বৃহস্পতিবার, ২৮ সেপ্টেম্বর ২০২৩, ০৮:৩৪ অপরাহ্ন

ঐতিহাসিক জয়ে দ্বিতীয় মেয়াদে মেয়র হলেন মোস্তফা

ঐতিহাসিক জয়ে দ্বিতীয় মেয়াদে মেয়র হলেন মোস্তফা

স্পেশাল করেসপনডেন্ট,  বাতায়ন২৪ডটকম।।

রংপুর সিটি করপোরেশনের তৃতীয় মেয়াদের নির্বাচনে ঐতিহাসিক জয়ে বিজয়ী হয়ে দ্বিতীয়বারের মতো মেয়র নির্বাচিত হয়েছেন জাতীয় পার্টির লাঙ্গল প্রতিকের প্রার্থী মোস্তফাফিজার রহমান মোস্তফা। তিনি তার নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বির চেয়ে ৯৬ হাজার ৯০৭ ভোট বেশি পেয়ে নির্বাচিত হলেন।  এবার ভোট পড়েছে ৬৬ দশমিক ৮৮ শতাংশ। ২০১৭ সালে তিনি ৯৮ হাজার ২৮৭ ভোট পেয়ে প্রথম বারের মতো মেয়র নির্বাচিত হয়েছিলেন। তখন ভোট পড়েছির ৭০ দশমিক ২১ শতাংশ। ফলাফল ঘোষণার পর তিনি আল্লাহর প্রশংসা করে নগরবাসিকে ফলাফল উৎসর্গ করেছেন। এই নির্বাচনে মোস্তফার চেয়ে ১ লাখ ২৪ হাজার ৫৫৯ ভোট কম পেয়ে চতুর্থ অবস্থানে গেছেন আওয়ামীলীগের প্রার্থী হোসনে আরা লুৎফা ডালিয়া।

মঙ্গলবার (২৭ ডিসেম্বর) ১২ টায় রংপুর জেলা শিল্পকলা একাডেমি মিলনায়তনে এই ফলাফল ঘোষণা করেন রংপুর সিটি করপোরেশন নির্বাচনের রিটার্নিং কর্মকর্তা মোঃ আবদুল বাতেন। তিনি বেসরকারী ভাবে মোস্তাফিজার রহমান মোস্তফাকে মেয়র হিসেবে ঘোষণা দেন। তার প্রাপ্ত ভোট ১ লাখ ৪৬ হাজার ৭৯৮ । তিনি নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বির চেয়ে ৯৬ হাজার ৯০৭ ভোট। দ্বিতীয় হয়েছেন সবাইকে তাক লাগিয়ে দিয়ে ইসলামী আন্দোলনের হাতপাখা প্রতিকের আমিরুজ্জামান পিয়াল। তিনি পেয়েছেন ৪৯ হাজার ৮৯২ ভোট। তৃতীয় হয়েছেন স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে হাতি প্রতিকের লতিফুর রহমান মিলন পেয়েছেন ৩৩ হাজার ৩৬৬ ভোট এবং আওয়ামী লীগের প্রার্থী হোসনে আরা লুৎফা ডালিয়া (নৌকা) পেয়েছেন ২২ হাজার ২৩৯ ভোট। এছাড়াও বাংলাদেশ কংগ্রেসের ডাব প্রতিকের আবু রায়হার পেয়েছেন ১০ হাজার ৫৪৯ ভোট, জাকের পার্টির গোলাপ ফুল প্রতিকের খোরশেদ আলম খোকন পেয়েছেন ৫ হাজার ৮০৯ ভোট, জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দল জাসদের মশাল প্রতীকের প্রার্থী পেয়েছেন ৫ হাজার ১৩৮ ভোট,  খেলাফত মজলিশের দেওয়াল ঘড়ি প্রতিকের তৌহিদুর রহমান মন্ডল রাজু পেয়েছেন ২ হাজার ৮৬৮ ভোট এবং স্বতন্ত্র প্রার্থী মেহেদী হাসান বনি ২ হাজার ৬৭৯ ভোট । এবার নির্বাচনে বৈধ ভোট পড়েছে ২ লাখ ৭৯ হাজার ৯৩৬ টি আর নস্ট হয়েছে ১ হাজার ৩৬ টি।

রংপুর সিটি করপোরেশন নির্বাচনে এবার ভোটার সংখ্যা ছিল ৪ লাখ ২৬ হাজার ৪৭০ জন। ২২৯টি কেন্দ্রের ১৩৪৯টি কক্ষে ভোট গ্রহণ হয়। বসানো হয় ১ হাজার ৮৮৭ টি সিসিটিভি ক্যামেরা। ৯ মেয়র প্রার্থী, ১৭৮ জন সাধারণ এবং ৬৭ জন সংরক্ষিত মহিলা কাউন্সিলর প্রার্থী এবার প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেন।

