ঢাবি প্রতিবেদক।।বাতায়ন২৪ডটকম:
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের (ঢাবি) বিজয় একাত্তর হলে শিবির সন্দেহে এক শিক্ষার্থীকে রাতভর নির্যাতনের ঘটনা ঘটেছে। গতকাল রোববার রাত ১১টা থেকে আজ সোমবার সকাল পর্যন্ত কয়েকধাপে নির্যাতনের ঘটনা ঘটে।
এ ঘটনায় ভুক্তভোগী শিক্ষার্থীর নাম শাহরিয়াদ মিয়া সাগর। সে ২০১৯-২০ সেশনের মনোবিজ্ঞান বিভাগের শিক্ষার্থী। হল ছাত্রলীগের সাংস্কৃতিক সম্পাদক মাজেদুর রহমান, গণযোগাযোগ উপসম্পাদক শাকিবুল ইসলাম সুজন, সাহিত্য সম্পাদক ইউসুফ তুহিন, প্রশিক্ষণ সম্পাদক বায়েজিদ বোস্তামী, মানবসম্পদ উন্নয়ন সম্পাদক পিয়ার হাসান সাকিবসহ আরো বেশ কয়য়েকজন ছাত্রলীগ কর্মী মারধরের সঙ্গে জড়িত থাকার অভিযোগ উঠেছে। সবাই বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক তানভীর হাসান সৈকতের অনুসারী।
প্রত্যক্ষদর্শী সূত্রে জানা যায়, রাত এগারোটার দিকে শিবের সন্দেহে শাহরিয়াদকে পদ্মা-৪০০৮ নম্বর রুমে নিয়ে মারধর করতে থাকে হল ছাত্রলীগের কর্মীরা। মারধরের একপর্যায়ে তাকে জেরা করতে থাকে। জেরার এক পর্যায়ে তার সাথে কে বা কারা জড়িত তাদের নাম প্রকাশ করার জন্য চাপ প্রয়োগ করতে থাকে। এরপর সকালে তাকে হল থেকে বের হয়ে যাওয়ার নির্দেশ দেয় ছাত্রলীগ কর্মীরা। কিন্তু সকালে আবারো বাঁশ ও কাঠ দিয়ে মারধর করেন তারা।
এরপর সরেজমিনে গিয়ে শিক্ষার্থীর হাত ও কানে মারধরের চিহ্ন দেখা যায়। তবে অভিযুক্তরা মারধরের বিষয়টি অস্বীকার করেছেন। এরপর সকাল আটটার দিকে হল প্রভোস্ট অধ্যাপক আব্দুল বাছির হলে এসে উভয় পক্ষের সাথে কথা বলেন। পরে তিনি শাহরিয়াদকে প্রক্টোরিয়াল টিমের হাতে তুলে দেন।
ভুক্তভোগী শাহরিয়াদ বলেন, এক জুনিয়রের সাথে আমার ফোনে একটু কথা হয়েছিল এটার সূত্র ধরে তারা (অভিযুক্ত) আমাকে ৪০০৮ নাম্বার কক্ষে নিয়ে যায়। সারারাত আমার ফোন চেক করে। আমার আমার কান, হাতসহ দেহের বিভিন্ন জায়গায় কাঠ, হাত দিয়ে আঘাত করে। বাবা-মা তুলে অশালীন ভাষায় গালিগালাজ করতে থাকে। একপর্যায়ে সাংবাদিকরা আসলে তখন নির্যাতন বন্ধ করে। কিন্তু সাংবাদিক চলে যাবার পর আবার নির্যাতন শুরু হয়। চলে সকাল সাড়ে সাতটা পর্যন্ত। আমাকে একটা মিনিটও ঘুমাতে দেয়নি। ফজরের নামাজও পড়তে দেয়নি তারা। আমাকে সবচেয়ে বেশি মেরেছে সুজন, তুহিন আর মাজেদ। শুধু আমাকে নয় মাহমুদ নামের এক জুনিয়রকেও বেদম প্রহার করে আমাদের সেশনের রাজু, শুভ ও প্রান্ত।’
ঢাবি ছাত্রলীগ সাধারণ সম্পাদক তানভীর হাসান সৈকত বলেন, ওই শিক্ষার্থী শিবিরের রাজনীতির সাথে জড়িত বলে আমরা জেনেছি, প্রশাসন এ ব্যাপারে যথাযথ ব্যবস্থা নিবে। তবে ছাত্রলীগ মারধরের রাজনীতি করে না। মারধরের সাথে কেউ জড়িত থাকলে প্রমাণ সাপেক্ষে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
প্রভোস্ট অধ্যাপক ড. আব্দুল বাছির সাংবাদিকদের বলেন, ছাত্র শিবিরের সাথে ওর সম্পৃক্ততা আছে বলে জেনেছি কিন্তু তার সম্পৃক্ততা আমরা শারীরিকভাবে দেখি নাই যান্ত্রিকতার মাধ্যমে দেখেছি যেটা ও নিজেও স্বীকার করেছে। সে এখন অনুতপ্ত। সে বলেছে, ‘আমি এটা বুঝতে পারি নাই। এতো দূর পর্যন্ত না গেলেও চলত। সুযোগ ছিল নিজেকে একটুখানি দূরে রাখার। আকিদা, নামাজ, রোজা এসব কথা তো বলে ওরা। যে কারণে সে সম্পৃক্ত হয়ে গেছে। যেহেতু সে স্বীকার করেছে এখন বিশ্ববিদ্যালয়ের নিয়মানুযায়ী এসব বিষয় প্রক্টর দেখবেন।
ভুক্তভোগীকে মারধরের বিষয়ে তিনি বলেন, গতকাল রাতে যখন ও চিহ্নিত হয়েছে তখন প্রথমে ঠিক ছিল। পরে হয়তো তারা (ছাত্রলীগ) ব্যবহারের দিক থেকে একটু আঘাত করেছে। আমার মনে হয় যে মারধরের বিষয়টা না হলে ভালো হতো। মারধরের ঘটনাটা শিক্ষার্থীদের মধ্যে না হওয়াই ভালো। তবে ভুক্তভোগী যদি মারধরের বিচার চেয়ে লিখিত অভিযোগ দেয় তাহলে আমরা ব্যবস্থা নিবো।
এ বিষয়ে প্রক্টর অধ্যাপক ড. একেএম গোলাম রব্বানী ওই শিক্ষার্থীর সাথে কথা বলে তাকে ছেড়ে দেয়ার কথা জানান।
Leave a Reply