স্পেশাল করেসপনডেন্ট, রংপুর।। বাতায়ন২৪ডটকম।।
বাংলাদেশের উজানে তিস্তায় খাল খননের সিদ্ধান্তকে ভারতের সাংঘর্ষিক ও দুরভিসন্ধিমূলক সিদ্ধান্ত দাবি করে রংপুর সিটি মেয়র এবং তিস্তা বাঁচাও, নদী বাঁচাও সংগ্রাম পরিষদের উপদেস্টা মোস্তাফিজার রহমান মোস্তফা বলেছেন, ভারত আন্তর্জাতিক আইন এবং প্রস্তাবিত তিস্তাচুক্তি লংঘন করে উজানে ২ টি খাল নির্মানের উদ্যোগ নিয়ে বাংলাদেশের তিস্তা এবং ধরলা নদী থেকে পানি প্রত্যাহার করে নেয়ার অপচেস্টায় লিপ্ত আছেন।সরকারকে অবিলম্বে ভারতর সরকারের কাছে আনুষ্ঠানিকভাবে ডিও লেটার দিয়ে ওই প্রক্রিয়া বন্ধের দাবি জানিয়ে তা বাস্তবায়ন করতে হবে। তা না হলে মে মাস থেকে তিস্তা পাড়ে দুর্বার আন্দোলন গড়ে উঠবে।
শনিবার ( ১১ মার্চ) বিকেলে রংপুর সিটি করপোরেশনের সামনে ভারতের কর্তৃক তিস্তার উজানে খাল খনন প্রক্রিয়া বন্ধ এবং তিস্তা মহাপরিকল্পনা ও চুক্তি বাস্তবায়নের দাবিতে আয়োজিত তিস্তা বাঁচাও নদী বাঁচাও সংগ্রাম পরিষদের মানববন্ধনে এই দাবি জানান তিনি। সংগ্রাম পরিষদের সভাপতি অধ্যক্ষ নজরুল ইসলাম হক্কানীর সভাপতিত্বে বক্তব্য রাখেন রংপুর নাগরিক মঞ্চের সভাপতি অধ্যাপক মোজাহার আলী, কমিউনিস্ট পার্টির সভাপতি বীরমুক্তিযোদ্ধা শাহাদাত হোসেন, সংগ্রাম পরিষদের সাধারণ সম্পাদক সাফিয়ার রহমান, রিভারাইন পিপলস এর পরিচালক ড. তুহিন ওয়াদুদ, রাজারহাট উপজেলা চেয়ারম্যান স্ট্যান্ডিং কমিটির সদস্য গেরিলা লিডার শফিকুল ইসলাম কানু, নীলফামারী জেলা ওয়ার্কার্স পার্টির সভাপতি তপন কুমার রায়, বাসদের জেলা সমন্বয়ক কমরেড আবদুল কুদ্দুস, ডিমলার গোলাম মোস্তফা, সুন্দরগঞ্জে সাজু মুনসি, পীরগাছার বাবুল আখতার, গঙ্গাচড়ার মাহমুদ আলম, হাতিবান্ধার সাদেকুল ইসলাম, কাউনিয়ার আশিকুর রহমান, যমুনা টেলিভিশনের স্টাফ করেসপনডেন্ট সরকার মাজহারুল মান্নান, বাংলা ভিশনের আনজারুল ইসরাম জুয়েল, ডিবিসি নিউজের মাজেদ মাসুদ প্রমুখ।
এসময় রিভারাইন পিপলস-এর পরিচালক রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক ড. তুহিন ওয়াদুদ বলেন, ভারত সরকার গাজল ডোবায় ২ টি খাল খননের উদ্যোগ নিয়েছে। এই খালে তারা পানি পাবে কোথায়। তারা তো আগেই পানি প্রত্যাহার করে নিয়েছে। সামান্য যে পানিতে বাংলাদেশের সেচ প্রকল্প চলে সেই সেচ প্রকল্প বন্ধ করবার জন্য তারা খাল খননের উদ্যোগ নিয়েছে। আমরা চাষ করি ৪৫ হাজার হেক্টর জমিতে। আর তারা ১ লাখ জমিতে চাষাবাদেও লক্ষ ঠিক করেছৈ। তারা বাকি পানি পাবে কোথায়। তারা এই খালের মাধ্যমে তিস্তা, সানিয়াজান ও ধরলা নদীর পানি প্রত্যাহার করবে।
