স্টাফ করেসপনডেন্ট, রংপুর ও ঠাকুরগাঁও।। বাতায়ন২৪ডটকম।।
বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর ৫০ লাখ টাকার অনুদান নিয়ে বিদেশ ভ্রমন বিষয়ে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ফেসবুকে মিথ্যা প্রচারণার অভিযোগ রংপুর জেলা ছাত্রলীগের সাবেক সভাপতি এবং জেলা যুবলীগ নেতা মেহেদী হাসান রনির বিরুদ্ধে ৫০০ কোটি টাকার মামলার আবেদন করা হয়েছে। বৃহস্পতিবার ) ৩১ আগস্ট) দুপুরে ঠাঁকুরগাঁও অতিরিক্ত চীফ জুডিশিয়াল ম্যাজিষ্ট্রেট আদালতে এই মামলার আবেদন করেন আইনজীবি সমিতির সাধারণ সম্পাদক মোঃ জয়নাল আবেদীন।
ঠাঁকুরগাঁও চীফ জুডিশিয়াল আদালতের পেশকার আবুবক্কর সিদ্দিক জানান, বৃহস্পতিবার দুপুরে অতিরিক্ত চিফ জুডিশিয়াল আদালতের ম্যাজিস্ট্রেট বিচারক রমেশ কুমার দাগার আদালতে মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরের বিরুদ্ধে ফেসবুকে অনুদানের চেক নিয়ে বিদেশ ভ্রমণের মিথ্যা প্রচারণার অভিযোগে রংপুর জেলার পীরগঞ্জ উপজেলার বাজিতপুর গ্রামের আবু বক্করের পুত্র মেহেদী হাসান রনির বিরুদ্ধে ৫০০/৫০১ ধারায় একটি মামলা করেন। মামলাটি আমলে নিয়ে বিচারক পরবর্তীতে আদেশ দিবেন বলে জানান। মামলায় সরকারি অনুদানের চেক বিষয়ে ফেসবুকে মিথ্যা ও বানোয়াট প্রচারণা করে দেশ জাতি ও জনগণের কাছে হেয়প্রতিপন্নসহ বিএনপি মহাসচিব ও তার স্ত্রীর ব্যাক্তিগত ও রাজনৈতিক সম্মান ক্ষুন্ন করার অভিযোগ আনা হয়েছে। এতে ৫০০ কোটি টাকার ক্ষতি হয়েছে বলেও দাবি করা হয়েছে।
মামলার বাদীপক্ষের আইনজীবী ও ঠাকুরগাঁও জেলা আইনজীবী সমিতির সভাপতি আবদুল হালিম জানান, গত ২৭ আগস্ট মো. মেহেদী হাসান রনি তার নিজস্ব ফেসবুক আইডিতে বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরের নামে ‘সাব্বাস ফখরুল, নামেও মিছা ফখরুল, কামেও মিছা ফখরুল’ লিখে পোস্ট দেন। একই পোস্টে তিনি উল্লেখ করেন, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ত্রাণ তহবিল থেকে ৫০ লাখ টাকা নিয়ে সিঙ্গাপুরে গেছেন মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। সেই সঙ্গে একটি ভুয়া চেকের ছবি এবং মির্জা ফখরুল ও তার স্ত্রীর ছবি সংযুক্ত করে দেন। যা ফেসবুকে ভাইরাল হয়। তার এমন বানোয়াট স্ট্যাটাসে মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর এবং তার স্ত্রী, দেশ, জাতি ও জনগণের কাছে হেয় প্রতিপন্ন হয়েছেন। তাতে মামলার ভিকটিমের প্রায় ৫০০ কোটি টাকার মানহানি হয়েছে। ইতোমধ্যেই বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল বা তার স্ত্রী সরকারের কাছ থেকে এমন কোনো চেক নেননি। বিএনপির মহাসচিব এ ঘটনা অস্বীকার করে প্রতিবাদ জানিয়েছেন।
এই আইনজীবি আরও জানান, ‘বিএনপি যেহেতু ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনের বিরুদ্ধে লড়াই করছে। তাই আমরা প্রকৃত আইনে মামলা করেছি। এ মামলায় ফাইলিং ও আইনজীবী হিসেবে ঠাকুরগাঁও বারের ও আইনজীবী ফোরামের আইনজীবীগণ পাশে আছে। বিএনপি মহাসচিব এশিয়ার একজন বড় নেতা। তার নামে যে অপপ্রচার চালানো হয়েছে, সেটি সরকারের ষড়যন্ত্র ও নীল নকশা।’
