স্টাফ করেসপনডেন্ট, রংপুর।। বাতায়ন২৪ডটকম।
রংপুর সিটি করপোরেশনে নির্বাচনে দলীয় প্রার্থীর জামানত বাজেয়াপ্তের ঘটনায় জেলা ও মহানগর আওয়ামীলীগের কমিটি বিলুপ্ত ঘোষণা করেছে আওয়ামীলীগ সভানেত্রী শেখ হাসিনা। এছাড়াও ২ সদস্য বিশিষ্ট করে আহবায়ক কমিটি গঠন করা হয়েছে। এমন পরিস্থিতির জন্য প্রস্তুত ছিল না রংপুরের আওয়ামীলীগের নেতাকর্মীরা।
বাংলাদেশ আওয়ামীলীগের কেন্দ্রীয় দপ্তর সম্পাদক ব্যারিষ্টার বিপ্লব বড়ুয়া স্বাক্ষরিত এক প্রেস বিজ্ঞপ্তিতে রোববার ( ১ জানুয়ারী) রাতে এই তথ্য গণমাধ্যমকে জানানো হয়। এতে বলা হয়, বাংলাদেশ আওয়ামীলীগের মাননীয় সভাপতি বঙ্গবন্ধু কণ্যাদেশ রত্ন শেখ হাসিনা এমপি সংগঠনের গঠনতন্ত্র অনুযায়ী তার উপর অর্পিত ক্ষমতাবলে দলের রংপুর মহানগর ও জেলা শাখার বর্তমান কমিটি ভেঙ্গে দিয়ে আহবায়ক কমিটি ঘোষণা করেছেন। প্রেস বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়েছে, রংপুর মহানগর আওয়ামীলীগের আহবায়ক ডা. দেলওয়ার হোসেন ও যুগ্ম আহবায়ক আবুল কাশেম এবং জেলা শাখার আহবায়ক একেএম ছায়াদত হোসেন বকুল ও যুগ্ম আহবায়ক অধ্যাপক মাজেদ আলী বাবলু।
ভেঙ্গে দেয়ার আগ পর্যন্ত রংপুর মহানগর আওয়ামীলীগের সভাপতির দায়িত্ব পালন করছিলেন সাফিউর রহমান সফি ও তুষার কান্তি মন্ডল এবং জেলা শাখার সভাপতি ছিলেন মমতাজ উদ্দিন আহমেদ ও সাধারণ সম্পাদক এ্যডভোকেট রেজাউল করিম।
এবিষয়ে জানতে চাইলে মহানগর আওয়ামীলীগের সভাপতি সাফিউর রহমান সফি জানান, রংপুর সিটি করপোরেশন নির্বাচনে যেহেতু দলীয় প্রার্থীর মনোনয়ন বাজেয়াপ্ত হয়েছে। আমরাও ঐক্যবদ্ধ ছিলাম না। সেকারণে মাননীয় প্রধানমন্ত্রী আওয়ামীলীগ সভানেত্রী গঠনতন্ত্র অনুযায়ী এই সিদ্ধান্ত নিয়েছেন। তিনি এটা করতে পারেন। তার সিদ্ধান্তই চুড়ান্ত।
একই ধরণের অভিমত ব্যক্ত করেছেন মহানগর আওয়ামীলীগের সদ্য ভেঙ্গে দেয়া কমিটির সাধারণ সম্পাদক তুষার কান্তি মন্ডল জানান, আমিও শুনেছি। তবে কোন কাগজ হাতে পাই নি। নেত্রী সিদ্ধান্ত নিয়েছেন, সেটাই সঠিক। সম্ভবত সিটি করপোরেশন নির্বাচনে দলীয় প্রার্থীর জামানত বাজেয়াপ্তের কারণেই নেত্রী এমন সিদ্ধান্ত নিয়েছেন।
প্রসঙ্গত: রংপুর সিটি করপোরেশনের তৃতীয় মেয়াদের নির্বাচনে আবারও রেকর্ড জয়ে বিজয়ী হয়ে দ্বিতীয়বারের মতো মেয়র নির্বাচিত হয়েছেন জাতীয় পার্টির লাঙ্গল প্রতিকের প্রার্থী মোস্তফাফিজার রহমান মোস্তফা। তিনি তার নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বির চেয়ে ৯৬ হাজার ৯০৭ ভোট বেশি পেয়ে নির্বাচিত হয়েছেন। ২০১৭ সালে তিনি ৯৮ হাজার ২৮৭ ভোট পেয়ে নৌকা প্রতিকের প্রার্থীকে হারিয়ে প্রথম বারের মতো মেয়র নির্বাচিত হয়েছিলেন তিনি। এবার নির্বাচনে মোস্তফার চেয়ে ১ লাখ ২৪ হাজার ৫৫৯ ভোট কম পেয়ে চতুর্থ অবস্থানে গেছেন আওয়ামীলীগের