তিনি আরও বলেন, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার কাছে জোড় দাবি জানাচ্ছি, ২০১১ সালের ৬ সেপ্টেম্বও যে তিস্তা চুক্তি চুড়ান্ত হয়েছিল। তার বাস্তবায়ন করতে হবে। আন্তর্জাতিক আইন বলে,নদীর উজানে কোন কাজ করতে হলে ভাটির দেশকে জানাতে হবে। কিন্তু ভারত কোন কিছু না জানিয়ে আন্তর্জাতিক আইন লংঘন করে এই খাল খননের উদ্যোগ নিয়েছে। অবিলম্বে তা বন্ধ করতে হবে। সেই উদ্যোগ সরকারকে নিতে হবে কুটনৈতিক পর্যায় থেকে। নইলে দুর্বার আন্দোলন গড়ে উঠবে।
মানববন্ধনে সংগ্রাম পরিষদের সাধারণ সম্পাদক সাফিয়ার রহমান বলেন, এমনিতেই তিস্তায় পানি নেই। আমাদেও তিস্তা সেচ প্রকল্পে পানি দেয়া যাচ্ছে না। তার ওপর এখন ভারত নতুন করে তিস্তার উজানে খাল খননের প্রকল্প হাতে নিয়েছে। এই প্রকল্প বাস্তবায়ত হলে যে পানিটুকু শুস্ক মওসুমে আমরা পেতাম, সেটাও আর পাবো না।
তিনি আরও বলেন, আমরা আশা করি তিস্তা আবাহিকার জীবন-জীবিকা বাঁচাতে সরকারিভাবে অবিলম্বে ভারতের এই প্রক্রিয়ার বিরুদ্ধে তৎপরতা শুরু করতে হবে। এই খাল খনন প্রক্রিয়া বন্ধ করার জন্য যা যা দরকার সেটি সরকারকে করতে হবে।
তিনি বলেন, ভারতের এই পানি প্রত্যাহারের সিদ্ধান্ত বাতিল এবং তিস্তা মহাপরিকল্পনা বাস্তবায়নের জন্য আমরা রাজপথে আছি। থাকবো। আন্দোলন গড়ে তুলবো। রংপুর বিভাগকে বাঁচাবো। উত্তরাঞ্চলে বাঁচাবো। বাংলাদেশকে বাঁচাবো।
মানববন্ধনে সংগ্রাম পরিষদের সভাপতি অধ্যক্ষ নজরুল ইসলাম হক্কানী বলেন, ভারত সরকার প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন তিস্তা চুক্তি বাস্তবায়নের। খরাকালে পানি চুক্তি করবো। কিন্তু চার তারিখ খবর এলো মমতা ব্যানার্জি দুই দেশের নদী কমিশনকে তোয়াক্কা না করে ৫০ কিলোমিটার খাল খননের মাধ্যমে নিজের দেশের ১ লাখ হেক্টর জমিতে প্রকল্প বাস্তবায়নের জন্য প্রকল্প নিলো।
তিনি বলেন , এমনিতেই ভারত শুস্ক মওসুমে আমাদের চুইয়ে পড়া পানি দিতো। এখন ওই খাল খনন করে তারা আমাদের তিস্তা, ধরলা থেকে শুস্ক মওসুমে পানি সম্পুর্ন প্রত্যাহার করে আমাদের ধংস করে দেয়ার প্রচেস্টায় লিপ্ত। তিনি বলেন, আমরা খাল খননের বিরুদ্ধে কথা বলছি। কারণ ওই খাণ শুধু আমাদের মরণ ফাঁদ হবে না। ভারতের গাজল ডোবার ভাটিতে ভারতের যে ৬৫ কিলোমিটার এলাকা আছে। সেই এলাকাও ধংস করবে। আমাদের ধরলা নদীর পানি নিয়ে যাবে ভারতের জলঢাকা নদী। তাই আমাদেও স্পস্ট কথা।
