স্পেশাল করেসপনডেন্ট, বাতায়ন২৪ডটকম,
রংপুরঃ রংপুর মহানগর ও জেলাকে মূল শেকড় দাবী করে জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান ও বিরোধী দলীয় উপনেতা জিএম কাদের এমপি বলেছেন, জাতীয় পার্টির শেকড় কাটার জন্য আগেও ষড়যন্ত্র চলছে, এখন চলছে মূল শেকড় কাটার, সেটি হলো রংপুর সিটি করপোরেশন নির্বাচন। আসন্ন এই সিটি এই নির্বাচন ইভিএম আর যে পদ্ধতিতেই হোক কোন রকম কারচুপির চেস্টা করলে আমরা এখানে কোন ধরণের ছাড় দিবো না, বুকের তাজা রক্ত দিয়ে হলেও প্রতিহত করবো। তিনি অভিযোগ তুলেছেন, দেশের অল্প সংখ্যক মানুষ বড়লোক হচ্ছে আর অধিকাংশ মানুষ না খেয়ে থাকছে। সরকার বিদ্যুৎ উৎপাদনে উৎসব পালন করলেও এখন টাকার অভাবে বিদ্যুত কেন্দ্র চালু করতে পারছে না। দেশ দেউলিয়ার পথে, এভাবে চলতে থাকলে কিছুদিনের মধ্যে সরকারের ছাপানো টাকা কাগজের দামে বিক্রি হবে।
মঙ্গলবার (২৫ অক্টোবর) রংপুর পাবলিক লাইর্বেরী মাঠে মহানগর জাতীয় পার্টির ত্রি-বার্ষিক সম্মেলনে প্রধান অতিথির বক্তব্যে এসব কথা বলেন তিনি। প্রেসিডিয়াম সদস্য ও মহানগর সভাপতি এবং সিটি মেয়র মোস্তাফিজার রহমান মোস্তফার সভাপতিত্বে এবং ভাইস চেয়ারম্যান ও মহানগর সাধারণ সম্পাদক এসএম ইয়াসিরের সঞ্চালনায় সম্মেলনে প্রধান বক্তার বক্তব্য রাখেন মহাসচিব এ্যডভোকেট মুজিবুল হক চুন্নু এমপি। বিশেষ অতিথির বক্তব্য রাখেন কো চেয়ারম্যান ও সাবেক মহাসচিব ব্যারিষ্টার আনিছুল ইসলাম মাহমুদ চৌধুরী এমপি, বিশেষ বক্তার বক্তব্য রাখেন অতিরিক্ত মহাসচিব ব্যারিষ্টার শামীম হায়দার পাটোয়ারী এমপি। বক্তব্য রাখেন আদিলুর রহমান আদেল এমপি, রংপুর জেলা আহবায়ক বীরমুক্তিযোদ্ধা আবুল মাসুদ চৌধুরী নান্টু, সদস্য সচিব হাজি আব্দুর রাজ্জাক, সম্মেলন প্রস্তুত কমিটির আহবায়ক লোকমান হোসেন, সদস্য সচিব জাহিদুল ইসলাম। সম্মেলনে কণ্ঠভোটে রংপুর মহানগর কমিটিতে আবারও মোস্তাফিজার রহমান মোস্তফা সভাপতি এবং এসএম ইয়াসির সাধারণ সম্পাদক নির্বাচিত হন। এছাড়াও বর্তমান মেয়র নব নির্বাচিত সভাপতিমোস্তফাকে আগামী সিটি নির্বাচনে দলীয় প্রার্থী ঘোষণা করে তার হাতে লাঙ্গল তুলে দেনে জিএম কাদের।
