শনিবার, ০৩ Jun ২০২৩, ১১:৪৬ অপরাহ্ন

সংবাদ শিরোনাম :
কালীগঞ্জে ফেনসিডিল, এসকাপ সিরাপসহ আটক ১ দীর্ঘ ৪০ বছর পর খুলে দেওয়া হয়েছে রংপুর হাসপাতালের দক্ষিণ দিকের গেট রংপুরের বদরগঞ্জে ভিন্ন ভিন্ন ভাবে পালিত হল জিয়াউর রহমানের ৪২ তম শাহাদাৎবার্ষীকি কালীগঞ্জে মাদক বিরোধী প্রচারণামূলক প্রীতি ফুটবল ম্যাচ অনুষ্ঠিত বাংলার বুকে এক টুকরো লুসাই গ্রাম, প্রবেশ ফি ৩০ টাকা অনিয়ম ও দূর্নীতির অভিযোগের কারণে নয়,নাম ও রোল নম্বর ভুলের কারণে পরীক্ষা ফলাফল স্থগিত করা হয়েছে। ভাড়া নিয়ে বিতর্কে রোকেয়া ভার্সিটির শিক্ষার্থীকে মারধোর, প্রতিবাদে সড়ক অবরোধ-বিক্ষোভ বদরগঞ্জে নদীতে ডুবে বৃদ্ধের মৃত্যু পুলিশের বেঁধে দেয়া রুটেই বিএনপির পদযাত্রায় নেতাকর্মীদের ঢল রংপুরে ভিশন স্পেশালাইজড হাসপাতালে ভুল অপারেশনে যুবকের মৃত্যুর অভিযোগ
প্রেমিকের বিরুদ্ধে গর্ভপাত না করায় নির্যাতনে মৃত্যুর অভিযোগ:পৌনে ৭ মাস পর তোলা হলো তরুণীর লাশ

প্রেমিকের বিরুদ্ধে গর্ভপাত না করায় নির্যাতনে মৃত্যুর অভিযোগ:পৌনে ৭ মাস পর তোলা হলো তরুণীর লাশ

স্পেশাল করেসপনডেন্ট, রংপুর।। বাতায়ন২৪ডটকম।।

কবর থেকে এক তরুনীর লাশ উত্তোলন করা হলো দাফনের ৬ মাস ১৯ দিন পর। অভিযোগ, প্রেমের সম্পর্কের জেরে অন্ত:স্বত্বা ছিলেন তরুণী। গর্ভপাতে রাজি না হওয়ায় হত্যার পর তার মুখে বিষ ঢেলে আত্মহত্যা বলে চালিয়ে তড়িঘড়ি করে লাশ দাফন করানোর ব্যবস্থা করেছিল প্রেমিক জিয়াদ ও তার পরিবার। সিআইডি জানিয়েছে পোস্টমোর্টেম প্রতিবেদনের পর নেয়া হবে ব্যবস্থা। স্বজন ও এলাকাবাসির দাবি ঘটনার রহস্য উম্মোচন করে দোষিদের শাস্তির ব্যবস্থা করা হোক। সোমবার ( ২০ মার্চ) সকালে তার লাশ উত্তোলন করে ময়না তদন্তে সন্ধায় আবারও দাফন করা হয়।

 

অপরাধ তদনন্ত বিভাগ –সিআইডির রংপুর অফিসের পরিদর্শক সামসুল ইসলাম জানান, স্বামীর সাথে ছাড়াছাড়ি হওয়র পর রংপুর মহানগরীর পূর্ব খাসবাগ এলাকার বাসিন্দা সাহিনা বেগম পাশেই বেলাল হোসেনের বাড়িতে বাড়িতে কন্যা বর্ষা ও পুত্র বাধনকে ভাড়ায় রেখে ঢাকায় পাসপোর্ট অফিসে আয়ার কাজ করতেন। গেলো বছর ৯ ফেব্রুয়ারী ওই বাসাতেই মারা যায় বর্ষা। এ ঘটনায় একটি ইউডি মামলা করে থানা পলিশ। পরে দেয়া হয় ফাইনাল রিপোর্ট। কিন্তু পরবর্তিতে তার মা সাহিনা বেগম স্থানীয় রিপন মিয়ার পুত্র জিয়াদ হোসেনসহ ৬ জনের বিরুদ্ধে নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইবুনালে ধর্ষন ও হত্যার মামলা করেন। আদালত মামলাটি  তদন্তের ভার দেয় সিআইডিকে। সিআইডি তদন্ত শুরু করলে দেখা যায়, লাশ পোস্ট মোর্টেম না করেই দাফন করা হয়েছে। আদালতের আদেশের রংপুর জেলা প্রশাসনের নির্বাহী ম্যাজিষ্ট্রেট মলিহা খানমের উপস্থিতিতে দুপুর সাড়ে ১২ টায় লাশ কবর থেকে উত্তোলন করে ময়না তদন্তের জন্য রংপুর মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের মর্গে পাঠানো হয়। সেখান থেকে ময়না তদন্ত শেষে সন্ধায় আবারও লাশ দাফন করা হয়।