হক্কানী বলেন, অবিলম্বে তিস্তা মহাপরিকল্পনার বাস্তবায়ন করতে হবে। চীনের টাকা নিতে অসুবিধা থাকলে নিজস্ব অর্থায়নে এই মহাপরিকল্পনা বাস্তবায়ন করতে হবে। প্রয়োজনে তিস্তা কর্তৃপক্ষ গঠন করতে। যেখানে তিস্তা পাড়ের মানুষ টাকা দিবে। অবিলম্বে মহাপরিকল্পনার কাজ শুরু করেন। তা না হলে আমাদের দেয়ালে পিঠ ঠেকেছে। আমরা মাথা চাড়া দিয়ে সামনে এগুবো।
মানববন্ধনে সংগ্রাম পরিষদের উপদেস্টা রংপুর সিটি মেয়র মোস্তাফিজার রহমান মোস্তফা বলেন, উজানে খাল খনন ভারতের একটি সাংঘর্ষিক সিদ্ধান্ত। একদিকে তিস্তা চুক্তি বাস্তবায়নের জন্য তদবির হচ্ছে দুই দেশের মধ্যে। যে চুক্তির সব কিছু চুড়ান্ত। কিন্তু তা না করে উল্টো একই সময়ে তিস্তার পানি প্রত্যাহারের জন্য ভারত দুটি ক্যানেল খোড়ার প্রক্রিয়া শুরু করেছে। এটা থেকে বোঝা যায়, ভারতের ভেতরে দুরভিসন্ধি কাজ করছে। তারা কখনই তিস্তার পানির ন্যায্য হিস্যা আমাদের দিতে চায় না। যেটা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান এবং ইন্ধিরা গান্ধির মধ্যে চুক্তি হয়েছিল। ওই চুক্তির একটি সাংঘর্ষিক সিদ্ধান্ত ভারত সরকার নিয়েছে, এখন এটাই প্রতিয়মান হচ্ছে।
মেয়র মোস্তফা বলেন, এটা থেকে আমাদের উত্তরণের পথ খুঁজতে হবে। আমরা যারা ভুক্তভোগি আছি, তাদের ঐক্যবদ্ধ আন্দোলনের মাধ্যমে আমরা এই খাল খনন প্রক্রিয়া বন্ধ করবো। এজন্য আমরা প্রস্তুতি নিচ্ছি। এই মানববন্ধন তারই একটি ছোট্র অংশ।
মেয়র মোস্তফা বলেন, যে চুক্তি চুড়ান্ত হয়ে আছে। সেটির খবর নাই। উল্টো খাল খননের প্রক্রিয়ার মাধ্যমে দুরভিসন্ধি করে আমাদেরকে বিপদে ফেলানোর চেস্টা করছে ভারত। অতিসত্বও এই খাল খনন প্রক্রিয়া বাতিল করার জন্য ভারত সরকারের কাছে আমরা দাবি করছি। একই সাথে বাংলাদেশ সরকারকে ভারত সরকারের কাছে ডিও লেটার দিয়ে আনুষ্ঠানিকভাবে ওই প্রক্রিয়া থেকে সরতে বাধ্য করার চেস্টার দাবি জানাচ্ছি। নইলে বৃহত্তর আন্দোলন গড়ে তুলবো আমরা।
এর আগে একই দাবিতে সিটি মিলনায়তনে জনপ্রতিনিধিসহ সর্বস্তরের সংহতি সভা করে সংগ্র্রাম পরিষদ।
বাতায়ন২৪ডটকম।। সমামা
Leave a Reply