শুক্রবার, ০২ Jun ২০২৩, ১০:০৮ অপরাহ্ন

সংবাদ শিরোনাম :
কালীগঞ্জে ফেনসিডিল, এসকাপ সিরাপসহ আটক ১ দীর্ঘ ৪০ বছর পর খুলে দেওয়া হয়েছে রংপুর হাসপাতালের দক্ষিণ দিকের গেট রংপুরের বদরগঞ্জে ভিন্ন ভিন্ন ভাবে পালিত হল জিয়াউর রহমানের ৪২ তম শাহাদাৎবার্ষীকি কালীগঞ্জে মাদক বিরোধী প্রচারণামূলক প্রীতি ফুটবল ম্যাচ অনুষ্ঠিত বাংলার বুকে এক টুকরো লুসাই গ্রাম, প্রবেশ ফি ৩০ টাকা অনিয়ম ও দূর্নীতির অভিযোগের কারণে নয়,নাম ও রোল নম্বর ভুলের কারণে পরীক্ষা ফলাফল স্থগিত করা হয়েছে। ভাড়া নিয়ে বিতর্কে রোকেয়া ভার্সিটির শিক্ষার্থীকে মারধোর, প্রতিবাদে সড়ক অবরোধ-বিক্ষোভ বদরগঞ্জে নদীতে ডুবে বৃদ্ধের মৃত্যু পুলিশের বেঁধে দেয়া রুটেই বিএনপির পদযাত্রায় নেতাকর্মীদের ঢল রংপুরে ভিশন স্পেশালাইজড হাসপাতালে ভুল অপারেশনে যুবকের মৃত্যুর অভিযোগ
কাউনিয়ায় কিশোর গ্যাং পিটিয়ে হত্যা করলো কলেজ ছাত্রকে, আটক ১  

কাউনিয়ায় কিশোর গ্যাং পিটিয়ে হত্যা করলো কলেজ ছাত্রকে, আটক ১  

স্টাফ করেসপনডেন্ট, রংপুর।। বাতায়ন২৪ডটকম।

রংপুরের কাউনিয়ার ফুটবল খেলা নিয়ে কথাকাটাকাটির জেরে কিশোর গ্যাং পিটিয়ে হত্যা করেছে আশিকুর রহমান আশিক (১৮) নামের  এক কলেজ ছাত্রকে। এ ঘটনায় ১ জনকে গ্রেফতার করেছে পুলিশ। শুক্রবার রাতের এ ঘটনায় সেখানে তীব্র উত্তেজনা বিরাজ করছে কিশোর গ্যাংয়ের দুই গ্রুপের মধ্যে। পুলিশ সতর্ ক অবস্থায় আছে।

 প্রাথমিক তদন্তের উদ্ধৃতি দেয় কাউনিয়া থানার ওসি মোন্তাছের বিল্লাহ জানান, শুক্রবার বিকেলে ফুটবল খেলার মাঠে খেলা নিয়ে বিরোধ হয় স্থানীয় স্টেশন কলোনি এলাকার তফেল উদ্দিনের পুত্র কাউনিয়া ডিগ্রী কলেজের একাদশ শ্রেণির শিক্ষার্থী আশিকুর রহমান আশিকুরের সাথে বাসস্ট্যান্ড এলাকার আতিকুল, মামুন গ্রুপের। এনিয়ে সেখানে কথাকাটাকাটি হলে উভয়পক্ষই দেখে নেয়ার হুমকি দেয়। সন্ধায় আশিক তার বন্ধুদের নিয়ে কাউনিয়া বাসস্ট্যান্ডে আসলে ফলের দোকানের সামনে আতিকুল ও মামুন গ্রুপের সাথে বিরোধে জড়ায়। এসময় আতিকুল ও মামুনসহ অন্যান্যরা আশিককে রড ও লাঠি দিয়ে পিটিয়ে গুরুতর জখম করে। গুরুতর আহত অবস্থায় তাকে প্রথমে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স ভর্তি করা হয়।  অবস্থার অবনতি হলে তাকে রংপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে আনা হলে রাত ১১ টায় চিকিৎসক তাকে মৃত ঘোষনা করেন।

