বৃহস্পতিবার, ২১ সেপ্টেম্বর ২০২৩, ০৯:৪২ অপরাহ্ন

সংবাদ শিরোনাম :
রংপুরে গাছের ডাল পড়ে মারা গেলেন ১০ বছরের কন্যাসহ শিক্ষিকা, স্বামী আহত র‌্যাব-১৩ মাদক বিরোধী অভিযানঃ ৮১ কেজি গাজা ও ১১৪৫ বোতল ফেন্সিডিল জব্দ, গ্রেফতার ৪ অবৈধভাবে স্যালাইন মজুদ: রংপুরের অবসর ও রিফাত মেডিসিন কর্নারকে জরিমানা সরকারকে সরাতে তারাতারি গণতান্ত্রিক পদ্ধতিতে সর্বোচ্চ শক্তি ব্যবহার করা হবে: আলাল   সাময়িক বরখাস্ত এডিসি হারুন রংপুর রেঞ্জে সংযুক্ত এইচএসসি পরীক্ষার প্রশ্নপত্র চুরির দায়ে দুই কর্মচারীর ২ বছর করে কারাদন্ড পীরগঞ্জে ৩২ হাজার কেজি সরকারি চাল জব্দঃ ৩ কালোবাজারির নামে মামলা যানজট নিরসনে রংপুর মহানগরীতে চালু হলো ডিজিটাল ট্রাফিক সিস্টেম   মিঠাপুকুরে দু’মাসেও গ্রেফতার হয়নি অন্তঃসত্ত্বা সুমি কেরকেটা হত্যার মূল পরিকল্পনাকারী আদুরী টপ্য রংপুর মহানগরীর বস্তিগুলোর ৬৭ ভাগ শিশু স্বাস্থ্য ঝুঁকিতে
জেলা পরিষদ নির্বাচনঃ আগুনে ঘি ঢাললেন মহিলা ইউপি সদস্য

জেলা পরিষদ নির্বাচনঃ আগুনে ঘি ঢাললেন মহিলা ইউপি সদস্য

স্পেশাল করেসপনডেন্ট, রংপুর

বাতায়ন২৪ডটকমঃ নির্বাচিত হওয়ার পরেও ভোট কেনার জন্য দেয়া ৫০ হাজার টাকা ফেরত না দেয়ায় এক মহিলা ইউপি সদস্যকে হুমকি ধামকি ও শ্লীলতাহানি করার অভিযোগ উঠেছে রংপুরের কাউনিয়া থেকে নির্বাচিত জেলা পরিষদ সদস্য আলতাফ হোসেনের বিরুদ্ধে। সোমবার (৩১ অক্টোবর) সংবাদ সম্মেলনে এই অভিযোগ তোলেন ভূক্তভোগি মহিলা ইউপি সদস্য মুরশিদা বেগম। তবে অভিযোগ অস্বীকার করেছেন আলতাফ হোসেন দাবি করেছেন, অভিযোগকারী সম্পর্কে মামি। জমিজমা নিয়ে টাকা পয়সা সংক্রান্ত বিষয় নিয়ে ভোটের আগে এসব ঘটনা ঘটেছিল। এদিকে টাকার বিনিময়ে ভোট কিনে নির্বাচিত হওয়ায় আলতাফ হোসেনের সদস্য পদ বাতিল করে ওই ওয়ার্ডে পূনরায় ভোট গ্রহনের দাবি জানিয়েছেন নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বি গোলাম সারোয়ার আনছারী।

সোমবার দুপুরে রংপুরের কাউনিয়া উপজেলার হারাগাছ ইউনিয়নের ৪, ৫ ও ৬ নং ওয়ার্ডের সংরক্ষিত মহিলা সদস্য মুরশিদা বেগমের এই সংবাদ সম্মেলনকে ঘিরে ব্যাপক চাঞ্চল্য তৈরি হয়। যেন আগুনে ঘি ঢালার পরিস্থিতি।