প্রার্থী হোসনে আরা লুৎফা ডালিয়া। এবার সবাইকে অবাক করে দিয়ে দ্বিতীয় হয়েছেন ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের প্রার্থী আমিরুজ্জামান পিয়াল। ডালিয়াসহ প্রতিদ্বন্দ্বিতাকারী ৭ প্রার্থী হারিয়েছেন জামানত। এই নির্বাচনে দ্বিতীয় হয়ে পিয়াল পয়েছেন ৪৯ হাজার ৮৯২ ভোট। এবার তৃতীয় হয়েছেন স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে হাতি প্রতিকের লতিফুর রহমান মিলন (আওয়ামীলীগ থেকে অব্যাহতি পাওয়া) পেয়েছেন ৩৩ হাজার ৩৬৬ ভোট; আওয়ামী লীগের প্রার্থী হোসনে আরা লুৎফা ডালিয়া (নৌকা) পেয়েছেন ২২ হাজার ২৩৯ ভোট; বাংলাদেশ কংগ্রেসের ডাব প্রতিকের আবু রায়হান পেয়েছেন ১০ হাজার ৫৪৯ ভোট; জাকের পার্টির গোলাপ ফুল প্রতিকের খোরশেদ আলম খোকন পেয়েছেন ৫ হাজার ৮০৯ ভোট; জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দল জাসদের মশাল প্রতীকের প্রার্থী পেয়েছেন ৫ হাজার ১৫৬ ভোট; খেলাফত মজলিশের দেওয়াল ঘড়ি প্রতিকের তৌহিদুর রহমান মন্ডল রাজু পেয়েছেন ২ হাজার ৮৬৪ ভোট এবং স্বতন্ত্র প্রার্থী মেহেদী হাসান বনি পেয়েছেন ২ হাজার ৬৭৯ ভোট।
এই ফলাফলে পর রাজনৈতিক অঙ্গনে নানা ধরণের কথাবার্তার পেখম মেলে। বিএনপি এবং জাতীয় পার্টিসহ অন্যান্য রাজনৈতিক দলগুলো রংপুর সিটিতে আওয়ামীলীগ প্রার্থীর জামানত বাজেয়াপ্তের বিষয়টি নিয়ে খোটা দিয়ে বক্তৃতা বিবৃতি দিচ্ছে।
তবে এই সিটিতে আওয়ামীলীগের জামানত বাজেয়াপ্তের বিষয়টির জন্য সমন্বিতভাবে স্থানীয় আওয়ামীলীগের ঐক্যবদ্ধভাবে কাজ না করার বিষয়টিকে একমাত্র কারণ হিসেবে দেখতে চায় না সুশাসনের জন্য নাগরিক সুজন। রংপুর মহানগর সুজনের সভাপতি অধ্যক্ষ ফখরুল আনাম বেঞ্জু জানিয়েছেন, অনেক দিন আগে থেকেই একাধিক আওয়ামীলীগের প্রার্থী মেয়র পদে প্রতিদ্বন্দ্বিতার জন্য মাঠে সরব ছিলেন। মিছিল মিটিং থেকে শুরু করে হৈহৈ প্রচারণা করেছিলেন তারা। কিন্তু তাদের কাউকেই মনোনয়ন না দিয়ে এমন একজন ব্যক্তিকে মনোনয়ন দেয়া হয় যিনি কখনই মাঠে প্রচারণায় ছিলেন না। তিনি সিনিয়র আইনজীবি এবং সংরক্ষিত আসনের এমপি থাকলেও মাঠের রাজনীতিতে তিনি খুব একটা সামনে ছিলেন না। সেকারণে মনোনয়ন ভুল হওয়ার কারণেই মূলত আওয়ামীলীগ জামানত হারিয়েছে। তাছাড়া মনোনিত প্রার্থী নিজেও স্থানীয় আওয়ামীলীগ এবং অঙ্গ ও সহযোগি সংগঠনগুলোকে একত্রিত করে মাঠে নামাতে ব্যর্থ হয়েছেন। তিনি গা ছাড়া দিয়ে মাঠে কাজ করেছেন। এছাড়াও কেন্দ্র থেকে মনোনিত প্রার্থীর পক্ষে মাঠে নামাতে কোন ধরণের উদ্যোগও চোখে পড়েনি। সেকারণে হয়েছে ভরাডুবি। তাই ব্যর্থতার দায় চাপিয়ে কমিটি ভেঙ্গে দিলেই সব ঠিক হবে না। মনোনয়নের ক্ষেত্রে তৃণমূলের প্রত্যাশাকে প্রথম গুরুত্ব দিলে এই কান্ডটি ঘটতো বলে মনে করেন সুজনের এই নেতা।
বাতায়ন২৪ডটকম।
Leave a Reply