শনিবার, ০৩ Jun ২০২৩, ১১:২৪ অপরাহ্ন

সংবাদ শিরোনাম :
কালীগঞ্জে ফেনসিডিল, এসকাপ সিরাপসহ আটক ১ দীর্ঘ ৪০ বছর পর খুলে দেওয়া হয়েছে রংপুর হাসপাতালের দক্ষিণ দিকের গেট রংপুরের বদরগঞ্জে ভিন্ন ভিন্ন ভাবে পালিত হল জিয়াউর রহমানের ৪২ তম শাহাদাৎবার্ষীকি কালীগঞ্জে মাদক বিরোধী প্রচারণামূলক প্রীতি ফুটবল ম্যাচ অনুষ্ঠিত বাংলার বুকে এক টুকরো লুসাই গ্রাম, প্রবেশ ফি ৩০ টাকা অনিয়ম ও দূর্নীতির অভিযোগের কারণে নয়,নাম ও রোল নম্বর ভুলের কারণে পরীক্ষা ফলাফল স্থগিত করা হয়েছে। ভাড়া নিয়ে বিতর্কে রোকেয়া ভার্সিটির শিক্ষার্থীকে মারধোর, প্রতিবাদে সড়ক অবরোধ-বিক্ষোভ বদরগঞ্জে নদীতে ডুবে বৃদ্ধের মৃত্যু পুলিশের বেঁধে দেয়া রুটেই বিএনপির পদযাত্রায় নেতাকর্মীদের ঢল রংপুরে ভিশন স্পেশালাইজড হাসপাতালে ভুল অপারেশনে যুবকের মৃত্যুর অভিযোগ
গঙ্গাচড়ার সরকারি কৃষি প্রণোদনা বীজ ও সার যায় যাদের পেটে

গঙ্গাচড়ার সরকারি কৃষি প্রণোদনা বীজ ও সার যায় যাদের পেটে

 

 

স্টাফ করেসপনডেন্টঃ

রংপুরের গঙ্গাচড়ায় কৃষি প্র নবীজ ও রাসায়নিক সার উদ্ধারের পর। ৭ এপ্রিল উপজেলা কৃষি অফিসের উদ্ভিদ সংরক্ষণ কর্মকর্তা হাবিবুর রহমান বাদী হয়ে আলমীর হোসেন (৫০) নামের এক ব্যাক্তির নাম উল্লেখ করে এবং অজ্ঞাত কয়েক জনকে আসামি করে গঙ্গাচড়া মডেল থানায় একটি মামলা দায়ের করেন। মামলার পর অভিযুক্ত আসামী আলমীর হোসেনকে গ্রেফতার করে আদালতের মাধ্যমে জেল হাজতে পাঠানো হয়।

গ্রেফতারের আগে মামলার সূত্র ধরে অভিযুক্ত প্রধান আসামী আলমগীর হোসেনের সঙ্গে একান্ত গোপনে কথা বলেন প্রতিবেদক।

এসময় তাকে প্রশ্ন করা হয় এসব ধান বীজ ও পাট বীজ এবং সার কিভাবে আসলো তার কাছে তিনি বলেন, আমি শুধু গঙ্গাচড়া থেকেই এসব বীজ কিনি না । আমি পাশের কয়েকটি উপজেলা থেকেও কিনি। সেখানেও আমার মত অনেক পাইকার আছে।

তার কাছে জানতে চাওয়া হয় গঙ্গাচড়া উপজেলায় কার কার কাছ থেকে এসব বীজ কিনেছেন তিনি বলেন,

