স্টাফ করেসপনডেন্ট, রংপুর।।বাতায়ন২৪ডটকম।।
বর্ণিল আয়োজনে উৎসবের রংয়ে রংপুর মহানগরীতে বরণ করা হচ্ছে বাংলা নববর্ষকে। শিশু নারী থেকে বৃদ্ধ সব বয়সি মানুষ যোগ দিয়েছেন বরণ অনুষ্ঠানগুলোতে। অনুষ্ঠানে অংশ নেয়ারা জানিযেছেন, অসাম্প্রদায়িক ও মুক্তিযুদ্ধের চেতনাকে প্রতিষ্ঠিত করতে বাংলা বর্ষবরণ নতুন প্রজন্মের কাছে মাইলফলক হিসেবে কাজ করে। এদিকে বর্ষবরণ অনুষ্ঠানকে নির্বিঘ্ন করতে নিরাপত্বার জোড়দার করেছে আইনশৃংখলা বাহিনী।
শুক্রবার (১৪ এপ্রিল) সকালে রংপুর কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারের পাদদেশে বর্ষবরণের গান দিয়ে শুরু হয় বরণ অনুষ্ঠান। একসাথে সবাই মিলে দাড়িয়ে জাতীয় সংগিতের পরিবেশনের পর শুরু হয় এসো হে বৈশাখ এসো এসো গান। তাতে ঠোঁট মেলান অনুষ্ঠানে অংশ নেয়া সকলেই। যোগ দেন শিশু নারীসহ বিভিন্ন শ্রেণি পেশার মানুষ।
সকাল ১০ টায় শহীদ মিনারের পাদদেশে বেলুন উড়িয়ে জেলা প্রশাসন আয়োজিত বর্ষবরণের নানা উৎসবের উদ্বোধন করেন অতিরিক্তস বিভাগীয় কমিশনার আবু জাফর। এসময় সাথে ছিলেন অতিরিক্ত পুলিশ কমিশনার সাইফুজ্জামান ফারুকী, ডিসি ড. চিত্রলেখা নাজনীন, মেট্রোপলিট পুলিশের উপ-পুলিশ কমিশনার(অপরাধ) আবু মারুফ হোসেন, উপ-পুলিশ কমিশনার আবুবকর সিদ্দিক, পুলিশ সুপার ফেরদৌষ আলী চেšধুরীসহ জেলা ও বিভাগীয় প্রশাসনের কর্মকর্তারা। এরপর সেখান থেকে জেলা প্রশাসনের মঙ্গলশোভাযাত্রা বের হয়ে জিলা স্কুল মাঠে গিয়ে শেষ হয়। এতে সরকারী লোকজন ছাড়াও বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠান, সাংস্কৃতিক সংগঠনসহ বিভিন্ন শ্রেণি পেশার মানুষ অংশ নেন। স্কুলের মাঠের বটতলায় বর্ষ বরণ অনুষ্ঠানে কথা বলেন প্রশাসনের কর্মকর্তারা। পরিবেশিত হয় গান, আবৃত্তি ও নৃত্য।
অন্যদিকে শহীদ মিনারের পাদদেশে সম্মিলিত সাংস্কৃতিক জোটের একাংশ এবং সাহিত্য মঞ্চে জোটের আরেক অংশের বিভিন্ন সাংস্কৃতিক পরিবেশনায উৎসব মুখর হয়ে উঠে পাবলিক লাইব্রেরী মাঠ, টাউন হল চত্বর এবং শহীদ মিনার এলাকা। সেখানে চলছে বিভিন্ন ধরণের সাংস্কৃতিক পরিবেশনা। তীব্র গরম উপেক্ষা করে বিভিন্ন বয়সি মানুষ পরিবেশনা উপভোগ করছেন।
