স্পেশাল করেসপনডেন্ট, রংপুর
বাতায়ন২৪ডটকম।। রংপুর সিটি করপোরেশন নির্বাচনের বর্তমান মেয়র মোস্তাফিজার রহমান মোস্তফাকে আবারও জাতীয় পার্টির লাঙ্গল প্রতিকের প্রার্থী হিসেবে চুড়ান্ত মনোনয়ন দিয়েছে জাতীয় পার্টি। ২০১৭ সালে লাঙ্গল প্রতীক নিয়ে মোস্তফা প্রতিদ্বন্দ্বি প্রার্থীর চেয়ে ১ লাখ ভোট বেশি পেয়ে মেয়র নির্বাচিত হয়েছিলেন। তিনি দলটির প্রেসিডিয়াম সদস্য এবং রংপুর মহানগর সভাপতি। চুড়ান্ত প্রার্থীতা পত্র পাওয়ায় নেতাকর্মীদের মধ্যে স্বস্তি বিরাজ করছে।
রোববার (১৩ নভেম্বর) দুপুর ১২ টায় ঢাকার জাতীয় পার্টির বনানীয় কার্যালয়ে দলটির মহাসচিব মুজিবুল হক চুন্নু চুড়ান্ত প্রার্থী এবং লাঙ্গল প্রতীকের মনোনয়ন পত্র হস্তান্তর করেন। প্রার্থী মোস্তফার পক্ষে নির্বাচন পরিচালনা কমিটির আহবায়ক এবং রংপুর মহানগর জাতীয় পার্টির সাধারণ সম্পাদক এসএম ইয়াসীর, সদস্য সচিব আনিছুর রহমান আনিছ প্রার্থিতা পত্র গ্রহণ করেন। এসময় কেন্দ্রীয় নেতৃবৃন্দ উপস্থিত ছিলেন।
চুড়ান্ত প্রার্থিতা পত্র হস্তান্তর করে জাতীয় পার্টির মহাসচিব মুজিবুল হক চূন্ন বলেন, মোস্তফা জাতীয় পার্টির প্রেসিডিয়াম সদস্য এবং জাতীয় পার্টির পরীক্ষিত নেতা। শুধু জাতীয় পার্টির রংপুরের নেতা কর্মীরাই নয়, আপামর জনসাধারণ তার ওপর আস্থা রাখে। ইতিমধ্যেই মেয়র হিসেবে তিনি সেবা এবং উন্নয়নে সারা বাংলাদেশের মধ্যে রোলমডেল তৈরি করেছেন। জাতীয় পার্টির পক্ষ থেকে আসন্ন রংপুর সিটি নির্বাচনে তাকে আবারও দলীয় মনোনয়ন এবং লাঙ্গল প্রতীক দেয়া হলো। আমরা আশা করি বিগত সময়ের চেয়ে আরো অধিক ভোটে তিনি নির্বাচিত হবেন। এ সংক্রান্ত দলের মনোনয়ন ও প্রত্যয়নপত্র আমরা মোস্তফার নির্বাচন পরিচালনা কমিটির কাছে হস্তান্তর করেছি।
চুন্নু জানান, নির্বাচন কমিশনকে অবাধ এবং সুষ্ঠু ভোট নিশ্চিত করতে হবে। কোন ধরনের কারচুপি কিংবা ভিন্নপন্থা অবলম্বন করার চেষ্টা করা হলে জাতীয় পার্টি এবং রংপুরের মানুষ সেটা মানবে না। যেকোন ধরণের ষড়যন্ত্র রুখে দেয়ার প্রস্তুতি রয়েছে আমাদের।