রংপুর মহানগর জাতীয় পার্টির সম্মেলনকে ঘিরে মানুষের ঢল নেমেছিল পাবলিক লাইব্রেরী মাঠে। দুপুর ১ টার পর নগরীর ৩৩ টি ওয়ার্ড থেকে আসতে থাকে মিছিল। সম্মেলন প্রানবন্ত হয়ে উঠে ভাওয়াইয়া গানের তালে তালে। ২ টার আগেই পুরো মাঠ ছাপিয়ে মানুষের ঢল চলে যায় টাউন চত্বর হয়ে মূল সড়কে। বেলা সাড়ে তিনটায় জাতীয় ও দলীয় সঙ্গিত পরিবেশন এবং বেলুন ও পায়রা উড়িয়ে সম্মেলনের উদ্বোধন করেন চেয়ারম্যানি জিএম কাদের।
সরকারের প্রতি ইঙ্গিত করে জাতীয়র পার্টির মূল শেকড় কাটার অভিযোগ এনে সম্মেলনে জিএম কাদের বলেন, জাতীয় পার্টিকে নিয়ে ষড়যন্ত্র শুরু হয়েছে, বেশ কিছুদিন আগে থেকেই। জাতীয় পার্টির যে মূল শেকর সেটা হলো রংপুর মহানগর ও রংপুর জেলা। আর শাখা-প্রশাখা শেকড়- সেটা হলো বৃহত্তর রংপুরের সব জেলা উপজেলা এবং আমাদের উত্তরবঙ্গে সব ছড়িয়ে গেছে। দেখবেন খেয়াল করে, যখন সুযোগ পাওয়া গেছে, তখন একটা একটা করে আমাদের এই শেকড়কে কাটা হয়েছে। রংপুরের মানুষ আমাদের বিপুলভাবে ভোট ও সমর্থন করার পরেও কোন নির্বাচনে আমাদেরকে সঠিকভাবে আসতে দেয়া হয় নি। এবং আমাদের মধ্যে বিভিন্নভাবে আমাদের শেকড় কেটে গাছটিকে বটগাছটিকে ধ্বংস করার ষড়যন্ত্র করেছে।
জিএম কাদের অভিযোগ করে বলেন, এখনও সেই ষড়যন্ত্র চলছে। সামনের দিকে একটা কথা আপনারা মনে রাখবেন, আমাদের এই মহানগরীর মেয়র নির্বাচন আসছে। আপনারা মনে রাখবেন এইখানে যদি তারা মূল শেকড় কাটতে পারে। তাহলে জাতীয় পার্টি শেষ। কাজেই এখানে যাকে আমরা মেয়র পদে নির্বাচনের জন্য দিয়েছি, তিনি হলে মোস্তাফিজার রহমান মোস্তফা। ওনি এখানে লাঙ্গল প্রতিক নিয়ে নির্বাচন করবেন এছাড়াও আমরা কাউন্সিলর দিবো সব ওয়ার্ডে। আমরা এখন থেকে আমাদের যে কাটা শেকড় তা আবার পুনর্জীবিত করবো এবং জীবন নিয়ে আসবো। এই নির্বাচনের মাধ্যমে দেশের জনগনের কাছে আমরা আমাদেও শেকড় আরও শক্তভাবে গড়ে তুলবো। যাতে জাতীয় পার্টির গাছ আকাশের দিকে চলে যাবে। জাতীয় পার্টি একটি শক্তিশালী দল হিসেবে আবারও অতীতের মতো শাসন করবে ইনশাআল্লাহ। কিন্তু ষড়যন্ত্রকারীরা বসে নেই।