এদিকে শুধু জেলা প্রশাসন নয়, রংপুর মহানগরীসহ আট জেলা, ৫৮ উপজেলা ৩৬ পৌরসভা এবং ৫১২ ইউনিয়নেও চলছে নানা আয়োজন। গ্রামে গ্রামে শুরু হয়েছ বৈশাখী মেলা এবং নানা ধরণের খেলার আয়োজন। শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলোতে করা হবে নানা আয়োজন। খাবার হিসেবে পান্তা ইলিশের কদর বেড়েছে। বেড়েছে ফুলের বদরও। নারী ও পুরুষের পোশাকে বাঙ্গালীয়ানা স্থান পেয়েছে। বেচাবিক্রি বেড়েছে নগরীর বিভিন্ন বিপনী বিতানগুলোতে বৈশাখী পোশাকের। রংপুর মহানগরীর বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠান এবং সড়ক ও প্রাচীরে আলপনা করা হয়েছে বাঙ্গালীয়ানার আদলে। সবখানে সবাই উৎসবমুখর।
জেলা স্কুলের বটতলার অনুষ্ঠানে অংশ নেয়া রংপুর সরকারি বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ের উচ্চমান সহকারী ময়না আখতার বলেন, আমাদের দেশের ছেলে মেয়েরা এখন বিদেশী কালচার নিয়ে পড়ে থাকে। বাংলা বর্ষ বরণের মাধ্যমে আমরা নতুন প্রজন্মকে বাংগালী এবং বাংলা সম্পর্কে ধারণা দিয়ে তাদের শেকড়ে ফেরাতে পারি।
এখানে অংশগ্রহনকারী রংপুর মহানগর আওয়ামীলীগের আহবায়ক কমিটির সদস্য জাসেম বিন জুম্মন বলেন, এবারের বর্ষবরণে আমাদেও প্রত্যাশা থাকবে। আগামী দিনে সাম্প্রদায়িক অপশক্তি যেন মাথা চাড়া দিয়ে উঠতে না পারে। এছাড়াও বর্ষবরণ অনুষ্ঠানকে বাঁধা দেয়ার নানা প্রকার ষড়যন্ত্র করছে প্রতিক্রিয়াশীলী চক্র। এই ষড়যন্ত্রকে মোকাবেলা করে আগামী দিনে আরও স্বতস্ফুর্তভাবে পালন করতে পারি সেই অঙ্গিকার ও প্রত্যাশা আমাদের।
অনদিকে শহীদ মিনারে অংশ নেয়া কবি, লেখক ও সাংবাদিক রংপুর প্রেসক্লাবের সভাপতি মাহবুব রহমান হাবু বলেন, অসাম্প্রদায়িক যে চেতনায় বাংলাদেশ গড়ে উঠেছে। বাংলাদেশে মুক্তিযুদ্ধের যে চেতনা , বাংলাদেশে যে সহনশীলতা, প্রতিটি ধর্মের প্রতি যে সহ মর্মিতা সেই চেতনাবোধ থেকে আমরা আজকের এই নববর্ষকে আমরা বরণ করছি। এবং এভাবেই যেন আমাদেও বাংলাদেশে সম্প্রীতি বজায় থাকে। আমাদেও ইতিহাস ঐতিহ্য, আমাদের শেকড়েরর সন্ধান, আমাদের যে বাঙ্গালী সংস্কৃতি, শেকড়ের সংস্কৃতি সেটা যেন তুলে ধরতে পারি এবং সেটাকে সংরক্ষণ করতে পারি।
এখানে অংশ নেয়া সংস্কৃতি কর্মী শর্মিলা সরকার বলেন, এই দিনটাতে আমাদের অনেক কিছুই বলার থাকে। এটা আমাদের একটা ঐতিহ্য। যেকোন ভাবেই আমাদের উচিৎ এই জিনিসটাকে বাঁচিয়ে রাখা। আমরা যারা রংপুরের বিভিন্ন সাংস্কৃতিক সংগঠনের মানুষ, তারা চেস্টা করি অল্প কিছু হলেওই এই দিনটাতে কিছু আয়োজন করা।