কোলকোন্দ ইউনিয়নের মাদ্রাসাপাড়া এলাকার বীজ ও কীটনাশক ব্যবসায়ী এনামুল এর কাছ থেকে ৪৫ বস্তা ধান বীজ কিনেছি। পীরের হাটের মতিয়ারের কাছ থেকে কিনেছি ১৬ বস্তা। বড়বিলের চেয়ারম্যানের পিএস পলাশের কাছ থেকে ৩০ জনের ছয়টি স্লিপের মাল কিনেছি । গমের বীজ বিতরনের সময় তাদের সাথে দাম না বনায় সন্ধ্যার সময় উপজেলা পরিষদ থেকে সব গম ভ্যানে করে নিয়ে গিয়ে চৌধুরী হাট বাজারের এক ব্যবসায়ীর কাছে বিক্রি করেন। বড়বিলের হাজীপাড়া গ্রামের ভ্যান চালক ওয়াসিমের কৃষি অফিসের লোকদের সাথে ভালো সম্পর্ক সেও আমার কাছে ২০ বস্তা বিক্রি করে। উপজেলার চেয়ারম্যানের অফিসের কুদ্দুস আমার কাছে ৫ জনের একটি স্লিপ বিক্রি করে।

 

 

এবিষয় সাঁট মুদ্রাক্ষরিক কাম কম্পিউটার অপারেটর (সিএ) কুদ্দুস এর সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তিনি জানান, স্লিপ বিক্রির বিষয় আমি জানিনা তবে যদি বিএস আমার নাম দিয়ে থাকে তাহলে আমি বিএস এর ঘাড়পাকা দিয়ে সেই স্লিপ আদায় করবো। আমি স্লিপ না পেয়ে যদি নিউজে আমার নাম আসে তাহলে আমি তোমার নামেও মানহানির মামলা করব ।

আলমগীর আরও বলেন, জাতীয়পাটির মোক্তার আমার কাছে ১০ প্যাকেট পাটের বীজ ২০ টাকা প্যাকেট দরে বিক্রি করে ওরা কৃষি আফিস থেকে এগুলো এমনি নেয়। আমার বাড়ির পাশে বাড়ি চাম্মি ও তার ছেলে তারা এমন কোনো সরকারি প্রনোদনা নেই যে পায় না । কয়েক দিন আগেও আমার কাছে শামিম অগ্রিম টাকা নিয়েছে।

বীজ ও সার বিক্রির বিষয়ে শামিম এর সাঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তিনি জানান, বিএস রুবেল হোসেন আমার কাছে আইডি কার্ডের ফটোকপি ও ছবি চায় । আমি তা দিয়ে আসি । ওই দিনে আমাকে মাল দেয়ার কথা ছিল কিন্তু আমাকে মাল দেয়নি। তারপরে আমার মাল আলমগীরের কাছে দেয় সেই দিন আলমগীর মাল নিয়ে যায় সে সময় উপজেলা চেয়ারম্যান আটক করে। আমি কারো কাছে অগ্রিম কোন টাকা পয়সা নেইনি ।

আলমগীর আরও বলেন, গঙ্গাচড়া ইউনিয়নে বাড়ি ৪-৫ জন সাংবাদিক এরা আগেই আমার কাছ থেকে টাকা নিয়া যায় টাকা নিয়া আমাকে কৃষি অফিসের হাবিবুরের সাথে কথা বলে দিয়া যায় । হাবিবুর পরে আমাকে স্লিপ দেয়।

উপ সহকারী কৃষি কর্মকর্তারা এসব বীজ বিক্রি করেন কিনা এবিষয় জানতে চাইলে গ্রেফতার আলমগীর হোসেন বলেন, এখানে যতগুলো উপ সহকারী কৃষি কর্মকর্তা (বিএস) আছে তাদের সবাইরে একজন করে নিজেস্ব লোক আছে। তাদের দিয়ে এরা ৫-৭ টা করে স্লিপের মাল তুলে এক খানে জমা করে। তারপর আমাকে ডাকলে আমি নগত টাকা দিয়ে মালগুলো কিনে নেই। যখন চেয়ারম্যান মেম্বাররা সরাসরি আসে তখন আরও বেশি করে এসব মাল বিক্রি হয় । তার কারন প্রতিটি ইউনিয়নের চেয়াম্যান মেম্বাররা তাদের ভাগের স্লিপ বিতরন না করে বিক্রি করে দেন।