মামলার বাদি ঠাকুরগাঁও আইনজীবী সমিতির সাধারণ সম্পাদক ও জেলা বিএনপির মানবাধিকার বিষয়ক সম্পাদক জয়নাল আবেদীন জানান,‘ বিএনপির মহাসচিব একজন স্বচ্ছ রাজনৈতিক নেতা, যিনি নিজের জমি বিক্রি করে রাজনীতি করছেন ও সংসার চালাচ্ছেন। ফেসবুকে তার নামে ভুয়া স্ট্যাটাস নোংরা রাজনীতির বহিঃপ্রকাশ। আমরা মনে করি সরকারের মদদপুষ্ট হয়ে বিএনপিকে হেয় প্রতিপন্ন করার উদ্দেশ্যে এমনটা করা হয়েছে। তাই আমরা আদালতে মামলা করেছি। বিচারক আবেদনটি গ্রহণ করে পরে আদেশ দেবেন বলে জানিয়েছেন।’
বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরের ব্যক্তিগত সচিব এম ইউনুস আলী জানান, চিকিৎসা করাতে গত ২৪ আগস্ট সিঙ্গাপুরে গিয়েছেন বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। তার স্ত্রী রাহাত আরা বেগম ও মেয়ে মির্জা সাফারুহ সাথে আছেন। ঘাড়ের স্নায়ুতে ব্লকসহ বিভিন্ন স্বাস্থ্য সমস্যার জন্য ফখরুলকে সিঙ্গাপুরের মাউন্ট এলিজাবেথ হাসপাতালে চিকিৎসা দেয়া হবে। এ ছাড়া বিএনপি নেতার স্ত্রীর ন্যাশনাল ইউনিভার্সিটি হাসপাতালের একজন চিকিৎসকের সঙ্গে অ্যাপয়েন্টমেন্ট রয়েছে।
এব্যপারে রংপুর জেলা ছাত্রলীগের সাবেক সভাপতি ও জেলা যুবলীগ নেতা মেহেদী হাসান রনির সাথে যোগাযোগ করা হলে তিনি এ বিষয়ে কোন মন্তব্য করতে রাজি হননি।
প্রসঙ্গত: কয়েকদিন আগে সামাজিক মাধ্যমগুলোয় একটি চেকের ছবি ছড়িয়ে পড়ে,যেখানে দেখা যায়, প্রধানমন্ত্রীর ত্রাণ তহবিল থেকে বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরের নামে ৫০ লাখ টাকার একটি চেক ইস্যু করা হয়েছে। সেখানে মির্জা ফখরুল এবং তার স্ত্রীর ছবি দিয়ে দাবি করা হয়েছে, প্রধানমন্ত্রীর ত্রাণ তহবিল থেকে চিকিৎসা সহায়তা নিয়ে তিনি বিদেশে গিয়েছেন। সোনালী ব্যাংকের চেকটিতে তারিখ দেওয়া হয়েছে ২০ আগস্টের। টাকার পরিমাণ উল্লেখ করা হয়েছে ৫০ লাখ। চেকটিতে সিলসহ দুজনের সইও আছে। এই চেকটি সারাদেশের হাজার আওয়ামীলীগ এবং অঙ্গ ও সহযোগি সংগঠনের নেতাকর্মীরা শেয়ার ও পোস্ট করেন।
ভাইরাল হওয়া ওই চেক সম্পর্কে সিঙ্গাপুর থেকে মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর গণমাধ্যমকে বলেন, ‘ এটা আওয়ামী লীগের পরিকল্পিত প্রোপাগান্ডা। দেশের মানুষকে বিভ্রান্ত করার জন্য, নেতাকর্মীদের মনোবল ভেঙ্গে দেয়ার জন্য তারা পরিকল্পিতভাবে এসব করছে। তাদের কাজই মানুষের চরিত্র হনন করা। দেশের মানুষও সেটা জানে, তাদের কোন প্রোপাগান্ডাই মানুষ বিশ্বাস করে না। কিন্তু নিঃসন্দেহে পুরো বিষয়টি খুবই বিব্রতকর।’
পরে এই চেকের সত্যতার বিষয়ে প্রধানমন্ত্রীর প্রেস উইংয়ের ডিপিএস হাসান জাহিদ তুষার গণমাধ্যমকে বলেন, ‘এটি সত্য নয়।’
এছাড়াও বিষয়টি নিয়ে আওয়ামী লীগের তথ্য ও গবেষণা সম্পাদক সেলিম মাহমুদ সংবাদমাধ্যমকে বলেছেন, ‘এই চেকের ছবির ঘটনার সঙ্গে আওয়ামী লীগের কোনরকম কোন সম্পর্ক নেই।’
Leave a Reply