সম্মিলিত সাংস্কৃতিক জোট রংপুর জেলা শাখার সাধারণ সম্পাদক বিপ্লব প্রসাদ বলেন, সাহিত্যমঞ্চে সাংস্কৃতিক পরিবেশনা এবং মঙ্গলশোভাযাত্রার মাধ্যমে আমরা বর্ষবরণ করছি। এরমাধ্যমে নতুন প্রজন্মকে আমরা বাঙ্গালীয়ানা তুলে ধরতে চাই। যাতে তারা আগামীকে একজন অসাম্প্রদায়িক মানুষ হিসেবে গড়ে উঠতে পারে।
সম্মিলিত সাংস্কৃতিক জোট রংপুরের সাধারণ সম্পাদক আশরাফুল আলম আল আমিন বলেন, পহেলা বৈশাখ বাঙ্গালী জাতীর একটি বিশেষ দিন। আমাদের পরবর্তী প্রজন্মের কাছে বাঙ্গালী সংস্কৃতির ঐতিহ্য-কালচারকে তুলে ধরবার জন্য আমরা উৎসবের আয়োজন করেছি।আমরা মনে করি আমাদের বাঙ্গালী সংস্কৃতিকে বেগবান করবার জন্য আমাদের নতুন প্রজন্মকে আমাদেও সংস্কৃতি জানাতে হবে। সেকারণেই এই উদ্যোগ।
রংপুরের ডিসি ড. চিত্রলেখা নাজনীন বলেন, সবাইকে ১৪৩০ সালের শুভ নববর্ষ। আমাদের বাঙ্গালী স্বত্বা জাগ্রত থাকুক। আবহমান যে আমাদের সংস্কৃতি সেটা অটুট থাকুক, অক্ষুন্ন থাকুক।
অতিরিক্তি বিভাগীয় কমিশনার আবু জাফর বলেন, আবহমান বাংলার ঐতিহাসিক যে ঐতিহ্য বাংলানববন্ধ সেটা রংপুর বিভাগের সব জেলায় আনন্দঘন পরিবেশে পালিত হচ্ছে। সর্বক্ষেত্রে শান্তি এবং সবার জন্য মঙ্গল কামনা করছি।
এদিকে বর্ষবরণের সব আয়োজন নির্বিঘ্ন করতে নিরাপত্বা বলয় তৈরি করেছে আইনশৃংখলাবাহিনী। রংপুর মহানগরীর পাবলিক লাইব্রেরী মাঠ, জিলা স্কুলসহ প্রতিটি মোড়ে মোড়ে অতিরিক্ত পুলিশ মোতায়েন করা হয়েছে।
রংপুর মেট্রোপলিটন পুলিশের উপ-পুলিশ কমিশনার (অপরাধ) আবু মারুফ হোসেন জানিয়েছেন, বর্ষবরণ উপলক্ষে রংপুর মেট্রোপলিটন এলাকাকে আমরা নিরাপত্বার চাদরে ঢেকে রেখেছি। গুরুত্বপুর্ন যেসব স্থাপনা আছে সেগুলোতে আমরা সিকিউরিটি নিশ্চিত করেছি। গোয়েন্দা নজরদারি বাড়ানো হয়েছে। বাঙ্গালীর ঐতিহ্যবাহি এই উৎসব যেন নগরবাসি আনন্দঘন পরিবেশে নির্বিঘ্নে করতে পারে সেজন্য আমরা সব ধরণের নিরাপত্বা ব্যবস্থা গ্রহন করেছি।
রংপুর রেঞ্জ ডিআইজি আবদুল আলীম মাহমুদ জানান, রেঞ্জের অধীনে বিভাগের আট জেলার প্রতিটি থানা থেকে বর্ষবরণের যেখানে আয়োজন সেখানে নিরাপত্বা ব্যবস্থা জোড়দার করা হয়েছে। শোভাযাত্রা, মেলা, খেলাধুলাসহ যেখানে আয়োজন, সেখানে সাদা পোশাকের পুলিশও মোতায়েন করা হয়েছে। বাতায়ন২৪ডটকম।।সমামা
Leave a Reply