এসময় তার কাছে জানতে যাওয়া হয় কৃষকের এনআইডির ফটোকপি ও ছবি ছাড়া তো এসব বীজ ও সার তোলা সম্ভব না তাহলে কি করে এসব মাল তুলেন তারা তিনি বলেন, চেয়ারম্যান, মেম্বারদেরকে তাদের এলাকার মানুষ বিভিন্ন সাহায্যের জন্য আইডি কার্ডের ফটোকপি ও ছবি জমা দিয়ে থাকেন । এসব জমা দেওয়া আইডি কার্ডের ফটোকপি ও ছবি ব্যবহার করে তারা এধরনের প্রণোদনার মাল তুলে থাকেন । কৃষি অফিসের লোকজন তো আর কৃষকদের বাড়ি বাড়ি গিয়ে যাচাই করে প্রণোদনা দেন না।

এ বিষয়ে কয়েকটি ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যানের সাথে যোগাযোগ করা হলে, এসব বীজ বিক্রির বিষয় অস্বীকার করেন তারা ।

বীজ ও সার বিক্রির বিষয় কোলকোন্দ ইউনিয়নের মাদ্রাসারপাড়া এলাকার বীজ ও কীটনাশক ব্যবসায়ী এনামুল এর সাথে যোগাযোগ করা হলে তিনি জানান, আমি কেন সরকারি বীজ বিক্রি করব , আমি কোন ভাবেই সরকারি বীজ কারো কাছে বিক্রি করি নাই। তবে এলাকার লোক জন জানান, কৃষি আফিসের লোকদের সাথে তার ভালো সম্পর্ক থাকায় বীজ বাড়িতে এনে বিক্রি করেন এনামুল।

বড়বিল ইউনিয়নের ভ্যান চালক ওয়াসিম এর বাড়িতে গেলে কথা হয় তার স্ত্রী নাসিমা আক্তারের সাথে এসময় তার কাছে বীজ বিক্রির বিষয় জানতে চাইলে তিনি বলেন, হামরা আবাদ করি সেই সার আনি বাড়িত থুই হামরা কিসের সরকারি বীজ বেচাই । তার বাড়ির আশপাশের একাধিক লোক জনের সাথে কথা বলে জানা গেছে, কৃষি অফিসের লোকজনের সঙ্গে তার ভালো সম্পর্ক সে এসব সার ও বীজ কৃষি অফিস থেকে এনে বাড়িতে বিক্রি করেন। তার বাড়িতে এসে এলাকার কৃষকরা প্রণোদনার ধান ও ভূট্টা বীজসহ সরকারি বিভিন্ন ধরণের বীজ কিনে নিয়ে যায়।

গঙ্গাচড়া উপজেলায় এসব প্রনোদনা তিনি ছাড়া আর কারাকারা কিনেন জানতে চাইলে তিনি বলেন, গঙ্গাচড়া ইউনিয়নের ভূটকা গ্রামের বীজ ও সার ব্যবসায়ী আব্দুল কালাম, বড়বিল ইউনিয়নের হাজীপাড়া গ্রামের ভ্যান চালক ওয়াসিম ,কোলকোন্দ ইউনিয়নের মাদ্রাসারপাড়া এলাকার বীজ ও কীটনাশক ব্যবসায়ী এনামুল ওই ইউনিয়নের মতিসহ প্রায় ১০ থেকে ১৫ জন এসব প্রণোদনার সার ও কিনেন ।

 

 

এসব বীজ কেনার পর কোথায় বিক্রি করেন এ প্রশ্নে তিনি বলেন, গমের বীজগুলো ১১০০ টাকা করে কিনে আমি ঠাকুরগাঁও এর এক বিএডিসির ডিলারের কাছে ১২০০ টাকা দরে বিক্রি করেছি। আমাদের এখানে গমের তেমন আবাদ হয় না। আর যারা এসব প্রণোদনার গম বীজ পান তারা বেশির ভাগ কৃষক না । আর যে দুই এক জন কৃষক বীজ পান তারা চাষ করেন। ধান ও ভুট্টা এবং সরিষা বীজগুলো তারাগঞ্জ ও বদরগঞ্জ এর বিএডিসির টিলারদের কাছে বিক্রি করি।