সংবাদ সম্মেলতে মুরশিদা হক বলেন, গত ১৭ অক্টোবর অনুষ্ঠিত রংপুর জেলা পরিষদ নির্বাচনের ২ নং ওয়ার্ডের (কাউনিয়া) প্রতিদ্বন্বিতা করে বিজয়ী হন আলতাফ হোসেন। নির্বাচনের আগে ১৫ অক্টোবর  আলতাফ হোসেন হারাগাছ ইউপির সদস্য মোজাম্মেল হকের মাধ্যমে অপর ইউপি সদস্য জহুরুল হকের বাড়িতে রাত সাড়ে তিনটায় আমাকে জিম্মি করে আমাকেসহ ৭ পুরুষ ও মহিলা সদস্যকে ডেকে নেন। সেখানে আলতাফ হোসেন তাকে ভোট দেয়ার জন্য আমাদের প্রত্যেককে ৫০ হাজার করে টাকা দেন। আমি তার সাথে  প্রতিশ্রুতিবদ্ধ হয়ে ভোট দেই এবং তিনি নির্বাচিত হয়েছেন।

সংবাদ সম্মেলনে মুরশিদা অভিযোগ করেন, নির্বাচনে বিজয়ী হয়ে ১৯ অক্টোবর আলতাফ আমাকে তার মোবাইল থেকে ফোন দিয়ে অশ্লীল ভাষায় গালিগালাজ করতে থাকেন। আমি সে ভাষা প্রকাশ করতে পারবো না। এসময় তিনি আমাকে বলেন, আমি নাকি তাকে ভোট দেই নাই। সেকারণে টাকাসহ বাকি সরঞ্জামাদি ফেরত দিতে বলে। পরে আবারও আলতাফ হোসেনের দলীয় লোক ও বন্ধু মশিয়ার রহমানের মোবাইল থেকে আমার মোবাইলে ফোন দিয়ে বলে, টাকা ফেরত দাও। তা না হলে আমার কাপড় খুলে নিবে। বেইজ্জতি করবে। এরকম হুমকি দেয়।  আমি মোবাইল কেটে দিলে আলতাফ আবারও ওই মোবাইল থেকে আমার স্বামীর মোবাইলে কল দেয়। স্বামীকে সেই হুমকি দেয়। এসবের রেকর্ড আমার কাছে আছে।

সংবাদ সম্মেলনে মুরশিদা বলেন, এভাবে হুমকি ধামকির কারণে আমি আমার জীবনের নিরাপত্বা চেয়ে রিটার্নিং কর্মকর্তা ও ডিসির কাছে একটা দরখাস্ত দেই। সেখান থেকে অনুলিপি নিয়ে আমি থানার ওসিকে দেই। সেখান থেকে উপজেলা নির্বাহী অফিসার এবং উপজেলা চেয়ারম্যানকে দেই। এছাড়াও ওই কপি আমি আমার ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যানকেও দেই।   কিন্তু এখন পর্যন্ত কোন সুরাহা নাই।

