বুধবার, ২৯ মার্চ ২০২৩, ১২:০৫ পূর্বাহ্ন

পঞ্চগড় ক্যাশলেস সিস্টেম চালু

পঞ্চগড় ক্যাশলেস সিস্টেম চালু

স্টাফ করেসপনডেন্ট, পঞ্চগড়।। বাতায়ন২৪ডটকম।।

ডিজিটাল লেনদেন হিসেবে ঢাকার পর ক্যাশলেস যুগে প্রবেশ করলো পঞ্চগড়। তেঁতুলিয়ার তিরনইহাট ইউনিয়নে এই সেবা চালু হয়েছে। এর মধ্য দিয়ে স্মার্ট বাংলাদেশে যুক্ত হয়েছে প্রান্তিক উপজেলার এ ইউনিয়ন পরিষদ। পর্যায়ক্রমে এ উপজেলার সাতটি ইউনিয়ন পরিষদে যুক্ত হচ্ছে ক্যাশলেস সেবা। এর মাধ্যমে সেবা গ্রহীতারা ২০টি সেবা অতি সহজে গ্রহণ করতে পারবেন।

চলতি মাসের ৬ জানুয়ারি জেলা প্রশাসক মো.জহুরুল ইসলামের সভাপতিত্বে তিরনইহাট ইউনিয়ন পরিষদে ক্যাশলেস সেবাটির আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন করেন রংপুর বিভাগের কমিশনার সাবিরুল ইসলাম বিপ্লব। উদ্বোধনের পর এখন পর্যন্ত প্রায় এক হাজার সেবা গ্রহীতারা ক্যাশলেসের মাধ্যমে তাদের কাঙ্ক্ষিত সেবা গ্রহণ করেছেন। এ ইউনিয়ন থেকে ডিজিটাল সেবা নিয়েছেন ৫ হাজার মানুষ। ডিজিটাল লেনদেনের এ সেবাটির উদ্যোক্তা হিসেবে কাজ করছেন তেঁতুলিয়া উপজেলা নির্বাহী অফিসার সোহাগ চন্দ্র সাহা। তিনি ‘ডিজিটাল ইউনিয়ন ট্যাক্স ও সেবা সিস্টেম’ বাস্তবায়ন করে ২০২১ সালে বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক সম্মেলন কেন্দ্রে (বিআইসিসি) অনুষ্ঠানে ডিজিটাল বাংলাদেশ পুরস্কার পান।

ইউনিয়ন পরিষদে ‘ট্রেড লাইসেন্স, চারিত্রিক সনদ, নাগরিকত্ব সনদ, ভূমিহীন সনদ, ওয়ারিশান সনদ, উত্তরাধিকার সনদ, অবিবাহিত সনদ, বিভিন্ন ধরণের প্রত্যয়নপত্র, আর্থিক অসচ্ছলতার প্রত্যয়ন, বিভিন্ন লাইসেন্সের মধ্যে ট্রেড লাইসেন্স, অগভীর নলকূপ স্থাপন লাইসেন্স, অযান্ত্রিক যানবাহনের (রিকশা, ভ্যান এবং বাইসাইকেল) লাইসেন্স প্রদানসহ নানাবিধ নাগরিক সেবা প্রদান করে থাকে। এর পাশাপাশি বিভিন্ন ধরনের কর (হোল্ডিং ট্যাক্স, রপ্তানী কর, পেশাবৃত্তি কর ইত্যাদি) আদায় করে থাকে। এসব সেবা নিতে সেবাগ্রহীতারা এখন থেকে তাদের মোবাইল থেকে নগদ/বিকাশ এর মতো ক্যাশলেসের মাধ্যমে ফি পেমেন্ট করে সেবা নিতে পারছেন।

তিরনইহাট ইউনিয়ন পরিষদে গিয়ে দেখা যায়, জন্মসনদ, ট্রেডলাইসেন্স সেবা নিতে আসা সেবাগ্রহীতারা ক্যাশলেসের মাধ্যমে সেবা নিচ্ছেন। রওশনপুর এলাকার রবিউল ইসলাম বলেন, আমি এ ইউনিয়ন পরিষদে জন্মসনদ সংশোধন করতে এসেছিলাম। কোনো প্রকার ঝামেলা ছাড়াই ক্যাশলেসের মাধ্যমে ফি পেমেন্ট করে সেবাটি গ্রহণ করলাম। খুব ভালো লাগলো সার্ভিসটি।

ইউপি সচিব হারুন অর রশিদ বলেন, ইউনিয়ন পরিষদের ক্যাশলেস সেবার প্রযুক্তির বিশেষ উদ্ভাবনী উদ্যোগ নির্বাহী অফিসার সোহাগ চন্দ্র সাহা মহোদয়ের। তিনি ‘ডিজিটাল ইউনিয়ন ট্যাক্স ও ক্যাশলেস ইউপি সেবা সিস্টেম’ চালু করেছেন। গত ৬ জানুয়ারি আনুষ্ঠানিকভাবে আমাদের তিরনইহাট ইউনিয়ন পরিষদ দিয়ে শুরু হয়েছে ক্যাশলেস সেবার কার্যক্রম। ই-ক্যাশলেস সেবার যে সুবিধা অনলাইন ডিজিটাল সিস্টেমে পাঁচ হাজারের অধিক নাগরিককে সুবিধা দিতে পেরেছি। ক্যাশলেস সেবার মাধ্যমে প্রায় এক হাজার সেবা গ্রহীতা সেবাগ্রহণ করেছেন। ক্যাশলেসের সুবিধা হচ্ছে এখন আর হাতে হাতে টাকা বা ক্যাশ পেমেন্ট করতে হয় না। নাগরিকরা তাদের মোবাইল থেকেই নগদের মতো কিউআর কোডে স্ক্যান করে পেমেন্ট করতে পারে। তাই কোনো ঝামেলা নেই, প্রতারণারও সুযোগ নেই।