পেশিশক্তি টাকা এবং প্রশাসনকে ব্যবহার করে সব ধরনের নির্বাচনে নিজেদের প্রার্থী জিতিয়ে আনার অভিযোগ তুলে জিএম কাদের বলেন, আপনারা কয়েক বছর থেকে দেখছেন, বিভিন্ন নির্বাচনে ইউনিয়ন পরিষদ, পৌরসভা , উপজেলা নির্বাচন সবখানে টাকা ও পেশি শক্তি এবং প্রশাসন ও আইনশৃঙখলাবাহিনীকে নিয়োগ করে সরকারি দল সব জায়গায় তাদের প্রার্থীদের জিতিয়ে আনার ব্যবস্থা গ্রহন করেছে। এজন্য আমরা দাবি করেছি, অবাধু, নিরপেক্ষ ও সুষ্ঠু নির্বাচন। আমাদের কথা আমাদের যদি দেশের লোক না চায় তাহলে আমরা একশভাগ সালাম দিয়ে চলে যাবো। কিন্তু দেশের লোক যদি আমাকে চায়, তাহলে আমাকে নির্বাচিত করতে হবে আপনাকে। সেজন্য যা কিছু দরকার আমরা সেটা করবো। মনে রাখবেন এই নির্বাচন ইভিএম আর যে পদ্ধতিতেই হোক কোন রকম কারচুপির চেস্টা করলে আমরা এখানে কোন ধরণের ছাড় দিবো না। আপনারা প্রস্তুত থাকবেন বুকের রক্ত দিয়ে হলেও আমরা জাতীয় পার্টিকে বাঁচিয়ে রাখবো। দেশের গণতন্ত্রকে বাঁচিয়ে রাখবো। এবং দেশে অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচন নিশ্চিত করবো।
দেশ শ্রিলংকার পথে দিকে যাচ্ছে আবারও উল্লেখ করে সাবেক এই বাণিজ্যমন্ত্রী বলেন, অনেকদিন আগেই বলেছিলাম দেশের অর্থনৈতিক অবস্থা খুব খারাপ। আমরা শ্রীলঙ্কার দিকে যাচ্ছি। শ্রীলঙ্কার মুদ্রার মান কমে গিয়ে ডলারের বিপরীতে। আস্তে আস্তে তাদের জিনিসপত্রে দাম বাড়ছিল রিজার্ভ সংকটে জন্য। তাদের বৈদিশক মুদ্রা যথেষ্ট ছিল না। এভাবে তাঁরা দেউলিয়া হয়েছিল। আমাদের দেশেরও সেই অবস্থা হয়েছে।
ডলারের মান নিয়ে সরকার মিথ্যাচার করছে অভিযোগ করে জিএম কাদের বলেন, আগে আমাদের ডলারের দাম ছিল ৮০টাকা। পরে তা বেড়ে ৮৫টাকা হয়। আর এখন এক ডলার সমান ১২০টাকা দিতে হচ্ছে। আর সরকার বলছেন ১০৫ টাকা ডলার। জিনিসপত্রের দাম প্রতিদিনই হুহু করে বাড়ছে। সামনের দিকে মানুষ কিভাবে জীবন চালাবে তাঁর কোনো নিশ্চয়তা দেওয়া যাচ্ছে না।
পুরাপুরি দেউলিয়া হওয়ার অবস্থা হয়ে গেছে দেশ দাবি করে জিএম কাদের বলেন, রিজার্ভের টাকা নাই। সে টাকা কোথায় গেলো। রিজার্ভ ছিল ৪৮ বিলিয়ন একবছর আগে। এখন সরকার ডিকলিয়ার দিয়েছে ৩৫ বিলিয়ন। তারপরও সরকার যেটা বলে নাই, সেটা হলো প্রতিবছর যে বিভিন্ন ধরনের মেগা প্রজেক্ট, বিভিন্ন জায়গায় উন্নয়ন প্রকল্পের নামে নানা প্রকল্প তৈরি করা হয়েছে। যার থেকে আয় এখনো আসে নাই। কিন্তু তার সুদ এবং আসল দিতে হচ্ছে। সেটা গিয়ে কোথায় দাড়িয়েছে। গত বছর দিয়েছে ১১ বিলিয়ন ডলার। এখন এবছর ২২ বিলিয়ন ডলার দিতে হবে । আইএমএফ বরেছে ৩৫ বিলিয়ন ডলার নয় রিজার্ভ আছে ২৮ বিলিয়ন ডলার। তার মধ্যে ২২ বিলিয়ন ডলার দিতে হবে লোন-সুদ। আরেকটা জিনিস আছে। সেটা হলো ডেফার্ট পেমেন্ট। অনেক জিনিস সরকার কিনেছে দাম দেইনি, বলছে পরে দেব সেটারও খরচ হয়েছে প্রায় ১৪ বিলিয়ন ডলার। এই সময় যদি সব ঋণ পরিশোধ করতে হয়। বাংলাদেশে একাউন্টে কোন বৈদেশিক মুদ্রা থাকবে না। পুরাপুরি দেউলিয়া হওয়ার অবস্থা হয়ে গেছে দেশের। সেটা যদি হয় তাহলে সামনে দিকে নিত্যপ্রয়াজনীয় পণ্যের হিসাব আপনারা পাবেন না।
ছাপানো টাকা কাগড়ের দওে বিক্রি হবে উল্লেখ করে জিএম কাদের বলেন, সরকার এখন ছাপাচ্ছে। নোট ছাপিয়ে ছাপিয়ে আমাদের দিচ্ছে। সেই নোটের বিপরীতে কোন বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ যদি না থাকে তাহলে এই নোট কাগজের মূল্যে বিক্রি হবে। একটাকা, দশ টাকা একহাজার টাকার কাগজের দাম, টাকার দাম তার চেয়ে বেশি কেউ দিবে না। ইন্টারন্যাশনাল মার্কেটে কেউ দিবে না। তাহলে বিদেশ থেকে যে জিনিস আপনি আনবেন। তা কিনতে পারবেন না। যেটা কিনবেন, সেটা অনেক দাম দিয়ে কিনতে হবে। সাধারণ মানুষ তা ক্রয় করতে পারবে না। মন্ত্রী বললো যে, আমাদেও বৈদেশিক মুদ্রার সটেজ আমরা আনতে পারছি না। আর আমাদের সরকার প্রধান বলেছেন, দেশে দুর্ভিক্ষ হতে পারে।
বিদ্যুৎ প্রসঙ্গে জিএম কাদের বলেন, বিদ্যুৎ নিয়ে অনেক অনেক গল্প আমরা শুনেছি। বিদ্যুৎে স্বয়ং সম্পন্ন হয়ে আমরা উৎসব পালন করেছি। অনেকেই বলেন ২০, ২২, ২৪ হাজার টাকার বিদ্যুৎ উৎপাদন করার ক্যাপাসিটি আছে। কিন্তু আমাদের চাহিদা মাত্র ১৪ হাজার। তারপরেও আমরা গ হাজার মেগাওয়াডের বেশি বিদ্যুৎ উৎপাদন করতে পারছি না। একারণে প্রথমে ১ ঘন্টা, পরে ২ ঘন্টা, পরে ৪ ঘন্টা। এখন শুনছি ৮ ঘণ্টা নাকি লোডশেডিং হবে। কেন- মন্ত্রী বলেছে টাকা নাই। জ্বালানী উপদেস্টা বলেছেন, আমাদের বৈদেশিক মূদ্রার অভাব ভাই। বিজনেস ম্যানরা বলছেন, আপনাদের আমরা টাকা দিবো। আমাদের বিদ্যুৎ দেন। আমার প্রোডাকশন করে বিদেশ থেকে ওই টাকা দিয়ে আমরা আমদানি করবো। আমাদের সব রপ্তানী জিনিস নস্ট হচ্ছে, আমরা প্রোডাকশন করতে পারছি না উৎপাদনের অভাবে। তখন উপদেস্টা বলছেন, আপনারা উৎপাদন করবেন, আমি বিদ্যুৎ দিবো। সেই টাকা তো আমার কাছে নাই। এই চলছে বিদ্যুতের অবস্থা। দেশের অবস্থা।
বাতায়ন২৪ডটকম/সমামা
Leave a Reply