 

 

আলমগীর হোসেন এর কাছে জানতে চায় এসব পণ্য কেনা ঠিক হয়েছে কিনা তিনি বলেন , আমি এখন বুঝতে পারছি এসব মাল কেনা আমার ঠিক হয়নি। আমি একটা কথা বলতে চাই আমি তো আমার হক টাকা দিয়ে মাল কিনেছি। আমি তো আর চুরি করে এসব মাল নিয়ে আসি নাই । যদি আমার নামে মামলা হয়। তাহলে তাদেরও নামে মামলা হওয়া দরকার। যারা এসব মাল মানুষের নাম ভাঙ্গিয়ে বিক্রি করেছে। তিনি আরও বলেন, সরকারি প্রণোদনার যে সকল বীজ দেয়া হয় সেগুলো প্রকৃত কৃষকের কাছে পৌছায়না ।

উপজেলা কৃষি কার্যলায় সূত্রে জানা যায় ২০২২-২৩ অর্থ বছরে উপজেলার ৪ হাজার ৪ শত জন প্রান্তিক কৃষকের মাঝে ৫ কেজি আউশ ধান বীজ, ১০ কেজি এমওপি সার, ১০ কেজি ডিএপি সার । ৭৮০ জন কৃষদের মাঝে ২ কেজি করে ভূট্টা বীজ, ২০ কেজি ডিএপি সার, ১০ এমওপি সার । ৮৮০ জন কৃষকের মাঝে ২০ কেজি করে গম বীজ, ১০ কেজি এমওপি সার, ১০ কেজি ডিএপি সার । ২ হাজার ৫০০ জন কৃষকের মাঝে ১ কেজি করে পাট বীজ, ১০ কেজি এমওপি সার, ১০ কেজি ডিএপি সার । ৪ হাজার কৃষকদের মাঝে হাইব্রিড চমক জাতের ২ কেজি করে ধান বীজ দেয়ার কথা থাকলেও এসব ধান বীজ কৃষকদের মাঝে বিতরণ না করে উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা-কর্মচারী এবং ইউনিয়ন পরিষদের জনপ্রতিনিধিরা নামমাত্র কয়েকজন কৃষকের মাঝে বিতরণ করে সরকারি প্রণোদনার বাকিসব মাল স্থানীয় বীজ ব্যবসায়ীদের কাছে বিক্রি করে দেন । এটি হওয়ার একমাত্র কারণ কৃষি অফিসার বেশিরভাগ কর্মকর্তা-কর্মচারীরা স্থানীয় ।

নাম প্রকাশের অনিচ্ছুক দু’জন উপ সহকারী কর্মকর্তা জানান, সরকারি প্রণোদনার মাল যাই আসুক না কেন এগুলো এভাবেই চলে । যে সময় এ সকল প্রণোদনা দেয়া হয় সে সময় কৃষকদের দিলেও সেগুলো কৃষকদের কাজে আসবে না । আর যখনই এসব প্রনোদনা আসে দলীয় থেকে শুরু করে স্থানীয় লোকজনের একটা চাপ থাকে । তবে এ বিষয়গুলো আমাদের উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষরাও জানে ।

 

 

এ বিষয় নিয়ে উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা মারুফা ইফতেখার সিদ্দিকার সাথে কথা বলেন তিনি জানান, কারা এর সাথে জড়িত আমি এখন কিছু বলতে পারবো না। তবে দুটি তদন্ত প্রক্রিয়াধীন আছে তদন্ত শেষ হলে বলা যাবে।

দয়া করে নিউজটি শেয়ার করুন..

Leave a Reply

Your email address will not be published.




© All rights reserved 2022 batayon24
Design & Developed BY ThemesBazar.Com