স্টাফ করেসপনডেন্ট, রংপুর।। বাতায়ন২৪ডটকম।।
রংপুরের গঙ্গাচড়ার শেখ হাসিনা তিস্তা সেতু এলাকায় এশিয়ান টেলিভিশনের প্রতিনিধিসহ ৪ সাংবাদিকের ওপর হামলার ঘটনায় ২ জনকে গ্রেফতার করেছে পুলিশ। গ্রেফতারকৃতরা হলেন মহিপুর এলাকার লুলু ও দুলাল মিয়া।
গঙ্গাচড়া থানার অফিসার ইনচার্জ দুলাল মিয়া জানান, বুধবার ( ২৬ এপ্রিল) বিকেল সাড়ে চার দিকে তিস্তা সড়ক সেতুর এলাকায় চরের ভুট্রার বাম্পার ফলনের প্রতিবেদন করতে যায় এশিয়ান টিভির প্রতিনিধি বাদশাহ ওসমানি, ভিডিও সাংবাদিক আরিফুল ইসলাম, দৈনিক দাবানলের স্টাফ রিপোর্টার একেএম সুমন ও ফটো সাংবাদিক রাকিবুল ইসলাম। এসময় স্থাণীয পূর্ব মহিপুর এলাকার মৃত শহিদার রহমানের পুত্র লুলু মিয়া ভুট্রা গাছের ছবি তুলতে বাঁধা দেন। এসময় তিনি অতর্কিতভাবে এশিয়ান টেলিভিশনের ভিডিও সাংবাদিক আরিফুল ইসলামের ওপর হামলা করে তাকে কিলঘুষি মারতে থাকেন। কিছুক্ষণের মধ্যেই সেখানে উপস্থিত হন রাজু, দুলালসহ তার সাঙ্গপাঙ্গারা। খবর পেয়ে পুলিশ গিয়ে তাদের উদ্ধার করে প্রথমে গঙ্গাচড়া হাসপাতাল ও পরে রংপুর মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের ভর্তি করায়। হামলায় সাংবাদিক ওসমানির কান ও চোখ ক্ষতিগ্রস্ত হয়। এ ঘটনায় ওসমানি বাদি হয়ে থানায় মামলা করেছেন। আমরা ইতোমধ্যেই লুলু ও দুলালকে গ্রেফতার করেছি। অন্যান্যদের গ্রেফতারে অভিযান চলছে।
হামলার শিকার সাংবাদিক বাদশাহ ওসমানি জানান, এবার চরে ভুট্রার বাম্পার ফলন হয়েছে। সেই প্রতিবেদন করার জন্য আমি সহকর্মীদের নিয়ে করার জন্য বুধবার বিকেল চারটার দিকে গঙ্গাচড়ার মহিপুর শেখ হাসিনা তিস্তা সড়ক সেতুর পূর্ব পার্শ্বে চল্লিশ সালের চরের ভুট্রা ক্ষেতে যাই। সেখানে আমার ভিডিও সাংবাদিক আরিফুল ক্যামেরা বের করে ভুট্রার ছবি তোলা শুরু করা মাত্রই লুলু মিয়া বাঁধা দেন। কোন ধরণের কথা বার্তা ছাড়াই তিনি আরিফুলকে বেধড়ক কিল ঘুষি মারতে মারতে মাটিতে ফেলে দেন। তাকে বাঁচাতে গেলে তিনি আমিসহ আমার অন্য দু্ই সহকর্মীরকেও মারতে থাকেন। এরপর আশপাশ থেকে দুলাল, রাজুসহ ১০/১২ জন বের হয়ে এসে আমাদের বেধড়ক মারতে থাকেন। তাদেরকে আমরা বলতে থাকি কেন মারছেন, তারা তখন গালিগালাজ করেতে থাকে ও মারতে থাকে। এভাবে তিনদফায় তারা আমাদের মারতে থাকে। বিষয়টি সেখান থেকে পুলিশ সুপার মহোদয়কে অবহিত করলে তিনি ফোর্স পাঠিয়ে আমাদের উদ্ধার করেন।
সাংবাদিক ওসমানি বলেন, পরে স্থানীয়রা বলেছেন, হামলাকারীরা চরের জমি দখলবাজি করছে। কিছুদিন আগে চরের ১০৫ শতক জমি তারা বিক্রি করেছে। যে জমিতে আমরা ছবি তুলতেছিলাম। সেই জমিও তাদের দখল করে রাখা। সেকারণে মামলা চলছে। তারা মনে করেছে, আমরা তাদের জমি দখলের সংবাদ করার জন্য সেখানে গেছি। হামলাকারীরা এতোটাই বেপরোয়া ছিল যে, যদি পুলিশ না আসতো তাহলে আমাদের বড় ধরণের ক্ষতি হয়ে যেতো।
হামলার শিকার স্থাণীয় দৈনিক দাবানলের স্টাফ রিপোর্টার একেএম সুমন জানান, হামলার পর তারা আমাদের সেখানে অবরুদ্ধ করে রাখে। সেখানে একটি রাজনৈতিক ছাত্রসংঠনের নেতা পরিচয় দিয়ে বলা হয়, ১০ হাজার টাকা দিলে তাদেরকে সেতুতে উঠতে দেয়া হবে। পরে পুলিশ এসে আমাদের উদ্ধার করে। এ ঘটনায় আমরা কিংকর্তব্য বিমূঢ় হয়ে গেছি। হামলাকারীদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দেয়া না হলে গণমাধ্যম সঠিকভাবে কাজ করতে পারবে না।
রংপুরের সহকারি পুলিশ সুপার( এ সার্কেল ) হোসাইন মোহাম্মদ রায়হান জানান, ঘটনাটি জানা মাত্রই আমরা সাংবাদিকদের প্রথমে উদ্ধার করেছি। চিকিৎসার ব্যবস্থা করেছি। মামলা নিয়েছে। গ্রেফতার করেছি। আমরা চাই সাংবাদিকরা যে কোন স্থানে ভীতিহীনভাবে তাদের তথ্য তালাশ করুক। তাদের কাজে যারা বাঁধা দিবে। তাদেরকে আইনের আওতায় আনা হবে।
এ ঘটনার তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানিয়েছে রংপুর প্রেসক্লাব, রিপোর্টার্সক্লাব, সাংবাদিক ইউনিয়টন, ফটো জার্নালিস্ট এসোসিয়েশন, টেলিভিশন ক্যামেরা জার্নালিষ্ট এসোসিয়েশন, রিপোর্টার্স ইউনিটি। তার অবিলম্বে হামলাকারীদের গ্রেফতার এবং সাংবাদিকদের নিরাপত্বা নিশ্চিত করার দাবি জানান।
এদিকে সাংবাদিকদের ওপর হামলা, মামলাসহ নানাভাবে হয়রাণির প্রতিবাদে আজ বুধবার সন্ধা সাড়ে ৭ টায় রংপুর কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারের পাদদেশে জরুরী বৈঠকের ঘোষণা দিয়েছে সাংবাদিক সমাজে। সেখান থেকে সাংবাদিকদের আন্দোলনের ঘোষণা দেয়া হবে।
বাতায়ন২৪ডটকম।। সমামা
Leave a Reply