 

সিআইডির এই কর্মকর্তার আরও জানান,  বর্ষা ও জিয়াদের মোবাইলে কনভারশেসন,, ভিডিও,  অডিও আমরা জব্দ করেছি।  ময়না তদন্ত প্রতিবেদন পাওয়ার পর আমরা চার্জশিট দাখিল করবো। মেয়েটি অন্তঃসত্বা ছিল কিনা, তাকে নির্যাতন করে হত্যা করা হয়েছে কিনা কিংবা গর্ভপাত ইস্যুতে তাকে অত্যাচার করে আত্মহত্যায় প্ররোচিত করা হয়েছে কিনা, সব বিষয়ে আমরা তদন্ত করিছি। ময়না তদন্তের রিপোর্টের এসব জানা যাবে। আমরা ভ্যাজাইনাল সওয়াবসহ সকল ধরণের পরীক্ষা করবো।

 

নির্বাহী ম্যাজিষ্ট্রেট মলিহা খানম জানান, আদালতের নির্দেশে আমার উপস্থিতিতে লাশ উত্তোলন, ময়না তদন্ত ও দাফন কার্য সম্পন্ন করা হয়েছে। ময়না তদন্তের প্রতিবেদনের পর বিষয়গুলো সুস্পস্টভাবে বলা যাবে। তদন্তে কোন গাফিলতি হবে না।

 

বর্ষার মা সাহিনা বেগম জানান, আমি ঢাকায় চাকরি করার সময় ফোনে বর্ষা আত্মহত্যা করেছে বলে খবর পাই। ঘটনাস্থলে উপস্থিত হলে জিয়াদের পরিবার ও পুলিশও জানায় আত্মহত্যা করেছে। তখন আমি উপায়ন্তর না পেয়ে লাশ বিনা ময়না তদন্তে দাফনের অনুমতি দেই। দাফনের পর আমি আমার মেয়ের মোবাইল ফোনে জিয়াদের সাথে অন্তরঙ্গ মুহুর্ত ও কথোপোকথন এবং বিভিন্ন ছবি দেখতে পাই। তখন মোবাইলটি সেখানে আসা এসআই গনেশ চন্দ্রকে দেয়া হয়।

হাসিনা আরও জানান, এরমধ্যে আমি আমার মেয়ের মোবাইল ফোন সার্স এবং বিভিন্নভাবে জানতে পারি ভাড়াটিয়ার নাতি জিয়াদের সাথে আমার মেয়ের প্রেমের সম্পর্ক গড়ে ওঠে। তারা শারীরিক মেলামেশার প্রেক্ষিতে আমার মেয়ে ৫মাসের অন্ত:স্বত্বা হয়। তখন জিয়াদ ও তার পরিবার  বর্ষাকে গর্ভপাত করার চাপ দেয়। যারা আমার মেয়েকে গোসল করিয়েছেন তারাও জানান, আমার মেয়ের পিঠে অনেক আঘাতের চিহ্ন ছিল এবং অন্তঃস্বত্বা ছিল। কিন্তু জিয়াদ ও তার পরিবার সেসময় বিষয়টি ধামাচাপা দিযে পুলিশের সহযোগিতায় দ্রুত ঘটনাটিকে আত্মহত্যা হিসেবে চালিয়ে দাফনের ব্যবস্থা করে।  বিষয়গুলো জানার পর আমি ৩ দিন পর থানায় গিয়ে মামলা করতে গেলে নেয়নি পুলিশ। বরং আমার মেয়ের মোবাইল পুলিশের কাছ থেকে এনে দেখি তাতে সব ছবি ডিলিট করা। পরে আমি বিষয়টি স্থানীয় কাউন্সিলরকে জানাই। তিনিও কোন সুরাহা দেন নি। মাস দেরেক পর আমি আদালতে মামলা করি।

সাহিনা বেগম জানান, আমার মেয়ে গর্ভপাতে রাজি না হওয়ার কারণে তাকে নির্যাতন করে হত্যার পর মুখে বিষ ঢেলে দেয়া হয়েছে। জিয়াদ ও তার পরিবার ঘটনাটি ধামাচাপা দিতেই পুলিশের সহযোগিতায় লাশ তড়িঘড়ি করে দাফন করেছে। এখন এর উপযুক্ত বিচার আমি চাই।

