে অনুষ্ঠিত হচ্ছে ভোট। দ্বিতীয় নির্বাচন ২০১৭ সালের প্রতিদ্বন্দ্বি প্রার্থীর চেয়ে প্রায় ১ লাখ ভোট বেশি পেয়ে নির্বাচিত হয়েছিলেন জাতীয় পার্টি মনোনিত প্রার্থী মোস্তাফিজার রহমান মোস্তফা। আর ২০১২ সালে রংপুর সিটি প্রথম মেয়র হয়েছিলেন মরহুম সরফুদ্দীন আহমেদ ঝন্টু।

বাতায়ন২৪ডটকম।। সমামা

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

দয়া করে নিউজটি শেয়ার করুন..

Leave a Reply

Your email address will not be published.




© All rights reserved 2022 batayon24
Design & Developed BY ThemesBazar.Com