স্টাফ করেসপনডেন্ট, রংপুর।। বাতায়ন২৪ডটকম।।
আগামী বাজেটে অর্থ বরাদ্দ দিয়ে তিস্তা অববাহিকার মানুষের জীবন-জীবিকা বাচাতে নিজস্ব অর্থায়নে মহাপরিকল্পনার কাজ শুরু এবং উজানে নতুন ২ খাল খননের উদ্যোগবন্ধসহ ৬ দফা দাবি বাস্তবাযনের দাবি জানিয়েছে তিস্তা বাঁচাও, নদী বাঁচাও সংগ্রাম পরিষদ।। তা না হলে সমাবেশের পর প্রয়োজনে তিস্তাপাড়ে আমরণ অনশনে বসবে বাসিন্দারা।
শনিবার (৮ এপ্রিল) সন্ধায় রাজারহাটের পাগলার দরগাহ দাবি আদায়ে আগামী ৬ মে মহা সমাবেশ সফল করতে বর্ধিত সভা ও ইফতার মাহফিল অনুষ্ঠানে এই দাবি জানান পরিষদের নেতারা।
পরিষদের সভাপতি অধ্যক্ষ নজরুল ইসলাম হক্কানীর সভাপতিত্বে এতে প্রধান অতিথির বক্তব্য রাখেন সংগ্র্রাম পরিষদের উপদেস্টা ও রংপুর সিটি মেয়র মোস্তাফিজার রহমান মোস্তফা, সাধারণ সম্পাদক সাফিয়ার রহমান,স্ট্যান্ডিং কমিটির সদস্য বখতিয়ার শিশির, রাজারহাট উপজেলা চেয়ারম্যান জাহিদ ইকবাল সরোয়ার্দী বাপ্পি, সাবেক উপজেলা চেয়ারম্যান আবু নূর মোহাম্মদ আকতারুজ্জামান, কুড়িগ্রাম জেলা ছাত্রলীগ সাধারণ সম্পাদক সাদ্দাম হোসেন নয়ন, ঘড়িয়াল ডাঙ্গা ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান আব্দুল কুদ্দুছ, সাবেক চেয়ারম্যান জনাব রবীন্দ্রনাথ কর্মকার সহ স্থানীয় নেতৃবৃন্দ। সভা পরিচালনা করেন সংগ্র্রাম পরিষদের নেতা সাজু সরকার।
সমাবেশে তিস্তা পাড়ের নদী ভাংগনে নিঃস্ব কয়েকশ মানুষ অংশ নেন।
এসময় প্রধান অতিথির বক্তব্যে পরিষদের উপদেস্টা ও রংপুর সিটি মেয়র মোস্তাফিজার রহমান মোস্তফা বলেন, আমরা চীনের অর্থ চাই, ভারতের অর্থও চাই না। আমাদের এই বাংলাদেশে লক্ষ লক্ষ কোটি টাকারর বড় বড় মেগা প্রকল্প হচ্ছে। তাই আমরা চীন, ভারত বুঝি না। অবিলম্বে তিস্তা মহাপরিকল্পার কাজ শুরু করতে হবে। আগামী বাজেটে এজন্য অর্থ বরাদ্দ দিতে হবে। সারাদেশে মেগা প্রকল্প চলছে। কিন্তু রংপুর অঞ্চলের মানুষের জীবন-জীবিকা বাঁচানোর এই প্রকল্পে মাত্র সাড়ে ৮ হাজার কোটি টাকা বরাদ্দ না দেয়ার বিষয়টি দুঃখজনক। রংপুর অঞ্চল বাংলাদেশ থেকে বিচ্ছিন্ন কোন এলাকার মানুষ নই। প্রত্যেকটি ভ্যাট, ইনকামট্যাক্স অন্যান্য সমস্ত ট্যাক্স দিয়ে আমরা কেন্দ্রীয় রাজস্বকে সম্মৃদ্ধ করি। তাহলে আমাদের ন্যায্য দাবি বাস্তবায়নের জন্য, তিস্তা মহাপরিকল্পনা কেন বাস্তবায়ন হবে না এটা আমারর বোধগম্য নয়।