জাতীয় পার্টি সূত্র জানায়, ঘোষিত তফশিল অনুযায়ী ৭ দিনের মধ্যে রাজনৈতিক দল থেকে প্রার্থীতা নিশ্চিত করার অংশ হিসেবে জাতীয় পার্টিকে ( নিবন্ধন নং-১২) আনুষ্ঠানিকভাবে গত ৮ নভেম্বর নির্বাচন কমিশন সচিবালয়ের সিনিয়র সহকারী সচিব (নিঃসঃ-১) রৌশন আরা বেগম স্বাক্ষরিত পত্র দেয়া হয় ( স্মারক নং—১৭.০০.০০০০.০২৫.৪৪.০০১.১৬ (অংশ-১)-৪২৬) । সেই পত্রের আলোকে গত ১২ নভেম্বর জাতীয় পার্টি নির্বাচন কমিশনে ফিরতি চিঠি দিয়ে জানায় স্থানীয় সরকার ( সিটি কর্পোরেশন) নির্বাচন বিধিমালা ২০১০ এর বিধি ১২ উপবিধি(৩) এর দফা (গ) উপদফা (ইইই) অনুযায়ী মেয়র প্রার্থী নির্বাচনে জাতীয় পার্টির ক্ষমতাপ্রাপ্ত ব্যক্তি হিসেবে দলের প্রার্থী মনোনয়ন ও প্রতীক বরাদ্দ করবেন মহাসচিব মোঃ মুজিবুল হক চুন্নু। চিঠির সাথে তার নমুনা স্বাক্ষরও সংযুক্ত করা হয়। ওই চিঠি রংপুর সিটি করপোরেশন নির্বাচনের রিটার্নিং কর্মকর্তাসহ সংশ্লিষ্ট দপ্তরে জমা দেয়া হয়। সেই ক্ষমতাবলে জাতীয় পার্টির মহাসচিব রোববার (১৩ নভেম্বর) মোস্তাফিজার রহমান মোস্তফাকে দলীয় মনোনয়ন ও প্রতীক বরাদ্দ দিয়ে পত্র হস্তান্তর করেছেন।
বিকেল চার টায় চুড়ান্ত প্রার্থীতা মনোনয়নপত্র নিয়ে রংপুর সিটি করোপোরেশনে আসেন জাতীয় পার্টির নির্বাচন পরিচালনা কমিটি। পরে সিটি করপোরেশনে পরিচালনা কমিটি মোস্তফার হাতে দলের প্রার্থীতা মনোনয়ন পত্র তুলে দেন। এসময় সেখানে জাতীয় পার্টির বিভিন্ন পর্যায়ের নেতাকর্মীরা উপস্থিত ছিলেন।
জাতীয় পার্টির চূড়ান্ত প্রার্থিতা পেয়ে আল্লাহর কাছে কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করে মোস্তাফিজুর রহমান মোস্তফা বলেন, দল আমার ওপর আস্থা রেখে আমাকে আবারও রংপুর সিটি করপোরেশন নির্বাচনে চূড়ান্ত প্রার্থিতা পত্র দিয়েছে। এই দলীয় সিদ্ধান্তটি আগেই চুড়ান্ত করা ছিল। এ জন্য দলের চেয়ারম্যান এবং মহাসচিব, সকল কো চেয়ারম্যান, প্রেসিডিয়াম সদস্যসহ দলের সকল স্তরের নেতাকর্মীর কাছে আমি কৃতজ্ঞ। আমি বিশ্বাস করি দল আমার ওপর যে আস্থা রেখে আমাকে লাঙ্গল প্রতীকের প্রার্থী দিয়েছে, সেই সম্মান আমি রাখবো এবং আবারো সর্বোচ্চ ভোটে প্রয়াত এরশাদের লাঙ্গল প্রতীক এখানে নির্বাচিত হবে ইনশাল্লাহ। সেজন্য সকল ধরণের প্রস্তুতি আমরা সম্পন্ন করেছি। নির্বাচনী আচরণবিধি অনুযায়ী প্রতীক বরাদ্দ পাওয়ার সাথে সাথেই আমাদের রোডম্যাপ অনুযায়ী প্রচার প্রচারণা শুরু হবে। তিনি বলেন, এখানে ইভিএমএ ভোট হওয়ার কারণে ভোটারদের জন্য তা চ্যালেঞ্জ। এখানকার ৯৮ ভাগ মানুষই ইভিএম