স্পেশাল করেসপনডেন্ট, রংপুর।। বাতায়ন২৪ডটকম।।
‘কক্ষে প্রবেশে অনুমতির প্রয়োজন নেই ’ এই বাক্যটি সা^টানো আছে বাংলাদেশ পরমাণু কৃষি গবেষণা ইন্সটিটিউট-বিনার রংপুর উপ-কেন্দ্রের ভারপ্রাপ্ত বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তার অফিস কক্ষের প্রবেশ দরজায়। সাধারণত এই ধরণের কর্মকর্তার কক্ষে প্রবেশের জন্য অনুমতি ছাড়াও বিভিন্ন বিধি-নিষেধ ও ঝক্কি, ঝামেলা নিত্য নৈমিত্বিক ব্যপার। সেক্ষেত্রে ওই কর্মকর্তার এই উদ্যোগ অনুসরণীয় হতে পারে বলে জানিয়েছে সুশাসনের জন্য নাগরিক-সুজন।
বৃহস্পতিবার ( ১৬ মার্চ) দুপুর। রংপুর মহানগরীর তাজহাট এলাকায় অবস্থিত বিনা-রংপুর উপকেন্দ্রের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা ড. মোহাম্মদ আলীর কক্ষে প্রবেশ করার সময় দেখা গেলো দরজা খোলা। দরজায় সাটাটো বড় করে লেখা ‘কক্ষে প্রবেশে অনুমতির প্রয়োজন নেই।’ ঠিক তার নীচে লেখা ‘আমরা বিদ্যুৎ সাশ্রয়ী।’
বাংলাদেশে কৃষিক্ষেত্রের অভূতপূর্ব উন্নয়নে উন্নত ফসলের জাত আবিস্কারে বিনা সব থেকে গুরুত্বপুর্ন অবদান রেখেই চলেছে। বিনার সর্বশেষ উদ্ভাবন ও গবেষণা নিয়ে তথ্য বিনিময়ের ফাঁকে বিজ্ঞানী ড. মোহাম্মদ আলীর কাছে এই প্রতিবেদকের প্রশ্ন ছিল দরজার ওই ধরণের লেখা সাটানো প্রসঙ্গে।
এময় খানিকটা অপ্রস্তুত হয়ে বিজ্ঞানী মোহাম্মদ আলী উত্তর এড়িয়ে যাওয়ার বিনয় প্রকাশ করলেন। কিন্তু বাংলাদেশের সম-সাময়িক বাস্তবতায় এই ব্যতিক্রমি উদ্যোগের বিষয়ে জানতে চাইলে বিজ্ঞানী আলী জানালেন, ‘ কোন ধরণের ক্রেডিট কিংবা হাইপোথিক্যাল ধারণা থেকে তিনি দরজায় ‘ কক্ষে প্রবেশে অনুমতির প্রয়োজন নেসই’ বাক্যটি সাঁটান নি। বিনায় চাকরি নেয়ার পর থেকেই একজন কৃষি বিজ্ঞানী হিসেবে বিভিন্ন দপ্তরে গিয়ে সংশ্লিষ্টদের সাথে দেখা করতে তাকে অনেক সময় ঘন্টার পর ঘন্টা বসে থাকতে হয়। এমনকি আগে থেকে এ্যাপার্টমেন্ট নেয়া থাকলেও বিড়ম্বনায় পরতে হয়েছে। তখন একদিকে যেমন কাজের ক্ষতি হয়, অন্যদিকে কাজের স্পিডও কমে যায়। এ ধরণের শিক্ষা থেকে আমি যেখানেই চাকরি করেছি। সেখানেই দরজা উম্মুক্ত রেখেছি। এবং ওই বাক্যটি লিখে দিয়েছি। যাতে আমার কাছে আসা কোন ব্যক্তি এ ধরণের বিড়ম্বনায় না পড়েন। বিশেষ কওে আমি যেহেতু কৃষি নিয়ে কাজ করি, আমার কাছে সর্বশ্রেণির কৃষকের অবাধ এক্সেস থাকা দরকার বলে আমি মনে করি। একজন চরের কৃষক এসে যদি আমার কাছে এসে পরামর্শ নিতে প্রটোকল মেইননেটন করে, তাহলে তিনি তো আমার কাছে আসতে আসতে তার কৃষির খন্দ উঠে যাবে। সেকারণে আমার এই উদ্যোগ। আমার এই উদ্যোগে অফিস স্টাফ এবং আগুন্তকরা ঝক্কিঝামেলা ছাড়া তাদের প্রয়োজন মেটাতে পারেন। ’
বিজ্ঞানী মোহাম্মদ আলী বলেন, আমার অফিস সময়ে অফিস এবং সর্বজনের আগুন্তককে সরাসরি এক্স্রেস দেয়া আছে। তবে যখন আমি বাসায় বা ল্যাবরেটরিতে বসি, তখন সেখানে কাউকেই এক্সেস দেই না।’
বিনার রংপুর কেন্দ্রের হিসাবরক্ষক কর্মকর্তা মিশুপাল জানান, ‘ স্যারের সাথে দেখা করতে আগাম কোন অনুমতির প্রয়োজন হয় না। ওনার দরজা সব সময় খোলা থাকে। যে কেউ দেখা করতে পারেন। উনি বিরক্ত না হয়ে কথা শোনেন।’
অফিসের পিয়ন তোফাজ্জল হোসেন, ‘ ২০১৯ সাল থেকে দেখছি স্যার দরজা খোলা রাখেন। বন্ধ করেন না। যে কেউ তার সাথে সাক্ষাতের জন্য আসলে তিনি তার কথা সর্বোচ্চ গুরুত্ব দিয়ে শোনেন। অন্য অফিসে প্রবেশের যে নিয়ম কানুন আছে সেটা এখানে নেই। তিনি খুব সাধারণ চিন্তা করেন। অফিসের সকল আগুন্তককে আতিথিয়েতার মাধ্যমে হ্যান্ডেল করেন।’
সুশাসনের জন্য নাগরিক- সুজন এর রংপুর মহানগর সভাপতি অধ্যক্ষ ফখরুল আনাম বেঞ্জু জানান, ‘ এখন সরকারি কর্মকর্তাদেও সাথে দেখা পাওয়া মানে, রাজ্য জয় করার সমান। সেক্ষেত্রে দরজা উম্মুক্ত রেখে কক্ষে প্রবেশে অনুমতি প্রয়োজন নেই উল্লেখ করার বিষয়টি ব্যতিক্রম। এর মাধ্যমে সরকারি কর্মকর্তারা যে জনগণের শাসক নয়, সেবক সেটি নিশ্চিত হয়। বিনার বিজ্ঞানী সেটি করছেন, জেনে আমরা খুশি। এটি অনুসরণীয়। এভাবেই সকল অফিস চলা উচিৎ।
বিনা সূত্র জানিয়েছে, বাংরাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের এগ্রিকালচার বিভাগ থেকে ২০০১ সালে অনার্স ডিগ্রী অর্জন করেন মোহাম্মদ আলী। ২০০৬ সালে বিনা, ময়মনিসংহ অফিসে বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা হিসেবে যোগ দেন। ২০০৯ সালে একই বিশ্ববিদ্যারয়ের উদ্ভিদ বংশ গতি বিদ্যা বিভাগ থেকে মাস্টার্স এবং ২০২১ সালে পিএইচডি ডিগ্রী অর্জন করেন। ২০১৯ সালে ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা হয়ে রংপুর কেন্দ্রে বদলি হয়ে আসেন।
বাতায়ন২৪ডটকম।।সমামা
Leave a Reply