এদিকে এ ঘটনা মা আবেদা বেগম এখন দিশেহারা। তিনি এ প্রতিবেদকে জানান, আমি শুক্রবার সন্ধায় ভাত রান্না করার সময় রিফাত নামে এক ছেলের মাধ্যমে খবর পাই আমার ছেলেকে মামুন ও আতিকুল বাসস্ট্যান্ডে পিটিয়েছে। খবর পেয়ে এসে শুনি আমার ছেলেকে রংপুর মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। সেখানে এসে শুনি আমার ছেলে মারা গেছে।

এই মা  আরও জানান, যারা আমার ছেলেকে মারছে, তাদের কি শাস্তি হবে না? শাস্তি তো নেয়ায় লাগবে। এ যেমন মারা গেছে, এরকম ওদেরকেও মারতে হবে। এটার আমার কথা। পুলিশ যদি না মারে, থানায় আনলে আমেই মারবো। নিজ হাতে ওদেরকে আমি ছুড়ি দিয়ে আঘাত করবো। কারণ আমি অনেক স্বপ্ন নিয়ে ছেলেকে মানুষ করতেছিলাম। ৫ বছর রংপুরে মাদরাসায় পড়াইছি। এখান থেকে নিয়ে গিয়ে আবার আমি তাকে এসএসসি পরীক্ষা দেওয়াইলাম। কারণ আরবী লাইনে থাকলে সরকারি চাকরি হবে না। সেকারণে ওখান থেকে নিয়ে এসে নাইনে ভর্তি করালাম। ৪.৭ জিপিএ নিয়ে আমার ছেলে এসএসসি পাশ করলো। পরে তাকে কাউনিয়া ডিগ্রী কলেজে ভর্তি করালাম। সব বই পত্র কেনা হয়েছে। আমাকে বলে আম্মু আমি শুধু ১ তারিখ থেকে ইংলিশ সাবজেক্টটা প্রাইভেট পড়বো। অন্য সব আমার ওকে। ইংলিশ যদি ঠিক মতো পারি, তাহলে চাকরি পাইতে কোন অসুবিধা হবে না।আমি বললাম ১ তারিখ থেকে তোকে ইংলিশে প্রা্ইভেট দিবো। এই বলে ছেলে আমার খাওয়া দাওয়া করি বাইরে বের হলো। ওরা আমার ছেলেকে শেষ করে দিলো। এখন আমিও ওদের শেষ করে দিবো। পুরোদমে আমি ওদের শাস্তি দিবো।

আশিকের চাচাতো ভাই আলমগীর জানান, কাউনিয়ার অধিকাংশলোকই জানে আতিকুলম মামুনসহ কিশোরগ্যাংয়ের ছেলেরা সব সময় নেশার ওপরেই থাকে। তারা ড্যান্ডিখোর এবং উচ্ছৃংখল। তারাই আমার ভাইকে এভাবে পিটিয়ে মারলো। আলমগীর বলেন শুধু ফুটবল খেলাকে কেন্দ্র করেই নয়, সামান্য ঘটনা বা ১০ টাকা নিয়ে বিরোধের জেরে ক্ষোভ থাকতে পারে। কারণ এসব ছেলেপেলে যারা আমার ভাইকে মেরেছে তারা ডিান্ড খোর। সব সময় তারা নেশা নিয়েই ব্যস্ত। সেকারণেই তারা মেরেছে।  এদেরকে আবার অনেকেই টাকা পয়সা দিয়ে পালে। তারা সিনিয়র। শুধু এদেরকেই নয়, যারা টাকা দিয়ে এদের পালে তাদেরকেও আইনের আওতায় আনতে হবে।