বর্ষার খালা পারুল বেগম( ৪০) জানান, বর্ষার মৃত্যুও খবর পেয়ে যখন আমরা ঘটনাস্থলে যাই। তখন উল্টা পুলিশ বলে যে মা, ছেলে ও খালারা মিলে বর্ষাকে হত্যা করেছে। ওদের হ্যানকাপ লাগাও। তখন আমরা আর কোন কথা বলতে পারি নি। ওরা বর্ষার লাশ দাফন করেছে। কিন্তু জিয়াদেও সাথে যে প্রেমের সম্পর্ক ছিল, ৫ মাসের গর্ভবতি ছিল বর্ষা, গর্ভপাতের জন্য তার ওপর টর্চার চলছিল। সেটা আমরা সবাই জানি।

তবে ঘটনার দিন লাশ দাফনের সময় উপস্থিত পুলিশ কর্মকর্তা মেট্রোপলিটন কোতয়ালী থানার এসআই গণেশ চন্দ্র জানান, তাৎক্ষণিকভাবে বর্ষার পরিবারের দাবিতেই ময়না তদন্ত না করে দাফনের অনুমতি দেয়া হয়েছিল। তখন বর্ষার মায়ের কোন অভিযোগ ছিল না। এছাড়াও আমরা মোবাইল জব্দ করেছিলাম। ঠিক সেভাবেই দিয়েছি। কোন কিছুই ডিলিট করা হয় নি। যদি ডিলিট করাে হতো তাহলে ভিডিও, ওডিও এবং কথোপকথন কিভাবে পাওয়া গেলো। তিনি জানান, ঘটনার সময় একটি ইউডি মামলা হয়েছিল।

 

বর্ষার খালাতো ভাই সামিউর রহমান সবুজ জানান, সেদিন যখন পুলিশ মোবাইল নিয়ে যায়, তার আগে আমি মোবাইলের কথোপকথনের স্ক্রীণ শট, ওডিও এবং ভিডিওগুলো আমার মোবাইলে ট্রান্সফফর করে নেই। কিন্তু পুলিশ যেদিন মোবাইল দেয় সেদিন আর সেগুলো ছিল না। পরবর্তীতে আমরা স্নাপচ্যাট এবং ড্রাইভ থেকে আবারও রিকভারি করে সেগুলো মামলার সাথে সিডি কওে দিয়েছে। এছাড়াও সিআইডিকে সব সিডি করে দেয়া হয়েছে। পুলিশ কেন এমনটা করেছে সেটা আমরা জানি না।অ

 

বর্ষার রহস্যজনক মৃত্যুতে ক্ষুব্ধ স্বজন ও এলাকাবাসি। প্রকৃত ঘটনা উম্মোচন এবং দোষিদের শাস্তি চান তারা। খালাতো ভাাই আতিকুল ইসলাম, প্রতিবেশী, জাহেদা খাতুন, আকলিমা বেওয়া জানান, এই ঘটনার সঠিক বিচার হতে হবে। তা না হলে মেয়েরা নিরাপদ থাকবে না।

 

লাশ উত্তোলনের সময় উপস্থিত বর্ষার খালা সালমা বেগম জানিয়েছেন, সিআইডি যখন লাশ উত্তোলন করার জন্য যায়, তখন এ ঘটনায় করা মামলার ৪ নম্বর আসামী সিরাজ উদ্দিন কোদাল নিয়ে কবরস্থানে আসেন এবং নিজেকে ডোম পরিচয় দেন। কিভাবে একজন আসামী কবরস্থানে আসে এবং নিজেকে ডোম পরিচয় দিয়ে করব খোড়ে, তাতে তাদের কি উদ্দেশ্য এটা আমরা বুঝতে পারছি না। আমরা ঘটনার সঠিক এবং নিরপেক্ষ তদন্ত সাপেক্ষে জিয়াদসহ জড়িতদের ফাঁসির দাবি জানাই।

আসামীর কবর খোড়া প্রসঙ্গে সিআইডির পরিদর্শক সামসুল ইসলামের সাথে যোগাযোগের চেস্টা করা হলেও তাকে পাওযা যায় নি।

বাতায়ন২৪ডটকম।।সমামা

দয়া করে নিউজটি শেয়ার করুন..

Leave a Reply

Your email address will not be published.




© All rights reserved 2022 batayon24
Design & Developed BY ThemesBazar.Com