মুরশিদা বেগমের অভিযোগ, এক পর্যায়ে কয়েকদিন আগে আলতাফ আমাকে বকুলতলা বাজারে আপেল নামের এক দোকানে ধরে নিয়ে গিয়ে আমাকে সেই বেইজ্জতি করে। আমার শ্লীলতা হানি ঘটায় এবং আমাকে বলে, এখানে টাকা দিয়ে ওঠেক। তখন আমি বলছি, কিসের টাকা দিবো। তখন সে বলে ভোটের টাকা। তখন আমি তাকে বলি, আমার ভোট টা ফেরত দে। আমার কোটি টাকার আমানত, পবিত্র  ভোট, তোকে ভোট দিয়ে নির্বাচিত করলাম। আর তুই  আমার কাছে কিসের টাকা ফেরত চাস। তখন সে আমাকে বলে, তুই টাকা দিয়ে ওঠেক। টাকা দিয়ে তারপর প্রধানমন্ত্রীকে বিচার দে। ওই যদি প্রধান মন্ত্রীর কাছে বিচার চায়, তাহলে আমি কোথায় বিচার চাবো। এজন্য মিডিয়া ভাইদের কাছে আমার অনুরোধ, দেশবাসির কাছে অনুরোধ, আমার এ ঘটনার আমি সঠিক বিচার চাই। প্রধানমন্ত্রীর কাছে আমার আকুল আবেদন, আমার সে মা, আমি তার কাছে বিচার চাই। আমি কোন উপায় না পেয়ে আপনাদের কাছে আসছি।  আপনারা আমাকে সাহায্য করবেন। যেন আমি সঠিকভাবে চলাফেরা করতে পারি। জনগনের কাছে যেতে পারি। আমি নির্বাচিত মহিলা মেম্বার। আমাকে জনগন রাত ৩ টার সময়ও ডাকতে পারে। আমি এর আগে দুইবার ছিলাম। এবার নিয়ে তিনবার আমি নির্বাচিত হয়েছি। ওর হুমকিতে আমি চলাফেরা করতে পারছি না। রাত-বিরাতে কিভাবে আমি জনগনের কাছে যাবো। যে দিনেদুপুওে আমাকে এ্যটাক করে। তাহলে রাত বিরাতে কিভাবে আমি আমার জীবনকে নিয়ে যাবো। এজন্য আমি আমার জীবনের নিরাপত্বা চাচ্ছি। আমিে যন খোলামেলা ঘোরাফেরা করতে পারি। আমি যেন জনগনের কাছে যেতে পারি। গ্রামগঞ্জে যেতে পারি। ইউনিয়ন পরিষদে যেতে পারি। আমার ইউনিয়ন পরিষদ বাড়ি থেকে দেড় কিলোমিটার। আমি যদি অটো না পাই। আলতাফ যদি আমাকে মেরে ফেলে তাহলে আমি কি করবো।

সংবাদ সম্মেলনে তার সাথে উপস্থিত ছিলেন  একই ইউনিয়নের ৯ নং ওয়ার্ড ইউপি সদস্য মকবুল সালাম,৭ নং ওয়ার্ডের সদস্য ওবায়দুল হক ,৫ নং ওয়ার্ডের সদস্য মনিরুজ্জামান, এবং ৭,৮,৯  ওয়ার্ডের সংরক্ষিত নারী সদস্য শেফালি বেগমের স্বামী নুরুজ্জামান। এসময়

সংবাদ সম্মেলনে ৯ নং ওয়ার্ড ইউপি সদস্য মকবুল হোসেন সালাম বলেন, জেলা পরিষদ নির্বাচনের পর থেকেই মুরশিদা আপার এই দশা। তাকে হুমকি  ধামকি দেয়া হচ্ছে। কাপড় খুলে নেয়ার কথা বলা  হচ্ছে। আপা থানায় অভিযোগও করেছে। কিন্তু থানা থেকে এখনও যায় নি। মুরশিদা আপা একজন সম্মানিত ব্যক্তি। তার তিনটি ওয়ার্ডে ১০/১২ হাজার ভোট আছে। তিনি পাওয়া পার্টি রাজনীতি করেন। আমরা চাই না। তাকে এভাবে বেইজ্জতি করা হোক। খারাপ ভাষায় গালি দেয়। এটা যেন না হয়। তিনি যেন পরিষদে এবং জনগনের কাছে খোলামেলাভাবে যেতে পারেন। তার নিরাপত্বার দাবি জানাচ্ছি আমরা।