আরেক চাচাতো ভাই জনি জানান, স্থানীয় দোকানদাররা যেটা বলেছেন মামুনসহ একদল কিশোর এই ঘটনা ঘটনায়। ঘটনার সময় আশিক মাগরিবের নামাজ পড়ে  বের হয়ে ফলের দোকানের সামনে দাড়িয়েছিল। মামুনসহ অন্যদের হাতে রড ও মোটা লাঠি ছিল। সেটা দিয়েই পিটিয়ে আমার ভাইকে তারা হত্যা করেছে। প্রথম মাইরটা বুকে লেগে আশিক রোডে পড়ে চিৎকার করেছিল। তখন কেউ এগিয়ে আসে নি। বরং রাস্তায় পড়া অবস্থাতেও ৫/৭ জন এসে আরও পিটিয়ে আমার ভাইকে মেরেছে। এখন আমি এই হত্যার বদলে হত্যা অথবা ফাঁসি চাই।

আশিকের আরেক চাচাতো ভাই সাদ্দাম হোসেন বলেন, আতিকুল ও মামুনরা দীর্ঘ সময় ধরে মনের মধ্যে ক্ষোভ পুষে রেখেছিল। ক্ষোভ বেশি বড় না। এই বয়সটা এদের এমন যে ১০ টাকার জন্য ক্ষোভ হতে পারে । আসলে খেলার মাঠ থেকে এসব ক্ষোভের ঘটনা শুরু হয়। কেউ আগে খেলতে যায়, কেউ পরে খেলতে যায়, কেউ খেলতে গিয়ে মাঠ পায় না। বা এক পক্ষ নামতে দেয় না।  এভাবেই ক্ষোভগুলা সৃস্টি হয়। যেহেতু প্রধান আসামী থানায় ধরা আছে, তার কাছেই আসল ঘটনা শোনা যাবে- যে তারা কোন ক্ষোভের বশে এই ঘটনাটা ঘটালো। তিনি হত্যাকারীদের গ্রেফতার এবং ফাঁসির দাবি জানান।

প্রত্যক্ষদর্শী একজন দোকানদার জানান, কোন কিছু বুঝে উঠার আগেই ঘটনাটা নিমিষের মধ্যে করে কিশোরগ্যাংয়ের ছেলেরা বীরদর্পে পালিয়ে গেলো। কেউ এগিয়ে আসার সময় পেলো না। যারা এ ঘটনা ঘটিয়েছে তারা চিহ্নিত। এরা সিনিয়রদের দারা নিয়ন্ত্রিত এবং নেশা আসক্ত। এদের ব্যপারে পুলিশও অবহিত। এ ঘটনার দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি চান নাম গোপন রাখার শর্তে এসব কথা বলা ওই দোকানদার।

নিহত আশিক কাউনিয়া ডিগ্রী কলেজের একাদশ শ্রেণির ছাত্র ছিলেন। তার পিতা তফেল উদ্দিন রাজমিস্ত্রীর পাশাপাশি কৃষি কাজ করতেন।দুই ভাই এক বোনের মধ্যে আশিক ছিল মেঝো।

এ বিষয়ে রংপুরের পুলিশ সুপার ফেরদৌস আলী চৌধুরী জানান, উঠতি বয়সিদের মধ্যে বিরোধের জেরেই এই হত্যাকান্ড। তদন্ত শেষ হলেই বোঝা যাবে এর নেপথ্যে আরও কি আছে। এ ঘটনায় তাৎক্ষণিক খবর পেয়ে আমরা প্রথমে আতিকুল ইসলামকে আটক করে থানায় নিয়ে আসি। এ ঘটনায় আতিকুলও আহত হয়েছে। তাকে জিজ্ঞাসাবাদে গুরুত্বপূর্ন তথ্য পাওয়া গেছে। মামুনসহ অন্যান্যরা পলাতক রয়েছে। এঘটনায় মামলার প্রস্তুতি চলছে।

বাতায়ন২৪ডটকম।সমামা

 

দয়া করে নিউজটি শেয়ার করুন..

Leave a Reply

Your email address will not be published.




© All rights reserved 2022 batayon24
Design & Developed BY ThemesBazar.Com