মোস্তফা বলেন, রংপুর, গাইবান্ধা, কুড়িগ্রাম, লালমনিরহাট, নীলফামারীর তিস্তা অববাহিকায় আমরা যে বিশাল ক্ষতি মুখে পড়েছি। এখান থেকে উত্তরণের একমাত্র উপায় তিস্তার প্রটেকশন, খনন এবং মহাপরিকল্পা বাস্তবায়ন। ২০৪১ সালের ভিশন, মিশন বাস্তবায়ন করতে হলে তিস্তা মহাপরিকল্পনা বাস্তবয়ন করতে হবে। সেজন্য আসছে বাজেটে অর্থ বরাদ্দ দিতে হবে। একই সাথে তিস্তা চুক্তি বাস্তবায়নের জন্য আলাপ আলোচনাও চালিয়ে যেতে হবে। আগামী ৬ মে রংপুর পাবলিক লাইব্রেরী মাঠে আমরা মহাসমাবেশ করে প্রধানমন্ত্রীর কাছে সেই দাচি জোড়ালো ভাবে জানাতে চাই। এরপর আমরা আমাদের জীবন-জীবিকা বাচাতে প্রয়োজনে তিস্তা পাড়ে আমরণ অনশনে বসবো।
মোস্তফা বলেন, মহাপরিকল্পনা বাস্তবায়নের দাবীতে তিস্তা বাঁচাও নদী বাঁচাও সংগ্রাম পরিষদ দীর্ঘ দিন থেকে আন্দোলন করে আসছে। তিস্তা চুক্তির মতো মহাপরিকল্পনার কাজ ঝুলে থাকায় তিস্তা পাড়ের মানুষের মধ্যে হতাশার সৃষ্টি হয়েছে। আমি যতদূর জানি, সর্বোচ্চ রাজনৈতিক সিদ্ধান্তের অপেক্ষায় তিস্তা মহাপরিকল্পনার কাজ আটকে আছে। এই ইস্যুটিকে ধামাচাপা দেওয়ার জন্য পশ্চিম বঙ্গের মমতা ব্যানর্জী উজানে তিস্তা প্রকল্পের আওতায় দুটি খাল খনন ও তিনটি বিদ্যুৎ কেন্দ্র স্থাপনের হুংকার দিয়ে পরিস্থিতিকে বিষিয়ে তুলেছে। তিস্তা চুক্তি সই এবং অববাহিকা ভিত্তিক নদী ব্যবস্থাপনার যে সিদ্ধান্ত আছে তা বাস্তবায়ন করবেন দুই দেশের প্রধানমন্ত্রী। আমাদের সরকার প্রধান কোনভাবেই মমতার সাথে কথা বলবেন না।
মোস্তফা বলেন, তিস্তা মহাপরিকল্পনা ইস্যুতে তথাকথিত কিছু বুদ্ধিজীবী, পরিবেশবাদী সংগঠন ভারত বিরোধিতার জিগির তুলে মহাপরিকল্পনার কাজ আটকানোর ষড়যন্ত্র করছে। তাদের এই অশুভ তৎপরতা নদী পাড়ের মানুষের বিপক্ষে যাচ্ছে। তিস্তা মহাপরিকল্পনার সাথে তিস্তা পানি চুক্তির সম্পর্ক সাংঘর্ষিক নয়, পরিপূরক। আমরা মহাপরিকল্পনার বাস্তবায়ন চাই, বর্ষার পানি ধরে রাখার জন্য জলাধার চাই, খরাকালের জন্য ন্যায্য হিস্যার ভিত্তিতে তিস্তা চুক্তি চাই।
পরিষদের সভাপতি অধ্যক্ষ নজরুল ইসলাম হক্কানি বলেন, চীনের অর্থায়নে মহাপরিকল্পনা বাস্তবায়নে কোন প্রতিবন্ধকতা, চাপ থাকলে নিজস্ব অর্থায়নে প্রকল্প বাস্তবায়নের দাবী জানান। এই কাজের জন্য আসন্ন আর্থিক বছরের বাজেটে অর্থ বরাদ্দের জন্য প্রধানমন্ত্রীর প্রতি আবেদন জানান।
তিনি আরো বলেন, প্রতি বছর তিস্তার ভাঙ্গনে ৫০ হাজার মানুষ বাস্তুচ্যুত হচ্ছে। অকাল বন্যায় তিস্তার হিডেন ডায়মন্ড খ্যাত ধান, গম, ভুট্টা, মরিচ, পিয়াজ, রসুন, আলু, বাদাম শাক-সবজি সহ লাখ লাখ হেক্টর জমির ফসল তিস্তা খেয়ে ফেলছে। তিস্তা মহাপরিকল্পনা বাস্তবায়নের কাজের বিলম্ব হলে উত্তরাঞ্চলের খাদ্য নিরাপত্তা বলয় ভেঙ্গে পরবে।
সমাবেশ থেকে আগামী ৬ মে রংপুর পাবলিক লাইব্রেরী মাঠের মহাসমাবেশে তিস্তাপারের প্রতিটি শ্রেণি পেশার মানুষকে যোগ দেযার আহবান জানান বক্তারা।
বাতায়ন২৪ডটকম।।সমামা
Leave a Reply