তবে এই অভিযোগ অস্বীকার করেছেন অভিযুক্ত নির্বাচিত জেলা পরিষদ সদস্য (কাউনিয়া) আলতাফ হোসেন। তিনি দাবি করে বলেন,  আমার বিরুদ্ধে আনা অভিযোগ ভূয়া। ওনার সাথে আমার পারিবারিক সম্পর্ক আছে। তিনি আমার মামি হন। তার সাথে আমার জমি নিয়ে ঝামেলা আছে। সেটা নিয়ে পারিবারিক বিরোধ নিয়ে অনেক ঘটনাই তার সাথে ঘটেছে। তিনি এখন যে অভিযোগগুলো তুলছেন সেগুলো পারিবারিক বিরোধের জেরে ভোটের অনেক আগে তার সাথে আমার এসব হয়েছিল।

আলতাফ হোসেন প্রশ্ন করে বলেন, তিনি যদি গৃহবন্দি থাকতেন। তাহলে রংপুর গিয়ে কিভাবে সাংবাদিক সম্মেলন করলেন। তিনি তো কাউনিয়ায় বা বাড়িতে করতে পারতেন। তাহলে কি তাকে পুলিশ স্কট দিয়ে নিয়ে গেছে নাকি সাংবাদিকরা স্কট দিয়ে নিয়ে গেছে।

টাকা পয়সা দেয়ার ব্যাপারে তিনি সরাসরি কোন উত্তর না দিয়ে বলেন, ‘ জেলা পরিষদ নির্বাচনে এবার কিভাবে ভোট হয়েছে। সেটা সাংবাদিক মানুষ আপনারা ভালো জানেন। অন্যরাও যেভাবে ভোট খেলেছে আমিও সেভাবে ভোট খেলেছি ভাই। ’

রিটানিং কর্মকর্তার অফিস জানিয়েছে, গেলো ১৭ অক্টোবর রংপুর জেলা পরিষদ নির্বাচনে ২ নং ওয়ার্ডের ( কাউনিয়ার) সদস্য হিসেবে উপজেলা আওয়ামী লীগের সদস্য মোঃ আলতাফ হোসেন (তালা) প্রতীক নিয়ে ৫২ ভোট পেয়ে নির্বাচিত হয়েছেন। তার নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী উপজেলা যুবলীগের সাবেক যুগ্ম আহ্বায়ক মোঃ গোলাম সারোয়ার আনছারী বাবু হাতি প্রতীকে নিয়ে ৪০ ভোট এবং মিজানুর রহমান টিউবওয়েল প্রতীক ১ ভোট পেয়েছেন।

নিকটকম প্রতিদ্বন্দ্বি গোলাম সারোয়ার আনছারী জানান, মোরশেদা বেগমের সংবাদ সম্মেলনের মাধ্যমে স্পস্টভাবে প্রমাণিত হয়েছে আলতাফ হোসেন টাকা দিয়ে ভোট কিনে নির্বাচিত হয়েছেন। যা অবৈধ। এই ওয়ার্ডে তাই ভোট বাতিল করে পূনরায় ভোট গ্রহনের আহবান জানান তিনি।

হুমকি ধামকি ও শ্লীলতাহানির বিষয়ে কাউনিয়া থানার ওসি মোনতাছের বিল্লাহ জানান, ভোটের বিষয় নিয়ে রিটার্নিং কর্মকর্তার কাছে অভিযোগ দিয়েছেন। সেই অনুলিপি তিনি বিভিন্ন জায়গায় দিয়েছেন। তবে তাকে হুমকি ধামকি ও দোকানে আটকিয়ে শ্লীলতাহানি ঘটানোর বিষয়ে আমার থানায় কোন অভিযোগ করেন নি। এ ধরণের ঘটনা ঘটলে অবশ্যই তদন্ত করে আমরা যথাযথ ব্যবস্থা নিবো।

বাতায়ন২৪ডটকম/সমামা

দয়া করে নিউজটি শেয়ার করুন..

Leave a Reply

Your email address will not be published.




© All rights reserved 2022 batayon24
Design & Developed BY ThemesBazar.Com