ইউপি চেয়ারম্যান আলমগীর হোসাইন বলেন, আমার ২নং ইউনিয়ন পরিষদ। গত ৬ জানুয়ারিতে বিভাগীয় কমিশনার মহোদয়ের উপস্থিতিতে দেশের প্রথম ইউনিয়ন পরিষদ হিসেবে আমার ইউনিয়ন থেকেই ক্যাশলেস সেবা চালু হয়ে স্মার্ট ইউনিয়নে প্রবেশ করেছে। আমি চেয়ারম্যান হওয়ার পর থেকে এ ইউনিয়নে ডিজিটাল সেবা চালু হয়েছে। এখন ক্যাশলেস সেবা চালুর মধ্য দিয়ে দেশের সর্বপ্রথম ইউনিয়ন স্মার্ট ইউনিয়ন পরিষদে প্রবেশ করলো। আশা করছি, ইউনিয়নের নাগরিকদের ডিজিটাল প্রযুক্তির মাধ্যমে আরও বেশি সেবা দিতে পারব। আর নাগরিকরা এখন থেকে ইউনিয়ন পরিষদের প্রদত্ত সেবা সমূহের ফি তাদের মোবাইল দিয়েই ই-ক্যাশলেসের মাধ্যমে পেমেন্ট করে নির্ভেজাল সেবা গ্রহণ করতে পারবেন।

ডিজিটাল উদ্যোগের প্রযুক্তি বিশেষজ্ঞ উপজেলা নির্বাহী অফিসার সোহাগ চন্দ্র সাহা বলেন, “বর্তমানে ইউনিয়ন পরিষদ জন্ম ও মৃত্যু সনদ, নাগরিকত্ব সনদ, চারিত্রিক সনদ, ভূমিহীন সনদ, ওয়ারিশান সনদ, উত্তরাধিকার সনদ, অবিবাহিত সনদপত্র, বার্ষিক আইয়ের প্রত্যয়ন, একই নামের প্রত্যয়ন অর্থিক অসচ্ছলতার প্রত্যয়নসহ বিভিন্ন ধরনের প্রত্যয়নপত্র এবং লাইসেন্স যেমন- ট্রেড লাইসেন্স, অযান্ত্রিক যানবাহনের (রিক্সা, ভ্যান এবং বাইসাইকেল) লাইসেন্স প্রদানসহ নানাবিধ নাগরিক সেবা প্রদান করে থাকে। পাশাপাশি বিভিন্ন ধরনের কর (হোল্ডিং ট্যাক্স, রপ্তানী কর, পেশাবৃত্তি কর ইত্যাদি) আদায় করে থাকে।

উদ্যোগটির প্রধান সমন্বয়কারী জেলা প্রশাসক জহুরুল ইসলাম বলেন, ডিজিটাল ইউনিয়ন ট্যাক্স ও ক্যাশলেস ইউপি সেবা সিস্টেম প্রকল্পটির মূল উদ্দেশ্য হচ্ছে, সেবা গহিতার সময়, ভ্রমণ, অতিরিক্ত খরচ শূন্যের নিয়ে আসা এবং গুণগত সেবা প্রদান করা। ইতোমধ্যে এই ডিজিটাল প্লাটফর্ম ব্যবহার করে তেঁতুলিয়া উপজেলার প্রায় ২৫ হাজার জনসেবা গ্রহীতা সেবা গ্রহণ করেছেন। সেবাগ্রহণে তাদের সময়, খরচ ভ্রমণ সাশ্রয় হয়েছে। ইউনিয়ন পরিষদ কর্তৃক প্রস্তুতকৃত সেবার (সনদ, রশিদ) কিউআর কোড থাকায় সেবার সঠিকতা ও নির্ভেজলতা যাচাই করা সম্ভব। এই উদ্যোগটি চালুর ফলে হয়রানীমুক্তভাবে সেবা প্রদান সম্ভব হচ্ছে।

বিভাগীয় কমিশনার সাবিরুল ইসলাম বলেন, সফটওয়ারটি উভয় প্রান্তে অর্থাৎ সেবা প্রদানকারী ইউনিয়ন পরিষদ এবং সেবা গ্রহণকারী সাধারণ নাগরিকের নিকট জনপ্রিয় হয়ে উঠেছে। ফলে উদ্যোগটি তেঁতুলিয়া উপজেলার একটি ইউনিয়ন থেকে পঞ্চগড় জেলার ৪৩টি (তেতাল্লিশ) ইউনিয়নে ছড়িয়ে পড়েছে। ডিজিটাল এবং ক্যাশলেস ইউনিয়ন সেবা সিস্টেম ‘ইউনিয়ন ট্যাক্স ডট গভ বিডি’ যেহেতু তেঁতুলিয়া উপজেলায় পাইলটিং সম্পন্ন হয়েছে, সেহেতু স্থানীয় সরকার, পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় মন্ত্রণালয়ের স্থানীয় সরকার বিভাগের মাধ্যমে সরকার সারাদেশের ইউনিয়ন পরিষদ, পৌরসভা এবং সিটি করপোরেশনে তা বাস্তবায়ন করতে পারেন ।

বাতায়ন২৪২৪ডটকম।।সেস/

দয়া করে নিউজটি শেয়ার করুন..

Leave a Reply

Your email address will not be published.




© All rights reserved 2022 batayon24
Design & Developed BY ThemesBazar.Com