২০১৭ সালের ২১ ডিসেম্বরের ভোটে লাঙ্গল প্রতিকের প্রার্থী মোস্তাফিজার রহমান মোস্তফা ৯৮ হাজার ২৮৭ ভোটের ব্যবধানে পরাজিত করেছিলেন রংপুর সিটির প্রথম মেয়র নৌকা প্রতিকের প্রয়াত সরফুদ্দিন আহম্মেদ ঝন্টুকে। এই নির্বাচনে মোস্তফা পেয়েছিলেন ১ লাখ ৫৯ হাজার ৮২৪ ভোট। আর নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বি ঝন্টু পেয়েছিলেন ৬১ হাজার ৫৫৭ ভোট। মোস্তফা ঝন্টু ছাড়াও এই নির্বাচনে লড়েছিলেন ৫ জন। তাদের মধ্যে তৃতীয় অবস্থানে থাকা বিএনপির প্রার্থী কাওছার জামান বাবলা পেয়েছিলেন ৩৪ হাজার ৭৯১ ভোট। চতুর্থ অবস্থানে থাকা ইসলামী আন্দোলনের হাতপাখা প্রতিকের আমিরুজ্জামান পিয়াল পেয়েছিলেন ২৩ হাজার ৭১৮ ভোট। এই নির্বাচনে পঞ্চম হয়েছিলেন জাতীয় পার্টির বিদ্রোহী প্রার্থী হোসেন মকবুল শাহরিরার। তিনি পেয়েছিলেন ২ হাজার ৩শ ৬ ভোট। আর ১ হাজার ২৪৫ ভোট পেয়ে ৬ষ্ঠ হয়েছিলেন বাসদের মই প্রতিকের আব্দুল কুদ্দুস। আর সপ্তম হয়েছিলেন আম প্রতিকের সেলিম আখতার। তিনি পেয়েছিলেন মাত্র ৮০৭ ভোট। ওই নির্বাচন হয়েছিল একটিতে ইভিএমএবং ১৯২ টি কেন্দ্রে ব্যালটে।  ওই নির্বাচনে বৈধ ভোট পড়েছিল ২ লাখ ৮৪ হাজার ২৪৮ টি আর নস্ট হয়েছিল ৬ হাজার ২৭৩ টি। এর মধ্যে ৬ প্রার্থী মিলে ভোট পেয়েছিলেন ১ লাখ ২৪ হাজার ৪২৪ ভোট। আর মোস্তফা একাই পেয়েছিলেন ১ লাখ ৫৯ হাজার ৮২৪ ভোট। যা নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বির চেয়ে ৯৮ হাজার ২৮৭ ভোট।

ফলাফল প্রসঙ্গে জাতীয় পার্টির প্রার্থী মোস্তাফিজার রহমান মোস্তফা বলেন, এই বিজয়ের জন্য মহান আল্লাগ তায়ালার কাছে কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করছি। এই বিজয়কে আমি রংপুর মহানগরবাসির কাছে উৎস্বর্গ করলাম। আপনার আগের মতো আমার পাশে থাকবেন। আমিও দরজায় পর্দাবিহীনভাবে আপনাদের পাশে থাকবো। দুর্নীতি মুক্ত থেকে নগরবাসির সেবা করার চেস্টা করবো ইনশাআল্লাহ। তিনি বলেন, ইভিএমএ ভোট ধরি গতিতে এবং বিভিন্ন কেন্দ্রের মেশিনের ক্রুটির কারণে ভোট কম পোলিং হয়েছে। যদি স্বাভাবিকভাবে ভোট হতো এবং কাংখিত ভোট পোল হতে তাহলে এবার আমি ২ লাখ ভোটের ব্যবধানে বিজয়ী হতাম।

নির্ধারিত সময়ের পরও ভোটঃ নির্ধারিত সময় সাড়ে ৪ টায় হলেও অনেককেন্দ্রে ভোট হয়েছে সন্ধার পর পর্যন্ত। একদিকে অনেক কেন্দ্রের ফলাফল ঘোষিত হয়েছে, আর অনেক কেন্দ্রে চলেছে ভোট। ইভিএমএ ভোট ধীর গতিতে হওয়ায় যারা সাড়ে চারটার আগে কেন্দ্রে প্রবেশ করেছিলেন তাদের ভোট নেয়া হয়েছে। এ বিষয়ে নির্বাচন কমিশনের সিদ্ধান্ত ছিল সাড়ে চারটার পরও যেসব কেন্দ্রের ভেতরে মানুষ থাকবে সেখানে ভোট গ্রহণ করা হবে।

নির্বাচন বেশ উৎসবমুখর হয়েছে বলে দাবি করে রিটার্নিং কর্মকর্তা মোঃ আবদুল বাতেন জানিয়েছেন, ভোট সুষ্ঠু এবং উৎসব মুখর হয়েছে। ইভিএমএ ভোট কম পোল হওয়ার কারণ ভোটারদের অসেচতনতা, ইভিএম মেশিন কিছু ত্রুটি দেখা দিলেও আমরা সাথে সাথে সেটা ঠিক করেছি। আমরা মক ভোটিংয়ের মাধ্যমে ইভিএমএ ভোট শিক্ষণ করেছি। কিন্তু মানুষ আসে নি।

এদিকে সকাল ১০টার দিকে নগরীর লায়নস স্কুল অ্যান্ড কলেজ কেন্দ্রে ভোট দেওয়ার পর নৌকা প্রতীকের মেয়র প্রার্থী হোসনে আরা লুৎফা ডালিয়া। অন্যদিকে সকাল সোয়া ৯টার দিকে নগরীর আলমনগর কলেজ রোড সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় কেন্দ্রে ভোট দিয়েছেন জাতীয় পার্টির মেয়র প্রার্থী মোস্তাফিজার রহমান মোস্তফা। তিনি ৮টা ৫০ মিনিটে ভোট দেওয়ার জন্য কক্ষে ঢুকলে ইলেকট্রনিক ভোটিং মেশিনে (ইভিএম) ত্রুটি দেখা দেয়। ভোট দিতে না পেরে ভোট কক্ষ থেকে বেরিয়ে সাংবাদিকদের কাছে ক্ষোভ প্রকাশ করেন মোস্তফা। পরে অবশ্য তিনি ভোট দিতে পেরেছেন।

বাতায়ন২৪ডটকম।।

 

 

 

 

 

 

 

 

 

দয়া করে নিউজটি শেয়ার করুন..

Leave a Reply

Your email address will not be published.




© All rights reserved 2022 batayon24
Design & Developed BY ThemesBazar.Com