সম্পর্কে অবহিত নন। সেকারণে আইনানুগ, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচনের স্বার্থে অবশ্যই নির্বাচন কমিশনকে ইভিএম সম্পর্কে মানুষকে জানাতে হবে। জিরো রেটিং পদ্ধতিটি পোলিং এজেন্টদের কাছে ভোটের দিন নিশ্চিত করতে হবে। মক ভোটিংয়ের মাধ্যমে ইভিএম বিষয়টি অবহিত করতে নির্বাচন কমিশনের পাশাপাশি জাতীয় পার্টির নেতাকর্মীরা মাঠে কাজ করবে।
মোস্তফার নির্বাচন পরিচালনা কমিটির আহবায়ক এসএম ইয়াসীর জানান, মহাসচিব লাঙ্গলের প্রার্থী হিসেবে আমার হাতে মোস্তাফিজার রহমান মোস্তফাকে চুড়ান্ত মনোনয়ন দিয়ে তার স্বাক্ষর যুক্ত করে পত্র দিয়েছেন। এরমাধ্যমে জাতীয় পার্টির অফিসিয়াল কাজ সম্পন্ন হলো। এরপর যদি কেউ লাঙ্গল প্রতীকের দাবিদার করে তিনি অবৈধ হবেন। তিনি বলেন, নির্বাচন কমিশন কিংবা সরকার যদি এই সিটির ভোটে সামান্য পরিমানও কারচুপি করার চেস্টা করে তা হলে রংপুর থেকেই সরকার পতনের আন্দোলনে যাবে জাতীয় পার্টি। তিনি বলেন, চুড়ান্ত প্রার্থীতা পাওয়ায় রংপুরের নেতাকর্মী ও সাধারণ মানুষের মধ্যে স্বস্তি ফিরে এসেছে।
নির্বাচন পরিচালনা কমিটির যুগ্ম আহবায়ক ও জেলা জাতীয় পার্টির সদস্য সচিব হাজী আব্দুর রাজ্জাক বলেন, রংপুর সিটির ভোট হবে একটি ব্যতিক্রমী ভোট। গতবারের চেয়েও দেড়গুন বেশি ভোটে লাঙ্গলের প্রার্থী বিজয়ী হবে। মোস্তফাকে চুড়ান্ত প্রার্থীতা করে পত্র পাওয়ায় আমরা নেতাকর্মীরা উল্লসিত, অভিভূত এবং উচ্ছসিত। আমাদের এখন একটাই টার্গেট কিভাবে সর্বোচ্চ ভোট পেয়ে নির্বাচিত হবো সেই লক্ষে কাজ করা।
নির্বাচন পরিচালনা কমিটির সদস্য সচিব আনিছুর রহমান আনিছ জানান, জাতীয় পার্টি মোস্তফাকে চুড়ান্ত প্রার্থীতা মনোনয়ন পত্র দেয়ায় নেতাকর্মী ছাড়াও সাধারণ ভোটারদের মধ্যে স্বস্তি বিরাজ করছে। সবাই এখন একাট্রা হয়ে ভোট দেয়ার জন্য অপেক্ষা করছে।
আগামী ২৭ ডিসেম্বর অনুষ্ঠিত হবে এই সিটি ভোট। ২৯ নভেম্বর মনোনয়ন পত্র দাখিলের শেষ দিন। ৮ডিসেম্বর প্রার্থীতা প চুড়ান্ত করা হবে। মেয়র পদে জাতীয় পার্টির একক প্রার্থী হলেও আওয়ামীলীগের ৫ জন প্রার্থী দলীয় মনোনয়নের জন্য তদবির করছে।এছাড়াও স্বতন্ত্র পদে ৪জন প্রচার-প্রচারণা চালাচ্ছেন। মোস্তফা তৃতীয় বারের মতো মেয়র নির্বাচনে অংশ নিচ্ছেন।
বাতায়ন২৪ডটকম।।সমামা
Leave a Reply